Sunday, December 24, 2017

আরপুলি লেনের কমলাকান্ত বিদ্যালঙ্কার - প্রায় ভুলে যাওয়া এক পথিকৃৎ - হয়ত খরোষ্ঠীর অন্যতম জ্ঞানী

দুবছর আগে বন্ধু গৌতম দাস কালিয়াগঞ্জের নগেন্দ্র নাথ রায়চৌধুরীর বাড়ির চণ্ডী মণ্ডপে খরোষ্ঠী লিপির ছবি দিয়েছিলেন। সেটা এই লেখার সঙ্গে জুড়ে দিলা। বহুদিন ধরে আমরা কালিয়াগঞ্জ যাচ্ছি কিন্তু এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি দেখতে পাই নি।
---
ঔপনিবেশিক ইতিহাসে পড়েছি এই ভাষাটি উদ্ধার করেছিলেন জেমস প্রিন্সেপ। ব্রিটেনে থেকে গভীরে ভারতীয় ভাষা শেখার কোনো ইতিহাস এই বড় পদের রাইটারদের ছিল না। কিন্তু এরা ভারতে এসেই ভারত বিশেষজ্ঞ বলে যেতেন। কি করে? নানান উপাদান থেকে পাচ্ছি, তাঁদের পাশে কাজ করা বেনামি পণ্ডিতদের কল্যানে, যাদের এই জ্ঞানগুলি ছিল। যাদের আমরা দুর্ভাগ্যবশতঃ হারিয়েছি - পাঠশালা ব্যবস্থা জলাঞ্জলি দিয়ে। এরা সকলে ব্রাহ্মণ ছিলেন না। তাঁরা থেকে যেতেন পর্দার পিছনে। কলাবতী মুদ্রা বাকি ইতিহাস নামে একটা কাজ করছে - সেখানে সে কি পেয়েছে দেখা যাক - একটু বড় হবে, কিন্তু সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা দয়া করে পড়বেন আশাকরি -
---
জেমস প্রিন্সেপের জীবনীর কোথাও বিন্দুমাত্র উল্লেখ নেই যে তিনি তাঁর কাজে কমলাকান্ত বিদ্যালঙ্কারের সাহায্য নিয়েছিলেন। সাহায্য বললাম ঠিকই। আসল তথ্য হল প্রন্সেপদের মত মানুষদের ইতিহাস হয়ে উঠবার কাজটি যতদূর সম্ভব কমলাকান্তইরা করতেন। এই সংবাদও আরও কত দিন গোপন থেকে যেত কে জানে, যদিনা আমরা ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় সঙ্কলিত ও সম্পাদিত, সংবাদপত্রে সেকালের কথা, প্রথম খণ্ড, ১৮০৮-১৮৩, দেখতাম। বইটির ৩৭৬ পৃ বলা হচ্ছে, ‘কলিকাতার আড়কুলিতে (মেডিক্যাল কলেজের উল্টো দিকের গলি, বর্তমানে আড়পুলি লেনে কমলাকান্ত বিদ্যালঙ্কারের পাঠশালা ছিল – বিশ্বেন্দু, পার্থ) তাঁহার চতুষ্পাঠী ছিল। ১৮২৪ সনের জানুয়ারি মাসে কলিকাতায় গবর্মেন্ট সংস্কৃত কলেজ প্রতিষ্ঠিত হইলে ৬০ টাকা বেতনে ইহার অলঙ্কার-শ্রেণীর অধ্যাপক নির্ব্বাচিত হন। ১৮২৭ সনের মে মাস পর্যন্ত অধ্যাপনা করিয়া তিনি মেদিনীপুর আদালতের জজ-পণ্ডিতের পদ লাভ করিয়াছিলেন। ইহার পর আমরা তাঁহাকে ১৮৩৭ সনে লিপিতত্ব বিশারদ জেমস প্রিন্সেপের পণ্ডিতরূপে দেখি। প্রাচীন ভারতীয়-লিপির পাঠোদ্ধারে তিনি প্রিন্সেপের প্রধান সাহায্যকারী ছিলেন। প্রকৃতপক্ষে ১৮৩৭-৪১ সনের মধ্যে এশিয়াটিক সোসাইটির জার্নালে প্রকাশিত বহু লিপির পাঠোদ্ধার কমলাকান্তেরই সাহায্যে হইয়াছিল। কমলাকান্তের সাহায্যের কথা প্রিন্সেপ একাধিক ক্ষেত্রে মুক্তকণ্ঠে স্বীকার করিয়া গিয়াছেন। দু-একটি দৃষ্টান্ত উদ্ধৃত করিতেছি – Lt Kittoe also presented facsimiles of a copper grant i three plates dug up in the Gumsur country, of which the Secretary with the aid of Kamala Kant Pandit supplied a translation. (J.A.S.B, Vol. VI, May 1837, p.402)
Although as will be seen, the slab[Brahmeswara Inscription, Cuttack] was in a state of considerable mutilition, yet from the inscription being in verse, my pundit, Kamalakanta Vidyalankara, has been able by study of the context to fill up the gaps, with, as he says, hardly a possibility of error, and indeed where the outline of the letters is preserved I have found his restoretion quite conformable. The translation has been effected ny Sarodaprasad under his explanation, but I have not leisure to over Kamalakanta. (J.A.S.B, June 1838, p 557)
১৮৩৭ খ্রীষ্টাব্দের নবেম্বর মাসে পিড়ীত হইয়া প্রিন্সেপ এদেশ ত্যাগ করিলে ডাঃ ওসাগনেসী সোসাইটির অস্থায়ী সম্পাদক হন। তাঁহার আমলে ১৮৩৯ সনের আগস্ট মাসে, কমলাকান্ত এশিয়াটিক সোসাইটির পন্ডিতের পদ লাভ করেন।
...এশিয়াটিক সোসাইটির কল্যাণে দেশে পুরাতত্বের চর্চ্চা ক্রমেই প্রসার লাভ করিতেছিল। সরকারী শিক্ষা-সংসদ সংস্কৃত কলেজে একদল ছাত্রকে পুরাতত্ব শিক্ষা দিবার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করিতেছিলেন। তাঁহারা সংস্কৃত কলেজ হইতে স্বতন্ত্র বেদান্ত-শ্রেনী লোপ করিয়া তাঁহার স্থলে, “Ancient History and History of the Hindoos” শিখাইবার জন্য ১৮৪২ সনের অক্টোবর মাসে ‘পুরাবৃত্ত’ নামে একটি শ্রেণীর সৃষ্টি করেন। এই শ্রেনীর অধ্যাপক নির্ব্বাচিত হন – কমলাকান্ত বিদ্যালঙ্কার। ...কমলাকান্তের বয়স হইয়াছিল। তিনি ১৮৪৩ সনের আগস্ট মাস পর্যন্ত অধ্যাপনা করিয়া শয্যাগ্রহণ করেন; পরবর্তী ৮ই অক্টোবর তাঁহার মৃত্যু হয়; সঙ্গে সঙ্গে সংস্কৃত কলেজ হইতে পুরাবৃত্ত শ্রেনীটি লোপ পাইয়াছিল। তাঁহার মৃত্যুতে এশিয়াটিক সোসাইটির সহকারী সভাপতি সেক্রেটারি হেনরী টরেন্স(Torrens) যে প্রশস্তি করেন তাহা উদ্ধৃত করিতেছিঃ- I have with much regret, to report the death of the aged and highly respected Pundit Kamalakanta Vidhyalankar, the friend and fellow labourer of James Printer(Prinsep?). With him has expired the accurate knowledge of ancient Pali and Sanskrit forms of writting; for although we now possess a key to the ancient characters, no Pundit has exercised himself in the act of decyphering to the extent to which Kamalakanta Like all learned persons of his class, he carefully avoided the communication of his peculiar knowkedge...the Society owes a debt of gratitude ti Kamalakanta and of respect to him as the Collaborator of James Princep. (Proceeding 18 Nov. 1843: J.A.S.B., 1843, pp 1013-14)
কমলাকান্তের বিশদ বিবরণ দেওয়ার অর্থ হল, ভবিষ্যতে তাঁর বিষয়টি আলোচনার জন্য একটি সূত্র তুলে দেওয়া। এশিয়াটিক সোসাইটির চাকুরে হওয়ার কারনে প্রিন্সেপ এবং পরে টরেন্স কমলাকান্তের কাজের স্বীকৃতি মেনেছেন। এবং তাই ঘটা করে তাঁর কীর্তি লিখতে পারছি আমরা। কিন্তু অন্য তথাকথিত ভারততত্ববিদের সাহায্যকারী পণ্ডিতদের কারোর নামোল্লেখ করা নেই। ওপরের উদ্ধৃতিগুলো বিশদে পাঠ করলে দেখব, এগুলি কী শুধুই সহকারীর স্বীকৃতিমাত্র! বোধ হয় নয়। কামালাকান্তের স্মৃতিকথায় জামেস বা টরেন্স দুজনেই যা বলছেন তাতে পরিষ্কার, তিনি শুধু সাহায্যকারী হয়ে থাকা ছাড়াও আরও অনেক বেশি কাজ করতেন। আমাদের ধারণা (প্রমাণ করার জন্য হাতে কিচ্ছুটি নেই শুধু প্রখ্যাত ভারততত্ববিদদের সংস্কৃত জ্ঞানে সন্দেহ প্রকাশ ছাড়া এবং এই দুটি উদাহরণবাদে) এই কাজগুলি প্রনম্য ভারততত্ববিদ সাহেবদের হয়ে সম্পাদন করে দিতেন কলকাতার আশেপাশের চতুষ্পাঠীর পণ্ডিত মহাশয়রা। কিন্তু এই কাজে বাংলার পণ্ডিতরা কোনদিনই কোনও স্বীকৃতি পাননি। তার সব থেকে বড় প্রমাণ উইলসন। সেখানে পণ্ডিত দলের কোনও নাম নেই, শুধু materials compiled by native scholars বলে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে।


কলকাতার পাঠশালের মোটামুটি বিবরণ আমরা পাই, ১৮১৮র উইলিয়ম ওয়ার্ডের শিক্ষা সমীক্ষায়(Ward, William (1820) A View of the History, Literature, and Mythology of the Hindoos. 3rd ed., Vol. 4 (London: Black, Kingsbury).)। সেখানে কমলাকান্তর আরপুলির চতুস্পাঠির উল্লেখ রয়েছে।

No comments: