মেসার্স, উইলিয়াম এবং লি এণ্ড কোম্পানি হেস্টিংসের সম্পত্তি তিনি এদেশ ত্যাগ করিলে ১০ই মে, ১৭৮৫ খ্রীষ্টাব্দে কলিকাতা গেজেটে যে বিজ্ঞাপণ দিয়াছিল, উহার সংক্ষেপ বিবরণ দেওয়া গেল ১ম লট- ৬৩ বিঘা বাগানবাড়ি, দুইটি ছোট বাঙলা ও একটি হল বারান্দা বাড়ি। (ঐ বাগানে আরারুটের চাষ হইত) সেই স্থানটি দ্য পেন নামক প্রস্তর ফলক দ্বারা চিহ্নিত করা হইয়াছে, আলিপুরের মধ্যে(তিনি কলিকাতার জমিদার ও কর্মকর্তা হইয়া কলিকাতার জমি জায়গা চাষবাস করিতেন। ঐ নিলামের বিবরণে তাঁহার ঐশ্বর্য ও বিলাসের পরিচয় পাওয়া যায়)। ২য় লট- ৪৬ বিভা দ্বিতল আস্তাবলাদি বৃহত্ অট্টালিকা মান্দাজি চুনের পঙ্খের কাজ করা ঘর, প্রস্তর নির্মিত সিঁড়ি, স্নানাগার, ৪টি শয়ান হল, ৪ খানি গাড়ি, ১৪টি ঘোড়া রাখিবার স্থান, তদ্ভিন্ন চালায় আর ছয়খানি গাড়ি ও বারটি ঘোড়া রাখার ব্যবস্থা ছিল। ৩য় লট- ৫২ বিঘা কাঠের রেলিং ঘোরা জমি
(Lot No. 2. The upper-roomed house consisting of a hall and two rooms on each floor, a handsome stone staircase and a back staircase all highly finished with Madras chunam and very best materials. A lower-roomed house containing a large hall and four good bed-chambers; a complete bathing house containing two rooms finished with Madras chunam; a convenient bungalow containing two rooms and a verandah all round; a large range of pukka buildings containing stabling for 14 horses and 4 coach-houses; other stables also (thatched) for 12 horses and 6 carriages, and 46 bighas of ground - Calcutta: Past and Present (1905) by Kathleen Blechynden Chapter V - লেখকদের সংগ্রহ)। (রায়বাহাদুর প্রমথনাথ মল্লিক, কলিকাতার কথা, দ্বিতীয় খন্ড, ৩২ পাতা)
এই ছোট বর্ণনাতেই বাংলার সম্পদ লুঠের যে বর্ণনা পাওয়া গেল তা হিমশৈলের চূড়ামাত্র। কোম্পানির আমলে বাঙলার কী ক্ষতি হয়েছে খালিচোখে তার একটা ছোট তালিকা তৈরি করা যাক-
কোম্পানির পাশাপাশি ব্রিটিশ আমলাদের সরাসরি ঘুষ গ্রহণ,
কোম্পানির সরকারি লুঠেরা রপ্তানি বাণিজ্য,
কোম্পানির কর্মচারীদের নানান দামি ধাতুর বাণিজ্য,
কোম্পানির জাহাজের ক্যাপ্টেনদের ও অফিসারদের লুঠসম ব্যক্তিগত বাণিজ্য,
বাঙলার বাইরের প্রেসিডেন্সিগুলি আর বিদেশে বাণিজ্য চালাবার আর্থিক সাহায্য,
ভারত জুড়ে বাঙলার এগারোশ ছিয়াত্তর থেকে ইংরেজির তেরশ পঞ্চাশ(উন্নিশশ বিয়াল্লিশ)এর মাঝে ছোটবড় প্রায় তিনশো মনুষ্যসৃষ্ট মন্বন্তরে কোটি কোটি মানুষের মৃত্যু আর তার প্রকোপে প্রথমে বাঙলা পরে ভারত জোড়া গ্রামীণ কাঠামো ধংস হয়ে যাওয়া – মাত্র কয়েক দশক আগে বাণিজ্যে উদ্বৃত্তের দেশটিতে বণিক উতপাদকেরা প্রায় শ্বাপদেরস্তরে নেমে আসার ক্ষতি,
ব্রিটিশ বণিকেরা পাইকারদের ভয় দেখিয়ে বাঙলার পণ্য দ্রব্য প্রায় বিনা বিনিয়োগে দখল করে ইওরোপিয় বাণিজ্য,
ভারতে উচ্চবেতনে ইংরেজ রাজ কর্মচারী পোষা, সরকার চালাবার বিপুল খরচ,
সারা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সৈন্যবাহিনী পোষার আর বিশ্বব্যাপী যুদ্ধের খরচ ভারতের জনগণের ওপর ধার্য করা খাজনা থেকে অর্জিত বিপুল সম্পদ ব্যয়,
রেলপথ পাতার বিনিয়োগের খরচ আর রেল চালাবার ভর্তুকির খরচ,
প্রত্যেক বছর খাজনা বাবদ প্রচুর অর্থ দেশে লুঠ করে নিয়ে যাওয়ার ক্ষতি,
ব্রিটেনে বিশালতম ভারত সম্বন্ধীয় আমলাকুলের খাঁই মেটাবার খরচ,
ভারতেরই সৈন্য বাহিনীদিয়ে হাজার হাজার বছরের শিল্প ধংস করে, বি-শিল্পায়ণের ফলে, ব্রিটেনের উত্পন্ন প্রচুর পণ্যদ্রব্য ভারতে বিক্রি করে অর্জিত অর্থ লাভ, আর সেই লাভ দেশে নিয়ে যাওয়ার সারা ভারতের ভর্তুকি আর সেই লাভের অংকের একাংশ নতুন করে ভারতে বিনিয়োগ না হয়ে ব্রিটেন তথা ইওরোপে বিনিয়োগের ফলে ভারতের ক্ষতি,
ভারতে প্রায় বিনা বিনিয়োগে নীল আর আফিমচাষ করে কৃষকদের স্বাভাবিক চাষ করতে না দিয়ে যে লাভ হয় তা সরাসরি ভারতের ক্ষতি,
ভারতের সমগ্র শিক্ষাব্যবস্থা ভেঙে দিয়ে ভারতকে নিরক্ষর বানানোর ক্ষতি,
ভারতের জ্ঞাণ চুরির সরাসরি ক্ষতি,
আরও অজানা নাজানা অনেক কিছু লুঠ হয়েছে, ক্ষতি হয়েছে। একবিংশ শতকের ব্রিটিশ ইতিহাস চর্চায় ভারত তথা অন্য ব্রিটিশ উপনিবেশগুলোতে ব্রিটেনের অমিত পরিমান সম্পদ লুঠের গবেষণার যে পদ্ধতি অনুসৃত হচ্ছিল, সেই গবেষণাকর্মের থেকে উলম্বস্থান বদলে, মেট্রোপলিটনের (উপনিবেশের সূত্র দেশটি) অবদান বিষয়ে আলোচনার-গবেষণার পর্ব শুরু হয়েছে। বহু ব্রিটিশ ইতিহাসবিদ তার সঙ্গে ভারতীয় অর্থনীতিবিদ আর ঐতিহাসিক নতুন সহস্রাব্দেও মনে করেন, ব্রিটিশরা ভারতকে লুঠ করলেও ভারতকে যা দিয়েগিয়েছে তার সঙ্গে লুঠকর্মের তুলনা চলতে পারে না।
Teresa Hayter, The Creation of World Poverty (Pluto 1990, 2nd edition) গ্রন্থে বলছেন, ১৭৭০এ ব্রিটেনের মোট জাতীয় আয় ছিল ১২৫ মিলিয়ন ডলার মাত্র। ১৭৫৭ থেকে ১৮১৫ পর্যন্ত সময়ে প্রথমে বাংলা পরে ভারতের অন্যান্য প্রান্ত থেকেই সে লুঠ করে নিয়ে গিয়েছে ১০০০ মিলিয়ন ডলার। সব থেকে বেশি ধনসম্বল লুঠ হয়েছে বাঙলা-বিহারের। কোনও কোনও বছরে শুধু কোম্পানি ঘুষ নিয়েছে ১ মিলিয়ন ডলার।
তেরেসা বলছেন,
"The arrival of the Bengal loot in London soon after (the Battle of Plassey 1757) coincided with the beginning of the industrial revolution in Britain. It has been estimated that the total British plunder of India between 1757 and 1815 amounted to £ 1000 million; the national income of Britain in 1770 was about £125 million. Direct tribute payments alone through the EIC approximated £1 million in some years.
"The British subsequently proceeded to destroy the industrial economy of India itself. Between 1815 and 1832 the value of Indian cotton goods exported fell from £1.3 million to below £100,000. BY the middle of the 19th century, India was importing a quarter of all British cotton goods.
"The Indian weavers suffered great hardship. Sir Charles Trevelyan declared to a parliamentary inquiry in 1840: "Dacca which used to be the Manchester of India has fallen from a flourishing town to a very poor one." A governor-general of the EIC wrote in 1835: "The bones of the weavers are bleaching the plains of India."
No comments:
Post a Comment