ভাগ্য সুপ্রসন্ন,
আমরা বাংলার এশিয় ব্যবসায়ীদের বাংলার রেশম পণ্য রপ্তানির বিস্তৃত বিবরণ পেয়েছি।
১৭৬৯ সালের ডবলিউ অল্ডার্সলি কাশিমবাজারের রেশম পণ্য নিয়ে একটি সমীক্ষা করেন। এই
সমীক্ষা অনুযায়ী, ১৭৪৯ থেকে ১৭৫৩এর পাঁচ বছরে, এশিয়দের রপ্তানি করা রেশম পণ্যের
গড়ে বাৎসরিক মোট মূল্য ৬ লক্ষ ৩০ হাজার(০.৬৩ মিলিয়ন) থেকে ১৭৫৪ থেকে ১৭৫৮ পর্যন্ত
৪ লক্ষ ৩০ হাজার(০.৪৩ মিলিয়ন) টাকা। এ প্রসঙ্গে বলে রাখা দরকার বাংলায় সে সময়
বিশ্বের সব থেকে ভাল রেশম উৎপাদন হত, এবং শুধু রেশম নয়, রেশম আর সুতিতে বোনা নানান
ধরণের পণ্যের বিপুল চাহিদা এশিয় আর ইওরোপিয় ক্রেতাদের ছিল। রেশমের রপ্তানিতেও
ইওরোপিয়দের তুলনায় এশিয়দের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ ছিল মধ্য অষ্টাদশ শতকে। এটি আমরা
বুঝতে পারব ১৭৫০/৫১ থেকে ১৭৫৪/৫৫ এই পাঁচ বছরের এশিয় ইওরোপিয় মোট মূল্যের রপ্তানির
পণ্যগুলির বিশদ বিশ্লেষণে(৭.২ তালিকায়)।
৭.২ তালিকায় যদিও
ফরাসিদের কোন বিশদ বিবরণ নেই, তবুও নিশ্চিন্তে বলা যায় ব্রিটিশ আর ডাচ মোট
রপ্তানির অর্ধেক পরিমানও হবে না, খুব বেশি হলে ১২০০০ থেকে ১৫০০০ পিস। ফলে গড়ে
বাৎসরিক ইওরোপিয় রেশম রপ্তানি দাঁড়াচ্ছে ৬৭০০০ থেকে ৭০০০০ পিস(৭.২ তালকায় ডাচ আর
ব্রিটিশ মোট রপ্তানি ৫৪৮৮৯টি ধরে), অন্যদিকে এশিয় রপ্তানি ৯১০০০টি। মনে রাখা দরকার
রেশম এশিয়দের মূল রপ্তানি পণ্য ছিল না। মূলত তারা মধ্য এশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যে
রপ্তানি করত সুতির মোটা, মাঝারি আর আর দামি পণ্যগুলি।
এই সব এলাকার
সুতির পণ্যের চাহিদার একটা তথ্য পাচ্ছি পারস্যের উপসাগর এলাকার ডাচ রপ্তানি সূত্র
বিশ্লেষণ করে। ১৭৪০ থেকে ১৭৫০এর প্রথম পাঁচ বছরের রপ্তানি তথ্য বলছে এই এলাকায়
রেশমের একটাও পণ্য যায় নি। এর থেকে আমাদের আলোচ্য তত্ত্ব সুপ্রমান হয় যে মধ্য
অষ্টাদশ শতকেও এশিয়দের রপ্তানি ইওরোপিয় কোম্পানিগুলির বস্ত্র রপ্তানির তুলনায় অনেক
বেশি ছিল।
মালদা আর ঢাকার যে
রপ্তানি তথ্য আমরা ইতোপূর্বে আলোচনা করেছি সেখানে দেখেছি এশিয়রা ৪৫ থেকে ৫০ লক্ষ
টাকা দাদন দিচ্ছে তাঁতিদের, একই সঙ্গে তারা নগদেও চলতি বাজার থেকে প্রচুর পণ্য
কিনছে। এই হিসেবে বলা যায় এশিয় ব্যবসায়িদের মোট রপ্তানি হয়ত ৯০ লক্ষ থেকে ১ কোটি
টাকার কাছাকাছি ছিল। এটা বাড়াবাড়ির হিসেব যে নয়, সেটা আমরা অন্যন্য পরোক্ষ তথ্যে
প্রমান করতে পারি। আমরা আগেই বলেছি ১৭৫০এর আশেপাশে ঢাকার বস্ত্র রপ্তানির ডাচ ও
ব্রিটিশ কোম্পানির মোট অংশিদারি ছিল ৫ থেকে ১০ শতাংশ। ঢাকা বস্ত্রের এশিয় ব্যবসা
ধরে নেওয়া যাক ১০শতাংশই ছিল ১৭৪৭ নাগাদ, যার মোট মূল্য ১০ লক্ষ ১৫ হাজার টাকা। ফলে
বাংলা থেকে এশিয় বস্ত্র রপ্তানির মোট মূল্য ছিল ১কোটি ৫০ লক্ষ টাকা। যার মধ্যে
ইওরোপিয়রা রপ্তানি করত কজুব বেশি হলে ৫০ থেকে ৬০ লক্ষ টাকার। এর সঙ্গে ধরে নেওয়া
যাক যে ইওরোপিয় ব্যক্তিগত ব্যবসাও বিপুল পরিমানে ছিল, যদিও তার মোট মূল্য আমাদের
অজ্ঞাত – শুধু ঢাকা থেকে ইওরোপিয় ব্যক্তিগত ব্যবসা মোট রপ্তানি মূল্যের ৫ শতাংশ
ছিল। এর থেকে বলা যায় বাংলার মোট রপ্তানি ব্যবসায় ইওরোপিয় ব্যক্তিগত ব্যবসা বড়
ভূমিকা পালন করে নি। এটা বলে রাখা দরকার এগুলি মোদ্দা তথ্য, যা তদন্ত সাপেক্ষ এবং
বিপুল ভুল হওয়া স্বাভাবিক। তবুও এই তথ্যগুলি থেকে এশিয় ইওরোপিয়দ্দের মধ্যে রপ্তানি
বাণিজ্যের তুলনামূলক অবস্থার একটা মোটামুটি ধারণা পেতে পারি।
No comments:
Post a Comment