জয়পুরের লন্ঠন
ছোট বেলার চৌকো লন্ঠনের কথা মনে আছে? আজও সেই মন
কেমন করা লন্ঠন পাওয়া যায় আরামবাগ থেকে বাঁকুড়া যাওয়ার পথে বাঁকুড়ার একটু আগে
জয়পুরে। যদি কোনোদিন এই পথে যান তাহলে অন্তত একটা নিতে ভুলবেন কী?
শুশুনিয়ার পাথর শিল্প
বাঁকুড়ার ছাতনা থানার এক গ্রাম শুশুনিয়া। এখানেই রয়েছে
৪৪০ মিটার উঁচু শুশুনিয়া পাহাড় –এটি পূর্ব-পশ্চিমে প্রায় তিন কিলোমিটার লম্বা। ১৯৬৫-৬৬তে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের প্রত্নতত্ব
বিভাগ খননকার্য করে এই এলাকার গিধুনিয়া, বাঁকাজোড়, ভরতপুর, বাঘডিহা, রামনাথপুর, শুশুনিয়া, কুশবন্যা, শিউলিবনা, শুয়াবসা, পারুল্যা, পাহাড়ঘাটা,
ধানকেড়া, করকাটা, বাবলাডাঙা, নেটেল্যা, শিমুলবেড়া,
হাপানিয়া, চাঁদড়া, বিন্দিসাসহ বেশকিছু গ্রামে। এই সব গ্রমে বর্ষাফলক, হাতকুঠার, নানান হাতিয়ার,
মসৃণ কুঠার,
ছিদ্রযুক্ত ক্ষুদ্রকাকার চক্র পাওয়া যায়। শুশুনিয়া সংলগ্ন প্রায় ৬০ বর্গমাইল এলাকায় নানান বহুবিচিত্র
অস্ত্রশস্ত্র পাওয়া যাওয়া। মানিকলাল সিংহ বা পরেশ দাশগুপ্ত মশাইএর অনুসারে আদি প্রত্নশ্মর আমলের ছোট
বসতি শুরু হয়, তিন-চার লক্ষ বছর থেকে বাঁকুড়ার শুশুনিয়া,
দ্বারকেশ্বর ও কুমারী নদীর এলাকায় তা
বাড়তে শুরু করে মানব সমাজের পরিপূর্ণ বসতিতে রূপান্তরিত হয়। প্রাগৈতিহাসিক শুশুনিয়ার প্রমাণ পাহাড়ের উত্তরদিকের গুহায় লিপিবদ্ধ শিলালিপি
পুষ্করণাধিপতে মহারাজ শ্রীসিঙ্ঘবর্মণঃ পুত্রস্য
মহারাজশ্রীচন্দ্রবর্ণণঃ কৃতিঃ
চক্রস্বামিণঃ দোসগ্রেণতিসৃষ্টঃ।
এই দুই লিপির কাল খ্রীষ্টীয় চতুর্থ দশক – গুপ্তযুগ প্রায় দেড় হাজার বছর আগের। লিপির হরফ ব্রাহ্মী কিন্তু ভাষা সংস্কৃত। এর সঙ্গে পাওয়া
গিয়েছে একটি বিষ্ণুচক্রও। এটি কোনওভাবেই এই প্রবন্ধের আলোচ্য অংশ হতে পারে না।
তবে
শুশুনিয়ায় পাহাড় ছাড়াও এলাকায় আছে বেশ কিছু দোকান, যেগুলি, শুশুনিয়া পাহাড়
সংলগ্ন অঞ্চল থেকে সংগৃহীত পাথর দিয়ে তৈরি ছোট ছোট মূর্তি, ছোট ভাস্কর্য এবং থালা
বাসন ইত্যাদি বিক্রয় করে। বাঁকুড়া জেলার বাসিন্দাদের একটি বিরাট অংশের জীবিকা এই
ধরনের শিল্পকর্ম। এছাড়া কাঁসার বাসন তৈরি, গহনা তৈরি শিল্পের সাথেও বহু লোক জড়িত
আছেন। শুশুনিয়া পাহাড় সংলগ্ন গ্রামে বহু শিল্পী বসবাস করেন, যাঁরা ভারতের রাষ্ট্রপতি পুরস্কারপ্রাপ্ত।
বাঁকুড়া থেকে বা দুর্গাপুর থেকে শুশুনিয়া যাওয়ার পথ রয়েছে।
No comments:
Post a Comment