ইওরোপিয় বাজারের ‘বিপুল’
চাহিদার দরুণ ১৬৮০র পর থেকে বাংলার বস্ত্র রপ্তানি বাজার থেকে বস্ত্র সরিয়ে নিয়ে
গিয়ে শুধুই ইওরোপিয় বাজারের জন্য সেগুলোকে বরাদ্দ করা হয়েছি কি না, এবং তার দরুণ
এশিয় বণিকদের রপ্তানি ব্যবসায় কোন প্রভাব পড়েছে কি না, সে তথ্য আমাদের কাছে স্পষ্ট
নয়। ফলে আমরা ধরে নিতেই পারি যে সপ্তদশ শতের শেষের দিকে বা অষ্টাদশ শতের প্রথম
পাদে, বাংলার পারম্পরিক এশিয় বাজারের রপ্তানির পাশাপাশি ইওরোপিয় বাজারের জন্য
বস্ত্র সরবরাহ করে গিয়েছে। এটা হওয়া বাস্তব সম্মত যে বিভিন্ন দেশের এশিয় বণিকেরা বাংলার
বিভিন্ন আড়ং থেকে এশিয় বাজারের জন্য পণ্য তৈরি করানোর পাশাপাশি ইওরোপিয় কোম্পানিগুলোর
জন্য কাপড় জোগাড় করে গিয়েছে। বাংলা বস্ত্র বাজারে যে ইওরোপিয় কোম্পানিগুলি এশিয়
বণিকদের থেকে খুব কড়া প্রতিযোগিতার সম্মুখিন হচ্ছে, সে তথ্য কোম্পানিগুলির খাতায়
সুপ্রতুল। এশিয় বস্ত্র রপ্তানি বিষয়ে হাতে খুব বেশি তথ্য না থাকলেও, এটা পরিষ্কার
যে ইওরোপিয় কোম্পানিগুলোর থেকে বেশ কয়েক কদম এগিয়েছিল এশিয় বণিকেরা। ১৭৪৭এ ঢাকার আরমেনিয়দের
সঙ্গে নিয়ে মোট এশিয় রপ্তানি বাণিজ্য ছিল ইওরোপিয় মোট বাণিজ্যের, ইওরোপিয়
ব্যক্তিগত ব্যবসা ধরে, এক তৃতীয়াংশ। ডাচেদের দাদন দেওয়ার সূত্র(এ সময়ে তাদের মোট
বিনিয়োগের ৫০শতাংশ ছিল) যার থেকে জানতে পারি, ডাচ ছাড়া এশিয় এবং অন্যান্য
ইওরোপিয়দের বিনিয়োগ পরিমান ছিল ৭৬ লক্ষ টাকা, যার মধ্যে ব্রিটিশ আর ফরাসী মিলিয়ে ৩০
লক্ষ টাকার বেশি বিনিয়োগ হতে পারে না। ফলে এশিয় অংশিদারি ৪৫ থেকে ৫০ লক্ষ টাকার
কাছাকাছি। এটা হওয়া স্বাভাবিক, কেননা আমরা দেখলাম মালদা আর ঢাকা(কেননা দুটি এলাকার
নির্দিষ্ট পরিমানগত তথ্য পাচ্ছি), দুটি গুরুত্বপূর্ণ উৎপাদন এলাকায় এশিয় বণিকদের
বিনিয়োগ বেশ বড় ছিল। এছাড়াও ডাচ সূত্র জানাচ্ছে জুন মাসে দাদন দিয়ে ইওরোপিয়
কোম্পানিগুলি তাদের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে চুক্তি সেরে তাদের চাহিদা পূরণ করে ফেলেছে।
যদিও এশিয়রা দাদন দিয়ে তাদের পণ্য কিনত, তা ছাড়াও এটা মনে করার কারণ আছে যে তারা
খোলা বাজার থেকেও বিপুল পরিমান পণ্য কিনত, যেমন করে তারা অগ্রম(দাদন) না দিয়ে
অধিকাংশ রেশমি বস্ত্র কিনত। যদিও এই প্রসঙ্গে ডাচেদের তথ্য ব্যবহার করেছি আমাদের
তত্ত্ব প্রমানের জন্য, যদি তাদের দেওয়া তথ্য বাদও দিই তাহলেও আমাদের দেওয়া তথ্যের কোন
পরিবর্তন হচ্ছে না।
আমরা যদি অষ্টাদশ
শতকের শেষের দিকের বাংলার ড্যানিশ খাতায় ক্লথ প্রোডাকশন এন্ড সেলএর হিসেব দেখি, যখন
বাংলার বণিকদের ব্যবসা বেশ কমে গিয়েছিল, এবং তার কারণও বিশদে বলা হয়েছে, তখন বাংলার
রপ্তানি বাজারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পণ্য গারা বস্ত্র তৈরি হচ্ছে ৪ লক্ষটি যার
মধ্যে ইওরোপের রপ্তানির বাৎসরিক বরাদ্দ ছিল ১ লক্ষ ৬০ হাজারটি। এটা উল্লেখযোগ্য যে
হুগলি, কাশিমবাজার, মালদা বা পাটনা মূলত মাঝারিগোছের এবং সাধারণ মানের বুনন উৎপাদন(এবং
যেটা বাংলার রপ্তানির সব থেকে উল্লেখযোগ্য অংশ ছিল) ছিল ঢাকার এশিয়া ও ইওরোপের
তৈরি রপ্তানি যোগ্য পণ্যের তুলনায় অনেক বেশি পরিমানে। ডাচ কোম্পানি(একই কথা বলা
যায় ব্রিটিশ কোম্পানির ক্ষেত্রেও) মধ্য অষ্টাদশ শতকে তার রপ্তানির মোট মূল্যমানের
৫০ শতাংশ পরিমান বুনন কিনত হুগলি অঞ্চল(সম্ভবত এর সঙ্গে ছিল মালদায় কলকাতা দাদনি
বণিকদের মাধ্যমে কেনা), ২৫ থেকে ৩৮ শতাংশ কিনত কাশিমবাজার থেকে আর ৮ থেকে ১২ শতাংশ
কিনত পাটনা থেকে ঢাকা থেকে কিনত ৫ থেকে ১০ শতাংশ।১৭৫৩/৫৪ এবং ১৭৫৪/৫৫ এই দু বছরে ডাচেদের রপ্তানি পরিমানের এলাকাভিত্তিক পণ্য কেনার হিসেব দেখলে আমরা এই তথ্যটিই পাব।
No comments:
Post a Comment