এনকাউন্টারিং ডেভেলাপমেন্টঃ দ্য মেকিং এন্ড আন্মেকিং অব দ্য
থার্ড ওয়ার্লডঃ আর্তুরো এসকোবারএর বই থেকে
দ্বিতীয় অধ্যায়
এই সমীক্ষা একটি সাধারণ প্রশ্ন তুলে ধরে, তৃতীয়
বিশ্বের নানান দেশে উন্নয়নের এবং আধুনিকতার ভাষার প্রচার আর প্রভাব কি হতে পারে।
এর উত্তর, প্রভাব নির্ভর করে অঞ্চল অনুযায়ী – সে বিশ্বঅর্থনীতিতে কতটা অঙ্গীভূত হচ্ছে,
ঔপনিবেশিক ঐতিহ্য, উন্নয়নের কাজে অংশগ্রহণের নমুনা ইত্যাদির সম্বন্ধ বিচার করে।
তিনটে অতিরিক্ত উদাহরণ এই বিষয়টি তুলে ধরার চেষ্টা করব যাতে এই ধারনাটা খোলাসা হয়।
নেপালি গ্রামে যাকে বিকাশ বলা হয় পাপুয়া নিউগিনির একটি ছোট্ট গ্রাম গাপুনে সেটি
কামাপ(coming up) নামে পরিচিত এবং উন্নয়নের খোঁজ তাদের জীবনের
একটা অংশ। গাপুনে উন্নয়নের ছবি উঠে আসে গ্রামের ক্যাথলিক মিশনারি, অস্ট্রেলিয়
ঔপনিবেশিক প্রশাসক এবং জাপানি আর আমেরিকিয় সেনা প্রভাবিত ইতিহাস থেকে। এরসঙ্গে
জুড়ে থাকে স্থানীয়দের cargo cultএর বিশ্বাস। তারা মনে করে তাদের মৃত পূর্বপুরুষ
আবার জীবিত হয়ে ফিরে আসবেন, তাদের সঙ্গে আসবে তাদের সঙ্গে দিয়ে দেওয়া cargo । এলাকায়
বাণিজ্যিক চাষ বেড়েছে, উন্নয়নের ধারণায় জমিতে চাষের সংখ্যা বেড়েছে এবং তাতে
বৈচিত্র এসেছে। আজকে প্যাকেট করা সাদা চাল আর নেসকাফে তাদের অত্যন্ত চাহিদাবন্ত
বস্তু এবং সেটাই তাদের কাছে উন্নয়নের সীমারেখা, ঠিক যেমন নেপালে অনুন্নয়ন হিসেবে
দ্যাখা হয় প্রাচীনকালের মত করে জীবনধারন করা আর মাথায় মোট বওয়া। গাপুনের শিশুরা আজ
বিদ্যালয়ে যায় এবং সাদারা কিভাবে জীবনযাপন করে সেটা তারা জানে।
তবুও গাপুন শুধুই আধুনিক হয় নি, তাদের পুরনো
কৃষ্টি আজও বেঁচে আছে, যে বিশাল অর্থ তারা বাণিজ্য কৃষিতে আয় করছে, তার একটা অংশ
আর নেসকাফে বা সাদা চালে যেমন খরচ হচ্ছে, তেমনি পুরনো সামাজিক খাওয়াদাওয়া উতসবে
ব্যয় আর উতসর্গীকৃতও সমানে হচ্ছে। যদিও কামাপ গাপুনের বাসিন্দাদের জীবনে বিপুল
পরিবর্তন এনেছে, কিন্তু এটাকে পদ্ধতি হিসেবে ওঁরা দেখছেন না বরং এই পরিবর্তনকে
দেখছেন হঠাৎ রূপান্তর হিসেবে, একটি দৈবী পরিবর্তন রূপে - যেখানে তাদের বাড়ির ছাদ
টিনের হয়েছে, তাদের খাওয়াদাওয়ায় সাদা চাল নেসকাফে আর টিনিপি(টিনে জারিত ম্যাকারেল)
এসেছে, এবং তাদের চামড়া কিন্তু সাদা( Kulick 1992)। তারা মনে করে
এই রূপান্তর, তাদের দৃষ্টিতে অর্থনৈতিক উদ্যমের জন্য নয় বরং ধার্মিকতার জন্য
এসেছে। গাপুনে উন্নয়ন আদতে আরেকটি প্রমিত cargo
cult; শিক্ষা, বিদ্যালয়ে
যাওয়া, রাজনীতি সবই কার্গোর শর্তে মূল্যায়িত হয়, এমন কি ১৯৬০এর দশকে বিদ্যালয়ে
স্থানীয় ভাষাতেই পড়ানো হয়। গাপুনএর অধিবাসীরা জানেন উন্নয়ন মানে কি এবং সেটা তাদের
কোথায় নিয়ে যাচ্ছে, যদিও সেটা ভিন্ন ভাষায় ভিন্ন কৃষ্টি আর প্রথায় মোড়া।
আরেকটি উদাহরণ দেব কেনিয়ার লামু শহরে, মহিলাদের
দৃষ্টিতে উন্নয়ন এবং আধুনিকতা। এই শহরের সমাজে উন্নয়নের মডেলটি আরও বিস্তৃত;
পশ্চিমী উন্নয়ন এবং নারীস্বাধীনতার তত্ত্বের পাশাপাশি তারা জুড়েছেন ইসলামি
আন্দোলন(পুনর্জাগরণবাদী বা সংশোধনবাদী), ধনী আরব দেশ থেকে যারা ফিরে এসেছেন তাদের
সঙ্গে আনা কৃষ্টি, ভারতীয় গান, চলচ্চিত্র, ভিডিও ক্যাসেট এবং টিভিতে দেখানো
সিরিয়াল ইত্যাদি। মুসলমান পরিচয় বজায় রেখে মহিলারা উন্নয়ন এবং আধুনিকতাকে দেখতে
চাইছে কি না। এই সমীক্ষায় মেয়ে হিসেবে পরিচয় ছিল অক্ষদণ্ড, প্রশ্ন ছিল বোরখা পরা
নিয়ে, মেয়েদের পড়তে পাঠানো নিয়ে, আধুনিক বাড়িঘর নিয়ে, গতায়াতের আরও সুবিধা নিয়ে
ইত্যাদি। যৌবনে মেয়েরা যখন মাইশা মাজুরি(উচ্চতর জীবনধারণ)তে পৌঁছয়, তখন তারা
পরিবর্তনের জন্য বিদেশি নানান পণ্যের প্রতি আকৃষ্ট হয়, পরম্পরা যেমন বোরখা রাখতে
চায় না – যদিও একে তারা খারাপ বলে মনে করে না, তাদের কাছে এটা অনাধুনিক এবং
অকার্যকর(Fuglesang 1992)।
কেতাদুরস্তি, ভারতীয় চলচ্চিত্র দ্যাখা, আধুনিক
যন্ত্রপাতি ব্যবহার করার মত কিছু জিনিসকে তারা আধুনিকতা বলে মনে করেন, যেটা তাদের
নতুন পরিচয় দেয় এবং নারীত্বকে বুঝতে শেখায়। তবুও এই পদ্ধতিটা কিন্তু সরাসরি
আধুনিকতা নয়, যদিও এই ঘটনাগুলো ঘটছে। ভারতীয় চলচ্চিত্রের নায়কের সঙ্গে মাইকেল
জ্যাকসন এবং খোমেইনির ছবিও মেয়েদের ঘরে লাগানো দ্যাখা যায়। মুয়াজ্জিনের ৫ থেকে ১০
মিনিটের আজানের অর্থ তাদের কাছে সৌদি আরব বা দুবাই থেকে কিনে আনা শেষতম ভিডিওটি
দেখা থামিয়ে দেওয়া। জীবন আর লিঙ্গ সম্পর্ক পরিবর্তিত হচ্ছে নিয়মিত – তার আর অদেখা
ভুতের মত থাকতে চায় না, তবুও তারা আধুনিক নারীত্ব বলতে যা বোঝায় তার সঙ্গে পশ্চিমা
নারীবাদের মুক্তির ভাষ্যের কাছাকাছি কোন সম্পর্ক নেই।
No comments:
Post a Comment