সোরা রপ্তানি
১৭৪০, ১৭৫০এর দিকে
সোরা রপ্তানিতে প্রতিযোগিতা বাড়তে থাকায় দুটি ইওরোপিয় কোম্পানির মধ্যে রেশারেশি
তীব্র হতে থাকে এবং এর ফলে ক্ষমতার কাছাকাছি থাকা মানুষেরা কোম্পানিগুলির মধ্যে ঝগড়ার
সূত্রে সোরা ব্যবসায় নাক গলাতে শুরু করে। বিশেষ করে সপ্তদশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে
প্রশাসনিক ও দরবারি অভিজাতরা সোরা ব্যবসা দখল করে কিছুটা একচেটিয়া অধিকার কায়েম করার
পরিকল্পনা করে। এরা নিজেরা কিছু সোরা নিজেরা কিনে বিপুল দামে ইওরোপিয় কোম্পানিদের
কিনতে বাধ্য করত। সে সময়ে এ ধরণের একজন অভিজাতর নাম আলিবর্দিখানের বড় ভাই, যে ত্রিমূর্তি
সুজাউদ্দিনের নবাবির সময়(১৭২৯-৩৯) বাংলার প্রশাসনে বিপুল প্রভাব ফেলেছিল, তাদের
মধ্যে অন্যতম, হাজি আহমদ।
হাজি আহমদ পাটনা
থেকে মাটির দামে সোরা কিনে অত্যধিক দামে ইওরোপিয়দের বিক্রি করত। কোম্পানিগুলো অনেক
সময় অভিযোগ করে বলেছে, বহু সময় মুর্শিদাবাদ থেকে নির্দেশ আসত, ইওরোপিয়রা যাতে
অসমিয়া বনিকদের থেকে সোরা না কিনে নবাবের থেকে কেনে। ১৭৩৬ সালে পাটনার কুঠিয়াল
অভিযোগ করে পাটনার নবাবের জামাই, আলি হাসান খান ৮-৯ হাজার মণ সোরা কিনে সেগুলি
হুগলি পাঠিয়ে (ইওরপিয়দের) বিক্রি করার পরিকল্পনা করছে। ১৭৩৭এ হাজি আহমদ ব্রিটিশদের
ওপর চাপ সৃষ্টি করে হুগলিতে জমানো সোরা কেনার জন্য। কোম্পানি সেই সোরা কিনতে বাধ্য
হয়, কিন্তু একটা শর্তও চাপিয়ে দেয় যে আগামী দিনে নবাবজাদা আর কোন মধ্যস্থতা করবে
না। আমরা যে সময় নিয়ে আলোচনা করছি, সে সময়ে কিন্তু খুব বড় করে অভিজাতরা একচেটিয়া
অধিকার কায়েম করে নি, সেটা মীর জুমলা, সায়েস্তা খাঁ বা যুবরাজ আজিমুশ্বান কায়েম
করেছিল।
এই বিরুদ্ধতার
বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে ১৭৩৬ সালে তিনটি প্রধান ইওরোপিয় কোম্পানি, ফরাসী, ব্রিটিশ আর ডাচ
এক যোগে সোরা কিনে নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেওয়ার জন্য একটা ত্রিপাক্ষিক চুক্তি
করে। এটা দুবছরের বেশি লাগু হবে না ঠিক হল। এই চুক্তি অনুসারে কোম্পানিগুলি should expressly
prohibit the servants of
their several factories and all private traders, Indians or
Inhabitants of their colonies to buy or cause to be bought directly
or indirectly any parcell of saltpetre that came from Patna,
Pournea or any aurung so high as Maulda of any person whatsoeyer
Moor or Gentue, even .if they offer it to sale at an underprice। চুক্তিটি
দুবছরের বেশি চালানো যায় নি, ডাচ এবং ব্রিটিশ কোম্পানি নিজেদের মধ্যে সোরা ব্যবসা
নিয়ে পাটনায় ১৭৪০ সালে তীব্র গণ্ডগোলে জড়িয়ে পড়ে। এই বিতণ্ডা ১৭৪৩ সালে আবার নতুন
করে সামলে নেবার চেষ্টা করা হয়। আবার তিনটে কোম্পানি আপস মিমাংসার চেষ্টা করে যৌথ
সোরা কেনার প্রক্রিয়া শুরু হয়, ঠিক হয় ডাচ আর ব্রিটিশদের পাওনা প্রতি ১০০ মনে
ফরাসীরা পাবে ১৫ মন। এই চুক্তি ১৭৪৫এই আবার ভেঙ্গে যায়। ১৭৪৩ সালে ব্রিটিশ
কোম্পানির অভিযোগ করে, ডাচেরা বিসেরা নামক পরগনায় সোরা উৎপাদন করছে তাদের প্রতিবাদ
সত্ত্বেও। ব্রিটিশরা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলে এর ফল মারাত্মক হতে পারে। কিন্তু ডাচেরা
পাত্তা দেয় না। ব্রিটিশদের আরও অভিযোগ ডাচেরা তাদের কালো কর্মচারীদের নিয়ে ছাপড়ার
দিকে সারনের ১৭টি পরগণায় বা সরকারে আলাদা করে সোরা উৎপাদন করছে। অন্য দিকে ফরাসী
আর ডাচেদের অভিযোগ, ব্রিটিশেরা উমিচাঁদ আর তার ভাই দীপচাঁদের মার্ফত সোরা কিনে
নিতে চাইছে। এই জন্য উমিচাঁদ পাটনায় দীপচাঁদকে হাওয়ালা মার্ফত অর্থ পাঠিয়েছে। এরপরে
আর কোম্পানিগুলোর মধ্যে কোন যৌথ উদ্যমের চুক্তি সম্পাদিত হয় নি।
অতিলাভের এই
ব্যবসার দখল নিতে যেখানে ইওরোপিয় কর্পোরেট কোম্পানিগুলি পরস্পরকে প্রতিমুহূর্তে
মাত দেওয়ার চেষ্টা করছে, সেখানে বিপুল পুঁজি আর রাজনৈতিক ক্ষমতা কি করে দূরে থাকে?
১৭৪০, ১৭৫০ সাল জুড়ে বাংলার ব্যবসা বিশ্বে অন্যতম প্রভাবশালী কলকাতার ব্যবসায়ী
উমিচাঁদ এই ব্যবসায় প্রথম প্রবেশ করেন ১৭৩৪ সালে ভাগলপুরের ৩০০০ মণ সোরা ফরাসীদের
থেকে বরাত পেয়ে। তিনি গোমস্তা মীরচাঁদকে মুঙ্গের পাঠান সোরা কিনতে। ১৭৪০ সাল নাগাদ
তিনি ১৭টি পরগণায় সোরা উৎপাদন করাতেন। পরিবারের পাটনা কুঠির দায়িত্বে থাকা
দীপচাঁদকে সামনে রেখে এবং আর্মেনিয় ব্যবসায়ী খ্বাজা ওয়াজিদের সহায়তায় ১৭৪০এর দশকের
মাঝখান থেকে সোরা ব্যবসায় একচেটিয়া পকড় কায়েম করেন।
No comments:
Post a Comment