এনকাউন্টারিং
ডেভেলাপমেন্টঃ দ্য মেকিং এন্ড আন্মেকিং অব দ্য থার্ড ওয়ার্লডঃ আর্তুরো এসকোবারএর
বই থেকে
দ্বিতীয় অধ্যায়
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অঙ্গীকার
দীর্ঘ যুদ্ধ উদ্যমের ফলে উদ্ভুত নবতম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
যেমন পারমাণবিক বিদ্যা বা প্রায়োগিক গবেষণা(operations research) ওপর অগাধ আস্থার
পরিবেশ উন্নয়নের বিতর্কে বিপুল ভূমিকা পালন করে উন্নয়নের চাহিদাকে ব্যপ্ত এবং তার ন্যায্যতা
প্রমান করতে সাহায্য করেছে। ১৯৪৮ সালে রাষ্ট্রসঙ্ঘের একজন প্রখ্যাত আমলা এই বিষয়ে
আস্থা পেশ করে লিখলেন, ‘I still think that
human progress depends on the development and application of the greatest
possible extent of scientific research. . . . The development of a country depends primarily on a
material factor: first, the knowledge,
and then the exploitation of all its natural resources (Laugier 1948,’।
উনবিংশ শতকে কলে চলা যন্ত্রর ব্যবহারের সময় থেকেই বিজ্ঞান ও
প্রযুক্তি, উন্নত সভ্যতার অন্যতম হাজিরাবাবু (পরিচয়) এবং সম্পূর্ণ মানুষের পরিচয়
হিসেবে কাজ করে চলেছে(Adas 1989)। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এই চাপিয়ে দেওয়া আধুনিকতার
সঙ্গে উন্নয়নের ধারণাটি জুড়ে গেল। ১৯৪৯এই
মার্শাল পরিকল্পনা ইওরোপিয় অর্থনীতির পুনর্জাগরণ ঘটাতে প্রভূত সাহায্য করায় একটা
কাজ হল, অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে অনুন্নত অঞ্চলের উন্নয়নের জন্য আর্থিক সাহায্যের
ধারনাটি অঙ্গাঙ্গীভাবে জুড়ে দেওয়া গেল। এর সঙ্গে এল বইএর মুখড়ায় উদ্ধৃত করা পয়েন্ট
ফোর প্রোগ্রামে প্রেসিডেন্ট ট্রুম্যানের বক্তৃতার অংশ। পয়েন্ট ফোর প্রোগ্রামে
অনুন্নত এলাকার উন্নয়নের দুটি আবশ্যিক নিদান দেওয়া হল, প্রথমটি হল আধুনিক
প্রযুক্তির প্রয়োগ আর দ্বিতীয়টি হল পুঁজি নিবেশ। তবে বেশি পুঁজি বিনিয়োগ না করে
প্রযুক্তি বিক্রিতে অত্যধিক গুরুত্ব দেওয়া হল, ভাবা গেল এর ফলে অনেক কম ব্যয়ে
মানুষগুলো উন্নত হয়ে উঠবে। ১৯৫০ সালে কংগ্রেসে ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলাপনেন্ট বিষয়ে
একটা বিল এল, যার বলে পুঁজি নিবেশ এবং বিভিন্ন প্রাযুক্তিক সহযোগ কর্ম করার অধিকার
দেওয়া হল। এই নতুন নীতি প্রয়োগ করার জন্য ডিপার্টমেন্ট অব স্টেটের অধীনে
টেকনিক্যাল কোঅপারেশন এডমিনিস্ট্রেশন তৈরি করা হল ঐ বছরের অক্টোবর মাসে। ১৯৫২ সালে
এই দপ্তর এশিয়া আফ্রিকা এবং লাতিন আমেরিকার বহুদেশে তাদের কাজকর্ম ছড়িয়ে দিল(Brown and Opie 1953)।
মোটামুটি একটা তত্ত্ব ততদিনে প্রচারের আলো পেয়ে স্বতঃসিদ্ধতা
লাভ করেছে, প্রযুক্তি শুধু বাস্তবিক উন্নয়ন ঘটায় না, এটি দিশা এবং গুরুত্বও
নির্দেশ করে। আধুনিকতার সামাজতত্ত্বের যে সব বিপুল লেখালিখি উঠে এল এর ফলে, তাতে
প্রমান হয়ে গেল প্রযুক্তি একটি প্রচণ্ড সদর্থক নৈতিক শক্তি নিয়ে আবিষ্কার, উদ্ভাবন
এবং ফল প্রদান করে। আধুনিকতার ধারণার ব্যপ্তি ঘটল বৈশ্বিক প্রযুক্তির সঙ্গে জুড়ে।
প্রযুক্তির হস্তান্তর উন্নয়নের প্রকল্পের অন্যতম বিষয় হয়ে উঠল। এটা কেউ ভাবলেন না
যে এই হস্তান্তর শুধু প্রায়োগিক বা যন্ত্রপাতির(technical) হস্তান্তরে আটকে থাকে না,
এর সঙ্গে জুড়ে থাকে সামাজিক এবং কৃষ্টিগত বিষয় প্রবাহও। প্রযুক্তিকে কৃষ্টি এবং
সামাজিক অর্ডার তৈরির হাতিয়ার হিসেবে দ্যাখা হল না, বরং একে নিরপেক্ষ এবং
অবশ্যম্ভাবী কার্যকর হাতিয়ার হিসেবে গণ্য করা হল(Morande 1984; Garcia de la Huerta 1992)।
বিশ্বের অর্থনীতি আর রাজনীতিতে তৃতীয় বিশ্বের নতুন
গুরুত্বের ভাবনা, এই দেশগুলিতে ক্ষেত্র সমীক্ষা করে দেশগুলির আরও সঠিক তথ্য
সংগ্রহের উৎসাহ বেড়ে গেল। লাতিন আমেরিকার ক্ষেত্রে এটা চরতমতমভাবে সত্য হয়ে দাঁড়াল।
একজন গুরুত্বপূর্ণ লাতিন আমেরিকাবিশেষজ্ঞ লিখলেন, ‘The war years witnessed a remarkable growth of interest
in Latin America. What once
had been an area which only diplomats and pioneering scholars ventured to explore, became
almost overnight the center of attraction to government officials, as well as to
scholars and teachers” (Burgin
[1947] 1967’)। এর ফলে লাতিন আমেরিকার
সঠিকতম আর্থিক সম্ভাবনাসূচক তৈরির সঙ্গে ভৌগোলিক, সামাজিক এবং রাজনৈরিক পরিবেশের
কি কি সুযোগ আসে সেগুলিও বিশ্লেষণ করার উদ্যোগ নেওয়া হল। বর্তমান ইতিহাস, সাহিত্য
এবং জাতিতত্ত্বে যা রয়েছে তাকে প্রামাণিক হিসেবে গণ্য করা হল। আমেরিকিয় Parsonian sociology, Keynesian macroeconomics,
systems analysis and operations research, demography, and statistics এর মত সামাজিক বিজ্ঞানের বিকাশের মাধ্যমে যে সব জ্ঞান সেখানকার
বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলির বিপুল বিকাশ ঘটিয়েছে, সেই জ্ঞান প্রয়োগের পথে
হেঁটেই লাতিন আমেরিকার নানান জ্ঞান নথিকরণ করার চেষ্টা হল। ১৯৪৯ সালে প্রখ্যাত
পেরুভিয় গবেষক লাতিন আমেরিকা গবেষণা পাঠ্যক্রম বিষয়ে বললেন, through study and research, [to] provide a
background which will assist in interpreting and evaluating objectively the problems
and events of the day from the perspective of history, geography, economics, sociology,
anthropology, social psychology and
political science” (Basadre [1949] 1967,।
বাসাদ্রে সামাজ পরিবর্তনের সামাজিক ডাক দিলেন, এমনকি সেটা
যদি উন্নয়নের খপ্পরে পড়ে তবুও। উনবিংশ শতকে জ্ঞানের বিকাশ যে ধ্রুপদী ছাপ পেয়ে
এসেছিল, তাকে পাল্টে উত্তর আমেরিকার মডেলে ঢালার কথা বললেন তিনি। এই পরিবর্তনে সব
থেকে বেশি পরিবর্তিত হল অর্থনীতি আর সমাজতত্ত্ব। ঠিক হল দেশের আর্থ সামাজিক নানান
সম্পদ এবং সমস্যাগুলি সমাধান করতে পারে এমন বৈজ্ঞানিকভাবে বিকশিত তথ্যের ওপর
উন্নয়নকে নির্ভর করতে হবে। এই জ্ঞান বিকাশের জন্য বেশ কিছু সংগঠন তৈরি হল। উত্তরের
গবেষনার গাছ তুলে এনে পোঁতা হল দক্ষিণে এবং লাতিন আমেরিকায়, যাতে সে আন্তর্জাতিক
জ্ঞানের অংশিদার সে হতে পারে। যদিও অনেকে বলেছেন এতে নতুন জ্ঞান ব্যবস্থাপনার
দক্ষতা তৈরি হল ঠিকই, কিন্তু এর ফলে স্বশাসনের অবসান ঘটে বিভিন্ন জ্ঞানের বিকাশে
বাধা তৈরি হল(Fuenzalida 1983;
Morande 1984; Escobar 1989)।
No comments:
Post a Comment