যদি কেউ গভীরে গিয়ে নিরপেক্ষাভবে ব্রিটিশ বণিক আর দেশিয় প্রশাসনের মধ্যে
সম্পর্কটা খুঁজতে যান, বিশেষ করে যে বাংলায় ১৭৫৭র ভিত্তিপ্রস্তির স্থাপিত হয়েছে,
তাহলে তিনি অবশ্যই নবাবেরা ব্রিটিশদের দুধেলা গাই মনে করত, এমন চালু তত্ত্ব চালানো
নির্থক হয়ে পড়বে। অবশ্যই ইওরোপিয়দের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে নবাবেরা যে ধোয়া তুলসিপাতা
এটা মনে করারও কোন কারন দেখি না। ইওরোপিয় কোম্পানিগুলিকে এদেশে ব্যবসা করার জন্য
বেশ কিছু রাষ্ট্রীয় ফরমান জারি করা হয়েছিল, কিন্তু বিপদের সময় নবাব যেমন দেশিয়
ব্যবসায়ীর স্মরণাপন্ন হত তেমনি বিদেশিদেরও। সঙ্গে এটাও বলা যাবে না যে নবাবেরা দেশিয়
ব্যবসায়ীদের লুঠত; ঠিক তেমনি বলা যাবে না নবাবেরা ইওরোপিয় কোম্পানিকে দুধেলা গাই
ভাবত(ফরমান সম্বন্ধে জানতে সুশীলবাবুর বই Trade and
Commercial Organization দেখতে পারেন)।
বাস্তব ঘটনা হল কোম্পানির আমলারা বিপুল
ব্যক্তিগত ব্যবসায় আর কোম্পানিকে দেওয়া রাষ্ট্রের দস্তক, নির্দিষ্ট কিছু পণ্যের
জন্যে পথ কর আর শুল্ক ছাড়ের জন্য এশিয় ব্যবসায়ীদের বিক্রি করার বেআইনি ব্যবসায়
বিপুল সম্পত্তি মালিক হয়েছে। ঠিক এই জন্য নবাবের আধিকারিকেরা প্রায়শই ব্রিটিশ
আমলাদের কুকীর্তি ধরে ফেলে তাদের থেকে অর্থ আদায় করত। কোম্পানির ব্যবসার সঙ্গে
ব্যক্তিগত ব্যবসার ভেদ রেখা অনেক সময় মুছে যেত। নিজেদের স্বার্থ বিঘ্নিত হওয়ার
আশংকায় এই বিষয়টা বাংলার প্রশাসনের কাছে তারা পরিষ্কার করত না। দস্তক কিভাবে
দুর্নীতিপূর্ণভাবে ব্যবহার হত তার হাতে গরম বর্ণনা সমসাময়িক কালের এক অজ্ঞাতনামা
লেখক লিখে গিয়েছে, shameful prostitution did this trade in Dustuks arrive। সে এমন কি লিখছে, দস্তকের দুর্ব্যবহার, যথাযোগ্য কারণের জন্য, ফলে এটা
অস্বাভাবিক নয়। আদতে সিরাজ, declared.he would prove from vouchers in his possession that since the grant of the Firman by
Ferroekseer [in I7l7], the English had defrauded the Shah
in· his legal revenue of customs to the amount of a er.ore
and half [15 million rupees] by covering the trade of the Natives ·with the Company's dustuck'.।
তবুও কোম্পানির আমলারা দেশিয় প্রশাসনের
বিরুদ্ধে উচ্চৈঃস্বরে স্যর টোমাস রো’র প্রণোদনায় তৈরি শান্তিপূর্ণ ব্যবসায় তোলা
আদায়ের অভিযোগ এনেছে। তারা যে সকলে কোম্পানির ব্যবসা সফল করাতে খুব বেশি উদ্বিগ্ন
ছিল এমন মনে করার কোন কারণ নেই, তাদের লক্ষ্য ছিল শুধুই নিজেদের ব্যবসা বাড়ানো।
এটা যুক্তিসঙ্গতভাবে তর্ক করা যেতে পারে,
কোম্পানির চাকুরেদের ব্যবক্তিগত ব্যবসার স্বার্থ বাঁচানো, আদতে ব্রিটিশদের বাংলা
দখলের অন্যতম অন্যতম উদ্দেশ্য। ১৭৫৩ সালে কোম্পানির বিনিয়োগ চরিত্রের পরিবর্তন –
দাদনি থেকে গোমস্তা পদ্ধতিতে যাওয়ায় ফোর্ট উইলিয়ম কাউন্সিল ব্যবসায়িক দুর্দশা রোধ
করার চেষ্টা করতে লাগল – বিশেষ করে আরও বেশি ব্যক্তিগত ব্যবসায় ঝুঁকে পড়ার দিকে
গেল আমলারা। দাদনি বণিকদের ছেঁটে দিয়ে গোমস্তা পদ্ধতিতে পণ্য কেনার চেষ্টা
কোম্পানির আমলাদের ব্যক্তিগত ব্যবসাকে বাড়তে সাহায্য করল। ১৭৫৭র মার্চে চন্দননগরে
কোম্পানির আক্রমণের উদ্দেশ্যই ছিল ব্যক্তিগত ব্যবসা বাঁচানো এবং পলাশীর দিকে এক
কদম হাঁটা। এটা দেখানো যায় যে ব্রিটিশ ব্যক্তিগত ব্যবসা ১৭৪০এর দশক থেকে পড়তে থাকে
এবং ১৭৫০এর শুরুতে এসে এক্কেবারে খাদে পৌঁছয়। বাংলার ফরাসী এবং হুগলির বণিকদের
আন্তঃএশিয় ব্যবসা, হুগলী থেকে জোর কদমে চলছিল, এবং সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছে ছিল।
ব্রিটিশদের হুগলীর দ্বৈত ব্যবসা(ফরাসী এবং দেশিয় বণিক) ধ্বংস করা ব্রিটিশ
বানিজ্যের বাঁচার এবং তাকে অসীম উচ্চনায় নিয়ে যাওয়ার পক্ষে খুব জরুরি হয়ে পড়ছিল।
সেটা সম্ভব ছিল যদি বাংলা দখল করা যায়। ফলে হুগলী আর চন্দননগরে আক্রমণ ব্রিটিশদের
পক্ষে জরুরি ছিল। সাধারণভাবে ঐতিহাসিকেরা বলে থাকেন বঙ্গ-ফরাসী জোট ভাঙার জন্যে
চন্দননগর আক্রমণ জরুরি ছিল অথবা বলা হয় যে ঈঙ্গ-ফরাসী যুদ্ধের জন্যই ব্রিটিশদের এই
আক্রমণ। আদতে ব্রিটিশদের বড় কাজ ছিল বিপুলভাবে বাড়তে থাকা ফরাসী ব্যক্তিগত
ব্যবসাকে ধ্বংস করা। এই ধ্বংসকাজ না করা গেলে ব্রিটিশ ব্যক্তিগত ব্যবসাকে টেনে
তোলা খুব মুশকিল হয়ে পড়ছিল।
No comments:
Post a Comment