তৃতীয় খণ্ড
৫৭। আর্থিক দুর্দশায় সর্বশক্তিমানের ওপর বিশ্বাস
ইনায়েতুল্লা খাঁ সম্রাটকে বললে, ‘যে অভিজাত(মিসল) আপনার সামনে রোজ কুচ করে,
তাঁদের সংখ্যা অগনিত, কিন্তু দেশের মধ্যে জাগিরের সংখ্যা খুবই সীমিত। কিভাবে এই
অসিম সংখ্যাকে সসীমে নামিয়ে আনা যায়?’
সম্রাট লিখলেন, ‘সর্বশক্তিমান আমাদের ক্ষমা করুণ, শাহী ভাণ্ডারগুলি(কারখানা)
তাঁর বিচারখানা। জনগণ সর্বশক্তিমানের সন্তান, তাঁদের জীবিকা ভগবানের দোয়ায় চলে। এই
গরীব খাদ্য-ব্যবস্থাপক(আওরঙ্গজেব) দয়ালু তাঁর প্রতিনিধিমাত্র। আর সর্বশক্তিমানের
রাজসভায় প্রাচুর্যের অভাব ঘটবে বা সীমা থাকবে তা ভাবা অবিশ্বাসীর কর্ম। সর্বশক্তিমানের
নামে জয়ধ্বনি কর! এবং আবারও বলি সর্বশক্তিমানের নামে জয়ধ্বনি কর! যদিও আমার পা
ভাঙ্গা, কিন্তু মন নয়। সাতারা জাগিরের দুর্গ দখল হওয়ার পরে আরশাদ খাঁয়ের সমীক্ষা
অনুসারে সেখানে ৫ থেকে সাত হাজার আধিকারিক যোগ হয়েছে। এই নতুন ভৌগোলিক এলাকায় তাদের
কাজ দাও। যখন তাঁদের কাজ শেষ হয়ে যাবে, সর্বশক্তিমান তোমাদের জীবনযাপনের নবতম সূত্র
যোগাড় করে দেবেন’।
মন্তব্য - ইনায়াতুল্লা খাঁ, জুলাই ১৬৯২ সালে তনখার দেওয়ান নিযুক্ত হন। তিনি
সম্রাটের ‘ব্যক্তিগত শিষ্য’ এবং সচিবদের মধ্যে প্রিয়তম ছিলেন, বাহাদুর শাহ১এর আমলে
উজির পদ পর্যন্ত তাঁর পদোন্নতি ঘটেছিল। আরশাদ খাঁ খালিসার দিওয়ান নিযুক্ত হন ১৬৯৮
সালে এবং মারা যান ১৭০১ সালে।
৫৮। তোপবাহিনীর বাগীদেরকে টিট করা হল
সম্রাট যখন সাতারা থেকে পারলির দিকে কুচ করে যাচ্ছিলেন, যেহেতু বাংলা থেকে
বরাদ্দ রাজস্ব তখনও এসে পৌছায় নি, তখনও পর্যন্ত আহসান(অনুসরণকারী) সেনা আর
গোলান্দাজ বাহিনীর চৌদ্দ মাসের বেতন বাকি ছিল। চারজন ভরসাযোগ্য হাজারি সম্রাটকে
একদিন জানালেন, ‘অনুগামীরা আমাদের স্তোকবাক্য শুনছে না। মীর আতিশ, প্রধান
তোপাধ্যক্ষ্য, তরবিয়ত খাঁর বিরুদ্ধে তারা বিদ্রোহ করতে বদ্ধ পরিকর। সম্রাট উত্তর
দিলেন, ‘হারেমে রাখা গণখাজাঞ্চি(পাবলিক ট্রেজারি) থেকে তাঁদের বকেয়ার অর্ধেক দিয়ে
দাও। হায়দারাবাদের চিকাকোলে গেলে বাকিটা তারা পাবে সেটা জানাও। প্রধানমন্ত্রীকে
হায়দারাবাদের দেওয়ানকে এ বিষয়ে অগ্রসর হতে অনুমতি দাও এবং তোপখানার সেনাদের সঙ্গে
আদালতের পেয়াদা পাঠাও’। দুই হাজারি - মান সিং এবং চতুর্ভূজ, সম্রাটের এই সিদ্ধান্তে
একমত না হয়ে তরবিয়ত খাঁকে তার পালকি থেকে টেনে নামিয়ে তুমুল বর্ষার মধ্যে মাঠে
বসিয়ে রাখলেন। হরকরা(গোয়েন্দা)দের প্রধান য়ার আলি বেগ, এই ঘটনাটা সম্রাটকে জানালেন,
এবং সম্রাট সঙ্গে সঙ্গে খাজাঞ্চিখানাকে পুরো বকেয়া বেতন শোধ করে দিতে নির্দেশ
দিলেন। তারা তোপখানার প্রধানকে সেই বর্ষার মধ্যে সন্ধ্যে পর্যন্ত মাঠেই বসিয়ে
রাখলেন যতক্ষণনা তাঁদের বকেয়া পাচ্ছেন। বকেয়া পাওয়ার পর, তারা তাঁকে তার তাঁবুতে
ছেড়ে দিয়ে এলেন।
পরের দিন সকালে সম্রাট চারজন হাজারিকে খেলাত দিয়ে বললেন, ‘তোমরা তোপখানার
প্রধানের সঙ্গে মিলেজুলে এই দুষ্কর্মটি ঘটিয়েছ’। তারবিয়ত খাঁয়ের পদ পাঁচ হাজার কমিয়ে
দিলেন, একইভাবে তার জাগির একই পরিমানে কমল। পরের সপ্তাহে সম্রাট দুজন হাজারিকে নির্দেশ
দিলেন, চিকাকোলে গিয়ে অন্যান্যদের জন্য আগ্রিম ছয় মাসের বেতন তুলতে। তিনি নিজের
হাতে হায়দারাবাদের সুবাদার জান নাসির খাঁকে ফরমান লিখে বললেন যে তাঁদের বকেয়া
দিনের হিসেবে ভাগ করে কিস্তিতে প্রদান করতে হবে। এই খবর সম্রাটের সঙ্গে থাকা অন্য
দুজন হাজারির কাছে পৌছল, তাঁদের বিক্ষুব্ধ মন শান্ত হল। তিনি নির্দেশ দিলেন পরের
দুই হাজারি আওরঙ্গাবাদে গিয়ে সেখানকার খাজাঞ্চিখানা থেকে তাঁদের অনুগামীদের জন্য ছয়
মাসের অগ্রিম বরাদ্দ নিয়ে নিতে; এই নির্দেশ তিনি সেই সুবার সুবাদার মানুর খাঁকে
লিখলেন, যাতে তিনি তাঁদের প্রাপ্য কিস্তিতে মিটিয়ে দিতে পারেন’।
দশ দিন পরে সম্রাট নির্দেশ দিলেন, যে দু জন হাজারি এই বিদ্রোহ শুরু করেছিলেন,
তাঁদের হায়দারাবাদের দৌলতাবাদ দুর্গে আটক করে রাখতে, এবং যে অর্থ আগে এবং বর্তমানে
দেওয়া হয়েছে, সেগুলি বাজেয়াপ্ত করে নিতে।
মন্তব্য – ২১ এপ্রিল ১৭০০ সালে সাতারার পতন হয়। তিন দিনের মধ্যে তিনি পার্লির
দিকে কুচ শুরু করে পৌঁছন(২৮-৩০ এপ্রিল)। মুখতার গোষ্ঠীর দারাব খাঁয়ের পুত্র মীর
মুহম্মদ খলিল, ১৬৯৮ সাল নাগাদ নীর আতিশ এবং তরবিয়ত খাঁ উপাধি পান। ১৭০৭৮এর জাজায়ুর
যুদ্ধে প্রাণ দেন।
No comments:
Post a Comment