দ্বিতীয় খণ্ড
১২। রাজকীয় বিশেষাধিকারের নিয়নলঙ্ঘন
কাবুলের সংবাদপত্র থেকে সম্রাট জানতে পারলেন যে, শাহজাদা মুহম্মদ মুয়াজ্জম আদেশ দিয়েছেন, রাজসভা বসার শুরুতে চারটি ভেরি বাজাতে হবে। (সেই সংবাদের প্রত্যুত্তরে) সম্রাট লিখলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী, শাহজাদাকে এই মর্মে একটা নির্দেশিকা পত্র লিখতে আদেশ দিচ্ছি, ‘চারটি ভেরি বাজাবার বদলে, তোমায়(শাহজাদাকে) চারটি মাদল/পটহ বাজাতে হবে, কেননা রাজসভা বসার সময়ে ভেরি বাজানো একমাত্র সম্রাটের বিশেষাধিকার। যখন তোমায় সর্বশক্তিমান (সেই অধিকার) দেবে, তখন তুমি (সেই কাজটি) করবে। কেন এই তাড়াহুড়োর অবিমৃষ্যকারিতা?
মন্তব্য – শাহজাদা মুয়াজ্জম, ১৭০৭ সালে বাহাদুর শাহ রূপে সিংহাসনে আরোহন করেন। ১৬৯৮ সালে তার পিতা তাকে আফগানিস্তানের সুবাদার রূপে মনোনীত করেন।
১৩। রাজকীয় বিশেষাধিকারের নিয়নলঙ্ঘন
আফগানিস্তানের গোয়েন্দাদের পাঠানো বার্তা সূত্রে সম্রাট জানতে পারলেন, শাহজাদা মুহম্মদ মুয়াজ্জম বাহাদুর শাহ জামা মসজিদে নামাজ পড়ার আগে তার সামনে পর্দা টাঙ্গানোর প্রথা শুরু করেছেন। তার চিঠির পাতায় আওরঙ্গজেব লিখলেন, ‘বাস্তবিকভাবে এই ঘটনাটা ভয় এবং কাপুরুষতার জন্য করা হয়েছে, এগুলি আমার পুত্রের চরিত্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। এই কাপুরুষতার পাশাপাশি, তার ভয় আমাকেও। যে প্রথা একমাত্র সম্রাটের জন্য সংরক্ষিত, সেই প্রথা সে দুঃসাহস সহকারে পালন করার অধিকার কোথা থেকে পায়? প্রয়াত সম্রাট শাহজাহান তার পুত্রদের প্রতি অমনোযোগী ছিলেন। ফলে এই বিষয়গুলি তখন থেকেই অবিশ্রান্তভাবে উন্মুক্ত হয়ে গিয়েছে সাম্রাজ্যে’। (চিঠির)প্রান্তে সম্রাট লিখলেন, ‘এই বিষয়ে (হুঁশিয়ারি দিয়ে)এক কলমও না লেখার জন্য কাবুলের নাজিরকে তার পদ থেকে পদচ্যুত করে তাকে হাজারি মনসবদারের পদে অবনমিত করা হচ্ছে। নতুন নাজিরের পদে কে বৃত হবে তার সুপারিশ করবে মুহররম খাঁ। আগামী দিনের কাজের কথা মনে রেখে এক্ষুনি (কাবুলের)সংবাদ লেখক আর সাংবাদিকদের জাগির কেড়ে নিয়ে তাদের পদ অবনমিত করলাম না। গোয়েন্দাকে আদেশ জানাচ্ছি, সে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই ঘটনার তদন্ত করে বাস্তব অবস্থা বর্ণনা করে একটা সমীক্ষাপত্র প্রেরণ করবে। যদি এটা সত্য হয়, শাহজাহাকে সুবাদারির পদ থেকে কর্মচ্যুত করে আমার সামনে উপস্থিত হতে নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে’।
(চলবে)
No comments:
Post a Comment