Thursday, December 21, 2017

ভদ্রদের শেষের সে দিন সমাসন্ন - সে আজ ভীতিপ্রদভাবে একা!

তুমি মহারাজ সাধু হলে আজ, আমি আজ চোর বটে
পুঁজির কাছে লুঠ-সঙ্গী ভদ্রদের প্রয়োজন ফুরিয়েছে
মহাভারতের শেষের দিকে দেখেছি কিভাবে বীরশ্রেষ্ঠ অর্জুনের সব গৌরব অগৌরব হয়ে ফিরে আসছে। অতীতে যে কাজ সে তুচ্ছভাবে সমাধা করত, সে সময় সেই কাজই আর সমাধা করতে পারছে না। চরম অগৌরবের মৃত্যু ঘটে পাহাড় থেকে গড়িয়ে পড়ে। আত্মীয়রা পিছন পানে না তাকিয়ে হেঁটে চলে স্বর্গের দিকে।
আজ কর্পোরেট পুঁজি আর চালকবিহীন প্রযুক্তির যুগে অর্জুনের অবস্থা হয়েছে পুঁজির ঐতিহাসিক ছোট তরফ ভদ্রদের।
---
যে বাঙ্গালি চৈতন্যের সঙ্গী হয় রাজপদ ছেড়ে জেলে যায়, দেড়শ বছরের মধ্যেই সে পথ পরিবর্তন করে কর্পোরেট বন্ধু হয়ে ওঠে, নবজাগরণের সঙ্গী হয়।
একদা বাংলা এবং অন্যান্য অঞ্চলের দেশিয় ব্যবসা দখল লুঠ আর ধ্বংসের সাহায্যকারী হিসেবে কর্পোরেট-সাম্রাজ্য তিলে তিলে বাঙ্গালি ভদ্রদের পরে অন্যান্য অঞ্চলের ইংরেজি শিক্ষিতদের চাকরি, দালালির জন্য তৈরি করে নেয়।
ভদ্রদের দিয়ে সে কারখানার প্রযুক্তি, ব্যবস্থাপনা এবং লুঠের, খুনের, অত্যাচারের প্রশাসনিক যন্ত্র চালিয়েছে - তখন ভদ্রদের অদ্যম্য রমরমা। গ্রামীন উৎপাদন ব্যবস্থা ভাঙতে, আন্তর্জাতিক বাজারের বৃন্ত থেকে ছিঁড়ে ফেলতে ভদ্রদেরই কাজে লাগাতে হয়েছে। লুঠের ছোটতরফ হিসেবে প্রতিদান ভদ্ররা পেয়েছে - কেউ নামে মহাপুরুষ হয়েছে কেউ বা স্বচ্ছল।
দেশভাগের পর তাদের কার্যকারিতা কমে নি বরং কৃষক, কারিগরদের থেকে উৎপাদনের উপাদানগুলি যতটা পারা যায় ছিনিয়ে নিতে ভদ্রদের বেড়ে উঠতে সাহায্য করেছে বড় পুঁজি আর রাষ্ট্র। পিঠেপিঠি সময়ে ব্যাঙ্ক, বড় শিল্প জাতীয়করণ করে বিপুল মধ্যবিত্তকে কাজের সুযোগ করে দিয়েছে এবং গ্রামীন উতপাদন, বাজার ধ্বংস আর সম্পদ দখল করার কাজে সরাসরি নিয়োজিত করেছে।
---
প্রযুক্তির বিবর্তনে হঠাতই আজ পাশার দান পাল্টে গিয়েছে।
চালকবিহীন কেন্দ্রিভূত প্রযুক্তি আর যন্ত্রের যুগে পুঁজির আর গণভদ্রদের প্রয়োজন নেই। কম্পিউটারের কাজে, ব্যঙ্ক ব্যবস্থায়, সরকারি প্রশাসনে, একদা গ্রামীন উচ্ছেদ করে অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠা ভদ্রমধ্যবিত্তের শেষের দিন সমাসন্ন।
গাঁইয়া উৎপাদক, শহুরে হকার আজ তার বন্ধু নয়।
সে আজ ভীতিপ্রদভাবে একা

No comments: