Showing posts with label ব্রিটিশ বিনিয়োগ. Show all posts
Showing posts with label ব্রিটিশ বিনিয়োগ. Show all posts

Sunday, April 21, 2013

ডিম পাড়ে মুরগি আর খায় দারোগা - ব্রিটিশ বিনিয়োগে বিশ্বজোড়া লুঠের রেলপথ

এ এক অদ্ভুত বিনিয়োগ চক্র। বাংলায় লুঠে হাতপাকিয়ে ভারত লুঠ করে যে সম্পদ ব্রিটেনে নিয়ে গিয়েছে লুঠেরা ব্রিটিশরা, সেই অর্থই বিশ্বজুড়ে নানান প্রকল্পে বিনিয়োজিত হয়ে ফলে ফুলে বিকশিত হয়ে তথাকথিত প্রথম বিশ্ব তৈরি করেছে। সেই লুঠের অর্থ কিভাবে অর্জিত হয়েছিল তার বিশদ বিবরণ এই ব্লগ খুঁজলে পাওয়া যাবে। প্রয়োজনে আবারও একবার সেই লেখাটি নতুন করে ব্লগের দেওয়ালে চিপকে দেওয়া যাবে। - ব্লগ সম্পাদক(এখানে সম্পাদক মূল অর্থেই ধরুন, সম্পাদনা করা অর্থ, কাজ করা এডিট করা নয়।)

১৮৩০এ প্রথম বাষ্পীয় ইঞ্জিন রেলপথে দৌড়োবার ২০ বছর পর্যন্ত ব্রিটেনের রেলপথ তৈরিতে অভূতপূর্ব পরিমান অর্থ বিনিয়োজিত হয়। ১৮৫০ পর্যন্ত ব্রিটেনজুড়ে ৬০০০ মাইল রেলপথ পাতা হয়, আরও ১০০০ মাইলের কাজ চলতে থাকে। ১৮৪৪ থেকে ১৮৪৬ পর্যন্ত যতটা রেলপথ তৈরি হয়েছিল তার তিনগুন পথ, ৮৫০০ মাইল লাইন তৈরির অনুমতি(অথরাইজ) দেয় পার্লামেন্ট । ১৮৪৩ থেকে ১৮৫০ পর্যন্ত ১০৯ মিলিয়ন পাউন্ড রেলে বিনিয়োগ হয়। বছরে রেলপথ বৃদ্ধির হার ছিল ২০ শতাংশ। ১৮৪৭এ ব্রিটেনের ৭ শতাংশ মোট জাতীয় আয় এবং দেশের গড় আভ্যন্তরীণ বিনিয়গের ৬০ শতাংশ বিনিয়োজিত হয় ব্রিটিশ রেলপথে।  
উচ্চহারে বিনিয়োগের লাভ থেকে নিশ্চিত ফেরতের আশ্বাসে রেলপথের বিশাল পরিমানে বিনিয়োগ আসতে থাকে। ৪০সালে যে লাইনটি প্রথম পাতা হয়, মন্দার জন্য ঠিক মত ফেরত না হলেও রেল ষ্টক বছরে ১০ শতাংশ আয় দিতে থাকে। তবে এ ধরনের ফাটকাবাজি বেশিদিন চলেনি। ১৮৫০এর মধ্যে দেশের অধিকাংশ রেলজাল তৈরি হয়ে গিয়েছিল। নতুন লাইনও তৈরি হতে থাকে। তবে সেগুলো থেকে খুব বেশি রোজগার হচ্ছিলনা। ফলে অংশীদারদের ফেরতও ঠিকঠাক দেওয়া যাচ্ছিল না। ১৮৪৮এ দ্বিতীয় রেল ম্যানিয়া বা আজকের ভাষায় রেল বেলুনে(বাবল) অথবা রেলপথে বিনিয়োগে অজস্র ছিদ্র ধরা পড়ে চুপসে যেতে থাকে। দেশে রেলে বিনিয়োগের হার ২০ থেকে ৫ শতাংশে নেমে আসে। স্টকে গড় আয় (ডিভিডেন্ড) কমে দাঁড়ায় ১.৮৮ শতাংশ। 
এমত অবস্থায় বিনিয়োগকারীদের জন্য ছিল সুবর্ন সুযোগ দেশের বাইরে লুঠের জন্য তৈরি রাখা দখলি ভূখণ্ড – উপনিবেশ। এছাড়াও অন্য দেশগুলোতেও বিনিয়োগের কথা ভাবা শুরু হতে থাকে। ১৮৭০ থেকে ১৯১৩ পর্যন্ত দেশের আয়ের ৫ শতাংশ আর সঞ্চয়ের ৫০শতাংশ বিদেশে ধার দেওয়া হয়। ধরে নেওয়া হয় এই বিশাল অংশের অর্ধেক বিনিয়োগ হয়েছিল বিদেশে রেলপথ তৈরির জন্য। ১৮৭০ থেকে ১৮৯০ পর্যন্ত দেশে বিনিয়োগ কমে যাওয়ার দরুন ১৮৮০ থেকে ১৯০৫ পর্যন্ত বিদেশে ব্রিটিশ বিনিয়োগ শীর্ষে পৌঁছয়। ‘The determinants of UK investment abroad, 1870-1913: the U.S. case’, Michael Edelstein বলছেন বিদেশের প্রয়োজনে এই বিনিয়োগ হয় নি, হয়েছে ব্রিটিশ বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের যায়গা না থাকায়।
অন্যভাবে বলা যায়, বিদেশে, বিশেষ করে উপনিবেশগুলোর কাঁচামাল অত সস্তায় ব্রিটেনের শিল্পকারখানাগুলতে আনতে ব্রিটিশ বিনিয়োগকারীরা যথেচ্ছ ভাবে রেলপথ তৈরি করতে থাকে। মনেরাখতে হবে, ভারতের মত বিশাল উপনিবেশে বিশাল পরিমানে রেলপথ তৈরি করেছে মাত্র ৫টি রেল কোম্পানি। যতনা বেশী বিনিয়োগের চাড়, তার থেকে বেশী উদ্যোগ, উপনিবেশে রেল চালানোর ক্ষতির ভাগটি জনগণের ঘাড়ে চাপিয়ে লভ্যাংশটিকে পকেটস্থ করা এবং দেশের কারখানার জন্য প্রায় বিনা বিনিয়গে কাঁচামাল বহন করে আনা আর সেই কাঁচামাল প্রক্রিয়া করে উতপন্ন দ্রব্য উপনিবেশের বাজারে বিক্রি করা।
তবে ব্রিটিশ ব্যাবসার মুনাফার জন্য রেল কোম্পানিগুলি নানাধরনের শুল্ক বরাদ্দ করত। ভারতের উদাহরণটিই দেখাযক। যে কোনও সমুদ্র বন্দর থেকে ভারতে পণ্য আনার জন্য কম শুল্ক দিতে হত।  ভারত থেকে কাঁচামাল সমুদ্র বন্দর পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার খরচও কম ছিল।  কিন্তু ভারতের এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় মাল পরিবহন করতে অনেক বেশী পরবহন শুল্ক দিতে হত। অর্থাৎ ব্রিটিশ ব্যবসায়ীদের জন্য সরকারি মদতে অতিরিক্ত ছাড় আর ভারতীয় ব্যবসায়ীদের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক। সবথেকে বেশি ছাড় পেয়েছে লন্ডনের লোহা আর রং কোম্পানিগুলি। রেলপথ তৈরিতে এই দুটি ব্যাপকভাবে ব্যবহার হত। ভারতীয় রেল ছিল ধ্রুপদি ঔপনিবেশিক অর্থনীতির অন্যতম মুখ্য উদাহরণযদিও মার্শালেরমত ঐতিহাসিকেরা বলছেন স্থানীয় জনগণের ওপর রেলের প্রভাব স্বতঃসিদ্ধ(While the benefits of railways may have been self-evident to local populations, in almost every case their construction was impossible without foreign investment, and during this period major investment came almost entirely from London private banking houses.)অর্থাৎ উপনিবেশএ রেল উপকারই করেছে। কতটা উপকার করেছে তার উদাহরণ আমরা অন্য প্রবন্ধে দেখেছি। 
দক্ষিণ আফ্রিকা, আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল এবং অন্য দেশে স্থানীয় উদ্যমীরা রেলপথ তৈরিতে এগিয়ে এলেও প্রয়োজনীয় অর্থ তোলা সম্ভব হয় নি। তার জন্য ব্রিটিশ বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে কথাও চলতে থাকে। কিন্তু যতদিননা সেই দেশের স্থানীয় সরকার সেই বিনিয়োগের দায়িত্ব নেয় নি, ততদিন কোনও ব্রিটিশ বিনিয়োগ অন্তত সে দেশের রেলপথে আসেনি। সরকারগুলি ডিভিডেন্ড দেওওার নিশ্চিতকরণ আর কর ছাড়ে রাজি হওয়ার পরই যৌথ উদ্যোগে ব্রিটিশ বিনিয়োগ সেই সব দেশে আসতে থাকে। রাশিয়াই প্রথম সরকার যে বেসরকারি বিদেশী রেল বিনিয়োগে গ্যারান্টি প্রথা চালু করে। মস্কো থেকে সেন্ট পিটাসবারগে রেল লাইন তৈরিতে ৪ শতাংশ গ্যারান্টি দেয় রুশ সরকার। ১৮৫৩ থেকে ভারতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি শাসনে ভারত শাসক লর্ড ডালহৌসি এবং ১৮৫৮র পর ভারত দেশটিকে জাতীয়করণ করা ব্রিটিশ শাসক ব্রিটিশ রেল বিনিয়োগের ওপর ৫ শতাংশ নিশ্চিন্ত ফেরতের গ্যারান্টি প্রদান করে। 
ব্রাজিল সরকার বিনিয়োগের ওপর নানান ছাড় দিলেও স্থানীয় উদ্যমীরা অর্থ তুলতে ব্যর্থ হয়। তারা ব্রাজিল সরকারকে বলে ব্রিটিশ সরকারকে তোল্লাই দিয়ে বেসরকারি ব্রিটিশ বিনিয়োগ দেশে নিয়ে আসতে। ১৮৫২তে ব্রিটিশদের দাবি মত এক্সচেঞ্জ হার তৈরি হয়, উপরন্তু বিনিয়গের ওপর ৫ শতাংশ নিশ্চিন্ত ফেরতের গ্যারান্টি দিতে হয়, বিক্রি না হওয়া শেয়ার কিনতে রাজি হতে হয়, আমদানি শুল্ক তুলে নেওয়া হয়, বিনিয়োগকারীদের জমির ওপর মালিকানা(ল্যান্ড গ্রান্ট) দেওয়া হয় এবং legislated compulsory land appropriations করা হয়, তাদের রেলপথে কোনও প্রতিযোগিতা করতে হবে না এমন শর্তও মেনে নেওয়া হয়। এমতবস্থায় দুটি লন্ডনের কোম্পানি আবেদন করে, দুটিকেই কাজ করার অনুমতি দেওয়া হয়।
১৮৬২তে আর্জেন্টিনা সরকার জুয়ান আর মেটিও ক্লার্ককে রেলপথ তৈরির অনুমতি দেয়। তারাও যথেষ্ট পরিমান বিনিয়োগ জোগাড় করতে পারে নি। তারা ব্রিটেনে বিনিয়োগকারীদের ৮ শতাংশ ফেরতের আশ্বাস দেয়। বিনিয়োগকারীদের দাবি আর্জেন্টিনা সরকার, রেল কোম্পানিকে ফেরত না দিয়ে তাদের অংশিদারদের সরাসরি ৭ শতাংশ ফেরতের গ্যারান্টি দিক। অপ্রতিযোগিতা অঞ্চলেও তাদের কাজ করার সুযোগ দেওয়ার দাবি করে।
১৮৪৭ থেকে ১৮৬৫ পর্যন্ত ব্রিটেন আর কানাডার মধ্যে ১১টি রেল চুক্তি সম্পাদিত হয়। এই চুক্তিবলে কানাডা ব্রিটিশ অর্থ দপ্তরকে(ব্রিটিশ ট্রেজারি) লন্ডন আর কানাডায় বিনিয়োগের অর্থ তোলার দায়িত্ব দেয়। কানাডার রেল আইন তৈরি হয় ব্রিটিশ বিনিয়োগকারীদের সুবিধের, আরও বেশি লাভের দিকে তাকিয়ে। আইনে একচেটিয়া কারবারের সুযোগ রাখা হয়। বিলা হয় অন্তত ১০ বছর অন্য কোনও(বিশেষ করে আমেরিকার) বিনিয়োগকারী পশ্চিম কানাডায় রেলপথ বিকাশে বিনিয়োগ করতে না পারে। 
ফেরতের গ্যারান্টি ছাড়াও বিদেশে রেলপথ তৈরির কাজে ব্রিটেনে রেল, ইঞ্জিন, অন্য রেলপথ তৈরির সামগ্রী তৈরির কারখানা বিশাল অঙ্কের কাজ পেতে থাকে। বিনামূল্যে জমি, সস্তার কুলি, লুঠের অর্থ বিনিয়োগ করে বিশ্বজুড়ে তৈরিকরা রেলপথে উপনিবেশ এবং নানান দেশ থেকে ব্রিটেনে সস্তায় কাঁচামাল আমদানি আর তৈরি দ্রব্য রপ্তানির সুযোগ তৈরি করল ব্রিটিশ সাম্রাজ্য। সমগ্র বিনিয়োগের শর্তই তৈরি করা হয়েছে ব্রিটিশদের কোলে ঝোল টেনে। স্থানীয় বিনিয়োগকারী অথবা সরকার শুধুমাত্র সাহায্যকারীর ভূমিকা পালন করে গিয়েছে। সেই রেলপথ কোথায় তৈরি হবে, কিভাবে তৈরি হবে অথবা কে তৈরি করবে, কি জন্য তৈরি হবে সেই পরিকল্পনায় অংশগ্রহণ করা অথবা রেলের দৈনন্দিন ব্যাবস্থাপনায় মাথা গলানোর সুযোগ ছিলনা।  
সরকারগুলোও সেই বিষয়টা জানত না তা নয়। থাই সরকারের একটি মেমোতে সরাসরি মন্তব্য করা হয়েছে, '[i]f we only approve this British railway, it will transport commodities to and from Moulmen and lead only to British profit, not to any increase in our prosperity'কিন্তু সরকার ব্রিটিশদের সামনে মাথা নত করে। ভারতে এই কোম্পানিগুলোর বোর্ডে সরকারি প্রতিনিধি থাকলেও হয় তারা কাজের বিষয় সম্বন্ধে অজ্ঞ অথবা কম্পানিগুলো তাদের পাত্তা দিত না, কাজ শেষ করে তাদের কাছে অনুমতির জন্য আসত।
চিন সরকারও বহু বছর ধরে রেল রাস্তা তৈরির কাজ বন্ধ রাখতে সমর্থ হয়। বহুদিন ধরে চিন সরকার সেই নিরমান বন্ধ করে দিতে পেরেছিল। যুক্তি ছিল স্থানীয় সম্পদ দিয়ে রেল তৈরির কাজ বেশ খরচ সাপেক্ষ। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির এজেন্ট জারডিন মাথিসন, ২৭টি কোম্পানির তরফে লবি করা সুরু করে। শেষ পর্যন্ত ১৮৯২তে চিনা সরকার মাথা নত করে। তৈরি হয় ইম্পিরিয়াল রেলওয়ে এডমিনিসট্রেশন। ১৮৯৮তে আফিম ব্যাবসায়ী জারডিন মাথিসন কোম্পানি, তাদেরই ব্যাঙ্ক হংকং সাংঘাই বাঙ্কিং করপোরেশন তৈরি করল ব্রিটিশ অ্যান্ড চাইনিজ করপোরেশন লি। এই কোম্পানি ৪টি রেলপথ তৈরির অনুমতি পায়।
রেল আর বিদেশে চাকরি
সে সময় বিভিন্ন কলেজ থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে বেরনো প্রশিক্ষিত ব্রিটিশ ইঞ্জিনিয়ারেরা এই কাজকে আরও সুচারুরূপে সমাধা করতে সাহায্য করে। বোঝা যাচ্ছিল ১৮৫০এর আগে যে গতিতে ব্রিটিশ রেলপথ পাতা হচ্ছিল তা অবাস্তব। ১৮৪১এ ইন্সটিটিউশন অব সিভিল এঞ্জিনিয়রসের প্রেসিডেনট, জেমস ওয়াকার বলেন, ‘If we look at the number of students in the classes for civil engineering at the different Universities and Academies; …we are led to ask, will the country find employment for all these? I freely confess that I doubt it. ফলে চাকরির জন্য অপেক্ষা করা এই প্রযুক্তিবিদদের বিদেশে পাঠিয়ে নিজেদেরমত করে রেল প্রকল্পগুলোকে ঠিক মত তৈরি আর পরিচালনা করার উদ্যম পেয়েছিলেন  ব্রিটিশ বিনিয়োগকারীরা। অনেকসময় বিনিয়োগকারীরা বিদ্যালয়গুলো থেকেই তাদের ভবিষ্যৎ কর্মচারী নিয়োগ করতেন। কানাডার গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রেলওয়ের ব্রিটিশ বিনিয়োগকারীরা ইঞ্জিনিয়ার আর পরিচালক বেছে নিয়েছেন।
বিদেশে চাকরি করা বহু প্রযুক্তিবিদের স্মৃতিকথায় তাদের কাজের নানাদিক বুঝে নেওয়া যায়। বহু চাকরিপ্রার্থীই বিদেশে কাজ করতে পছন্দ করতেন। তবে তাদের যথেষ্ট প্রশিক্ষণ আর হাতেকলমে কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হত - অন্তত নিজের দেশেতো বটেই। বিভিন্ন প্রবীণ প্রযুক্তিবিদ যারা বিদেশের রেল প্রকল্পে বিনিয়োগকারীদের পরামর্শদাতার কাজ করছেন, অভিজ্ঞ কারিগরদেরই বিদেশের কাজে সুপারিশ করতেন। জেমস এবারনেথি ৩০ বছর ব্রিটেনএ রেলপথে বরিষ্ঠ পদে কাজের অভিজ্ঞতার জন্য তুরিন অ্যান্ড স্যাভোনা রেলওয়ের প্রধানরূপে নির্বাচিত হন। ১৮৫১তে দ্য গ্রেট ইন্ডিয়ান পেনিনসুলার রেলওয়েতে রবার্ট স্টিফেন্সনের প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হন জর্জ বার্কলে। তিনিই ১৮৫৯তে স্টিফেন্সনের মৃত্যুর পর তার পদে মনোনীত হন। তার ভাই, জেমেস জন বার্কলেও একই কোম্পানিতে কাজ করতেন। অন্যান্য ইঞ্জিনিয়ার এবং স্টিফেন্সনই সেই রেলপথের প্রধান প্রযুক্তিবিদ হিসেবে তার নাম প্রস্তাব করেন। এরকম বহু উদাহরণ দেওয়া যায়।
বহু ইঞ্জিনিয়ার ব্রিটেনে কাজ না পেয়ে বিদেশে ভাগ্য নির্ধারণে বেরিয়ে পড়তেন। বহুদিন একটি প্রযুক্তি সংস্থায় কাজ করার পর ২৭ বছরের ডেভিড আঙ্গাস নিজে কাজ করতে চাইছিলেন। তিনি ব্রিটেনে কাজ পাননি। তিনি ওয়ারিং ভাইদের ব্রাজিলে রেলপথ পাতার সমীক্ষা করার কাজে যোগ দেন। স্মৃতিকথায় আঙ্গাস বলছেন বিদেশে কাজ করার সুবিধে হল মনের মত মাইনে পাওয়া যায়। তিনি ব্রাজিলে বছরে ৪০০ ডলার মাইনে এবং আরও নানান সুযোগ সুবিধে পেতেন। ব্রিটেনে এই পদে থাকলে রোজগার করতেন বড়জোর ১০০ ডলার। এডওইয়ার্ডস জোনস উইলিয়ামস ব্রিটেনএ কাজ না জোগাড় করতে পেরে সমস্ত পরিবার নিয়ে ওয়েলসের উপনিবেশ পাতাগনিয়ার ছুবারএ কাজে এলেন। জন ব্লাকেট গ্রেট ওয়েস্টারন রেলওয়ের কাজ ছেড়ে, ১৮৫১ সালে ৩২ বছর বয়সে নিউজিল্যান্ডে চাকরি করে ১৮৮৮তে পুরো উপনিবেশের প্রধান হন এবং ১৮৮৯ থেকে নিউজিল্যান্ড সরকারের পরামর্শ দাতা হিসেবে কাজ করতে থাকেন।
বহু প্রযুক্তিবিদ ভারতে শুধুই পারিবারিক যোগাযোগে চাকরি পেয়েছেন। আলফ্রেড ভক্স, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিতে চাকরি করা কাকার সুপারিশে ইস্ট ইন্ডিয়ান রেলওয়েতে চাকরি অর্জন করেন। ভারতে যুবা বয়সে কাজে হাত পাকিয়ে পাকাপাকি চাকরিতে ঢুকে পরতেন। ১৮৬৯এ সুয়েজ খাল খুলে যাওয়ায় বহু ইঞ্জিনিয়ার সরকারি চাকুরে আর বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে সহজে মেলামেশার সুযোগ পেলেন। ভারতে যুবারাই কাজ পেতেন।  

Saturday, April 20, 2013

উপনিবেশ, রেলপথ, ব্রিটিশ বিনিয়োগ - colonial india, railways & secured british investment


১৮৪৬ সালে বম্বের রেভিনু কমিশনার টমাস উইলিয়ামসন গ্রেট ইন্ডিয়ান পেনিনসুলার রেলওয়ে কোম্পানির চেয়ারম্যানকে একটি চিঠি লেখেন। সেটির বয়ানটি এইরূপ -  The great trunk-line, running by the Malseje Ghaut in the direction of Nagpur, would be most direct which could possibly be selected to connect Bombay to Calcutta. Commercially, it would be best for the cotton of Berar, while for the first 120 miles from Bombay we would proceed in the immediate direction of the military stations of Ahmed­nuggur, Jaulna and Aurangabadএই চিঠিটির চার বছর পর এই কোম্পানিটি ভারতের প্রথম রেলপথ, বোম্বে থেকে থানের রেলপথ ১৮৫৩তে চালু করে। ১৯০০ সালের মধ্যে ২৪০০০ মাইলএরও বেশী রেলপথ পাতা হয়ে যায়। এই বিশাল পরিমান বিনিয়োগ আসে ব্রিটিশ বিনয়গকারিদের থেকে।
ব্যক্তিগত মালিকানার কোম্পানিগুলি পুরোপুরি সরকারি মদতে শুধু রেলপথই তৈরি করে নি, সেগুলোর মালিকানাও তাদের ছিল। উনবিংশ শতকের শেষ পর্যন্ত প্রত্যেক বছর মোটামুটি ১,৪০৫ মাইল রেলপথ তৈরি হতে থাকে। বিনিয়োগ হয় ১৫০ মিলয়ন পাউন্ড। এই এই বিনিয়োগ শুধু বিশাল অঙ্কই নয়, বিশ্বে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সবথেকে বড়ও বিনিয়োগ বটে।
কোমপানিগুলো ৫ শতাংশ হারে বিনিয়োগের ফেরতের সরকারি আশ্বাস পায়। ১৮৬৯ থেকে ১৮০০ পর্যন্ত ব্রিটিশ কোম্পানিগুলিই ভারতে রেলপথ তৈরির বরাত পায়। রেল রাস্তা তৈরি বা চালানোয় কোম্পানিগুলির ক্ষতি হলে সেই ক্ষতিপূরন হিসেবে ভারত সরকার রাজস্ব খাত থেকে ৫০ মিলিয়ন পাউন্ড সরকারি গ্যারান্টি প্রদান করে। এই গ্যারান্টি ব্যবস্থার বলে, কোম্পানিগুলি তাদের অংশিদারদের আশ্বাস দিয়ে বলে, কোম্পানির যদি ক্ষতি হয় তাহলে ভারতের করদাতারা সেই ক্ষতি পূরণ করতে বাধ্য থাকবে। অর্থাৎ এ এক বিচিত্র ব্যবসাচক্র। লাভ হলে কোম্পানির আর ক্ষতি হলে ভারতের করদাতাদের। ব্রিটিশ বিনিয়োগ ভারতে এল এই শর্তে, ব্যক্তিগত বিনিয়োগ হবে সরকারি ঝুঁকি আর দয়িত্বে(রিস্ক)। ১৮৭০এ ভারতে রেলপথে ব্রিটিশ বিনিয়োগ আসার পরিমানকে ছাড়িয়ে গেল ভারত থেকে ব্রিটেনে যাওয়া সুদের পরিমান। এবং উনবিংশ শতকের শেষে, ভারতের রেলপথে ব্রিটেনের বিনিয়োগ ৩৫০ মিলিয়ন পাউন্ড-স্টার্লিং – ব্রিটেনের বাইরে সাম্রাজ্যের সব থেকে বড় বিনিয়োগ।   
এই গ্যারান্টি সিস্টেমে সবকটি চুক্তি ব্রিটিশ কোম্পানির সঙ্গে করতে হত। সরকার নিশ্চিন্ত বিনিয়োগ ফেরত দেওয়ার গ্যারান্টি ছাড়াও দিত বিনামুল্যে জমি, আর সস্তা শ্রমিক। ভারতে বিনিয়োগ হওয়া প্রত্যেকটি অর্থ ব্রিটেনেই তোলা হয়েছে এবং একমাত্র লন্ডনের শেয়ার বাজারেই সেই শেয়ার বিক্রি করাযেত। গ্যারান্টি সিস্টেম ব্যবসায়ীদের চাহিদা না থাকলেও আরও বেশী করে রেলপথ তৈরির প্রণোদনা যোগাত। ১৮৪৯ থেকে ১৯০০ পর্যন্ত ৫৬৮ কোটি টাকা ভারতকে শোধ করতে হয়েছে। ১৮৮২-৮৩ সালেই রেলকে ধরে ব্যালেন্স অফ পেমেন্ট ছিল ভারতের জাতীয় আয়ের ৪।১৪ শতাংশ(The great trunk-line, running by the Malseje Ghaut in the direction of Nagpur, would be most direct which could possibly be selected to connect Bombay to Calcutta. Commercially, it would be best for the cotton of Berar, while for the first 120 miles from Bombay we would proceed in the immediate direction of the military stations of Ahmed­nuggur, Jaulna and Aurangabad - Irfan Habib, Essays in Indian History: Towards a Marxist Perception, Madras, 1995, pp 279 and 360)। 
উনবিংশ শতকের শেষ অব্দি ভারত ব্রিটিশ তৈরি দ্রব্যের সবথেকে বড়ও বাজার ছিল। ভারত তার বদলে ব্রিটেনকে দিত কাঁচামাল, অপ্রক্রিয়াজাত কৃষি উতপন্ন।  এই সমস্ত কাঁচামাল পোতাশ্রয় পর্যন্ত পৌঁছত ভারতীয়দের করের সাবসিডিতে তৈরি রেলপথে। রেলপথ তৈরির উদ্যমে অন্য কোনও দিকেই নজর ঘোরায় নি ভারত সরকার। ১৮৮০ সাল নাগাদ সেচ ব্যাবস্থায় বিনিয়োগের তুলনায় রেলপথে বিনিয়োগ হয় ১৩গুণ। ১৮৭৭-৭৮এ স্যর আরথার কটন আর ফ্লোরেন্স নাইটিংগল সেচ ব্যবস্থায় বিনিয়োগের দিকে সকলের নজর ঘোরাতে চেয়েছিলেন। তারা বলেছেন গরীব ভারতীয়দের ওপর ১৬০ মিলিয়ন টাকার বোঝা চাপানো হচ্ছে। গান্ধীও পরে একই কথা বলেছেন।
 রেল ভারতজুড়ে বছরের পর বছর একচেটিয়া ব্যাবসা করেছে। সরকারি বা বেসরকারিস্তরেও জলপথ, সড়ক অথবা অন্যান্য পরিবহনে বিনিয়োগে উতসাহ দেখা যায় নি। রেল কোম্পানিগুলির ওপর সরকারের কোনও নিয়ন্ত্রন ছিলনা, করতেও চায়নি। ভারতের মোট রেল ব্যাবসা নিয়ন্ত্রন করত মাত্র পাঁচটি ব্রিটিশ কোম্পানি। প্রত্যেকটির উদ্দেশ্য সর্বোচ্চ  লাভ। কোম্পানিগুলির মূল ব্যাবসা যেহেতু ছিল সরকার আর সরকারের অন্যতম অংশ সেনাবাহিনীর সঙ্গে, তাই কোম্পানিগুলো পরিবহন শুল্ক কমাতে চাইত না।  মনেরাখতে হবে ভারত সরকার এই ব্যবসার অন্যতম বড় অংশিদার। ফলে সরকারের কাছে ছাড় চাওয়ার কোন সুযোগও ছিলনা।
তবে ব্রিটিশ ব্যাবসার মুনাফার জন্য রেল কম্পানিগুলি নানাধরনের শুল্ক বরাদ্দ করত। বন্দর থেকে ভারতের যে কোনও স্থানে পন্য আনতে গেলে কম শুল্ক দিতে হত।  ভারত থেকে কাঁচামাল বন্দর পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার খরচও কম ছিল।  কিন্তু ভারতের এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় মাল পরিবহন করতে অনেক বেশী পরবহন শুল্ক দিতে হত। অর্থাৎ ব্রিটিশ ব্যবসায়ীদের জন্য সরকারি মদতে অতিরিক্ত ছাড় আর ভারতীয় ব্যবসায়ীদের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক। সবথেকে বেশি ছাড় পেয়েছে লন্ডনের লোহা আর রং কোম্পানিগুলি। কেননা রেলপথ তৈরিতে এই দুটি ব্যাপকভাবে ব্যবহার হত।

সুত্রঃ British Imperial Railways in Nineteenth Century South Asia
Laxman D Satya (lsatya_99@yahoo.com) is at the  Department of History, Lock Haven University of Pennsylvania, US.
November 22, 2008Economic & Political Weekly