Showing posts with label Politics of Globalization. Show all posts
Showing posts with label Politics of Globalization. Show all posts

Saturday, July 27, 2013

বিশ্বের কর্পোরেটিকরণই হল বিশ্বায়নের রাজনীতি৩, Politics of Globalization is Corporetaization of the World3

ইতিমধ্যে রবার্ট ম্যাকনামারার বিশ্ব বড় পুঁজি বিনিয়োগের দিকনিরদেশের নিয়ন্তা হিসেবে উত্থান ঘটল। আসলে পুঁজির যে সামরিকীকরণ ঘটছিল বিশ্বজুড়ে সম্পদ, বাজার দখলের লড়াইতে, সেখানে বড় পুঁজির একটি সামাজিক মুখ তৈরি করা জরুরি হয়ে দাঁড়াচ্ছিল। সেই কাজটি অসম্ভব দক্ষতায় সম্পন্ন করতে পেরেছিলেন, বড় পুঁজির তাত্বিক এই মানুষটি। 
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে আমেরিকার সেনা বাহিনীতে বিমান দপ্তরের পূর্ব-এশিয়ায় বিশ্লেষকের চাকরি করেন ম্যাকনামারা। সেখান থেকে ফোরড মোটর কোম্পানির প্রধান। ফোরড পরিবারের বাইরে তিনিই একমাত্র ফোরড মটরসের ডিরেক্টর। ১৯৬০এ কেনেডি তাকে প্রতিরক্ষা সচিব করে সরকারি কাজে ফিরিয়ে আনেন। ভিয়েতনাম যুদ্ধে আমেরিকাকে জড়িয়ে ফেলএন ম্যাকনামারা। ভিয়েতনাম যুদ্ধের উত্তুঙ্গ সময়েই কেনেডির স্ত্রীর সঙ্গে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন। তখন তিনি বিশ্বব্যাঙ্ক প্রধানের চাকরিতে যান। ১৯৬৮ থেকে ১৯৮১ পর্যন্ত তিনি এই পদে ছিলেন। 
তাঁর সময়ে বিশ্বব্যাংক প্রথম পুঁজি বিনিয়োগে দারিদ্র দূরীকরণকে অন্যতম শর্ত হিসেবে চিহ্নিত করে। তাঁর অন্যতম নীতি ছিল In order to do good, you may have to engage in evil আজকের বড় পুঁজির লব্জ, ইনক্লুসিভ গ্রোথ তত্বের(এই লব্জটি যদিও অনেক পরের তৈরি) সর্বপ্রথম প্রবক্তা তিনি। গরিবি হটাওকে ঘোমটা করে, বিশ্বে কর্পোরেট পুঁজি বিনিয়োগের, প্রযুক্তি প্রয়োগের নতুন দিশা নির্দেশ করেছিলেন ম্যাকনামারা। তিনি ফোরড কোম্পানির উৎপাদনের দর্শন ছড়িয়ে দিলেন বড় পুঁজি নির্ভর, সহজে লাভ কামানোর নানান উদ্যমে। কনভেয়ার বেল্ট নির্ভর শিল্প হিসেবে অন্যান্য শিল্প-সেবা পরকাঠামো দর্শন গড়ে উঠতে লাগল। সাধারণ কর্মীদের আরও বেশি বিনিয়োগ করে দক্ষ করে তোলার প্রয়োজন হল না। ফলে গাড়ি কারখানার ছাঁটাই শ্রমিককে কাজে লাগাতে পারল চট জলদি খাবার শিল্প বা স্বাস্থ্য শিল্প।
ভারত এই চক্রে ঢুকবে বহুকাল পরে, আইএমএফের অবসরকালীন ভাতাখাওয়া, এক প্রাক্তনীর হাত ধরে। এই আমলা, আটের দশকে সউথ-সউথ সমীক্ষা লিখে বামপন্থী জগতে ঝড় তুলে দিয়েছিলেন। তিনি মনমোহন সিং। ইন্দিরা পথের উল্টো দিকে ঘুরে রাজীব যে পথের সুচনা করেছিলেন, সেই পথকে মহাসড়কে পরিনত করবেন প্রথমে নরসিংহ-মনমোহন জুড়ি। নতুন সহস্রাব্দে মনমোহন-চিদাম্বরম-প্রণব-মন্টেক ঘোঁট তাকে পৌঁছে দেবেন নবতম উচ্চতায়। চক্ষুলজ্জাহীনভাবে ভারতে শুরু হবে কর্পোরেট বন্দন এবং তাকে যতটা পারা যায় সুবিধা দেওয়ার রাজনীতি।

এই বিশ্বায়নের রাজনীতির বলি হলেন ২২ লক্ষ তাঁতিসহ আরও আড়াই কোটি দক্ষ গ্রামীণ। ভারতে এখন প্রয়োজন অনেক শিল্প আর শহর গড়ার বেশি শ্রমিক। তাই পারম্পরিক শিল্প থেকে ছাঁটাই করে যত সম্ভব শিল্পীকে পরিকাঠামো শিল্পে জুড়ে দেওয়া যাবে, ভারত তত বেশি করপোরেটাইজেসনের দিকে এগোতে থাকবে। গ্রাম ধংস করে সহরীকরনের যে তত্ব আর দর্শন ভারত সরকার আর ভারতের রাজনৈতিক দলের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে, সেই দৃষ্টিভঙ্গিতেই দেখতে হবে এই বস্ত্র শিল্পীদের কমার ঘটনা। এর সঙ্গে জুড়েছে মিল মালিকদের স্বার্থ। মিল মালিকদের স্বার্থ আসলেতো কর্পোরেট স্বার্থ। আর এখন কর্পোরেট স্বার্থ দেখা সরকারের প্রাধান্য। দেশ জোড়া হাতে টানা তাঁতিদের সংগঠন নেই বললেই চলে। তাই সরকার এদের বাজেট বরাদ্দ বছরের শেষে কেটে মিল মালিকের জন্য ব্যয় করে। কেউ বলার নেই। শুধু বঙ্গীয় পারম্পরিক কারু ও বস্ত্র শিল্পী সঙ্ঘ ছাড়া। 

বিশ্বের কর্পোরেটিকরণই হল বিশ্বায়নের রাজনীতি২, Politics of Globalization is Corporetaization of the World2

দ্য ইকনমিক হিট ম্যান, ফাস্ট ফুড নেশন, ডেথ অ্যান্ড লাইফ অফ গ্রেট আমেরিকান সিটিজেরমত গবেষণা নির্ভর বইগুলোয় আমেরিকায় বড় পুঁজির কর্মক্ষেত্র হিসেবে মধ্যবিত্ত সমাজে মতামত তৈরির ছকের পথ দেখানো হয়েছে। আরও দেখানো হয়েছে ছোট পুঁজিকে গিলে খেয়ে, বহুত্ববাদকে ধংসকরে, একদেহী(মোনোলিথিক) তিমিঙ্গিল হয়ে ওঠার ইতিহাস। বলা যাক, ভারতের মধ্যবিত্তের স্বপ্নের দেশ আমেরিকাতেও এই উন্নয়ন খুব একটা পুরনো গল্প নয়। ঐতিহাসিকভাবে বিংশ শতকের শুরুর তিন-চার দশক আমেরিকা ছোট-মাঝারি পুঁজির দেশ ছিল। ইয়োরোপীয় কর্পোরেট কোম্পানিগুলোর বিশ্বজোড়া লুঠ আর আধিপত্যে, আমেরিকার স্বাধীনতাকামীরা দেখেছিলেন, কোম্পানিগুলো কিভাবে দেশগুলিকে শোষণ করে, ছোট পুঁজি ধংস করে, বড় পুঁজি নিয়ন্ত্রিত ইয়োরোপীয় রাষ্ট্রযন্ত্র তৈরি করেছে। সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটেনের কব্জা থেকে আমেরিকাকে মুক্ত করে, বিশাল গণতান্ত্রিক দেশে, ছোট পুঁজি নির্ভর, ব্যক্তিগত উদ্যমে, পরস্পরের সঙ্গে মিলে মিশে চলার রাজনৈতিক ব্যবস্থার জন্ম দিলেন তাঁরা।
বড় পুঁজি, আমেরিকার সেই আর্থ-রাজনৈতিকভিত্তি ভেঙ্গেচুরে দিল, বিংশ শতকে চার, পাঁচ ছয়ের দশক থেকে। গোটা আমেরিকায় করপোরেটিকরনের উদ্যমের বুলডোজার, গুঁড়িয়ে দিল ছোট উদ্যমের পুঁজি। সরকারি মদতে এবং বিনিয়োগে হাইওয়ে তৈরি কোম্পানি, জটিল বৈদ্যুতিন প্রযুক্তি নির্ভর জুয়া খেলা কোম্পানি, মুফতে জমি নিয়ে বাড়ি তৈরির কোম্পানি, সিনেমা প্রযোজক, গণমাধ্যম কোম্পানি, গাড়ি কোম্পানি, বিশাল বিশাল খুচরো বাজার- যা পাইকারি বাজারের থেকেও বড়, চটজলদি খাওয়ার কোম্পানি, প্রতিরক্ষা উদ্যম, আণবিক কোম্পানি, বড় বাঁধ তৈরির কোম্পানি, স্বাস্থ্য-শিক্ষা বিনিয়োগ আর অর্থ বিনিয়োগেরমত (ফিনান্সিয়াল ইন্সটিটিউসন) অন্যান্য হাজারো কর্পোরেট কোম্পানি, পরস্পরের সঙ্গে হাত মেলাল নতুন ধরণের আমেরিকা(ভবিষ্যতে বিশ্ব) গড়ার জন্য। সরকারের নানান সুযোগ-সুবিধে কাজে লাগিয়ে, নতুন এক জীবনযাত্রা নির্ভর আমেরিকা গড়ায় পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করল তারা। 
এই কাজে সফল হতে গেলে উদ্দেশ্যপুরনভাবে খতম করে দিতে হল আমেরিকার স্বাধীন মাঝারি, ছোট ছোট ব্যবসা। আমেরিকা সরকারের নানান পরিকল্পনায় তাত্বিক ইনপুট দিয়ে কর্পোরেট নির্ভর নতুন ধরণের আমেরিকা গড়ে তুলতে উদ্যমী হল বড় পুঁজি। যেখানে অসুবিধা, সেখানে বড় পুঁজি সরকারের নানান দপ্তরের সাহায্য নিয়ে, ছোট পুঁজির করপোরেটিকরণ করে ফেলল[যেমন করে ইয়োরোপ, আমেরিকা, পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে রাস্তার খাবার বিক্রি করা হকারদের করপোরেটাইজেসন সম্পন্ন হয়েছে। যেমন করে বাংলাদেশে সেলফ-হেল্প দল গড়ার নাম করে, বিশাল সংখ্যক গ্রামীণদের খুব খুব ছোট পুঁজি(বিশ্বেন্দু নন্দ আর পার্থ পঞ্চাধ্যায়ীর সম্পাদনায় “হকার কথা” বইটিতে সুতনু ভট্টাচার্যর প্রবন্ধ দ্রষ্টব্য), বড় ব্যাঙ্কের আওতায় চলে এসেছে, যেমন করে, ছোট গলি, চার রাস্তায় রূপান্তরিত হয়ে হাইওয়ে নাম পেয়ে তার করপোরেটাইজেসন সম্পন্ন করেছে, যেমন করে পাড়ার ছোট ছোট ক্রেতার পুঁজি দখল করতে, এলাকা এলাকায় হাইপার মল তৈরি করে, ছোট বাজারকে ভাতে মেরে মধ্যবিত্তের করপোরেটাইজেসন সম্পন্ন হয়েছে]। বিনিয়োগে ব্যর্থ হলে চিরাচরিত রাষ্ট্রীয় বলপ্রয়োগের দাওয়াইতো রইলই। এই সময় থেকেই র‍্যাসনালাইজেসনের নামে, জোর করে নানান কোম্পানি অধিগ্রহনের উদ্যম শুরুহয়{এই দর্শনেই টাটা স্টিলের অবয়বের পাঁচগুণ বড় কোম্পানি, কোরাস দখল। নিন্দুকেরা প্রচার করে, টাটারা নাকি ঐতিহাসিকভাবে এশিয়ায় রথসচাইল্ড পরিবারের দালালি করত, আজও করে। তাদের হয়ে এখানে অন্যতম বিনিয়োগকারী হিসেবে কাজ করত তারা। টাটারা সেই কোন কালের আফিম ব্যবসার যুগ থেকে গাঁটছড়া বেঁধে রথসচাইল্ড পরিবারের আত্মীয়, সাসুন পরিবারের সঙ্গে মিলে হংকং আর বম্বে থেকে চিনে আফিম ব্যাবসা করত (টাটাদের আফিম ব্যবসায়  জুড়ে থাকার প্রমানের জন্য http://lokfolk.blogspot.in/search/label/%E0%A6%9F%E0%A6%BE%E0%A6%9F%E0%A6%BE%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B0%20%E0%A6%86%E0%A6%AB%E0%A6%BF%E0%A6%AE%E0%A6%AC%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%AC%E0%A6%B8%E0%A6%BE দেখুন)। 
টাটাদের কোরাস দখলের মূল পরামর্শদাতা ছিল রথসচাইল্ডের একটি কোম্পানি (http://www.livemint.com/Money/CwRq6o0OEFoACetqnmUigM/NM-Rothschild-rides-into-India-on-a-Tata-SteelCorus-high.html পশ্য)। রথসচাইল্ডের সরাসরি মদত ছাড়া এত বিশাল পুঁজি জোগাড়, বিভিন্ন সরকার নমনীয় করে তেল খাওয়া মেশিনেরমত কর্মক্ষম করা, গোটা ইওরোপ-লাতিন আমেরিকা জুড়ে সরকারি মদতে জনমত গড়ে তোলার কাজ করা, শুধুমাত্র তুরুশ্চু টাটা কোম্পানির কম্ম ছিল না। কেননা অতিসাম্প্রতিক কর্পোরেট ইতিহাস বলে, টাটারা শুধু নিজেদেরই অযুত পরিমাণ সম্পদ নয় নয়, তৎকালীন বাংলা সরকারের, সিপিএম পার্টির সমস্ত রকম সম্পদ-সমর্থন সম্বল করে, দেশ-বিদেশের তাবড় সংবাদ মাধ্যমের বেনজির সমর্থন সত্ত্বেও, মাত্র ১০০০ একরের সিঙ্গুর প্রকল্প সামলাতে পারেনি। ল্যাজ গুটিয়ে বাংলা থেকে পালিয়ে আশ্রয় নিতে হয়েছে কর্পোরেটদের বড় রাষ্ট্রীয় মদতদার, নরেন মোদীর বিপুল ভর্তুকির অরথনীতিতে। সংবাদ জগতের মদতে মুফতে কোটি কোটি টাকার মুফত প্রচার পেয়েও, বিশ্বের সবথেকে কম দামী চার চাকা মাসে ১০০০ও বিক্রি করতে পারে নি (লক্ষ্য বছরে ৩ লাখ+)। টেলিকম, বিমান ব্যবসা করতে গিয়ে বড় পুঁজির মদতদার ভারত সরকারকে প্রভাবিত করতে গিয়ে নাকানি চোবানি খেয়েছে। তারা একা করল কোরাস দখল! কয়েন না কয়েন না কত্তা! গোরায় হাসব! এইত বহু চর্চিত কর্পোরেটিয় দক্ষতার হাল। সরকারি মদত ছাড়া সব কর্পোরেটই বড় শূন্য।}। তো আমেরিকায় ছোট পুঁজির অগস্ত্যযাত্রা সম্পন্ন হল। ছোট পুঁজি ক্রমশঃ নির্ভর হয়ে পড়তে থাকে বড় পুঁজির ওপর। নইলে না মরে, টিমটিম করে বেঁচে থাকা। বড় পুঁজির কোম্পানিরা পরস্পরের সঙ্গে হাত মিলিয়ে, বিশ্ব শোষণ করার, আরও বড় উদ্যম হয়ে ওঠার সমস্ত বাধা সরিয়ে দিতে থাকে।

বিশ্বের কর্পোরেটিকরণই হল বিশ্বায়নের রাজনীতি১, Politics of Globalization is Corporetaization of the World1

স্বাধীনতার পর থেকে ভারত সরকার বড় শিল্প বানাতে তার সমস্ত উদ্যম নিয়োজিত করল।  যদিও প্রথম পরিকল্পনায় কৃষিতে সরকারের বড় নজর ছিল। মহলানবিশ-নেহরু প্রনীত অর্থনীতির অগ্রগতিতে, বিগত ৬৫ বছরে ন্যুনতম ১০ কোটি আদিবাসী এবং গ্রামীণ শ্রমিক, কারিগর নিজের জমি, কাজ, শ্রম থেকে উচ্ছেদ হয়েছেন। সরকারি-বেসরকারি উদ্যমের ঘাড়ে চেপে দখল হয়েছে প্রচুর প্রাকৃতিক সম্পদ। দখল হয়েছে স্থানীয় বাজার। ভারতের স্বাধীন সরকার গায়ের জোরে, বসতির পর বসতি উচ্ছেদ করে, জঙ্গল দখল করে, পুলিস মিলিটারি দিয়ে নিজের দেশের কারিগরি, শিল্পকে ধংস করে বড় পুঁজিকে যায়গা করে দিল। বৃটিশদের প্রবল অত্যাচার সয়ে গ্রামের ছোট উদ্যম যতটুকু বেঁচে ছিল, স্বাধীনতার পরে, সরকারি বিকাশ নীতিতে তা শেষ হয়ে যাওয়ার মুখে। সরকার এখন দয়া পরবশ হয়ে, গ্রামীণ কারু আর বস্ত্র শিল্পীদের সাহায্যের খুদকুঁড়ো দিচ্ছেন। কিন্তু আগামীদিনের আরও দুর্দশা থেকে বাঁচাবার উদ্যম নেই। ১৯৯৫-২০১০ এই পনের বছরে ভারতজুড়ে ২২ লক্ষেরও বেশি তাঁতি তাদের সাবেকি কাজ ছেড়েছেন। পরিবার ধরলে প্রায় ১ কোটি মানুষ। একটি তাঁতের সঙ্গে সরাসরি অন্তত ১০ জন প্রযুক্তিবিদ জুড়ে থাকেন। এই ২২ কোটি কাজ হারানোয় আরও আড়াই কোটি কারিগর বেকার হলেন। মোট চার কোটির কাছাকাছি মানুষ তাদের কাজ থেকে উচ্ছেদ হয়েছেন - এটি সরকারি হিসেব, শুধু তাঁতেই। ১৯৮৪র রাজীব গান্ধির নয়া তন্তু নীতির পর পরই ভারতে যতটুকু দেশের প্রযুক্তি টিকেছিল, উচ্ছেদ করে, সরাসরি বিদেশি প্রযুক্তির হাতে দেশের প্রযুক্তির বাজারকে পুরোপুরি তুলে দেওয়া হল। ভারতের দেশিয় প্রযুক্তি ধংস করে বিদেশি প্রযুক্তি ডেকে আনার তাত্বিক বিষয়ে বিশদে আলোচনার জন্য http://lokfolk.blogspot.in/search/label/%E0%A6%AB%E0%A7%81%E0%A6%B2%E0%A6%BF%E0%A7%9F%E0%A6%BE  পোস্টটি দেখতে পারেন।
রাজীবের কাছা খোলা দর্শনটিকে আরও গভীর, দার্শনিক, বাস্তবিক রূপ দিল নয়ের দশকে নরসিংহ-মনমোহন সরকার। একদিকে দেশের সব কিছু ছেড়ে, বিদেশি উদ্যমে আস্থা পোষণ এবং অন্যদিকে আমেরিকার নির্দেশ মেনে সামাজিক নানানকাজ থেকে সরকার নিজের বিনিয়োগ এবং নিয়ন্ত্রণ আলগা করার  সময়ের শুরু। এর বিপরীতে বড় পুঁজিকে যথা সম্ভব সাহায্যের সক্রিয় আশ্বাস। কিছুটা ইয়োরোপ আর পুরোটা আমেরিকা বুকে পুষে ভারতের মধ্যউচ্চবিত্ত বেলাগাম শহরীকরন আর ভোগবাদপন্থায় বিশ্বাস রাখল। সরকারি স্বাস্থ্য, জনশিক্ষাসহ নানান সামাজিক উদ্যমে সরকারি বিনিয়োগ ক্রমশঃ কমতে শুরু করল। সরকারি-বেসরকারি গাঁটছড়া উদ্যমের নামে সরকার নানান প্রকল্পে নিজেদের বিযুক্ত করতে শুরু করল। লাভ বড় পুঁজির বিনিয়োগকারীদের সিন্দুকে ঢুকত। ক্ষতি দায় সরকারের অর্থাৎ জনগণের।
সামাজিক দায়িত্ব ভুলে বড় পুঁজির প্রভাবে ন্যুনতম শাসনের দর্শন ক্রমশঃ থানা গাড়ল। নয়ের দশকের আগের সরকারগুলি ঘোমটা পরে বড় পুঁজির দাসত্ব করেছে। কিন্তু বাঁ হাতে হলেও কিছুটা সম্পদ সামাজিক খাতে ব্যয় করতে হত। নরসিংহ রাও সরকারের পর থেকে প্রায় সব ভারত সরকারই চক্ষুলজ্জাহীনভাবে বড় পুঁজির তরফদারি করা শুরু করল। বড় পুঁজি নানান আর্থিক সাহায্য এবং কর ছাড় পেল। বিপদে পড়লে এদের উদ্ধারে সক্রিয়ভাবে এগিয়ে এল সরকার। সরকার আর বড় পুঁজি বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের সাথে হাত মিলিয়ে এমন এক পরিবেশ তৈরি করার কাজ শুরু হল, যাতে দেশের মধ্যবিত্তের মনে হয় (যাদের একাংশ সরকারি-বেসরকারি আমলাতন্ত্র। এদের উদ্যোগে বিশ্ব বড় পুঁজি, ভারতের অধরা বাজার ধরার কাজ করতে শুরু করেছে। সরকারি স্তরেও বলা হচ্ছে অত্যধিক মুনাফা করা দারশনিকভাবে খুব খারাপ কাজ নয়। বরং কয়লা, তেল, ব্যাঙ্ক ইত্যাদির জাতীয় করণ করার চেষ্টাটাই পিছিয়ে পড়া চিন্তা) বড় পুঁজি আর বিদেশি বিনিয়োগ ছাড়া ভারত বিকাশের গতি নেই। কর্পোরেট জগতের সমস্ত নিয়ন্ত্রণ তুলে দেওয়ার সওয়াল একের পর এক বাস্তবায়িত হওয়া শুরু হয় আমলাদের উদ্যমে। রাজনৈতিক ঐক্যমত্য তৈরি করা হয়। বড় পুঁজির সেবাদাস মধ্যবিত্তরা মুক্ত কচ্ছ হয়ে বড় পুঁজির পদ লেহন শুরু করে।
বিশ্বে এ ধরণের ঘটনাক্রম খুব নতুন অভিজ্ঞতা নয়। ভারত এই খেলায় নতুন। এশিয়া, ইয়োরোপ আমেরিকা, লাতিন আমেরিকা, আফ্রিকা, ভূমধ্যসাগরীয় দেশগুলিতে ঠিক যেমনভাবে উন্নয়ন ঘটেছিল সেই পথ ধরল ভারত সরকার। কেননা বড় ব্যবসা, বড় পুঁজি সরকারি সাহায্য ছাড়া বাড়তে পারে না। এটি ঐতিহাসিক সত্য। ভারতের উচ্চমধ্যবিত্ত সেই ভাঙ্গা পথে চলতে চাইছে। আমরা দেখেছি, এই কর্পোরেট নীতিতে দেশ চালাতে গিয়ে একের পর এক দেশ মুখ থুবড়ে পড়েছে। জার্মানি থেকে গ্রিস থেকে ব্রাজিল থেকে ইন্দোনেশিয়া সকলেই আজ নতুন ভোরের অপেক্ষায়। বড় পুঁজির চাপ রয়েছে। কিন্তু পুরনো পথ ছাড়া শুধু সময়ের অপেক্ষা। উচ্চমধ্যবিত্ত ভারত আজ দাঁড়িয়ে সেই ফেলে আসা ভাঙ্গাচোরা পথে উন্নয়নের স্বপ্ন দেখছে।