এনকাউন্টারিং ডেভেলাপমেন্টঃ দ্য মেকিং এন্ড আন্মেকিং অব দ্য
থার্ড ওয়ার্লডঃ আর্তুরো এসকোবারএর বই থেকে
দ্বিতীয় অধ্যায়
উন্নয়নের পেশাদারিকরণ এবং প্রাতিষ্ঠনিকরণ
দারিদ্রকে সমস্যা দেখে উন্নয়নের যাত্রা শুরু হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে; এটা জ্ঞানচর্চার কোন স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় সমস্যাগুলি উন্মুক্ত করে তার সমাধান খোঁজার চেষ্টা করেছে এমন নয়; একে ঐতিহাসিক নির্মাণ দ্যাখা উচিৎ যা গরীব দেশগুলিকে কেমনভাবে চরিত্রায়িত করা যাবে সেই অবকাশ এবং হস্তক্ষেপের সুযোগ করে দিয়েছে। একে যেহেতু আমরা ঐতিহাসিক নির্মাণ হিসেবে চিহ্নিত করতে যাচ্ছি, আমাদের দায় থাকে কোন কোন কলকব্জা তাকে ক্রিয়াশীল এবং বাস্তবিক শক্তি হিসেবে তৈরি করেছে সেগুলিকে উন্মোচন করা। এই কলকব্জাগুলি বিভিন্ন জ্ঞানের আঙ্গিক আর ক্ষমতার ভাষ্য দিয়ে গড়ে উঠেছে এবং চর্চাটিকে আমাদের বুঝতে হবে প্রাতিষ্ঠনিকীকরণ এবং পেশাদারিত্বের প্রক্রিয়া্র মধ্যে দিয়েই।
পেশাদারিকরণের ধারনাটি আমাদের বোঝায় এমন এক পদ্ধতি, যা তৃতীয়বিশ্বকে সাধারণভাবে পশ্চিমী জ্ঞান এবং বিশেষজ্ঞের জ্ঞানের রাজনীতির মধ্যে টেনে আনে। এটা সম্পাদন হয় একপ্রস্ত কৌশল, রণনীতি এবং শৃঙ্খলা রক্ষাকারী ব্যবস্থার মধ্যে দিয়ে যা গবেষণা, পঠনপাঠন, পেশাদারিত্বের বিশেষজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে প্রজন্ম, বৈধতা, এবং উন্নয়ন সংক্রান্ত জ্ঞানকে ছড়িয়ে দেয়; অন্য ভাষায় বললে এটা এমন এক ব্যবস্থা যেখানে সত্যের রাজনীতিকে তৈরি করে এবং সেটি স্থিতিশীলতা লাভ করে এবং এই সত্যকে বৈধতা দিতে নির্দিষ্ট কিছু জ্ঞান প্রতিষ্ঠা দেওয়া হয়। উন্নয়নের বিজ্ঞান এবং তার অধিবিদ্যাগুলি পেশাদারিকরণকে প্রভাবিত করে। অনেক সময় উন্নয়নের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সমস্যা আত্তীকরণ করে সেই সমস্যাকে চলতি প্রতিষ্ঠিত জ্ঞানের ব্যবস্থাপনা এবং ক্ষমতার চর্চার মধ্যে দিয়ে বাস্তবের আলোয় আনা হয়।
উন্নয়নের পেশাদারিত্ব রাজনৈতিক এবং কৃষ্টিগত বাস্তবতা থেকে সব সমস্যাকে তুলে নিয়ে এসে তাদের তথাকথিত নিরপেক্ষ বৈজ্ঞানিক ভিত্তির প্রতিষ্ঠা করে। তাই বিভিন্ন উন্নতিশীল দেশের গুরুত্বপূর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হয় উন্নয়ন চর্চাবিদ্যা এবং তারা তৃতীয়বিশ্বের উন্নয়নের চাহিদা অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে পুনর্গঠন করার উদ্যোগ নেয়। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রিটেনের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে গবেষণাভিত্তিক সামাজিক বিজ্ঞানের চাহিদা বাড়তে থাকে ১৯৪০এর দশক থেকে। এরিয়া স্টাডিজ প্রোগ্রামগুলি যুদ্ধের পর কেতাদুরস্তভাবে শিক্ষা ক্ষেত্রের এবং নীতি নির্ধারকদের চক্রের মাথায় চেপে বসতে থাকে। আগেই বলেছি উন্নয়ণ ক্ষেত্রের পেশাদারিত্বর মাত্রা বৃদ্ধির জন্য লাতিন আমেরিকা এবং অন্যান্য তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলি সম্বন্ধে জ্ঞানের ভাণ্ডারের ব্যবস্থাপনাকে বৈপ্লবিকভাবে পুনর্গঠনের প্রয়োজনীয়তা দ্যাখা দিল। কারির শব্দ ধার করে বলতে পারি উন্নয়নের পেশাদারিত্ব জ্ঞানের উৎসারকে এমনভাবে নিয়ন্ত্রণ করবে যাতে বিশেষজ্ঞ এবং পরিকল্পকেরা ‘বৈজ্ঞানিকভাবে সামাজিক চাহিদা’ নিরূপণ করতে পারে(Fuenzalida 1983, 1987)।২৩
তৃতীয়বিশ্বের
সব কিছু উল্টেপাল্টে জানার উদগ্র বাসনা ভাইরাসের মত ছড়িয়ে পড়ল। নরমাণ্ডিতে
বহির্বিশ্বের মানুষ নামার মত করে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলিতে বিপুল বিশেষজ্ঞের
উপস্থিতি ঘটল, যারা প্রত্যেকে তৃতীয় বিশ্বের সমাজের সব কিছু অনুসন্ধান, মাপন এবং
তাত্ত্বিকতায় রূপান্তর করার দায়িত্বপ্রাপ্ত২৪। তৃতীয় বিশ্বের বিপুল জ্ঞানের এলাকা
থেকে যে সব নীতি এবং প্রকল্প তৈরি হল সেগুলির সঙ্গে জুড়ে ছিল নানান normalizing
component। জ্ঞানের রাজনীতিকে ভিত্তিকের পেশাদারেরা সমগ্র সামাজিক শ্রেণী বিষয়ে বা সেই
শ্রেণীর ভবিষ্যৎ নির্ধারণে regime of truth and norms তৈরি
করে সমস্যার শ্রেণীবিভাগ এবং নীতি নির্ধারণ করলেন। এই কাজে শ্রেণী/গোষ্ঠী বা দেশের
ওপর কি প্রভাব পড়েছিল তা নিয়ে খুব বেশি চিন্তাভাবনা করা হয় নি।
উন্নয়নের
পেশাদারিত্বের আরেকটি ফল হল তৃতীয় বিশ্বের মানুষজনকে পশ্চিমি পুঁজিবাদের দৃষ্টিতে
গবেষণার উপাত্তে রূপান্তরিত করে ফেলা। এই অবস্থার আরও কিছু কূটাভাষ আছে। আফ্রিকিয়
গবেষক নামুদ্দু বলছেন, ‘Our own history, culture and practices, good or bad, are
discovered and translated in the journals of the North and come back to us re-conceptualized, couched in
languages and paradigms which make it all sound new and novel’(Namuddu 1989,
মিলারের উদ্ধৃতিতে 1991)। সাদা চোখে হয়ত এর প্রভাব নগণ্য, কিন্তু এর
তাত্ত্বিক্কর্মকাণ্ড বিশদে আপমরা পরের অধ্যায়ে আলোচনা করব।
No comments:
Post a Comment