Showing posts with label AHKAM-I-ALAMGIRI. Show all posts
Showing posts with label AHKAM-I-ALAMGIRI. Show all posts

Friday, July 22, 2016

Anecdotes of Aurangzeb – আহকমইআলমগিরি - আওরঙ্গজেবের উপাখ্যান

চতুর্থ খণ্ড

৭২। নির্দয়ভাবে জাজিয়া মাথট প্রয়োগ করা হত

বুরহানপুর থেকে সম্রাট যেখানে থাকেন, সেই পথ ও ইসলামপুরির মূল শিবির দেখাশোনার কাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত ফিরুজ জং খাঁয় সম্রাটকে চিঠি লিখে জানিয়েছেন যে, ‘প্রাবীন দাস-কন্যা আদতে এই বংশানুক্রমিক সেবক(ফিরুজ জং)এর মাতার সমাধি ভীম নদীর ওপর পাড়ে অবস্থিত। সেই এলাকার শষ্য বাজারের বিক্রেতার সংখ্যা বাড়ানো খুব প্রয়োজন, যাতে সম্রাটের শিবির পর্যন্ত পর্যাপ্ত খাবারদাবার পৌঁছতে পারে নির্বিঘ্নে। কিন্তু এটা(বিক্রেতার সংখ্যা বাড়াবার কাজ) করা সম্ভব হবে না, যদি না আমরা জিজিয়া নামক মাথট করটি হিন্দু জনগনের ওপর থেকে প্রত্যাহার করে না নিই। প্রয়োজনে আপনি ইনায়েতুল্লা খাঁকে সনদ জারি করে জিজিয়া মাথটটি তুলে দেওয়ার কাজ শুরু করার নির্দেশ দিন’।

সম্রাট লিখলেন, ‘অবিশ্বাসীদের থেকে কোন সাহায্যকারী চাই না। সমাধির কাছে শস্য বাজার দখল করতে গিয়ে পুণ্য কোরাণে উদ্ধৃত জিজিয়া সংক্রান্ত বাণী(যতক্ষণনা তারা জিজিয়া দিতে রাজি হচ্ছে ততক্ষণ তাদের ওপর অত্যাচার কর) উল্লঙ্ঘন করে তাদের ক্ষমা করার কথা বলছ – এই বাণীগুলি আমাদের পুণ্য ধর্মীয় আইনের সত্যিকারের জ্ঞান এবং বশ্যতার কথা যা এই সেবক ধারণ করে রয়েছে, সেটা তোমার জানা উচিত। বোঝা যাচ্ছে, কিছু মানুষ যারা ঝাড়ুদারের থেকেও নোংরা, তারা তোমার মনে সংশয় উতপাদন করেছে, এবং তোমায় অন্ধ করে তোমার মনে এই ধরণের ঘৃণিত ধারণা প্রবেশ করিয়েছে। এতি দিনের অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ এই বৃদ্ধ, কি করে এই ছলনায় ভোলে! (কবিতা)
চলে যাও! এই ফাঁদটা অন্য কোন পাখির জন্য ছড়য়ে দাও/ জেনে রাখ ফিনিক্সের নীড় অনেক ওপরে থাকে!

মন্তব্য – ফিরুজ জং ১৭০১ সালের অক্টোবরে ভীম নদীর তীরে ইসলামপুরী শহরে সম্রাটের মূল শিবির পাহারা দেওয়ার কাজে নিযুক্ত হয়। জাজিয়া বিষয়ে আওরঙ্গজেবের কঠোরতার বর্ণনা কাফি খাঁএর লেখায় পাওয়া যায়।
(শেষ)

Anecdotes of Aurangzeb – আহকমইআলমগিরি - আওরঙ্গজেবের উপাখ্যান

চতুর্থ খণ্ড

৭১। হিন্দু যুদ্ধবন্দীদের প্রাণদণ্ড দেওয়া হল

রামজান মাসে সাতারা দুর্গ অবরোধের সময় দুর্গের চার জন মুসলমান এবং তিনজন হিন্দু সেনাকে গ্রেফতার করা হয়। সম্রাট, প্রধান কাজি, কাজি মহম্মদ আক্রমকে নির্দেশ দিলেন মুফতির সাহায্য নিয়ে এই বন্দীদের সঙ্গে কি ধরণের ব্যবহার করা যায় তা ঠিক করতে। (ধর্মীয় গ্রন্থ পড়ে)ঠিক হল, অবিশ্বাসীরা যদি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে তাহলে তাদের ছেড়ে দেওয়া হবে আর মুসলমান বন্দীদের তিন বছর কারাদণ্ড দেওয়া হবে।

আইনি পরামর্শ দেওয়ার পত্রে সম্রাট লিখলেন, ‘হানাফি তত্ত্ব অনুসারে সিদ্ধান্ত নাও; অন্য তত্ত্ব অনুসারেও সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে, যাতে এই রাজ্যের ওপরে আমাদের নিয়ন্ত্রণ না ঢিলে হয়। আমরা খুব গোঁড়া শিয়া গোষ্ঠী নই, যারা মনে করে গ্রামে শুধু একটাই গাছ থাকা দরকার। সর্বশক্তিমানের নামগান কর! সত্য অনুসারে (সুন্নি ধর্মতত্ত্বে) চারটে পথ আছে, প্রত্যেকটা বিশেষ বিশেষ যুগ আর সময় ধরে(লিপিবদ্ধ)’।

তিনি এটা লেখার পরে কাজি আর মুফতি তাদের নির্দেশ দান করলেন, ‘ফাতোয়াইআলমগিরি সূত্র ধরে আমরা ফতোয়া দিচ্ছি যে হিন্দু আর মুসলমান যুদ্ধ বন্দীদের প্রতিবন্ধকরূপে গণ্য করে তাদের হত্যা করা হোক’। সম্রাট লিখলেন, ‘আমি এতে সম্মতি প্রদান করছি। সূর্যাস্তে আমার উপবাস ভঙ্গ হওয়ার আগেই তাদের বধ করতে হবে। আর যতক্ষণ না তাদের দেহ থেকে চ্যুত মুণ্ড আমার সামনে নীত হচ্ছে, ততক্ষণ আমি উপবাস ভঙ্গ করব না’। কোতোয়াল সরবরা খাঁয়ের সাহায্যে মুহরম খাঁ, তাদের বধ করে তাদের মুণ্ড সম্রাটের বিচার সভায় পেশ করলেন।

মন্তব্য – ৮ ডিসেম্বর ১৬৯৯ থেকে শুরু হয় সাতারা অবরোধ, চলতে থাকে ২১ এপ্রিল ১৭০০ পর্যন্ত। ১৬৯৮ সালে মুহম্মদ আক্রম রাজসভার কাজি নিয়োজিত হন। ১৭০৫ সালের অক্টোবরের প্রথমদিকে মারা যান। সুন্নি গোষ্ঠীরা চারটি পথ(স্কুল) মান্য করে, হানাফি, শাফি, হামবালি, এবং মালিকি। মুফতির কাজ হল আইনের সঠিক ব্যখ্যা করা এবং কাজিকে তার ফতোয়া দেওয়ার কাজে সাহায্য করা। ফতোয়াইআলমগিরি হল, আওরঙ্গজেবের নির্দেশে, শেখ নিজামের নেতৃত্বে এক দল ধর্মতাত্ত্বিক নানান ইসলামি রীতি নীতি আওরঙ্গজেবের সময়ের উপযোগী, সমন্বয়পূর্ণ করে এই নামে লিপিবদ্ধ করেন।

১৭০০ সালে ঠাণ্ডা মাথায় হিন্দু যুদ্ধ বন্দীদের হত্যা করার বিশদ বিবরণ সে সময়ের সংবাদ সমীক্ষায় দেখা যায়ঃ-

২৪ জানুয়ারি, ১৩তম শাবান – সক্কালে খ্বোয়াজা মুহরম খাঁকে ডেকে সম্রাট নির্দেশ দিলেন, যে ১৪ মারাঠা যুদ্ধবন্দীকে মাভলিসেরা বন্দী করেছে, তারা আগে দূর্গে বন্দী ছিল, বর্তমানে সহ কোতোয়াল মুহম্মদ আমিনের জিম্মায় রয়েছে; তাদের কৃষ্ণা নদীর তীরে নিয়ে বধ করা হোক। তাঁকে বলা হল, সেনাদের মধ্যে একটি বালকও রয়েছে। তার কি দশা হবে? সম্রাট কাজি আক্রমকে ডেকে তার মত জানতে চাইলেন, ‘তাদের সেখানে বধ করে নামাজ পড়া কি আইন সম্মত?’ কাজি উত্তর দিলেন, ‘তাদের মৃত্যু দণ্ড দেওয়া হোক’। সম্রাটের নির্দেশে খ্বোয়াজা তাদের নদীর তীরে নিয়ে গিয়ে মুণ্ডচ্ছেদ করলেন।

১৯ মে ১৭০০ – সম্রাট কোতোয়ালকে নির্দেশ দিলেন মৃত রাজারামের পরিবারের সঙ্গে বিজাপুরের দূর্গে বন্দী(জানুয়ারির প্রথম থেকে) ৩৩ জন অনুগামীকে হত্যা করার নির্দেশ দিলেন(সূত্রঃ আখবরাতইদরবার)।
(চলবে)

Anecdotes of Aurangzeb – আহকমইআলমগিরি - আওরঙ্গজেবের উপাখ্যান

চতুর্থ খণ্ড

শিয়া আর হিন্দুদের প্রতি তাঁর নীতি

৬৯। সুন্নি পাত্র, সিয়া গোষ্ঠীর কন্যাকে বিয়ে করতে অস্বীকার করল
রুহুল্লা খাঁ তার মৃত্যু শয্যায় কাজি আবদাল্লার উপস্থিতিতে একটি ইচ্ছাপত্র করে গিয়েছিলেন। তার একটি ধারা হল, ‘আমি একজন সুন্নি, আমি আমার পূর্বপুরুষের (শিয়া)ধর্মাচরণ থেকে নিজেকে বিচ্যুত করে নিয়েছি। দয়া করে আমার দুই কন্যাকে সুন্নি(পাত্র)র হাতে তুলে দেবেন’। কাজি এই বিষয়টি সম্রাটকে জানালেন। তিনি লিখলেন, ‘তাকিয়া(সুচারুরূপে ধর্ম-বিশ্বাস লুকানো) সারা জীবন ধরে মেনে চলার বিষয়, কিন্তু নিজের মৃত্যু শয্যায় এই ধরণের ধর্মীয় ভণ্ডামি একটি অভনব উদ্যম! আমার ধারণা (সে এই কাজটি করেছে) তাঁর সন্তান আর আত্মীয়দের বাঁচাবার জন্য। তার ভণ্ডামির মুখোশ খুলবে যদি তার সন্তানেরা এই(তার বর্ণিত) পথ অবলম্বন করে। তার শেষ ইচ্ছে অনুযায়ী তুমি কাজ করবে। তার বড় মেয়েকে শাহজাদা মুহম্মদ আজিম আর ছোটটিকে সিয়াদত খাঁকে অর্পন কর’। পরের দিন সিয়াদত খাঁ বললেন, ‘এই বংশানুক্রমিক সেবক (রুহুল্লা খাঁএর কন্যাকে) বিয়ে করতে অনিচ্ছুক। কি করে জানব সে সুন্নি হয়েছে কি না। সে যদি নিদের (ধর্ম)বিশ্বাসে অটল থাকে তাহলে কি হবে?’

মন্তব্য – প্রথম রুহুল্লা খাঁ, খালিউল্লা খাঁ আর হামিদা বানুর পুত্র। ১৬৮০ থেকে মৃত্যু(যতদূর সম্ভব ১৬৯২) পর্যন্ত বক্সী(খাজাঞ্চি)র পদ অলঙ্কৃত করছেন। ১৬৮৬র সেপ্টেম্বরে বক্সির কাজের সঙ্গেই অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে বিজাপুরের সুবাদার নিযুক্ত হন। তার এক কন্যা বাহাদুর শাহের কন্যা শাহজাদা আজিমকে বিবাহ করেন ২৬ জুন ১৬৯২ সালে। যুবা সিয়াদত খাঁ উপাধি দেওয়া হয় সিয়াদত খাঁ সঈদ উগজলানের পুত্রকে ১৬৯৮ সালে। খ্বাজা আবদুল্লা(মহম্মদ শরিফের পুত্র) রাজসভার কাজি নিযুক্ত হন মে ১৬৮৫ সালে।

৭০। রুহুল্লা খাঁএর মৃত্যু এবং শেষকৃত্য

রুহুল্লা খাঁ যখন মৃত্যু শয্যায়, সম্রাট তাঁকে দেখতে গেলেন। তখন তার জ্ঞান নেই। জ্ঞান ফিরে এলে সালাম জানিয়ে নিচের কবিতাটি আবৃত্তি করেনঃ

কোন গর্বে এই প্রার্থনাকারী এই বিশ্ব ছেড়ে যাচ্ছে/ আপনি তার মৃত্যুর সময়ে এই সেবকের মাথার কাছে দাঁড়িয়ে রয়েছেন।

সম্রাটের চোখ ভেঙ্গে জল বয়ে গেল, বল্ললেন, ‘সর্বশক্তিমানের ইচ্ছের বিরুদ্ধে কিছুই করা যায় না। ভাল হয়ে ওঠা আর আশা তারই দয়ার(বা ক্ষমতার) বাইরে নয়। কিন্তু মৃত্যু প্রত্যেক মানুষের জীবনে নেমে আসে, তোমার হৃদয়ের ইচ্ছের কথা বল, আমি নিশ্চিতভাবে তা পূরণ করব’। রুহুল্লা খাঁ তার হাত বাড়িয়ে সম্রাটের পায়ে বুলিয়ে বললেন, ‘এই পায়ের শরণ আমি সারাজীবন পেয়েছি। আমি এখন শুধু প্রার্থনা করব যাতে আমার পুত্ররা মহামহিমের শিক্ষার স্নেহচ্ছায়া থেকে বঞ্চিত না হয়, যদি যোগ্য মনে হয়, তাহলে তাদের কোন দপ্তরে নিযুক্ত করতে পারেন, আর তারা যদি আয়োগ্য হয়, তাহলে তাদের পূর্বজদের সেবার কথা স্মরণে রাখবেন’।

সম্রাট উত্তর দিলেন, ‘আমার জীবন এবং হৃদয় দিয়ে আমি এইগুলি সমর্থন করি’। তখন রুহুল্লা খাঁ আবার বললেন, ‘আমার দুই কন্যার বিবাহের বিষয়ে আমি নাজিরের মাধ্যমে আপনাকে একটা আবেদনপত্র পাঠিয়েছি, আমি ধার্মিকভাবে সুন্নি মতাবলম্বী, আমার পূর্বজদের (সিয়া)মত আমি পরিত্যাগ করেছি; আমার আবেদন দুজনকেই আপনি দয়া করে উচ্চবংশের কোন সুন্নি গোষ্ঠী জাত পাত্রের হাতে দান করবেন। আর আমি শেষ বারের জন্য আবেদন করছি, আপনি মহামহিম, কাজি মুহম্মদ আক্রমকে নির্দেশ দেবেন, তিনি যেন আমার কবরে শেষ চাদরটি চড়াতে পারেন’। সম্রাট মাথা নামিয়ে মৃদু হাস্য করে জানালেন, ‘সত্য, সন্তানদের প্রতি তোমার এই প্রেম আমায় নিঃসহায় করেছে। তোমার জ্ঞান আর ফন্দির কাছে আমি কোনদিন আত্মসমর্পণ করিনি। মনে হয় তুমি পরিকল্পনা করেছিলে, সুন্নী হৃদয়ের প্রতি ভালবাসায় আমি তোমার সন্তানদের প্রতি সদর্থক মনোভাব পোষণ করব। কিন্তু এই পরিকল্পনাটা তখনই খাটবে যদি সক্কলে একই (সুন্নি)মনোভাব পোষণা করে। কিন্তু তারা হয়ত তা করবে না। তবে আমি তোমার শেষ ইচ্ছেটি পূরণ করব কোরানি আইন অনুযায়ী’। তারপর তিনি কোরাণ(ফাতিহা) আবৃত্তি করে চলে গেলেন।

রুহুল্লা খাঁএর মৃত্যুর পর কাজি এলেন তার শেষ ইচ্ছে অনুযায়ী। জনৈক ব্যক্তিগত ভৃত্য আকা বেগ তাঁকে রুহুল্লা খাঁএর লেখা এবং সিলমোহর করা একটা চিঠি দিলেন, যাতে বলা হয়েছে, ‘আমায় কবর দেওয়ার সময় এই বিনীত মানুষটির শেষ ইচ্ছে অনুযায়ী এবং সম্রাটের নির্দেশক্রমে যদি কাজি আসেন, তাহলে তার কাজ সম্পন্ন করার কাজে সহায়তা করবে আকা বেগ। মহামহিম পুণ্যবান কাজিকে এই গরীব মানুষটি তার শেকৃত্য করার বোঝা বইতে দিতে চায় না। আর কাজি আমার বাড়ীতে এসেছেন, এতেই আমার মত পাপীর পুণ্যলাভ হয়ে গিয়েছে’।

এই আকা বেগ, আকা এবং বেগ, এই দুই উপাধি ধারণ করে ভৃত্যের মত থাকলেও সে কিন্তু আদতে একজন শিয়া ধর্মতত্ত্ববিদ। আকা বেগের জ্ঞান, ভয়শূন্যভাবে তত্ত্ব আলোচনা করার রীতি এবং পড়াশোনার ব্যপ্তি তার সঙ্গে কথা বলেই বুঝতে পেরে গিয়েছিলেন কাজি। কাজি চিঠিটি পড়েই রুহুল্লা খাঁএর পরিকল্পনা বুঝেছিলেন – অর্থাৎ তাঁকে ডেকে তাঁকে স্তোক দিয়ে(শাকিইখুশতবাই) এনে তার সামনে পারলৌকিক (ধোয়ার) কাজটি আকা বেগকে দিয়ে করিয়ে নেওয়া। অখুশি হয়ে কাজি তারর সভার সংবাদ লেখক মুহম্মদ ঘাউসকে বললেন, এক্ষুনি একটা সংবাদ লিখে ফেল এবং তৎক্ষণাৎ সেটি কোন দাসের হাত দিয়ে সম্রাটের উদ্দেশ্যে পাঠিয়ে দাও যাতে অতিশীঘ্রই তিনি তার মন্তব্য জানতে পারেন।

যখন সেই লেখাটি সম্রাটের হাতে পৌঁছল, তিনি লিখলেন, ‘তার মৃত্যু শয্যায় (সে যা বলেছে তাতে) তার আগের কৃতকর্মের ওপর গভীর কালো ঘৃণার পর্দা ফেলে দিয়েছে। কাজির আর ওখানে থাকার প্রয়োজন নেই। তার জীবনে তার ভাবনা, বিশ্বাস লুকিয়ে দ্বৈত জীবন যাপন করেগিয়েছে। তার মৃত্যুতেও সেই অভ্যাসের চরিত্র বদলায় নি। অন্য কারোর বিশ্বাসের ওপর আমার কি হাত থাকতে পারে? যিশু আর মোজেস তার নিজের ধর্ম (নির্বিবাদে)পালন করুণ। তার কন্যার হাত সুন্নী পাত্রের হাতে দেওয়ার প্রস্তাব একটা সুচতুর পরিকল্পনার অঙ্গ, যাতে সেই ভাগ্যহীন অভিজাত তার পরিকল্পনায় সামিল হয়ে(তার কন্যাকে বিবাহ করে) নিজের সর্বনাশ করে, যাতে সে তার পত্নীর প্রতি প্রেমে তার দীর্ঘদিনের বিশ্বাস থেকে সরে গিয়ে নব্য শিয়াত্বে দীক্ষা লাভ করতে পারে। সর্বশক্তিমান আমাদের হৃদয়ের নষ্টামি আর আমাদের কাজের পাপ থেকে রক্ষা করুণ’।

মন্তব্য - ফাতিহা হল কোরাণের খুব প্রচলিত মাত্র সাতটি কবিতার অধ্যায়।
(চলবে)

Thursday, July 21, 2016

Anecdotes of Aurangzeb – আহকমইআলমগিরি - আওরঙ্গজেবের উপাখ্যান

তৃতীয় খণ্ড

৬৬। আবিসিনিয়(আমাদের চলতি ভাষায় হাবসি) নৌসেনাধ্যক্ষের উচ্চাকাঙ্ক্ষা

মছলি-বন্দরের সংবাদ লেখকের প্রেরণ করা সমীক্ষাপত্র থেকে সম্রাট জানতে পারলেন যে, ডান্ডা-রাজপুরির থানেদার সিদ্দি য়াকুত খাঁর পাঠানো সেই সংবাদপত্রে নিজের সিলমোহর দিয়ে জানিয়েছেন যে, তাঁকে যদি ডান্ডা-রাজপুরির মুতসুদ্দিগিরি(খাজনাদার)র অধিকার দেওয়া হয় তার সময়ের আগের পদাধিকারীর তুলনায় অনেক ভাল কাজ করতে পারবেন, তাতে এলাকার সমৃদ্ধি হবে এবং কেন্দ্রে আরও বেশি অর্থ পাঠাতে পারবেন।

সেই সমীক্ষা পত্রের ওপরে সম্রাট লখলেন যে, ‘আমি বহুকাল ধরে এই আত্মঅহঙ্কারী, আগ্রাসী চরিত্রের সিদ্দি য়াকুত খাঁকে চিনি(এখানেই পাণ্ডুলিপিটি হঠাতই শেষ হয়ে গিয়েছে)’।

মন্তব্য – ১৬৭০ সালের পরে ডান্ডা-রাজপুরিতে যে সব সিদ্দি মুঘল সকারের কাজ করতেন, তাঁদের সক্কলের উপাধি ছিল য়াকুত খাঁ। এরা বম্বে উপকূলের নৌসেনার দায়িত্বে ছিলেন। কাফি খাঁ এদের ইতিহাস লিখে গিয়েছেন। ডান্ডা-রাজপুরি বম্বে উপকূলের মহাবালেশ্বরের উত্তর-পশ্চিম দিকের একটি যমজ শহর, এটি জাঞ্জিরা দ্বীপের মুখোমুখি। এই দ্বীপটি আবিসিনিয়দের অধিকারে বহুকাল ধরে ছিল। মছলি-বন্দর আজকের পূর্ব উপকূলের কৃষ্ণা নদীর তীরের মছলিপত্তনম। ১৭০২ সালে জনৈক সিদ্দি য়াকুত ডান্ডা-রাজপুরীর রাজস্বঅধিকারী ছিলেন।

৬৭। একটি খণ্ড

একটি আবেদনের উত্তরে সম্রাট লিখলেন, ‘যদিও সে একটি শিশু, আমি জানি সে জ্ঞানী। হয়ত সে এই আবেদনটি করেছে সুকর(=মাতালাবস্থা) অবস্থায় কেন না এই স লেখা হয়েছে শুধু ‘স’ ব্যবহার করে যাতে কোন বিন্দু নেই, কিন্তু শুকর(=কৃতজ্ঞতা) লেখা হয় বিন্দুযুক্ত শিন অক্ষর দ্বারা। ফলে তার কৃতজ্ঞতার প্রতি সম্মান দেখানো গেল না।

মন্তব্য – আরবি স কে শ-তে রূপান্তরিত করা যায় তার ওপরে তিনটি বিন্দু যোগ করে। এই খণ্ডটি ৬৯ নম্বরের সঙ্গে জোড়া ছিল। কিন্তু(আমরা দেখব) এর ভাবের সঙ্গে ৬৯ নম্বরের ভাবের কোন মিল নেই – কেননা রুহুল্লা খাঁয়ের চিঠিতে শুকর শব্দটা ব্যবহারই হয় নি। বা ৬৬এর গল্পে এই শব্দটা ব্যবহার করা হয়েছে। তবে এটা পড়ে বোঝা যায় যে এটি কোন একটা গল্পের হারানো প্রাপ্তি।

৬৮। তোমার তন্নিষ্ঠ সেবার জন্য খুব বেশি গর্বিত হোয়ো না

‘ফাতাউল্লা খাঁকে লেখ, (এলাকা থেকে পাঠানো)বিভিন্ন সমীক্ষার বিশদ বিবরণ থেকে তার কীর্তিকলাপের গুরুত্ব বোঝা যাচ্ছে, এবং রাজসভায়(মুজরা) সেগুলির আবশ্যকতা আছে; কিন্তু নিজের জীবনকে বাজি ধরে(হয় পুরষ্কারের বিনিময়ে) যেন আমার সেবা না করে, বা সে আমার সেনাপতিদের রুষ্ট করে যেন আমাকে রুষ্ট না করে’।

মন্তব্য - মীর মহম্মদ সাদিক, ওরফে ফাতাউল্লা খাঁ বাহাদুর আলমগীরশাহি, পানহালা আর খেলনা দখল করায় সবার নজরে আসেন, ফলে সম্রাটের সেনাপতিরা তার ওপর রুষ্ট হয়ে পড়ছিলেন। আমার হিস্ট্রি অব আওরঙ্গজেবে উল্লেখ যোগ্য বিশদ বিবরণ আছে।
{তৃতীয় খণ্ড সমাপ্ত}
(চলবে)

Anecdotes of Aurangzeb – আহকমইআলমগিরি - আওরঙ্গজেবের উপাখ্যান

তৃতীয় খণ্ড

৬৩। প্রত্যেকটি প্রথা কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে

দ্বিতীয় রুহুল্লা খাঁ যার নাম মীর হাসান, সম্রাটের অন্যতম ঘনিষ্ঠ সহচর এবং বিশ্বাসী ছিলেন, তিনি তনখার খাজাঞ্চি এবং খাঁইসামান পদ পর্যন্তও আরোহন করেছিলেন। তিনি ছিলেন তিন হাজারি মনসবদার; নিজেকে খাওয়াস হিসেবে দেখার ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী আসাদ খাঁএর মাধ্যমে একটি আবেদনপত্র পেশ করলেন, ‘আমি তিন হাজারি মনসবদার। কিন্তু মাত্র সাতশ ঘোড়ার মনসবদার ফয়িউজুল্লা খাঁ সরবরি এবং ডেপুটি রেজিস্টার। আমাকে যদি দয়া করে সরবরি এবং ডেপুটি রেজিস্টার পদে বৃত করেন, তাহলে আমি আরও বেশি করে আপনাকে সেবা করতে পারব এবং তাতে মহামহিমের মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে’।

সম্রাট নির্দেশ দিলেন, ‘তোমায় সরবরি করার আমার কোন অনিচ্ছে নেই, তাতে যেটা হবে তোমাকে বর্তমানে পাওয়া নিজের পদ হারাতে হবে এবং মাত্র সাতশ ঘোড়ার মনসবদার হসেবে কাজ করতে হবে’। তখন আসাদ খাঁ বললেন, ‘তাহলে কোথায় সে দাঁড়াবে?’ সম্রাট উত্তর দিলেন, ‘আমার মাথার ওপরে ছাড়া আর তো কোন স্থান দেখি না’। তখন তিনি আরও বললেন, ‘যদি একটি রীতি ভাঙ্গা পড়ে, তাহলে সব রীতিনীতিগুলিকেই ভেঙ্গে ফেলতে হয়। আমি রাজসভার কোন রীতি ভাঙ্গার পক্ষে নই, মানুষ এতই প্রভাবশালী হওয়ার বাসনা নিয়ে এগিয়ে গিয়েছে যে, তারা আমায় রীতি ভাঙ্গার পরামর্শ দিচ্ছে! যখন এই রীতি ভাঙ্গার ঘটনাটা বেড়ে যাবে, তখন বিষয়টা আর নিয়ন্ত্রণে থাকবে না’।

মন্তব্য – প্রথম রুহুল্লা খাঁ বক্সীর দ্বিতীয় পুত্র মীর হাসান খানাজাত খাঁ উপাধি লাভ করেন এবং ১৬৯৭ সালে খাঁইসামান পদে এবং তার পিতার উপাধিতে অভষিক্ত হন। কর্মচারীদের দারোগা পদে অভিষিক্ত হন ১৬৯৯ সনে। দ্বিতীয় বক্সী হন ১৭০১ সনে। ৯ মার্চ, ১৭০৪ সনে, মধ্য যৌবনেই মারা যান।

৬৪। সরকারি রীতিনীতি মানা কঠোর করা হল

বাংলা সুবা থেকে পাঠানো সমীক্ষায় সম্রাট জানতে পারলেন যে, সুবার সুবাদার ইব্রাইম খাঁ নিদারুণ আত্মম্ভরিতা এবং গর্ব দেখিয়ে এইনি সভায় কেদারায় শুয়ে সভা পরিচালনা করছেন এবং কাজি এবং অন্যান্য ধর্মাধিকারীরা মাটিতে বসে থাকেন। সেই সমীক্ষাপত্রের ওপর তিনি লিখলেন, ‘ঐ সুবাদারকে প্রধানমন্ত্রী সম্রাটের নির্দেশক্রমে থেকে একটা আদেশনামা লিখে দেবেন, যে তিনি যদি অসুস্থতার জন্য যদি তিনি মাটিতে বসতে না পারেন, যতক্ষণনা তার অসুখ সারছে, ততদিন তিনি ছুটি নিন, এবং ভিষগদের গিয়ে তাঁকে তাড়াতাড়ি সুস্থ করে তুলতে বলুক। সংবাদ লেখক(সাওয়ানিধনিগার)কে উচ্চ পদ মনসবে আসীন করানো হয়েছে, ফলে সে ব্যক্তিটি কোনভাবেই সংবাদ লেখকের কাজ করতে পারবে না। তাঁকে ১০০ ঘোড়ার মনসব দেওয়া হোক। ইব্রাহিম খাঁকে লেখ যাতে সে তার সুবায় সরাসরি ফৌজদারি(জেলা প্রশাসক) পায়, যাতে সে নিজের নির্দেশের বিরুদ্ধে অন্য লেখকদের সংবাদ চাখার স্বাদ অর্জন করে। য়ার আলি বেগ এই বিষয়ে চিন্তাভাবনা করুক এবং যাদের আত্মসম্মান আছে তেমন এক সংবাদ লেখক খুঁজে বার করুক।

মন্তব্য – ইব্রাহিম খাঁ বাংলার সুবাদার ছিলেন ১৬৮৯ থেকে ১৬৯৮ পর্যন্ত।
(চলবে)

Anecdotes of Aurangzeb – আহকমইআলমগিরি - আওরঙ্গজেবের উপাখ্যান

তৃতীয় খণ্ড

৬১। ক্রুদ্ধ সুবাদার তার নিন্দুককে শাস্তি দিলেন

গুজরাট সুবার সম্রাটের অন্যতম ব্যক্তিগত(ওয়ালাশাহি) সংবাদলেখক মুহম্মদ আজমের পাঠানো সংবাদ থেকে তিনি জানতে পারলেন, গুজরাটের সুবাদার মুহম্মদ আমিন খাঁ মদে মাতাল হয়ে সভা পরিচালনা করেন। সম্রাট লিখলেন, ‘সর্বশক্তিমান পুণ্যময়! এটা অসম্ভব কলঙ্কময় কর্ম!’ মুহম্মদ আমিন খাঁয়ের সভাপরিচালক (কোর্ট এজেন্ট) তার প্রভুকে এই বিষয়টা জানালেন। ক্রুদ্ধ সুবাদার চালু থাকা সভায় আদেশ দিলেন, সংবাদ লেখকের প্রত্যেকটা দাড়ি গোঁফ উপড়ে ফেলতে হবে। এই কাজটিও সম্রাটের নজরে এল। মহামহিম লিখলেন, ‘পূণ্যপ্রাণ আলি লিখেছেন, ‘রাগ হল পাগলামির নামান্তর, এবং পাগলামি সারানোর কোন আইন নেই’। আমিন খাঁ খুব হিংসক চরিত্রের মানুষ। কিন্তু এই ক্ষেত্রে সংবাদ লেখক তাঁকে মিথ্যা নিন্দা করেছিল।সংবাদ লেখকের কি ক্ষমতা ছিল যে তার নাসারন্ধ্র অনেক দূর থেকে সুবাদারের মুখের মদের গন্ধ পেল। কিন্তু সেই শাস্তি দেওয়ার কাজ আমার। সুবাদার তাঁকে শাস্তি দিয়ে ঠিক কাজ করে নি। সংবাদ লেখককে পদচ্যুত করা হচ্ছে, এবং আগামী সাম্মানিক অনুষ্ঠানে সুবাদারকে কোন খেলাত দেওয়া হবে না’।

মন্তব্য – মহম্মদ আমিন খাঁ হাফিজ, মীর জুমলার পুত্র, ২৫ সেপ্টেম্বর ১৬৭২ থেকে ১৮ জুন ১৬৮২ তার মৃত্যুকাল পর্যন্ত গুজরাটের সুবাদার এবং তিনি খুব আত্মম্ভরী গোঁড়া শিয়াপন্থী অভিজাত ছিলেন। তার কাজ এবং দক্ষতা সম্বন্ধে আওরঙ্গজেবের খুব উচ্চ ধারণা ছিল।

৬২। সরকারি নিয়মানুবর্তিতা – দুপক্ষকেই শাস্তি দেওয়া হল

য়ার আলি বেগ, খবর প্রধান(সাওয়ানি) সম্রাটকে লিখলেন, ‘বুজুর্গ উম্মিদ খাঁ, বিহার প্রদেশের সংবাদ লেখক প্রকাশ্যে আবদুর রহমানকে অপমান করেছেন। আর যদি এই ধরণের অসম্মানকে শাস্তি না দেওয়া যায়, তাহলে আগামী দিনে সংবাদ লেখকদের কোন স্বাধীনভাবে সত্য সংবাদ লেখার অস্তিত্বই থাকবে না, তারা সক্কলে সুবাদারের অধীন হয়ে পড়বে। মহামহিম যদি সেই প্রবাদটির মত কাজ করেন, ‘ব্যঙ্গ সবসময় দুর্বল প্রত্যঙ্গকের আঘাত করে’ তাহলে আপনার এই নিঃসহায় দাস আপনার নির্দেশ পালনে অক্ষম হবে’। সম্রাট লিখলেন, ‘এই অক্ষম মানুষটি(আওরঙ্গজেব) নিজে অশক্ত, সে উঁচু নিচু সব্বাইকে অশক্ত মনে করে। ‘শক্তশালী’ এই শব্দটি একমাত্র সর্বশক্তমানের জন্য ব্যবহৃত হয়। কিন্তু নিচু মানুষেরা কখোনোই উঁচু মানুষদের নির্দেশ দেবে না। আমি তাকে পদচ্যুত করলাম আর সুবাদারকে তার মনসব থেকে ৫০০ কমালাম এবং তার সংশ্লিষ্ট জাগিরেরও পরিবর্তন ঘটবে।

মন্তব্য – বুজুর্গ উম্মিদ খাঁ, শায়েস্তা খাঁয়ের পুত্র, চট্টগ্রাম দখল করেন এবং ১৬৮২ থেকে ১৬৯২ পর্যন্ত বিহারের সুবাদার ছিলেন। এবং তার মৃত্যুর সময়েও ১২ ফেব্রুয়ারি ১৬৯৫ তেও সেই পদে ছিলেন।
(চলবে)

Anecdotes of Aurangzeb – আহকমইআলমগিরি - আওরঙ্গজেবের উপাখ্যান

তৃতীয় খণ্ড

জাফর খাঁএর পুত্র কামগার খাঁ সম্রাটকে নিবেদন করলেন, ‘ব্যঙ্গরসে ভরপুর বিষপূর্ণ চরিত্র মির্জা মুহম্মদ নিয়ামত খাঁ, আমার বিবাহ সম্পর্কে লিখেছেন, ‘বিবাহের উদ্দেশ্য হল এটি একটি আইনি ক্রিয়া, যেখানে দুটি নিশ্চল/যৌনঅক্ষম (যদুনাথ ইংরেজিতে লিখেছেন, quiescent) ব্যক্তি মিলিত হয়’। এছাড়াও তিনি আমার সম্বন্ধে অনেক বিদ্বেষপূর্ণ মন্তব্য করেছেন, যাতে জনগণের মাঝে আমার মাথা হেঁট হয়ে যায়। আমার আশা, মহামহিম, সেই ব্যক্তিটিকে উচিত শাস্তি দেবেন, যাতে ভবিষ্যতে সে আর এ ধরণের ঘৃণিত কাজে না অগ্রসর হওয়ার ভাবনা ভাবতে পারে। এই উপযোগী বিষয়টি আমি মহামহিমের সামনে উপস্থিত করলাম’।

ওপরের আবেদনের ‘উপযোগী’ শব্দের ওপরে আওরঙ্গজেব লিখলেন, ‘এটা অনুপোযোগী(হারাম)’, এবং আবেদনপত্রের ওপরের দিকে তিনি লিখলেন, ‘তাঁকে(তোমার সামনে) শাস্তি দেওয়া আরো বড় মুর্খমি হবে। উত্তরাধিকারিসূত্রে আমার এই সাধারণ মনের আমলাটি আমায় তার শব্দের অংশিদারি করেছে; নিয়ামত খাঁ আমার বিরুদ্ধে তার ইচ্ছেমত যা খুশি লিখতে পারে; আমায় সাধারণের চোখে দুর্বৃত্ত প্রমান করতে পারে। অতীতে সে আমার বিরুদ্ধে ব্যঙ্গ কলম শাণিত করেছে; তার প্রতিদানে আমি তার মাইনে বাড়িয়েছি যাতে সে আর আমার বিরুদ্ধে তার কলম কাজে লাগাতে না পারে; এই (প্রলোভন)কর্ম সত্ত্বেও সে কিন্তু তার (ব্যঙ্গ)কলমের গরল কমায় নি। তার জিহ্বা উতপাটন বা গর্দান নেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আমাদের সকলের ভাবনাকে লাগাম পরানো উচিত এবং মিলেজুলে বসবাস করা প্রয়োজন। সে এমন এক বান্দা যে কাউকে তো বটেই নিজেকেও ব্যঙ্গ করতে ছাড়ে না’।

মন্তব্য – আওরঙ্গজেবের পূর্বতন উজির জাফর খাঁ এবং ফরজানা বেগমের পুত্র কামগার খাঁ, ১৬৮৭ সালে খাঁইসামান নিযুক্ত হন, সেপ্টেম্বর ১৬৮৮তে সৈয়দ মুজফফর হায়দারাবাদির কন্যাকে বিবাহ করেন। মির্জার ব্যঙ্গ রস প্রাণঘাতী। তিনি তার বয়েতে শুধু কামগারকেই বেঁধেন নি, নিয়ামত খাঁ সে সময়ের প্রত্যেক মাজাকতেই এই নববিবাহিতকে তাক করেছিলেন।

মির্জা নুরুদ্দিন মুহম্মদ হাজি নিয়ামত খাঁ, কাব্য নাম আলি, পার্সি ভিষগ হাকিম ফাতাউদ্দিন শিরাজির পুত্র। বাহাদুর শাহের অধীনে তিনি দানেশমন্দ খাঁ উপাধি লাভ করেন। তিনি বাহাদুরশাহনামা, জগনামা, ওয়াকায়ি এবং মুশাকাত লেখেন; তিনি তার সময়ে বিখ্যাততম ব্যঙ্গ কবি।

৬০। নিন্দুক শাস্তি পেল

আমেদাবাদে থাকা শাহজাদা মুহম্মদ আমন খাঁএর সেনাবাহিনী থেকে পাওয়া খবরে জানলেন মুহম্মদ বেগ,, শাহজাদার সব থেকে কাছের সেনাভিনী আহদির প্রধান, এবং অপ্রকাশ্যে অন্যান্য কর্মীদের কাজের নিন্দা করে তার খুব কাছের মানুষ হয়ে উঠেছে।

মহামহিম লিখলেন, ‘সিয়াদত খাঁ একজন কঠোর দণ্ডধারীকে পাঠাও, যে এই নিন্দুককে ধরে আনতে পারবে – এই মানুষটি আমার বর্তমানে রাষ্ট্রের ক্ষতি করছে, এবং এখনও সে নিজের পায়ে হেঁটে বেড়াচ্ছে, কেননা সমস্ত খারাপ কাজের থেকেও খারাপ কাজ হল পিছনে নিন্দা করা এবং অপবাদ জ্ঞানপনকরা। খুনের থেকেও ঘৃণিত কর্ম এই কাজগুলি। প্রবাদ বলে ‘সাপের চামড়া বহুরঙা, কিন্তু জিহ্বা বিষময়’, ঠিক সে রকমই নিন্দুকেরা – যাদের চরিত্র আপাত মধুর, দেখতে মাধুর্যময়, কিন্তু তার হৃদয়ে বিষে ভরা। তাদের এড়িয়ে চল! এড়িয়ে চল!’

মন্তুব্য – শাহজাদা আজমকে গুজরাটে সুবাদার করে পাঠানো হয়েছিল ১৪ নভেম্বর ১৭০১এ; ছিলেন ২৫ নভেম্বর ১৭০৫ পর্যন্ত। তার পর তিনি দিল্লির উদ্দেশ্যে রওনা হন। আহদি হল সৌন্দর্যময় সেনানীদল, অবিবাহিত, শুধু সম্রাটকে সেবা করার জন্য নিযুক্ত হত, কোন অভিজাতর সঙ্গে যুক্ত ছিল না(আরভিনএর আর্মি অব দ্য ইন্ডিয়ান মুঘলস)। চতুর্থ সিয়াদত খাঁ, তৃতীয় সিয়াদত খাঁ, সৈয়দ উঘলানের পুত্র, তার পদের নাম ছিল সুপারিন্টেন্ডেন্ট অব দ্য কনফার্মেশন অব পোস্টিংস, সেই পদ পান ১৬৯৯ সালে।
(চলবে)

Anecdotes of Aurangzeb – আহকমইআলমগিরি - আওরঙ্গজেবের উপাখ্যান



তৃতীয় খণ্ড
 
৫৭। আর্থিক দুর্দশায় সর্বশক্তিমানের ওপর বিশ্বাস
ইনায়েতুল্লা খাঁ সম্রাটকে বললে, ‘যে অভিজাত(মিসল) আপনার সামনে রোজ কুচ করে, তাঁদের সংখ্যা অগনিত, কিন্তু দেশের মধ্যে জাগিরের সংখ্যা খুবই সীমিত। কিভাবে এই অসিম সংখ্যাকে সসীমে নামিয়ে আনা যায়?’
সম্রাট লিখলেন, ‘সর্বশক্তিমান আমাদের ক্ষমা করুণ, শাহী ভাণ্ডারগুলি(কারখানা) তাঁর বিচারখানা। জনগণ সর্বশক্তিমানের সন্তান, তাঁদের জীবিকা ভগবানের দোয়ায় চলে। এই গরীব খাদ্য-ব্যবস্থাপক(আওরঙ্গজেব) দয়ালু তাঁর প্রতিনিধিমাত্র। আর সর্বশক্তিমানের রাজসভায় প্রাচুর্যের অভাব ঘটবে বা সীমা থাকবে তা ভাবা অবিশ্বাসীর কর্ম। সর্বশক্তিমানের নামে জয়ধ্বনি কর! এবং আবারও বলি সর্বশক্তিমানের নামে জয়ধ্বনি কর! যদিও আমার পা ভাঙ্গা, কিন্তু মন নয়। সাতারা জাগিরের দুর্গ দখল হওয়ার পরে আরশাদ খাঁয়ের সমীক্ষা অনুসারে সেখানে ৫ থেকে সাত হাজার আধিকারিক যোগ হয়েছে। এই নতুন ভৌগোলিক এলাকায় তাদের কাজ দাও। যখন তাঁদের কাজ শেষ হয়ে যাবে, সর্বশক্তিমান তোমাদের জীবনযাপনের নবতম সূত্র যোগাড় করে দেবেন’।
মন্তব্য - ইনায়াতুল্লা খাঁ, জুলাই ১৬৯২ সালে তনখার দেওয়ান নিযুক্ত হন। তিনি সম্রাটের ‘ব্যক্তিগত শিষ্য’ এবং সচিবদের মধ্যে প্রিয়তম ছিলেন, বাহাদুর শাহ১এর আমলে উজির পদ পর্যন্ত তাঁর পদোন্নতি ঘটেছিল। আরশাদ খাঁ খালিসার দিওয়ান নিযুক্ত হন ১৬৯৮ সালে এবং মারা যান ১৭০১ সালে।
৫৮। তোপবাহিনীর বাগীদেরকে টিট করা হল
সম্রাট যখন সাতারা থেকে পারলির দিকে কুচ করে যাচ্ছিলেন, যেহেতু বাংলা থেকে বরাদ্দ রাজস্ব তখনও এসে পৌছায় নি, তখনও পর্যন্ত আহসান(অনুসরণকারী) সেনা আর গোলান্দাজ বাহিনীর চৌদ্দ মাসের বেতন বাকি ছিল। চারজন ভরসাযোগ্য হাজারি সম্রাটকে একদিন জানালেন, ‘অনুগামীরা আমাদের স্তোকবাক্য শুনছে না। মীর আতিশ, প্রধান তোপাধ্যক্ষ্য, তরবিয়ত খাঁর বিরুদ্ধে তারা বিদ্রোহ করতে বদ্ধ পরিকর। সম্রাট উত্তর দিলেন, ‘হারেমে রাখা গণখাজাঞ্চি(পাবলিক ট্রেজারি) থেকে তাঁদের বকেয়ার অর্ধেক দিয়ে দাও। হায়দারাবাদের চিকাকোলে গেলে বাকিটা তারা পাবে সেটা জানাও। প্রধানমন্ত্রীকে হায়দারাবাদের দেওয়ানকে এ বিষয়ে অগ্রসর হতে অনুমতি দাও এবং তোপখানার সেনাদের সঙ্গে আদালতের পেয়াদা পাঠাও’। দুই হাজারি - মান সিং এবং চতুর্ভূজ, সম্রাটের এই সিদ্ধান্তে একমত না হয়ে তরবিয়ত খাঁকে তার পালকি থেকে টেনে নামিয়ে তুমুল বর্ষার মধ্যে মাঠে বসিয়ে রাখলেন। হরকরা(গোয়েন্দা)দের প্রধান য়ার আলি বেগ, এই ঘটনাটা সম্রাটকে জানালেন, এবং সম্রাট সঙ্গে সঙ্গে খাজাঞ্চিখানাকে পুরো বকেয়া বেতন শোধ করে দিতে নির্দেশ দিলেন। তারা তোপখানার প্রধানকে সেই বর্ষার মধ্যে সন্ধ্যে পর্যন্ত মাঠেই বসিয়ে রাখলেন যতক্ষণনা তাঁদের বকেয়া পাচ্ছেন। বকেয়া পাওয়ার পর, তারা তাঁকে তার তাঁবুতে ছেড়ে দিয়ে এলেন।
পরের দিন সকালে সম্রাট চারজন হাজারিকে খেলাত দিয়ে বললেন, ‘তোমরা তোপখানার প্রধানের সঙ্গে মিলেজুলে এই দুষ্কর্মটি ঘটিয়েছ’। তারবিয়ত খাঁয়ের পদ পাঁচ হাজার কমিয়ে দিলেন, একইভাবে তার জাগির একই পরিমানে কমল। পরের সপ্তাহে সম্রাট দুজন হাজারিকে নির্দেশ দিলেন, চিকাকোলে গিয়ে অন্যান্যদের জন্য আগ্রিম ছয় মাসের বেতন তুলতে। তিনি নিজের হাতে হায়দারাবাদের সুবাদার জান নাসির খাঁকে ফরমান লিখে বললেন যে তাঁদের বকেয়া দিনের হিসেবে ভাগ করে কিস্তিতে প্রদান করতে হবে। এই খবর সম্রাটের সঙ্গে থাকা অন্য দুজন হাজারির কাছে পৌছল, তাঁদের বিক্ষুব্ধ মন শান্ত হল। তিনি নির্দেশ দিলেন পরের দুই হাজারি আওরঙ্গাবাদে গিয়ে সেখানকার খাজাঞ্চিখানা থেকে তাঁদের অনুগামীদের জন্য ছয় মাসের অগ্রিম বরাদ্দ নিয়ে নিতে; এই নির্দেশ তিনি সেই সুবার সুবাদার মানুর খাঁকে লিখলেন, যাতে তিনি তাঁদের প্রাপ্য কিস্তিতে মিটিয়ে দিতে পারেন’।
দশ দিন পরে সম্রাট নির্দেশ দিলেন, যে দু জন হাজারি এই বিদ্রোহ শুরু করেছিলেন, তাঁদের হায়দারাবাদের দৌলতাবাদ দুর্গে আটক করে রাখতে, এবং যে অর্থ আগে এবং বর্তমানে দেওয়া হয়েছে, সেগুলি বাজেয়াপ্ত করে নিতে।
মন্তব্য – ২১ এপ্রিল ১৭০০ সালে সাতারার পতন হয়। তিন দিনের মধ্যে তিনি পার্লির দিকে কুচ শুরু করে পৌঁছন(২৮-৩০ এপ্রিল)। মুখতার গোষ্ঠীর দারাব খাঁয়ের পুত্র মীর মুহম্মদ খলিল, ১৬৯৮ সাল নাগাদ নীর আতিশ এবং তরবিয়ত খাঁ উপাধি পান। ১৭০৭৮এর জাজায়ুর যুদ্ধে প্রাণ দেন।

Sunday, July 10, 2016

Anecdotes of Aurangzeb – আহকমইআলমগিরি - আওরঙ্গজেবের উপাখ্যান

তৃতীয় খণ্ড


৫৫। দুর্গ সারাইয়ের জন্য কোন বরাদ্দ নেই

দ্বিতীয় রুহুল্লা খাঁ(যার নাম মীর হুসেইন) সম্রাটকে আবেদন করে লিখলেন, ‘ইসলামপুরির দুর্গ দুর্বল হয়ে যেতে বসেছে, এবং খুব শীঘ্রই আপনি কুচ করে এদিকে আসবেন। এটি শীঘ্র সারাই করার প্রয়োজন। আপনার মতের অপেক্ষা করছি?’

সম্রাট লিখলেন, ‘সর্বশক্তিমান আমাদের ক্ষমা করুণ! সর্বশক্তিমান আমাদের ক্ষমা করুণ! ইসলামপুরীকে দুর্বল বলার অধিকার তোমার নেই। তোমার লেখা উচিত ছিল তার পুরোনো নাম ব্রহ্মপুরী হিসেবে। আমাদের শরীরের দুর্গ এর থেকেও দুর্বল হয়ে পড়েছে। তার কোন নিদান আমার অন্তত জানা নেই। (কবিতা)

আমরা আমাদের দেহবল্লরী সাজিয়ে রাখি জল আর কাদায়/ স্বর্গের বাড়িতে থাকার জন্য তৈরি না করে, মর্ত্যের জন্য নিজেদের তৈরি করি’।

তারপরে খাঁ লিখলেন, ‘মহামহিমের যদি এটাই ইচ্ছে হয়, তাহলে আমি কারিগরদের বলি ব্রহ্মপুরী দুর্গ নিরীক্ষণ করতে’। সম্রাট লিখলেন, ‘আমার পূর্বের বক্তব্য শুনেও তুমি কথা নিয়ে খেলা করছ? (কবিতা)

নিজের ব্যক্তিত্বের স্থপতি হতে যেও না, তোমার নিজের বাড়ি ধ্বংস করে দাও/ খণ্ডহর হোক, যাতে তুমি তার ওপর প্রাসাদ তুলতে পার/ ধুলোর স্তরে নেমে এস, তোমার ঘাড় সবার থেকে ঘরিয়ে নাও/ তবে দেখো ধুলো যেন তোমার গোড়ালির ওপরে না উঠতে পারে।

জীবন যদি কিছুটা সময় আমায় ফিরিয়ে দেয়(যদি পুনর্জন্ম হয়) তাহলে হয়ত আমি (দুর্গ) সারাবার প্রশ্নে একমত হতাম। তবে যদি ঘটনা অন্যভাবে ঘটে, এই কবিতাটি উচিত বাক্য বলেছে, বাস্তবিকই, তোমার সম্পদ আর তোমার সন্তান তোমার শত্রু। আমি (ইসলামের)পুণ্য যোদ্ধাদের পিছনে সমস্ত অর্থ নষ্ট করব’।

মন্তব্য – মীর হুসেইন প্রথম রুহুল্লা খাঁএর পুত্র, প্রথমে খানাজাত খাঁ এবং পরে দ্বিতীয় রুহুল্লা খাঁ উপাধি পান। ৯ মে, ১৭০৪এ মৃত্যুর সময় তিনি ছিলেন দ্বিতীয় খাজাঞ্চি এবং খানইসামান পদে। ইসলামের সঙ্গে যে দুর্বল শব্দটি জুড়ে থাকুক, সেটা আওরঙ্গজেবের পছন্দ ছিল না, তাই পুরোনো ব্রহ্মপুরী নামটি ব্যবহার করা দরকার ছিল বলেছেন। দুর্গ সারাইএর উত্তরে বোঝা যায়, কি ধরণের আর্থিক বোঝার মধ্যে দিয়ে তিনি তার জীবনের শেষ দিনগুলি কাটিয়েছেন।

৫৬। দুর্গ সারাইয়ের জন্য কোন বরাদ্দ নেই

আওরঙ্গাবাদের সুবাদার মনসুর খাঁএর চিঠি আওরঙ্গজেবের সামনে পেশ করা হল। এতে বলা হয়েছে, ‘শাহী শিবির আহমদনগরে পৌঁছেছে। আমার মনে হয় আহমেদনগরের দুর্গটি এবারে সময় হয়েছে সারিয়ে নেওয়ার, শাহী সেনা পৌঁছতে পৌঁছতে সেই দুর্গ সারাই হয়ে যাবে’।

সম্রাট লিখলেন, ‘কবরে পৃথিবী তার দিকে দু হাত বাড়িয়ে রয়েছে,/ অথচ অজ্ঞানী মানুষ তার গৃহ রাঙিয়ে চলেছে!/ তার অযত্ন, অবহেলা, অর্থলোভ এবং চাহিদায়,/ খুব শীঘ্রই তার হাড়গুলি খণ্ড খণ্ড হয়ে খসে পড়বে!

তোমার মত পুরোনো আমলা, যারা আমার অনুভূতি সম্বন্ধে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল, কি করে আমার আহমেদাবাদে পৌছনোর দিন ঘোষণার নির্দেশের প্রেক্ষিতে এ ধরণের আবেদন কর! আহমেদাবাদে আমার যাত্রা সমাপ্ত হচ্ছে। আমার আওরঙ্গাবাদ যাওয়ার দরকার কি? আমি কি বলছি, আহমদনগরে আমি আমার যাত্রা শেষ করব? অতীতে তোমরা দেখেছ আমার কথার কোন বাত্যয় হয় নি। আর সর্বশক্তিমান যদি চান, তাহলে যতদিননা আমি আমার এই বাড়ি ছাড়ছি, ততদিন যেন আমি আমার কথা আর কাজে মিল রাখতে পারি।

মন্তব্য – আওরঙ্গজেব ২০ জানুয়ারি, ১৭০৬ সালে আহমেদাবাদে যখন আসেন তখন তিনি ভেঙ্গে পড়া, স্বাস্থ্যহীন, অর্থহীন, সম্মানহীন এক বৃদ্ধ সম্রাটমাত্র। ১৬৯৯ থেকে ১৭০৫ পর্যন্ত দাক্ষিণাত্যের মুঘল সেনার তোপ বিভাগের প্রধান মনসুর খাঁয়ের লেখাতেও এই ধরণের কথা পাই। ১৬৫৮ সালে দৌলতাবাদের কিলাদার ছিলেন খ্বাজা মনজুর। ‘যাত্রা শেষ’ অর্থে বলা হচ্ছে আহমহনগরে তার যাত্রা শেষ হচ্ছে, সেই সূত্র কাফু খাঁএর লেখায় রয়েছে।
(চলবে)

Saturday, July 9, 2016

Anecdotes of Aurangzeb – আহকমইআলমগিরি - আওরঙ্গজেবের উপাখ্যান

তৃতীয় খণ্ড

৫২। পারসি আর ভারতীয়দের চরিত্রের বৈপরীত্য

গজনীর সংবাদপত্র মার্ফত সম্রাট জানতে পারলেন যে, ‘সুভান কুলি, পারস্য সীমান্তের থানাদার, কাবুলের সুবাদার আমীর খাঁকে একটা চিঠিতে লিখেছেন, ‘দুটি সীমান্তের মধ্যে কিছু দূরত্ব(চার লিগ) রয়েছে। সর্বশক্তিমান দয়ালু, দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্ব এবং মিলিজুলি সম্বন্ধ বর্তমান; দুই দেশের মধ্যে ভুলবোঝাবুঝি এবং ঝগড়ার কোন পরিবেশ নেই। দুই দেশের মানুষ দুদেশের মধ্যে গিয়ে বাজারে জিনিসপত্র কেনাকাটা-বিক্রয় করে যাতে দুটি দেশই একসঙ্গে বিকাশলাভ করে’। আমীর খাঁ উত্তরে লিখলেন, ‘এই বিষয়টি আমি মহামহিম সম্রাটিকে লিখছি, তার উত্তর যা পাব তা তোমায় জানাব’। কাবুল থকে একই কথাও সম্রাটের গোচরে আনা হয়েছে।

গজনী থেকে পাঠানো সংবাদপত্রের ওপরেই সম্রাট লিখলেন, ‘কাবুলের পাঠানো সমীক্ষার ওপর আমার বক্তব্য লেখা আছে – সেটা হল, ‘আমি হতবুদ্ধি হয়ে যাচ্ছি, আমীর খাঁ আমাদের বংশপরম্পরার কর্মচারী – আমার মনোভাব জানে, তার পূর্বপ্রজন্ম আমাদের তৈমূর পরিবারের বংশের সঙ্গে একভাবে জীবন কাটিয়েছে, সে কিন্তু এই দুইলাইনের শ্লোকটি ভুলে গিয়েছে,

শত্রু যখন তোমার প্রতি সদয়, তখন হুঁশিয়ার থেকো;/তাঁদের রণনীতি হয়ত ঘোমটায় ঢাকা, যেমন ঘাসের তলায় (লুকিয়ে)থাকে জল।

কোন বদ্ধমূল ধারণা বা শত্রুতার ধারণা থেকে নয়, আমরা বলতে পারি পার্সিদের সূর্য হল রক্ষাকারী গ্রহ, তাঁদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য হল তারা খুবই ক্ষিপ্র, তাড়াতাড়ি ভেবে নিতে পারে, এবং ভারতীয়দের থেকে চারগুণ বেশি দূরে দেখতে পায়, কেননা ভারতীয়দের রক্ষাকারী কবচগ্রহ হল শনি(ঠিক পড়লাম তো? ছাপাটা অস্পষ্ট এখানে - অনুবাদক)। তাঁদের একটাই ত্রুটি, শনির সঙ্গে শুক্রের মিলনে তারা খুব আয়েসি হয়ে পড়ে, আর যারা শনির দ্বারা শাসিত হয় তার হয় পরিশ্রমী। কিন্তু শনির ক্ষেত্রে কিছুটা স্বাভাবিক নীচতা আর নিকৃষ্টতার চরিত্র কিছু মানুষের মধ্যে দেখা যায়। আমার বলার উদ্দেশ্যটা হল, ধূর্ত চতুর পার্সিদের বন্ধুত্বপূর্ণ চতুরতার কাছে তোমরা কেউ আত্মসমর্পন করবে না, যাতে তারা প্রমান না করতে পারে তোমাদের দুর্বলতাকে। (কবিতা)

বন্যা দেওয়ালের পদচুম্বল করে তাকে উপড়ে ফেলার জন্য।

৫৩। অধস্তন কর্মচারীকে তার উর্ধ্বতনর হাত থেকে বাঁচানো হল
জাননাসিরখাঁ, হায়দারাবাদের উপসুবাদার, রুহুল্লা খাঁয়ের অধস্তন হয়ে কাজ করছেন, সম্রাটকে একটি আবেদন করে লিখলেন, ‘যদিও বংশপরম্পরায় আপনার এই কর্মচারী, রুহুল্লা খাঁএর অধীনে আপনাকে সেবা করছে, কিন্তু কোন কারণ ছাড়াই তিনি আমার ওপর মানসিক অত্যাচার শুরু করেছেন, এবং আমাকে আমার কাজ থেকে বরখাস্ত করার পরিকল্পনা করছেন। তাঁর মন সাপের(মার) মত সর্পিল, এবং সকলের অনিষ্ট করতে সদা তৎপর, আমার বিশ্বাস, আপনি এই দাসানুদাসকে ডেকে এই দুর্বৃত্তর থেকে এবং অসম্ভব মানসিক যন্ত্রণার হাত থেকে বাঁচাবার ব্যবস্থা করবেন’।

মার শব্দটার ওপর নির্দেশকরে সম্রাট চিঠিতে এটির সঙ্গে হি শব্দটা জুড়ে তৈরি করলেন হিমার(=গাধা) শব্দটা, এবং লিখলেন, ‘দুর্ভাগ্যপীড়িত মানুষটি, যার নামটির সঙ্গে হি অক্ষরটি জুড়ে বসে(মানে ওয়ালা শব্দ তৈরি হয়), তার কোন ক্ষতি করার ক্ষমতা নেই(গাধার মতই)। কিন্তু খারাপ চরিত্রের কি নিদান হতে পারে?’
সম্রাট লিখলেন, ‘তার অনুরোধক্রমেই তোমায় উপ(সুবাদার)পদ দেওয়া হয়েছিল। তার কি অধিকার আছে তোমায় বরখাস্ত করে? এটা এই বাক্যটার মত হল, ‘একটা চোর চাষীর অনুরোধে শৃঙ্খলাবদ্ধ হয়েছে, কিন্তু তার অনুরোধে তাকে মুক্ত করা হল না’। সে যদি (তোমার বিরুদ্ধে)অভিযোগ করে, তাহলে তার ভাইকে কুঁয়োতে ফেলার জন্য কাটা কুঁয়োতে সে নিজেই পড়বে। তার অর্থ হল আমি তাকে তনখার বক্সী পদ থেকে বরখাস্ত করব’।

মন্তব্য – মীর বক্সী, প্রথম রুহুল্লা খাঁ, ১৬৮৭ সালে রাজ্যটি দখলের পর হায়দারাবাদের সুবাদার পদে নিযুক্ত হন। কিন্তু তাকে খুব তাড়াতাড়ি সরিয়ে দেওয়া হয়। জাননিসারখাঁ কখোনোই সেখানের উপসুবাদার ছিলেন না, বরং ফেব্রুয়ারি ১৬৯০তে বিজাপুরের দেওয়ান নিযুক্ত হন। তবে ছিলেন জানসিপারখাঁ(মীর বাহাদুর দিল, মুখতার খাঁ সাবজাওয়ারির তৃতীয় সন্তান) হায়দারাবাদের সুবাদার হিসেবে বহুকাল, রাজ্য দখলের পরে সুনামের সঙ্গেই। যতদূর সম্ভব ঘটনাটা বিজাপুরেই ঘটেছিল, যখন জাননিসারখাঁ রুহুল্লা খাঁএর অধীনে কাজ করছিলেন।
(চলবে)

Anecdotes of Aurangzeb – আহকমইআলমগিরি - আওরঙ্গজেবের উপাখ্যান

তৃতীয় খণ্ড

৫১। বিদেশি আক্রমণকারীদের প্রতিআক্রমনের শীঘ্রতা

বণিক দলের নেতা মহম্মদ সাদিকএর পাঠানো চিঠিতে সম্রাট জানতে পারলেন, শাহ আব্বাস তার রাজধানী ইসপাহান ত্যাগ করেছেন, শহরের কিছু দূর(দুই লিগ) গিয়ে তার অগ্রগামী সৈন্যদের আঘ্রাবাদের দিকে পাঠিয়েছেন। সম্রাট তার নিজের আরব ঘোড়া তৈরি রেখে সেনা তৈরি করতে বললেন। কেউ কোন কিছুই তাকে প্রশ্ন করতে পারছে না। মীর জুমলার সাহসী সন্তান মহম্মদ আমীর খাঁ শুধু প্রশ্ন করলেন, ‘মহামহিমের অগ্রগামী সৈন্যদল কি কোন বার্তা পাঠায় নি? তাদের বার্তা আসা পর্যন্ত কি আমরা পরের পদক্ষেপের জন্য অপেক্ষা করব?’

মহামহিম জানালেন, ‘(পার্সি রাজার আক্রমণাত্মক উদ্দেশ্য সম্বন্ধ নিশ্চিত না হয়ে) আমি কিছু করতে পারি না। কিন্তু তাদের সমরসজ্জার তথ্য জানার পর অবহেলা আর দেরি করলে আমার ভাগ্য বিপর্যয় হতে পারে। এখন কাজ হল অগ্রগামী সৈন্যদলের খবর আসা পর্যন্ত তৈরি হয়ে বসে থাকা’। (কবিতা)

সর্বশক্তমানের সৃষ্টি মানুষ পূর্ব বা পশ্চিমে অপরিচিত নয়;/সে যেদিকেই যায় দেশ তার সঙ্গেই থাকে।

আগ্রার বাইরের বাগানে প্রবেশ করে দেওয়ানি আম ডাকলেন সম্রাট, সেখানে কয়েকদিন বাদে তার সঙ্গে যেতে বসা কর্মচারী এবং কেরানীদের বললেন, পরেরদিন তিনি কুচ করে এগোতে চান, তারপর থামবেন লাহোরে। গৃহ অধ্যক্ষ সম্রাটের প্রতি এক আবেদনে জানালেন, ‘এই কুচ করার সিদ্ধান্তটি খুব তাড়াতাড়ি করে নেওয়া হয়েছে। ফলে সেনা চলাচলের জন্য যা প্রয়োজন সব আমাদের হাতে নাও আসতে পারে’।

সেই আবেদনের ওপর সম্রাট লিখলেন, ‘এই অনন্ত পথ চলার আহ্বান কোন মানুষই এড়াতে পারে না, এবং সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় পূর্বের কোন হুশিয়ারি ছাড়াই, তাতে আমার আর কি করার আছে? আমি এই যাত্রাকে অসীমের দিকে যাত্রা হিসেবেই দেখছি। আমি যেভাবে এখানে এসেছি, ঠিক সেইভাবেই আমি এই যাত্রাটা শুরু করব। না, এমন কি কোন কোন দিন কত কত রাস্তা যাব, তাও আমরা পরিকল্পনা না করতেও পারি। (রোজ)যতটা পারা যায় আমি ততটা যাব।(কবিতা)

মৃত্যুর পথে পথচারীর পথানুগমনের কোন স্তর হয় না

মন্তব্য – ১৬৬৬এর সেপ্টেম্বরে, তখন আওরঙ্গজেব আগ্রায়, গোয়েন্দাদের থেকে খবর পেলেন যে দ্বিতীয় শাহ আব্বাস খুরাসানে প্রবেশ করেছেন ভারত আক্রমনের উদ্দেশ্য নিয়ে। সম্রাট যশোবন্ত সিংএর সঙ্গে মুয়াজ্জমকে ৪ সেপ্টেম্বর পাঠালেন পাঞ্জাবের উদ্দেশ্যে। ৯ অক্টোবর তিনি আগ্রা ছেড়ে দিল্লি রওনা হলেন, কিন্তু উত্তর-পশ্চিম প্রদেশে পৌছোনোর জন্য কোন তাড়াহুড়ো দেখাচ্ছেন না। ১২ ডিসেম্বর পালামএর শিকার শিবিরে তিনি শুনতে পেলেন ২২ আগস্ট, শাহ মারা গিয়েছেন। আওরঙ্গজেবের উদ্দেশ্যে লেখা একটি উপহাসভরা চিঠি শাহ দিয়েছিলেন পারস্যের মুঘল রাজদূত তারবিয়ত খাঁকে, মৃত্যুর কিছু আগে, সেটি ফৈয়াজউলকাওয়ানিনএ উল্লেখ আছে। সেখানে তিনি ভারত সম্রাটকে ভারত আক্রমনের হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন।
(চলবে)

Friday, July 8, 2016

Anecdotes of Aurangzeb – আহকমইআলমগিরি - আওরঙ্গজেবের উপাখ্যান

তৃতীয় খণ্ড

৪৯। বিদেশি হানাদার বিষয়ে রণনীতি
আফগানিস্তান সুবা থেকে পাঠানো খররের কাগজ থেকে সম্রাট জানয়ে পারলেন যে যুদ্ধের জন্য তৈরি ১১হাজার ঘোড়া, দুটি ঘোড়া পিছু একজন বাহক কাবুলে প্রবেশ করেছে। এবং রীতি অনুযায়ী দিল্লির প্রশাসক এগুলি দেখে সম্রাটের জন্য দিল্লিতে পাঠিয়েছেন। এই সংবাদপত্রের ওপরে সম্রাট লিখলেন, ‘এটি আমীর খাঁর (আফগানিস্তানের সুবাদার) অযাচিত অযত্নের ফল, সে আমার কাছে শিক্ষিত হয়েছে, আমার মন জানে। হঠাতই কি করে ৫৫০০ দুঃসাহসী তুরাণি বিদেশ থেকে রাজধানীতে (বাধাহীনভাবে) ঢুকে গেল। এই মানুষগুলোই আফগানদের থেকে তাদের জমি ছিনিয়ে হিন্দুস্তানে নিয়ে আসে। এই ভুলের শাস্তি দিচ্ছি না, এবং অসাবধানতাকে তাড়না করা যায় না(ইচ্ছেকৃত পাপের মত)।
আগামী দিনে এই ধরনের ঘটনা কিভাবে এড়ানো যায় তা তাকেই দেখতে হবে, এটা তার দায়িত্ব। এবং অতীতের থেকে শিক্ষা নিতে হবে তাকে; ভবিষ্যতে এধরণের যদি কোন ঘটনা ঘটে তাহলে, কুড়িটি ঘোড়া পিছু একজন ঘোড়সওয়ার আসার অনুমতি দিতে হবে, এবং সেই ঘোড়সওয়ার হবে বৃদ্ধ এবং কর্মহীন ব্যক্তি।
মন্তব্য - খালিলুল্লার পুত্র আমীর খাঁ আফগানিস্তানের সুবাদার ছিলেন ১৯ মার্চ ১৬৭৭ থেকে ২৮ এপ্রিল ১৬৯৮ পর্যন্ত। মুহম্মদইবখতিয়ারের বাহিনী ১২০১ সালে নদিয়ায় এ ধরণের হঠাত আক্রমন করে, প্রাথমিকভাবে এদেরকে ঘোড়ার ব্যবসায়ী ভেবে এদের রোখে নি সৈন্যরা।
৫০। বিদেশি শক্তির বিরুদ্ধে সদা নজরদার থাকবে
কাবুলের সুবাদার আমীর খাঁয়ের ডাক প্রেরণ থেকে সম্রাট জানতে পারলেন, ‘পারস্যের গজনীর থানাদারের চিঠি থেকে জানা গেল গজনী থেকে পারসি সীমান্ত ৩৬ মাইল। পারস্যের কান্দাহারের থানাদার জানালেন, আমাদের দিকের চার মাইলের মধ্যে যদি আমরা তাদের একটা থানা করতে দিই, তাহলে প্রত্যেক বছর তারা মহামহিমকে আমাদের একশ দামি পার্সি ঘোড়া উপহার দেবে। আগের থানায় জল শেষ হয়ে যাওয়ায়, তারা জানাল যে আমাদের দিকে চার মাইলের মধ্যে সেই প্রার্থিত জল পাওয়া যাবে, তাই তাদের এই সিদ্ধান্ত’।
উত্তরে সম্রাট জানালেন, ‘কোন জ্ঞানী মানুষের পার্সি থানাদারের বলিষ্ঠতা এবং ঔজ্জ্বল্যতার মোহে পড়ে তার নিজের সুরক্ষার ঘোমটা তুলে নিতে যাওয়া ঠিক নয়। কিন্তু(কবিতা),
থানা(=লোভ) তিনটি অক্ষর, সবগুলি মূন্য(মানে সেগুলিতে কোন বিন্দু নেই)
তুমি কি আমায় তাদের আমাদের সীমান্তের দিকে(কস) আসার অনুমতি দিচ্ছ, যখন আমি তাঁকে দুপা এগোতে দিই নি? ধর্মতাত্ত্বিকেরা বলেন, নগণ্য পাপ, একটি নৈতিক পাপের সমান। তুমি আমার বংশপরম্পরার কর্মচারী, আমার মানসিকতা তোমার জানা – তুমি সাত বছর বয়স থেকেই আমার রাজসভায় বড় হয়েছ, এবং পার্সিদের সম্বন্ধে কি করে তুমি এরকম উদাসীন থাকতে পারলে! তুমি নিজে ভাব, কেন তারা আমায় প্রতি বছর একশ পার্সি দামি ঘোড়া উপহার দেবে, এই কারণে যে তারা তাদের খানা আমাদের সীমান্তের চার মাইল ভেতরে তৈরি করার অনুমতি পাবে! প্রবাদ অনুসারে –
ভাঙ্গার জন্য সে তোমার আঙ্গুলের অংশ ধরল/ হঠাতই সে তোমার হাত আক্রমন করবে। কিন্তু তোমার শত্রুর পরিকল্পনা সম্বন্ধে উদাসীন হয়ো না,/ সবসময় তার মুখমন্ডলের কালো পর্দা ছিঁড়ে ফেলো।
আরো কিছু কথা(কবিতা)
জ্ঞান আর ঐশ্বর্য/ভবিষ্যৎ পরস্পরের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত/ যার জ্ঞান নেই, সে ঐশ্বর্য পায় না।
সাধারণ মানুষ পশুর মত, তারা মনেকরে ঐশ্বর্যবান মানুষ জ্ঞানী হয়, কিন্তু তা মিথ্য। এই প্রবাদের মানে হল, যে তার ভবিষ্যতের ঐশ্বর্য দেখতে পায় না, বেশিদিন টেকে না, আমরা বলতে পারি সে মিলিয়ে যায়। এই বিষয়ে বেশি বলা মানে জ্বলন্ত লোহা ঠান্ডা দিয়ে পেটানো বা পুরোনো আংরাখা সেলাই করা’।
মন্তব্য – শাহজাহান এবং আওরঙ্গজেবের সময়ে পারস্যের সঙ্গে দিল্লির তীব্র প্রতিযোগিতা ছিল, বহুবার ভারত মনে করেছে পার্সিরা ভারত আক্রমন করতে পারে, সেই হুঁশিয়ারি বহুবারও সীমান্ত থেকে দেওয়া হয়েছিল। পারসি দুর্ভাগ্য বহুদিন ভারতের মাথায় ঝুলেছিল। অন্তত এই দুই সম্রাট যে কোন যুদ্ধখোর পার্সি সম্রাটের মৃত্যুর সংবাদে খুব খুশিই হতেন। ১৬৪৯ সালে পার্সিরা কান্দাহার জয় করে। খালিলুল্লা খাঁয়ের পুত্র মীর খাঁ, আমীর খাঁ উপাধি পান। ৯ মার্চ ১৬৭৭ থেকে ২৮ এপ্রিল ১৬৯৮ পর্যন্ত তিনি কাবুলের সুবাদার ছিলেন।
(চলবে