১০০ বছরেরও বেশি আগের বই। উল্লেখযোগ্য বিষয়, রাঢের সুবর্ণ বণিকদের গাঁই গোত্র সমাজের বিস্তৃত বর্ণনা। আরও উল্লেখযোগ্য আত্মনিয়ন্ত্রণের অনুশাসন তৈরির উদ্যমের ইতিহাস – যেটি চতুর্দশকর্ম হিসেবে শেষ স্তবকে উল্লিখিত হয়েছে। বইটিতে বাংলার রাঢীয় স্বর্ণবণিকদের ইতিহাস লেখার বহু উপাদান ছড়িয়ে রয়েছে। এটি গবেষকদের কাজ - আমরা শুধু দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারি। তিনি একটি বন্দনাংশ উল্লেখ করেছেন যেখানে শ্রীকৃষ্ণের উপাসনা করা হচ্ছে। এর থেকে মনে হয় দেশিয় বণিকেরা শুধু যে শৈব বা শাক্ত উপাসক ছিল এ ধারনা ভুল, তারা বৈষ্ণবও অনুগামীও ছিল। শ্রীচৈতন্যর নববৈষ্ণব ধর্মে উদ্ধারণ দত্তের মত বিপুল সংখ্যক বণিকের স্থান দেখতে পাই। আজকে কাজ হল দল বেঁধে এই গ্রামগুলোয় বণিকদের শেকড় খুঁজে এবং প্রয়োজনে তাদের পরিবারে রাখা পুঁথি পত্র বিধান ইত্যাদি বার করা।
***বইটি প্রকাশ পায় বঙ্গাব্দ ১৩১৭ আশ্বিন মাসে। লেখকই প্রকাশক। ঠিকানা চুচুঁড়া – শীলগলি। বইটি ছাপেন কে বি দত্ত, হিন্দুধর্ম প্রেস, ১২৪ আপার চিতপুর রোড, কলকাতা।***
## ভূমিকার প্রথম স্তবকেই লিখছেন ‘এ পর্য্যন্ত সুবর্ণ বণিকদের প্রকৃত জাতীয় ইতিহাস, একখানি গ্রন্থও প্রকাশিত হয় নাই, তাহাতেই আমার এই ইতিহাস লিখিবার উদ্যম।’##
বইটির ষষ্ঠ অধ্যায় থেকে কিছু তথ্য-চুম্বক তুলে দেওয়া গেল।
...কালান্তরে দেখিতে পাই বণিকগণ, রাঢ দেশে ৬টি সমাজভুক্ত হইয়া বাস করিতেছেন। ছয় সমাজের নাম – ১ বিহরণ, ২ সপ্তগ্রাম, ৩ বর্দ্ধমান, ৪ নবগ্রাম, ৫ আজাপুর, ৬ কর্জনাপুর।
...কালান্তরে দেখিতে পাই বণিকগণ, রাঢ দেশে ৬টি সমাজভুক্ত হইয়া বাস করিতেছেন। ছয় সমাজের নাম – ১ বিহরণ, ২ সপ্তগ্রাম, ৩ বর্দ্ধমান, ৪ নবগ্রাম, ৫ আজাপুর, ৬ কর্জনাপুর।
১৪১৪ শাকে কর্জনা নিবাসী অমরাক্ষ মল্লিক এক যজ্ঞের আয়োজন করেন। কর্জনার নিকটস্থ খড়্গেশ্বরী নদীর দক্ষিণ তটে, এক ক্রোশ স্থান ব্যাপিয়া যজ্ঞভূমি এবং তন্মধ্যে সভামণ্ডপ ও বণিকদিগের বাসগৃহ স্থাপিত হইল। ...শুভদিনে সভামণ্ডপে সভার প্রথম অধিবনেশন হইল। পূর্বোক্ত ছয় সমাজের ৪০ খানি গ্রামের ৭৯২ ঘর বণিক সভাস্থলে অধষ্ঠিত হইলে রাজা অমরাক্ষ, কৃতাঞ্জলিপুটে সভার বন্দনা করিলেন...(লেখক বলছেন ‘শ্রীকৃষ্ণের বন্দনা হইতে বৈষ্ণব ধর্ম্মের প্রভাব লক্ষিত হইতেছে। এ সময়ে ১৪১৪ শাকে শ্রীমান মহাপ্রভুর বয়স ৭ বৎসর মাত্র – সুতরাং একালে তাঁহার বৈষ্ণব ধর্ম প্রচারিত হয় নাই’ এবং ‘এই সভা বন্দনায় বিহরণ, নবগ্রাম, আজাপুরের নাম নাই’)।
এখানে আর বিশদে সভাবন্দনার কবিতা উল্লেখ করব না, শুধু ৪০টা গ্রামের নাম বলব যেখান থেকে বণিকদের ৭৯২ ঘর এসেছিলেন – কর্জ্জনা, ব্রাহ্মণভূমি, ভুরসুট, চন্দ্রকোণা, মুক্তিপুর, গঙ্গাপুর, আজাপুর, সপ্তগ্রাম, ফড়িঙগাছি, মঙ্গলকোট(উজ্জয়নী), কৃষ্ণপুর, মেদিনীপুর, নীলপুর, রামপুর, অযোধ্যা, হরিপাল, বেণ্যাটি, মন্দারণ, বালিগিরি, বিহরণ, নবগ্রাম, বর্দ্ধমান, বীরহট, বীরভূমি, বটগ্রাম, বালি, চাম্পানগর, ক্ষীরপাই, কাশিজোড়া, জয়পুর, পানসানি, মহানাদ, গোলাহাট, রাধানগর, বিদুরপাড়া, বাকলসা, বিষ্ণুপুর, মোরগ্রাম, নুদিপুর, চিত্রপুর।
এই বৈঠকে বণিকেরা ব্রাহ্মণ গোবর্ধন মিশ্রকে বণিকদের কুল পুস্তক লিখতে অনুরোধ করলেন – এই বিধান অনুসারে রাঢীয় স্বর্ণ বণিকদের মধ্যে ১২ জন কুলীন, ৬ জন রাঢী, ৩৫ জন বংশজ, ৩৬ জন গৌণ বংশজ, ২২৩ জন মৌলিক, ১২৮ জন কষ্ট মৌলিক, ৩৪৯ জন অতিকষ্ট মৌলিক ও একজন সম্মানিতে ভাগ করা হল।
দ্বাদশ কুলীনের নাম – ১ কৃষ্ণদাস চন্দ্র, ২ অনন্ত আঢ্য, ৩ গোপাল দেয়, ৪ কুলপতি দত্ত, ৫ জগন্নাথ শীল(এই পাঁচ জন কুলীন ও প্রাথমিক – মধুসূদন শীল ও চন্দ্রশেখর শীল{চন্দ্রশেখরের বংশধরগণ, বর্গির হাঙ্গামায় বলগনা হইতে সপরিবারে ঢাকায় পলায়ন করেন।} পশ্চাৎ কুলীন হইয়া জগন্নাথ শীলের সঙ্গে মিলিয়া ছিলেন) ৬ নীলাম্বর দত্ত, ৭ পতিরাজ দেয়(কুলীন কুলরাজ গোষ্ঠীপতি) ৮ চক্রপাণি দত্ত, ৯ বক্রেশ্বর দত্ত, ১০ লম্বোদর দত্ত, ১১ লক্ষ্মণ দত্ত, ১২ কালিদাস দত্ত।
অষ্ট রাঢী
১ মার্কণ্ডেয় সিংহ, ২ মথুরাদাস দাস, ৩ মাধব নন্দী, ৪ অশ্বধর সেন, ৫ শিখরমল্ল লাহা, ৬ রত্নসেন বর্দ্ধন, ৭ খুল্লন পাল, ৮ মিত্রসেন ধর
১ মার্কণ্ডেয় সিংহ, ২ মথুরাদাস দাস, ৩ মাধব নন্দী, ৪ অশ্বধর সেন, ৫ শিখরমল্ল লাহা, ৬ রত্নসেন বর্দ্ধন, ৭ খুল্লন পাল, ৮ মিত্রসেন ধর
সম্মানী
১ সাগর বড়াল
১ সাগর বড়াল
জগন্নাথ শীলকে চতুর্দশ কর্মের অধিকারী করা হল –
১ নিমন্ত্রণ, ২ গুবাকগ্রহণ, ৩ কুলকর্ম্মে মধ্যস্থ্য, ৪ কুলকর্ম্মে পণের নিরূপণ করণ, ৫ বিরোধভঞ্জন, ৬ সমন্বয়ের ব্যবস্থা, ৭ অনুচিত কর্ম্মকারীগণের দণ্ড বিধান, ৮ বণিক ভোজন প্রভৃতি কর্ম্মে তত্ত্বাবধায়ণ, ৯ বর প্রদক্ষিণকালে কন্যাসন ধারণের ব্যবস্থা করা, ১০ মাল্যচন্দন ব্যবস্থা, ১১ কর্ম্মান্তে ব্রাহ্মণ দক্ষিণা প্রদান, ১২ মর্ম্মে বণিকের সংখ্যা করা, ১৩ গুবাকের নিরূপণ করা, ১৪ মর্য্যাদা নির্ণয় করা।
১ নিমন্ত্রণ, ২ গুবাকগ্রহণ, ৩ কুলকর্ম্মে মধ্যস্থ্য, ৪ কুলকর্ম্মে পণের নিরূপণ করণ, ৫ বিরোধভঞ্জন, ৬ সমন্বয়ের ব্যবস্থা, ৭ অনুচিত কর্ম্মকারীগণের দণ্ড বিধান, ৮ বণিক ভোজন প্রভৃতি কর্ম্মে তত্ত্বাবধায়ণ, ৯ বর প্রদক্ষিণকালে কন্যাসন ধারণের ব্যবস্থা করা, ১০ মাল্যচন্দন ব্যবস্থা, ১১ কর্ম্মান্তে ব্রাহ্মণ দক্ষিণা প্রদান, ১২ মর্ম্মে বণিকের সংখ্যা করা, ১৩ গুবাকের নিরূপণ করা, ১৪ মর্য্যাদা নির্ণয় করা।
এই শেষ চতুর্দশ কর্মের সিদ্ধান্তটাই আত্মশাসনের প্রক্রিয়া, যা যৌথভাবে নেওয়া হল। একজন কুলপতিকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হল।
No comments:
Post a Comment