তৃতীয় খণ্ড
৫৫। দুর্গ সারাইয়ের জন্য কোন বরাদ্দ নেই
দ্বিতীয় রুহুল্লা খাঁ(যার নাম মীর হুসেইন) সম্রাটকে আবেদন করে লিখলেন, ‘ইসলামপুরির দুর্গ দুর্বল হয়ে যেতে বসেছে, এবং খুব শীঘ্রই আপনি কুচ করে এদিকে আসবেন। এটি শীঘ্র সারাই করার প্রয়োজন। আপনার মতের অপেক্ষা করছি?’
সম্রাট লিখলেন, ‘সর্বশক্তিমান আমাদের ক্ষমা করুণ! সর্বশক্তিমান আমাদের ক্ষমা করুণ! ইসলামপুরীকে দুর্বল বলার অধিকার তোমার নেই। তোমার লেখা উচিত ছিল তার পুরোনো নাম ব্রহ্মপুরী হিসেবে। আমাদের শরীরের দুর্গ এর থেকেও দুর্বল হয়ে পড়েছে। তার কোন নিদান আমার অন্তত জানা নেই। (কবিতা)
আমরা আমাদের দেহবল্লরী সাজিয়ে রাখি জল আর কাদায়/ স্বর্গের বাড়িতে থাকার জন্য তৈরি না করে, মর্ত্যের জন্য নিজেদের তৈরি করি’।
তারপরে খাঁ লিখলেন, ‘মহামহিমের যদি এটাই ইচ্ছে হয়, তাহলে আমি কারিগরদের বলি ব্রহ্মপুরী দুর্গ নিরীক্ষণ করতে’। সম্রাট লিখলেন, ‘আমার পূর্বের বক্তব্য শুনেও তুমি কথা নিয়ে খেলা করছ? (কবিতা)
নিজের ব্যক্তিত্বের স্থপতি হতে যেও না, তোমার নিজের বাড়ি ধ্বংস করে দাও/ খণ্ডহর হোক, যাতে তুমি তার ওপর প্রাসাদ তুলতে পার/ ধুলোর স্তরে নেমে এস, তোমার ঘাড় সবার থেকে ঘরিয়ে নাও/ তবে দেখো ধুলো যেন তোমার গোড়ালির ওপরে না উঠতে পারে।
জীবন যদি কিছুটা সময় আমায় ফিরিয়ে দেয়(যদি পুনর্জন্ম হয়) তাহলে হয়ত আমি (দুর্গ) সারাবার প্রশ্নে একমত হতাম। তবে যদি ঘটনা অন্যভাবে ঘটে, এই কবিতাটি উচিত বাক্য বলেছে, বাস্তবিকই, তোমার সম্পদ আর তোমার সন্তান তোমার শত্রু। আমি (ইসলামের)পুণ্য যোদ্ধাদের পিছনে সমস্ত অর্থ নষ্ট করব’।
মন্তব্য – মীর হুসেইন প্রথম রুহুল্লা খাঁএর পুত্র, প্রথমে খানাজাত খাঁ এবং পরে দ্বিতীয় রুহুল্লা খাঁ উপাধি পান। ৯ মে, ১৭০৪এ মৃত্যুর সময় তিনি ছিলেন দ্বিতীয় খাজাঞ্চি এবং খানইসামান পদে। ইসলামের সঙ্গে যে দুর্বল শব্দটি জুড়ে থাকুক, সেটা আওরঙ্গজেবের পছন্দ ছিল না, তাই পুরোনো ব্রহ্মপুরী নামটি ব্যবহার করা দরকার ছিল বলেছেন। দুর্গ সারাইএর উত্তরে বোঝা যায়, কি ধরণের আর্থিক বোঝার মধ্যে দিয়ে তিনি তার জীবনের শেষ দিনগুলি কাটিয়েছেন।
৫৬। দুর্গ সারাইয়ের জন্য কোন বরাদ্দ নেই
আওরঙ্গাবাদের সুবাদার মনসুর খাঁএর চিঠি আওরঙ্গজেবের সামনে পেশ করা হল। এতে বলা হয়েছে, ‘শাহী শিবির আহমদনগরে পৌঁছেছে। আমার মনে হয় আহমেদনগরের দুর্গটি এবারে সময় হয়েছে সারিয়ে নেওয়ার, শাহী সেনা পৌঁছতে পৌঁছতে সেই দুর্গ সারাই হয়ে যাবে’।
সম্রাট লিখলেন, ‘কবরে পৃথিবী তার দিকে দু হাত বাড়িয়ে রয়েছে,/ অথচ অজ্ঞানী মানুষ তার গৃহ রাঙিয়ে চলেছে!/ তার অযত্ন, অবহেলা, অর্থলোভ এবং চাহিদায়,/ খুব শীঘ্রই তার হাড়গুলি খণ্ড খণ্ড হয়ে খসে পড়বে!
তোমার মত পুরোনো আমলা, যারা আমার অনুভূতি সম্বন্ধে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল, কি করে আমার আহমেদাবাদে পৌছনোর দিন ঘোষণার নির্দেশের প্রেক্ষিতে এ ধরণের আবেদন কর! আহমেদাবাদে আমার যাত্রা সমাপ্ত হচ্ছে। আমার আওরঙ্গাবাদ যাওয়ার দরকার কি? আমি কি বলছি, আহমদনগরে আমি আমার যাত্রা শেষ করব? অতীতে তোমরা দেখেছ আমার কথার কোন বাত্যয় হয় নি। আর সর্বশক্তিমান যদি চান, তাহলে যতদিননা আমি আমার এই বাড়ি ছাড়ছি, ততদিন যেন আমি আমার কথা আর কাজে মিল রাখতে পারি।
মন্তব্য – আওরঙ্গজেব ২০ জানুয়ারি, ১৭০৬ সালে আহমেদাবাদে যখন আসেন তখন তিনি ভেঙ্গে পড়া, স্বাস্থ্যহীন, অর্থহীন, সম্মানহীন এক বৃদ্ধ সম্রাটমাত্র। ১৬৯৯ থেকে ১৭০৫ পর্যন্ত দাক্ষিণাত্যের মুঘল সেনার তোপ বিভাগের প্রধান মনসুর খাঁয়ের লেখাতেও এই ধরণের কথা পাই। ১৬৫৮ সালে দৌলতাবাদের কিলাদার ছিলেন খ্বাজা মনজুর। ‘যাত্রা শেষ’ অর্থে বলা হচ্ছে আহমহনগরে তার যাত্রা শেষ হচ্ছে, সেই সূত্র কাফু খাঁএর লেখায় রয়েছে।
(চলবে)
No comments:
Post a Comment