১৬৭০ সালের
কাছাকাছির সময়ের অর্থাৎ ইওরোপিয় কোম্পানিগুলি জাঁকিয়ে বসার আগের সময়ের বাংলা
বস্ত্রের এশিয় ব্যবসা নিয়ে আলোচনা করা যাক। ইওরোপিয় ডাচ এবং ব্রিটিশ কোম্পানির
মহাফেজখানার তথ্য থেকে পরিষ্কার যে সে সময় বাংলায় বিপুল পরিমান এশিয় ব্যবসায়ীদের
বস্ত্র ব্যবসা চলত। মালদার বস্ত্র উৎপাদন বিষয়ে ১৬৭০ সালের ডাচ কোম্পানির সমীক্ষায়
পাচ্ছি, জেলায় ৮ থেকে ১০ লক্ষ টাকার বস্ত্র পেগু, আগ্রা, পারস্য ইত্যাদি অঞ্চলে
রপ্তানির জন্য বিক্রি হয়েছিল। ডাচ কোম্পানির আমলা Henry Cansiusএর তৈরি সমীক্ষাটিতে
আড়ংগুলির উৎপাদনের প্রতিটি উপাদানের ব্যয় ভেঙ্গে লিখেছে। এবং জেলার প্রতিটি আড়ঙে
উৎপাদিত রপ্তানিযোগ্য বুননের পরিমানটিও উল্লেখ করেছে। অতএব ডাচ মহাফেজখানা সূত্রে
যে তথ্যটি আমরা পাচ্ছি, সেটি হল পরমানগত তথ্যের কাছাকাছি তথ্য, যা এশিয় ব্যবসায়ীরা
রপ্তানি করত বিপুল পরিমানে বাংলার বস্ত্র ইওরোপিয় কোম্পানিগুলি রপ্তানি করার আগের
সময়ের তথ্য।
১৬৭৬ সালে ব্রিটিশ
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলা রিচার্ড এডওয়ার্ডস মালদায় কুঠি স্থাপনের আগে ঠিক এ
ধরণের সমীক্ষা করে। এই সমীক্ষা বলছে, বস্ত্রই জেলার মূল ব্যবসা, জেলা থেকে ১৫ থেকে
২৫টা পাটেলা(চ্যাপ্টাতলা নৌকো) ভর্তি কষা, মলমল, মুণ্ডিল এবং এলাচির মত নানান ধরণের
কাপড় আগ্রা, গুজরাট এবং বেনারসের দিকে রপ্তানি হয় প্রতি বছর। প্রতিটি পাটেলা ভর্তি
পণ্যের মূল্য প্রায় এক লক্ষ টাকা এবং পণ্যের অর্ধাংশ কোরা রেশম এবং উল্লিখিত কাপড়।
ফলে রাজ্যের নদী বাণিজ্যের পরিমাণ ১৫ লক্ষ থেকে ২৫ লক্ষ টাকা আর স্থলপথে ৭লক্ষ ৫০
হাজার থেকে ১২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার(রেশম নিয়ে)। এবং যদি ধরি রেশমের রপ্তানি মূল্য(যদিও
মালদার মূল রপ্তানি পণ্য রেশম ছিল না) স্থলপথের মোট রপ্তানি মূল্যের অর্ধেক(৩ লক্ষ
৭৫ হাজার থেকে ৬ লক্ষ ২৫ হাজার)। স্থলপথ আর জলপথ মিলিয়ে মোট রপ্তানির পরিমান ১৯
লক্ষ থেকে ৩১ লক্ষ টাকা। ফলে এডওয়ার্ডের হিসেবে আমদা থেকে মোট বস্ত্র রপ্তানির
মূল্য ছিল ২০ লক্ষ থেকে ৩০ লক্ষ টাকা, যা ডাচ সমীক্ষার থেকেও বেশি। যদিও দুটি
সমীক্ষার বিশদ পার্থক্যমূলক উপাত্ত থেকে কোন পরিমান বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্তে আসা মুশকিল,
তবুও ১৬৭০ সালে জেলা থেকে রপ্তানি হওয়া বস্ত্রের পরিমান ১০ লক্ষ টাকা থেকে ৩০ লক্ষ
টাকার মাঝামাঝি কিছু একটা।
এখানে একটা বিষয়
নজর দেওয়া জরুরি, মালদা বাংলার বস্ত্র বয়নের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র, কিন্তু প্রধানতমগুলির
মধ্যে একটাও নয়। এই সম্মান পাওয়ার যোগ্য হুগলি ঢাকা আর কাশিমবাজার। ১৭৪৭ সালে
ঢাকার বস্ত্ররপ্তানি হয়েছিল ২৮ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার। যদিও ঢাকা রোমক সময় থেকেই
মসলিনের জন্য বিখ্যাত, এখানে বিপুল পরিমানে সাধারণ ক্যালিকো উৎপাদন হত। কাশিমবাজারের
বিশ্বখ্যাতি ছিল সিল্ক পণ্যের জন্যে, এছাড়াও মিশ্রিত সুতি পণ্য এবং মোটা কাপড়
তৈরির জন্যও প্রসিদ্ধ ছিল। ১৭৪০ সালে র শেষ আর ১৭৫০এর শুরুর সময়ে বাংলা থেকে এশিয়
বণিকেরা বছরে গড়ে ৬৩ লক্ষ টাকা কাপড়ট রপ্তানি কতত। এছাড়াও বীরভূম, হুগিলি,
বালেশ্বর, শান্তিপুর, এবং মেদিনীপুরের রাধানগর। ১৬৭০এর দশকে শুধু মালদাই যদি ১০
লক্ষ থেকে ৩০ লক্ষ টাকার রপ্তানি করত, তাহলে গোটা বাংলার আড়ং রপ্তানিযোগ্য পরিমানের কথা আন্দাজ করাই যায়।
No comments:
Post a Comment