ফরাসী ব্যবসার
বাড়বাড়ন্ত, কলকাতা ভিত্তিক ব্রিটিশ ব্যক্তিগত(বিশেষ করে কোম্পানি আমলাদের) ব্যবসা
পতনের বড় কারণ। ১৭৫২ সালে কলকাতাবাসী ক্যাপ্টেন ফেনউইক লিখলেন, The French
it is probable are now in their zenith of trade in Bengal। ডাচ মহাফেজখানায়
জাহাজের তালিকা থেকে প্রমান হয় ১৭৫০এর মাঝামাঝি সময়ে বাংলা থেকে চরম শক্তিশালী
ফরাসি ব্যবসায়িক জাহাজের বহর ব্রিটিশদের চরম প্রতিযোগিতায় ফেলে দেয় এবং ব্যবসায় ব্রিটিশ
প্রাধান্য খর্ব হতে শুরু করে। ১১.২ তালিকায় ১৭৫০এর মাঝামাঝি সময়ের ব্রিটিশ-ফরাসি
জাহাজের তালিকা আমার তত্ত্ব প্রমান করতে সাহায্য করবে, তবে তালিকায় কতগুলি
শূন্যস্থান থাকায় পরিপূর্ণ সিদ্ধান্তে আসা গেল না।
আলোচ্য তালিকা
আমাদের বলে ১৭৫০এর মাঝামাঝি সময়ে ফরাসী ব্যক্তিগত ব্যবসা ডুপ্লের স্বর্ণিল সময়কেও
ছাড়িয়ে যাচ্ছিল। ১৭৫৪ সালে কলকাতায় আসা মোট ব্রিটিশ জাহাজের সংখ্যা ছিল ২০টি(১২টি
কোম্পানির, মাত্র ৮টা ব্যক্তিগত ব্যবসায়ীদের)। উল্টোদিকে ফরাসী ২৭টি জাহাজের মধ্যে
ব্যক্তিগত ব্যবসায়ীদেরই জাহাজ ছিল ২২টা। ১৭৫১ সালে ব্রিটিশ জাহাজের মোট টনেজ ছিল
৭৪২০ টন, সেখানে ১৭৫৪ সালে ফরাসিদের মোট ব্যবসা ছিল ১০৪৫০ টন আর ব্রিটিশ ব্যক্তিগত
ব্যবসায়ীদের অর্ধেক ৫০২০ টন, আর ফরাসি ব্যক্তিগত ব্যবসায়ীদের টনেজ ছিল ৭৪৫০ টন। এর
থেকেও প্রমান হয় ফরাসীদের ব্যবসা বিপুলভাবে বেড়েছে।
ব্রিটিশদের
ব্যক্তিগত ব্যবসাকে খর্ব করছিল ফরাসীরা, এই তথ্য ফোর্ট উইলিয়াম কাউন্সিলকে ভীত
করেছিল। ব্রিটিশ ব্যবসায় পতন রুখতে নানান ধরণের পদক্ষেপ নিয়েছিল। প্রথমটি হল
১৭৫০এর দস্তক সংস্কার, যাতে এশিয় আর ফরাসী ব্যক্তিগত ব্যবসায়ীরা সেটি ব্যবহার না
করতে পারে। তাদের উদ্দদেশ্য ছিল পরিষ্কার ব্রিটিশ আমলা ব্যবসায়ী ছাড়া আর কেউ এই কর
ছাড়ের সুবিধে না পায়। এছাড়াও ১৭৫৩ সালে কোম্পানির কর্মচারীদের ব্যবসা ছাড়পত্র,
ট্রেডিং পাস দেওয়ারও প্রথা শুরু করে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ যাতে বন্দরে ব্যক্তিগত
ব্যবসায়ীদের কর দিতে না হয়। কলকাতার কোম্পানির ব্যবসায়ী কর্মচারীদের বাইরে থাকা ব্যবসায়ী
জন উড এই প্রথাতে রেগে লেখেন, এর ফলে কোম্পানির কর্মচারীরাই শুধু একচেটিয়া
সমুদ্রপথ ব্যবসা করতে পারবে। কোম্পানির দস্তক আর ট্রেডিং পাস সংস্কারের সঙ্গে
সঙ্গে জুড়ল ১৭৫৩র বিনিয়োগে দাদনি প্রথা থেকে গোমস্তা প্রথায় সরে আসা। এই যে
সংস্কারের ঝড় চলল ফোর্ট উইলিয়ম কান্সিলের পক্ষে, এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে এর
কারণ হল কোম্পানির আমলাদের ব্যক্তিগত ব্যবসা অক্ষুণ্ণ রাখার প্রচেষ্টা। এতক্ষণ
আমরা যে বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা করলা সেটি হল, এক দিকে বাংলা আর অন্য দিকে ফরাসী
চন্দননগর দখল করার অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল কোম্পানির বাংলা-আমলাদের ব্যক্তিগত ব্যবসার
স্বার্থকে বজায় রাখা।
No comments:
Post a Comment