এনকাউন্টারিং
ডেভেলাপমেন্টঃ দ্য মেকিং এন্ড আন্মেকিং অব দ্য থার্ড ওয়ার্লডঃ আর্তুরো এসকোবারএর
বই থেকে
দ্বিতীয় অধ্যায়
দারিদ্রকে সমস্যা হিসেবে তুলে ধরা
এটা পরিষ্কার যে অন্যান্য ঐতিহাসিক প্রতর্ক উন্নয়নের
বিতর্কে প্রভাব ফেলেছিল। কমিউনিজমের তত্ত্বের আবির্ভাবের ফলে, সমাজে ব্যক্তির ভূমিকা
বা ব্যক্তি উদ্যম বা ব্যক্তি সম্পদ বিষয়ে নানান পছন্দ উন্নয়নের বিতর্কে তুলে ধরা
হয়। এই বিষয়গুলি উন্নয়নের প্রতর্কে গুরুত্বসহকারে উঠে আসার কারণই হল ঠাণ্ডা
যুদ্ধের সময়ের কট্টর কমিউনিজম বিরোধী মনোভাব, না হলে এই ধারণাগুলির উন্নয়নের প্রতর্কে
আসার প্রয়োজনই হত না। উন্নয়ন তত্ত্বে বৈদেশিক মুদ্রার ওপর এত বেশি গুরুত্ব দেওয়ার
কারণেই বাড়িতে খাবার জন্য খাদ্যশস্য চাষের বদলে বাণিজ্যিক শস্যের রপ্তানিকর্ম
অত্যধিক গুরুত্ব পেয়েছে।
একইভাবে পিতৃতন্ত্র এবং জাতিবাদ(ethnocentrism) উন্নয়নের প্রতর্কে
গুরুত্ব পেয়েছে। পরম্পরার সমাজকে আধুনিক করতে হবে, এখানে আধুনিকীকরণের মানে হল সাদা
চামড়ার সংখ্যালঘু মানুষজনের অনুসৃত নৈতিকতাকে আপন করা – যে সব নীতি সভ্য ইওরোপিয়রা
অনুসরণ করে সেগুলিকে প্রয়োগ করা। শিল্পোন্নয়নের কাজের সঙ্গে কৃষির আধুনিকীকরণের
প্রকল্প, যেখানে মহিলাদের ভূমিকা শুধু শূন্যই নয়, মেয়েদের অবদমিত করে রাখে(পঞ্চম
অধ্যায়)। উন্নয়ন প্রতর্কে এবং তার প্রয়োগবাদিতায় শ্রেণী, লিঙ্গ, জাতি এবং জাতিয়তা
তার ক্ষমতার কেন্দ্রগুলি নিয়ে সরবভাবে উপস্থিত। তত্ত্ব শুধু হাল্কাভাবের সম্পর্কে
প্রায়োগিকতাকে প্রভাবিত করে তাই নয়, এই দুটি উন্নয়নের প্রতর্কের গঠনমূলক উপাদান।
কোন একটি বিষষকে বিচার করা উচিত সামগ্রিক প্রতর্কের অনুষঙ্গে।
উদাহরণস্বরূপ পুঁজি সংগ্রহের ওপরে অত্যধিক জোর দেওয়া নির্ভর করে প্রযুক্তি, নব্য
আর্থিক সংস্থা, শ্রেণীবিন্যাসের ধরণ(জিএনপি মাথাপিছু ইত্যাদি), সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যবস্থা(জাতীয়
হিসেব রাখার নতুন পদ্ধতি এবং জনসম্পদের বন্টন), জ্ঞানের ধরণ, এবং আন্তর্জাতিক
চলকগুলির সমধ্যেকার জটিল সম্পর্ক। এই জটিল সম্পর্কের জন্য উন্নয়নের অর্থনীতিবিদদের
গুরুত্ব। কোন বিষয়টা বাদ যাবে কোন বিষয়টা আলোচিত হবে সেটা নির্ভর করবে উন্নয়নের
সামগ্রিক প্রতর্কের গতিশীলতার ওপর – যেমন কেন বাণিজ্যিক ফসল(পুঁজি আর প্রাযুক্তিক
শর্তগুলোর ওপর নির্ভর করে বিদেশিমুদ্রা আমদানির সিদ্ধান্ত) কেন বাড়িতে খাওয়ার ফসল
চাষে গুরুত্ব নয়; কেন কেন্দ্রিয় পরিকল্পনা(আর্থিক আর জ্ঞানের চাহিদার ওপর নির্ভর
করে) কেন অকেন্দ্রিভূত, অংশগ্রহণকারী পন্থা নয়; কেন বড় যন্ত্র এবং রাসায়নিক সার
কীটনাশক ভিত্তিক কৃষির বিকাশ, কেন পরিবেশ সংরক্ষণ ভিত্তিক ছোট কৃষি নয়; কেন দ্রুত
অর্থনৈতিক বিকাশ, কেন সঙ্খ্যাগুরুর চাহিদা নির্ভর দেশের বাজার বিকাশ নয় কেন; এবং
কেন পুঁজি নির্ভর উৎপাদন ব্যবস্থা কেন, কেন শ্রম ভিত্তিক উৎপাদন ব্যবস্থা নয়। সঙ্কট
যত ঘণীভূত হবে তত আগে উল্লেখ করা বাদ পড়া বিষয়গুলি ক্রমশঃ আলোচনায় ঢুকে আসবে, যদিও
উন্নয়নের মানসিকতা(developmentalist perspective) নির্ভর করে, যেমন সাস্টেনেবল উন্নয়নের ধারনাটি, যা আমরা
পরের অধ্যায়ে আলোচনা করব।
কোন কোন বিষষ উন্নয়নের আলোচনায় উঠে আসবে তা হয়ত নির্ভর করবে
সেই মুহূর্তে উন্নয়নের প্রতর্কে কোন সম্পর্কটা কাজ করছে তার ওপর; উদাহরণস্বরূপ
বিশেষজ্ঞরা কোন ধরণের নিদান দেবেন আর আন্তর্জাতিক রাজনীতি কোন ধরণের চলকগুলো নিয়ে
উৎসাহী(দ্যাখা গিয়েছে বিশেষজ্ঞদের দেওয়া নিদানের বাইরে বেরিয়ে গিয়ে আন্তর্জাতিক
সঙ্গঠনটি অন্য কিছু নিদান দিচ্ছে); একটা ক্ষমতার সঙ্গে অন্য ক্ষমতার লড়াই(কৃষি
বনাম শিল্প); একটা কর্তৃত্বের সঙ্গে অন্যের সম্পর্ক(কোন বিশেষ গ্রামীন চিকিৎসা
সংক্রান্ত কোন একটা পদক্ষেপ বিষয়ে পুষ্টি বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে অন্যান্য ডাক্তারদের
বিরোধ)। অন্যান্য সম্পর্কগুলি হল ক্ষেত্র সম্পর্ক(গ্রামীন বনাম শহর); চাহিদার
প্রয়োজনের মূল্যায়নের পদ্ধতিগুলি (বিশ্বব্যাঙ্কের মিশনগুলির গবেষণালব্ধ তথ্য
ব্যবহার নিয়ে) বা ক্ষমতায় থাকা কোন কর্তৃত্ব এই মূল্যায়নগুলি কার্যকর করবে ইত্যাদি।
ওপরের এইগুলির মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক উন্নয়নের প্রয়োগবাদিতাকে প্রভাবিত
করে। যদিও এই অনুশীলন স্থির নয়, বিভিন্ন বিষয়ের মধ্যে সম্পর্কে একই বিভিন্ন
এলিমেন্টেরে মধ্যে একই সম্পর্ক বজায় থাকে। সম্পর্কের প্রনালীবদ্ধকরণই উন্নয়নকে
গতিশীল রূপ দিয়েছে; বিভিন্ন পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে খাপ খাইয়ে নেওয়ার ক্ষমতাই একে
আজ পর্যন্ত বাঁচিয়ে এবং উজ্জীবিত রেখেছে। ১৯৯৫ সালে উন্নয়ন কিন্তু একটি একদেহভুক্ত
বিষয় হয়ে রইল না, সে নানান ধরণের বিষয়কে অঙ্গীভূত করে বিপুল বিষয় নিয়ে প্রচুর
রণনীতি সম্বল করে ছড়িয়ে গেল। সব থেকে বড় বিষয়টি যেটা বরাবরের জন্য বাদ রয়েছিল,
এখনও বাদ পড়ল, সেটা হল জনগণ। আজও উন্নয়ন ওপর থেকে চুঁইয়ে পড়া, জাতিভিত্তিক
প্রযুক্তি ও পেশাদার নির্ভর ব্যবস্থাপনা, যা কৃষ্টি এবং জনগনকে বিমূর্ত ধারনা,
সংখ্যাগত তালিকা হিসেবে গণ্য করে যা তাদের কাজের তালিকায় প্রগতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে
কখনো ওঠে কখনো বা নামে। উন্নয়নকে কখোনোই কৃষ্টিগতভাবে দ্যাখা হয় নি,(কৃষ্টি একটি
অনশেষ চলক(residual variable) যা আধুনিকীকরণের বৃদ্ধির চোটে পালিয়ে যায়) বরং
এটিকে দ্যাখা হয়েছে বিশ্বজনীনভাবে প্রাযুক্তির হস্তক্ষেপ হিসেবে, যেটি কিছু ‘অতি
প্রয়োজনীয়’পণ্য ‘নির্দিষ্ট’ জনগনের কাছে পৌঁছে দিতে সক্ষম। দুঃখের হল জনগনের ভাল
করার নামে, উন্নয়ন তৃতীয় বিশ্বের কৃষ্টিকে ধ্বংসকরার শক্তি হিসেবে উপস্থিত হয়েছে
এটা স্বীকার করে নেওয়া ভাল।
No comments:
Post a Comment