১৮ মে ১৯৯১য় দেশে ‘পলাশী কার চক্রান্ত?’ শিরোনামে এক প্রবন্ধে শ্রী সুশীল চৌধুরী লিখেছেন : স্কুল-কলেজের পাঠ্যপুস্তকে শুধু নয়, লব্ধপ্রতিষ্ঠ ঐতিহাসিকদের গবেষণা সম্বন্ধে কতগুলো বক্তব্য স্বতঃসিদ্ধ হিসেবে বহুদিন ধরে চলে আসছে। সাধারণভাবে এ বক্তব্য হলো সিরাজউদ্দৌলা এতই দুর্বিনীত, দুশ্চরিত্র এবং নিষ্ঠুর ছিল যে তাতে রাজ্যের অমাত্যবর্গ শুধু নয়, সাধারণ মানুূষ পর্যন্ত কোম্পানির সঙ্গে যে সংঘর্ষের পরিণতি হিসেবে সিরাজ বাংলার মসনদ পর্যন্ত হারাল, তার জন্য দায়ী সে নিজেই; মীর জাফরই পলাশী চক্রান্তের নায়ক এবং তার বিশ্বাসঘাতকতার জন্যই পতন হয়েছিল বাংলার শেষ স্বাধীন নবাবীর। কোনো কোনো ঐতিহাসিক আবার এতেই ক্ষান্ত নন, ইংরেজদের বাংলা বিজয়ের যতার্থ প্রমাণে ব্যস্ত এসব ঐতিহাসিক প্রাক পলাশী বাঙালি সমাজের একটি দ্বিধাবিভক্ত চিত্রকে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলার চেষ্টায় খুবই সচেষ্ট। এদের বক্তব্য পলাশী যুদ্ধের প্রাক্কালে বাংলার সমাজ সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে সম্পূর্ণ বিভক্ত ছিল। মুসলমান শাসনের নিপীড়নে নির্যাতিত সংখ্যাগুরু হিন্দু সম্প্রদায় মুসলমান নবাবের হাত থেকে অব্যাহতির জন্য কোনো ত্রাণকর্তার প্রত্যাশ্যায় অধীর হয়ে পড়েছিল এবং ইংরেজদের জালিয়েছিল সাদর অভ্যর্থনা। অতিসম্প্রতি আবার কিছু ঐতিহাসিকের বক্তব্য, ইংরেজদের বাংলা বিজয় একটি আকস্মিক ঘটনা, এর পেছনে ইংরেজদের কোনো পূর্ব পরিকল্পনা ছিল না। পলাশী বিপ্লবের ব্যাখ্যা হিসেবে বলা হচ্ছে, সিরাজউদ্দৌলা নবাব হয়ে প্রভাবশালী শাসকগোষ্ঠীর তার প্রতি বিরূপ করে তোলার ফলে বাংলায় যে অভ্যন্তরীণ সঙ্কট দেখা দেয়, তার শেষ পরিণতিই পলাশী বিপ্লব।
উপরোক্ত বক্তব্যগুলো কতোটা সঠিক এবং তথ্য ও যুক্তিনির্ভর তার সূক্ষ্ম এবং নিরপেক্ষ বিশ্লেষণ প্রয়োজন। সম্প্রতি ইউরোপের বিভিন্ন মহাফেজখানায় যেসব নতুন তথ্যের সুন্ধান পেয়েছি, তার পাশাপাশি আগের জানা তথ্য ও সমসাময়িক ফার্সি ইতিহাস ও বাংলা সাহিত্যের পুনর্বিচার করে সমগ্র বিষয়টির পুনর্মূল্যায়ন সম্ভব। বর্তমান আলোচনা ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে দেখা যাবে উপরের অধিকাংশ বক্তব্যই সঠিক নয় এবং নির্ভরযোগ্য তথ্য দিয়ে এই বক্তব্যগুলোকে খ-ন করা যায়। (পৃ. ৬৫)।
অতঃপর শ্রী চৌধুরী দেখিয়েছেন যে, নবাব হওয়ার আগে তার চরিত্র যেমনই থাক, নবাব হওয়ার পর সিরাজের চরিত্রদোষের কোনো প্রমাণ নেই। পনের মাসের স্বল্প রাজত্বকালে সিরাজ কোনো পাগলামি, অর্বাচীনতা বা নিষ্ঠুরতার পরিচয় যে দেয়নি, ঐতিহাসিক দলির-গস্তাবেজ থেকে তা নিঃসন্দেহে প্রমাণ করা যায়। (পৃ. ৬৬)।
কে বা কারা পলাশীর বিশ্বাসঘাতক এ সম্পর্কে শ্রী চৌধুরীর সিদ্ধান্তমূলক তন্তব্য হচ্ছে সুতরাং দেখা যাচ্ছে বিশ্বাসঘাতকতার দায় শুধু মীর জাফরের নয় জগৎশেঠদের দায় মীর জাফরের চাইতে বেশি বৈ কম নয়। আসলে ইতিহাস পরিক্রমায় একটু পিছিয়ে গেলেই দেখা যাবে যে অষ্টাদশ শতকের প্রথমার্ধে বাংলার সব কটা রাজনৈতিক পালাবদলে জগৎশেঠরাই মুখ্য অংশ নিয়েছে। এ সময়কার রাজনীতিতে পটপরিবর্তনের চাবিকাঠি ছিল জগৎশেঠদের হাতে। .. রবার্ট ক্লাইভের লেখা চিঠিপত্র দেখার পর সন্দেহের অবকাশ থাকে না যে, পলাশী চক্রান্তের পেছনে ইংরেজরা সবচেয়ে বেশি মদদ পেয়েছিল জগৎশেঠদের কাছ থেকে।
প্রাক-পলাশী বাংলার সমাজ দ্বিধাবিভক্ত ছিল কি না এবং সংখ্যাগুরু হিন্দু সম্প্রদায় নির্যাতিত ছিল কি না এ সম্পর্কে প্রবন্ধকারের তথ্যভিত্তিক সিদ্ধান্ত হলো- সিরাজউদ্দৌলার পতন হয়েছিল শাসক শ্রেণীর এক চক্রীদল ও ইংরেজদের মিলিত ষড়যন্ত্রে, সম্প্রদায়ভিত্তিক দ্বিধাবিভক্ত বাঙালি সমাজের জন্য নয়। ... লন্ডনের রাজকীয় মহাফেজখানায় ঠিক প্রাক-পলাশী বাংলার উচ্চপদস্থ রাজকর্মচারী ও জমিদারদের দুটি তালিকা আমি পেয়েছি। প্রথমটিতে (রবার্ট ওরমের তালিকা) দেখা যাচ্ছে আলিবর্দীর সময় (১৭৫৪ তে) দেওয়ান, তন দেওয়ান, সাব দেওয়ান, বকসী প্রভৃতি সাতটি গুরুত্বপূর্ণ পদের মধ্যে ছয়টিই হিন্দুরা অলংকৃত করেছে একমাত্র মুসলমান বকসী হলো মীর জাফর। আবার ১৯ জন জমিদার ও রাজার মধ্যে ১৮ জনই হিন্দু। বাংলার ওলন্দাজ কোম্পানির প্রধান ইয়ান কারসেবুমের (Ian kerseboom)) তালিকাতেও (১৭৫৫ সালে) নায়েব দেওয়ান রায় রায়ান উমিদ রায়ের নেতৃত্বে হিন্দুদের একচ্ছত্র প্রাধান্য। ১৭৫৪/৫৫’র এই যে চিত্র নবাব সিরাজউদ্দৌলার সময় তার কোনো পরিবর্তন হয়নি। সুতরাং নিঃসন্দেহে বলা যায় মুসলমান রাজত্বে হিন্দুরা মুসলমানদের চাইতেও অনেক বেশি সুবিধাজনক অবস্থায় ছিল।... বাংলার সমাজ যদি সত্যিই দ্বিধাবিভক্ত হতো, তাহলে সমসাময়িক বাংলা সাহিত্য ও ফার্সি ইতিহাসে তার প্রতিফলন দেখতে পাওয়া যেত। কিন্তু সে রকম কোনো নির্দিষ্ট ইঙ্গিত আমরা তৎকালীন সাহিত্য বা ইতিহাসে পাই না।.. বাংলায় হিন্দু-মুসলমান, বিশেষ করে এ দুই সম্প্রদায়ের সাধারণ মানুষ, বহুদিন ধরে পাশাপাশি বাস করে এসেছে। (পৃ. ৬৯, ৭০)।
এবার ইংরেজদের সুবে বাংলার কর্তৃত্ব হস্তগত করার পূর্ব পরিকল্পনার কথা। বলা হচ্ছে, পলাশী সম্বন্ধে ইংরেজদের নাকি কোনো পূর্ব পরিকল্পনাই ছিল না; পলাশী চক্রান্তে ইংরেজদের কোনো ভূমিকাই ছিল না এবং নবাব দরবারের অন্তর্দ্বন্দ্বই নির্যাতিত মানুষদের মুক্তির লক্ষ্যে ইংরেজদের বাংলার রাজনীতিতে টেনে এনেছিল। এ সম্পর্কে শ্রী সুশীল চৌধুরী বলেন, কিন্তু পলাশী প্রাক্কালের যেসব ঘটনাবলী এবং আমাদের কাছে যেসব নতুন তথ্য-প্রমাণ আছে তার সূক্ষ্ম ও নিরপেক্ষ বিশ্লেষণ করে স্পষ্ট দেখা যাবে ইংরেজরাই পলাশীর মূল ষড়যন্ত্রকারী। সিরাজউদ্দৌলাকে সরিয়ে অন্য কাউকে মসনদে বসাবার ব্যাপারে তারাই সবচেয়ে বেশি উৎসাহ যুগিয়েছিল। শুধু তাই নয়, পলাশী যুদ্ধের আগের মুহূর্ত পর্যন্ত প্রধান প্রধান দেশীয় চক্রান্তকারীরা যাতে শেষ পর্যন্ত ষড়যন্ত্রে যুক্ত থাকে, তার জন্য ইংরেজরা বারবার চেষ্টা করে গেছে। (পৃ. ৭০)।
১৬৯০ সালের চুক্তিতে কোম্পানিকে দস্তক প্রদানের অধিকার অনুমোদনের কথা এখানে আমরা আবার স্মরণ করতে পারি। স্মরণ করতে পারি ১৭১৭ সালের চুক্তির কথা। কোম্পানি কর্মচারীদের ব্যক্তিগত গোপন ব্যবসায়ে দস্তকের যথেচ্ছ ব্যবহারে বাধা আসছিল প্রথম থেকেই। নবাব মুর্শিদকুলী খাঁ, নবাব আলীওয়ার্দী খাঁ এবং নবাব সিরাজউদ্দৌলা কোম্পানি কর্মচারীদের এই কাজে বাধা দিয়ে আসছিলেন। তাতে আঁতে ঘা লাগছিল কোম্পানি কর্মচারী-কর্মকর্তা সকলেরই। ইংরেজরা দিব্যদৃষ্টিতে দেখতে পাচ্ছিল যে, এই বিশাল ভারতবর্ষে মুসলিম মুঘল সাম্রাজ্যের অবসান নিশ্চিতভাবেই ঘনিয়ে আসছে। মারাঠা নায়ক শিবাজীর মৃত্যুর পর মারাঠা সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার ব্যাপারটাও সন্দেহের ঊর্ধ্বে ছিল না। এমনি অবস্থায় ক্রমবর্ধমান শক্তির অধিকারী ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি অদূর ভবিষ্যতে মস্ত বড় কোনো কিছুরই আশা করবে বা না কেন? বস্তুত কলকাতায় ইংরেজ কোম্পানির প্রধান ইঞ্জিনিয়ার স্কট পঞ্চাশের দশকের প্রথম দিকে বাংলা বিজয়ের এক বিশদ পরিকল্পনা পর্যন্ত তৈরি করে ফেলেছিল। তাতে এ গৌরবময় ঘটনায় কোম্পানি কি পরিমাণ লাভবান হবে তার বিস্তারিত বর্ণনা ছিল। স্কট এটাও জোর দিয়ে বলেছিল যে, বাংলা জয় করতে পারলে immense gains would accrue to the English nation ... ... রাজ্য বিজয় সম্বন্ধে বাংলায় কোম্পানির কর্মচারীদের মধ্যে একটা স্পষ্ট মতলব ও সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা লক্ষ্য করা যায়। আসলে ১৭৪০ দশকের শেষ দিকে ও পঞ্চাশ দশকের প্রথম দিকে ইংরেজ কোম্পানির কর্মচারীদের ব্যক্তিগত ব্যবসা-বাণিজ্য চরম সঙ্কটের মুখোমুখি হয়, ফলে তাদের ব্যক্তিগত ব্যবসার স্বার্থে তারা বাংলা বিজয় চাইছিল। অবশ্য এই সময় কোম্পানির বাণিজ্য ও ব্যক্তিগত ব্যবসার মতোই সমস্যাসঙ্কুল পরিস্থিতিতে পড়েছিল। কোম্পানির কর্মচারীদের সঙ্কটাপন্ন ব্যক্তিগত বাণিজ্য স্বার্থকে পুনরুদ্ধার করার জন্য ফরাসীদের বিতাড়ন এবং রাজ্য জয়ের মাধ্যমে রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলের প্রয়োজন ঘটেছিল তাতে শুধু যে আন্তঃএশীয় এবং অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত ব্যবসার স্বার্থ রক্ষার উন্নতি ঘটবে তা না, উৎপাদন ক্ষেত্র থেকে সরবরাহ, বাজারহাট, ব্যবসায়ী তাঁতী অন্যান্য কারিগরদের ওপর সার্বিক নিয়ন্ত্রণও নিশ্চিতভাবে বৃদ্ধি পাবে। এ কথা যে শুধু পশ্চাৎ সমীক্ষাতেই ধরা পড়ছে তা নয়, তৎকালীন কোম্পানির কর্মচারীদের বিবৃতি ও কাজকর্মের মধ্য দিয়েও প্রকাশ পেয়েছে। স্কটের বাংলা বিজয়ের পরিকল্পনা, ফ্যাম্বল্যান্ড ও ম্যানিংহামের ক্লাইভকে লেখা চিঠি (১ সেপ্টেম্বর ১৭৫৩) যাতে ইংরেজ বাণিজ্যের বিশেষ করে ব্যক্তিগত ব্যবসার ক্রমাবনতির কথা করুণভাবে প্রকাশ পেয়েছে। কোম্পানির বেচাকেনায় দাদনি থেকে গোমস্তা ব্যবস্থার পরিবর্তন, নবাবের প্রতিফোর্ট উইলিয়াম কাউন্সিল, গবর্নর ও গবর্নর ড্রেকের অনমনীয় এবং মারমুখো মনোভাব এ সবই ইংরেজদের রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলের যে অভিপ্রায় তারই নির্দেশক। (পৃ. ৬৭)
‘কেন এই পলাশী চক্রান্ত? এ প্রসঙ্গে শ্রী সুশীল চৌধুরী বলেন, মুর্শিদাবাদের শাসকগোষ্ঠীর একটি অংশ এবং ইংরেজরা সিরাজউদ্দৌলার অপসারণ চেয়েছিল বলেই পলাশী চক্রান্তের উদ্ভব। উভয়ের কায়েমী স্বার্থের পক্ষে সিরাজ ছিল অত্যন্ত এটা স্পস্ট যে বাংলার সামরিক অভিজাত শ্রেণী, ব্যবসায়ী গোষ্ঠী ও জমিদারদের নিবিড় জোটবদ্ধতা বাংলার নবাবের পূর্ণ ক্ষমতার ওপর যে চাপ সৃষ্টি করেছিল, সিরাজউদ্দৌলা তা মেনে নিতে মোটেই রাজি ছিলেন না। নবাব হয়েই সিরাজউদ্দৌলা সামরিক ও বেসামরিক উভয় শাসন ব্যবস্থা নতুন করে ঢেলে সাজাতে শুরু করল। মোহন লাল, মীর মদন ও খাজা আব্দুল হাদি খানের গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ এই নতুন ব্যবস্থার ইঙ্গিত বহন করে।... আসলে সিরাজউদ্দৌলার মতো বেপরোয়া তরুণ নবাব হওয়ায় শাসকশ্রেণীর একটি গোষ্ঠী ভীত ও সন্ত্রস্ত হয়ে ওঠে। আগের নবাবদের আমলে এই বিশেষ গোষ্ঠীই সম্পদ পুঞ্জীভবনে লিপ্ত ছিল। এখন তাদের ত্রাসের কারণ সিরাজউদ্দৌলা হয়তো তাদের সম্পদ পুঞ্জীভবনের পথগুলো বন্ধ করে দেবে। সৈন্যাধ্যাক্ষের পদ থেকে মীর জাফরের অপসারণ, রাজা মানিকচাঁদের কারাদ- এবং সর্বোপরি আলিবর্দীর একান্ত বিশ্বস্ত ও প্রভূত ক্ষমতাশালী হুকুম বেগের দেশ তেকে বিতাড়নের মধ্যে শাসক শ্রেণীর চক্রীদল বিপদ সঙ্কেত পেয়ে যায়। এসব সত্ত্বেও ইংরেজদের সক্রিয় সংযোগ ছাড়া পলাশী বিপ্লব সম্ভব হতো না। সিরাজউদ্দৌলা নবাব হওয়ায় ইংরেজদের কায়েমী স্বার্থও বিঘিœত হয়ে পড়ার সম্ভাবনা দেখা দিল। সিরাজ নবাব হওয়ার পর ইংরেজ কোম্পানির কর্মচারিরা ভষিণভাবে শঙ্কিত হয়ে উঠল, পাছে নতুন নবাব তাদের দুই কল্পতরুকে নিজেদের ব্যক্তিগত ব্যবসা ও দস্তকের যথেচ্ছ অপব্যবহার সমূলে বিনাশ করে বসে (পৃ. ৭২)। তাই এই তরুণ নবাকে ধ্বংস করার জন্যই পলাশীর এই চক্রান্ত। এই চক্রান্তের প্রদান হোতা ইংরেজ এবং এ দেশীয়রা তাদের সহযোগী।
দস্তকের যথেচ্ছ অপব্যবহার করার সুযোগটাই ছিল কোম্পানিওলাদের স্বার্থের ক্ষেত্রে আসল ব্যাপার। ১৭৫৬ সালের ১লা জুন ইংরেজদের কাছে নবাবের বিশেষ দূত খাজা ওয়াজেদের কাছে লিখিত নির্দেশে অন্যাণ্য কারণের মধ্যে দস্তক সম্পর্কিত ব্যাপারটাও স্পষ্টভঅবে উল্লেখ করা হয়েছিল। নির্দেশে নবাব তার মনোভাব স্পষ্টভাবে ব্যক্ত করেন, ইংরেজদের আমার রাজ্য থেকে বহিষ্কৃত করার তিনটি প্রকৃত কারণ বিদ্যমান। প্রথমত, দেশের প্রচলিত নিয়মকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে রাজ্যের মধ্যে তারা সুদৃঢ় দুর্গ নির্মাণ ও পরিখা খনন করেছে। দ্বিতীয়ত, তারা দস্তকের সুযোগ-সুবিধার যথেচ্ছ অপব্যবহার করেছে এবং যারা কোনোভাবেই এই দস্তক ব্যবহারের অধিকারী নয়, তাদেরও বাণিজ্য শুল্ক বাবদ নবাবের রাজস্বের প্রচুর ক্ষতি স্বীকার করতে হয়। তৃতীয়ত, ইংরেজরা নবাবের এমন সব প্রজাকে আশ্রয় দেয় যারা বিভিন্ন প্রকার বিশ্বাসভঙ্গকারী কার্যকলাপ ও অন্যায় ব্যবহারের জন্য নবাবের নিকট কৈফিয়ত দিতে বাধ্য।
শ্রী চৌধুরীর সমাপ্তি মন্তব্যের সাথেও আমরা সম্পূর্ণ একমত। যেখানে তিনি বলেন, শুল্ক ফাঁকি দিয়ে এ ব্যক্তিগত ব্যবসাই ছিল রাতারাতি বড়লোক হওয়ার সবচেয়ে সহজ পথ এটা যতো অন্যায়ই হোক না কেন, তারা ছাড়তে মোটেই রাজি ছিল না। গবর্নর ড্রেক থেকে শুরু করে সব ইংরেজ কর্মচারীই এই ব্যক্তিগত ব্যবসায়ে লিপ্ত ছিল এবং কেউই এটার মতো লোভীয় জিনিস ছাড়তে চায় না। সুতরাং ইংরেজরাও চাইছিলো সিরাজউদ্দৌলাকে হঠাতে। তাই শাসক শ্রেণীর চক্রীদলের সঙ্গে হাত মেলাতে এগিয়ে এলো ইংরেজরা।
এভাবে পলাশী চক্রান্ত সফল হলো। সফল হলো প্রধানত এদেশীয় বেঈমানদের বিশ্বাসঘাকতার জন্যই এবং আশ্চর্যই বলতে হবে দেশী-বিদেশী চক্রান্তকারীদের অনেকেরই জীবনের অবসান হয়েছিল খুই নির্মমভাবে।
No comments:
Post a Comment