খন
দিনাজপুরে যখন যাচ্ছেন, তখন খন গান শুনবেন না তা কী হয়?
এই উষাহরণ, খুনিয়াডাঙ্গি, মহিষবাথান, দিলালপুর অঞ্চলে ছড়িয়ে রয়েছে খন দল।
‘খনগান’ : উত্তর দিনাজপুর জেলর কিছু কিছু অঞ্চলে ‘খণগান’ খুবই প্রচলিত ও জনপ্রিয়।জেলার বিভিন্ন অংশে বিভিন্ন লোকনাট্যের মধ্যে এই ‘খণগান’ বা খ্যেনের গান নানান কারণেই বিশেষ উল্লেখের দাবী রাখে। সাধারণতঃ পারিবারিক বা সামাজিক কোন রোমান্টিক কাহিনী, সংঘর্ষ বা প্রেমবিষয়ক কোন কেচ্ছা কাহিনীকে কেন্দ্র করেই রচিত হয়ে থাকে এই ধরনের লোকনাট্য। গোপন প্রণয়, কুলত্যাগ, অসবর্ণবিবাহ, বিবাহ-বিচ্ছেদ, তালাক, কেস, মামলা-মোকদ্দমা প্রভৃতি সামাজিক বিষয়কে কেন্দ্র করেই জমজমাট হয়ে ওঠে এই নাটক। সাধারণতঃ মুক্ত মঞ্চেই এইসব রসাÍক,
কৃষি কাজের নানান উপমা, ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ, মস্করা, তামাসা, হাসিঠাট্টা, অবহেলিতা-বঞ্চিতা-লাঞ্ছিতা ও নির্যাতিতা রমনীদের আকুলতা-ব্যাকুলতার জ্যান্ত ছবি প্রভৃতি এই জনপ্রিয় লোকনাট্যের প্রধান প্রতিপাদ্য বিষয়। এই ধরনের নাটকে যেমন সংলাপ আছে, তেমনই প্রতি বছরই নতুন নতুন বিষয়বস্তু নিয়ে রচিত হয় বলে নাটকের উপর মানুষের প্রচুর আগ্রহ জন্মায়। এইসব পালাগানে নারীচরিত্রে সাধারণতঃ পুরুষরাই (ছাক্রা বা ছুকরি সেজে) অভিনয় করে থাকে কোন কোন পালা গানে। আমাদের জেলায় এই গানের ঐতিহ্য দীর্ঘদিনের। রায়গঞ্জ, কালিয়াগঞ্চ, হেমতাবাদ, ইটাহার প্রভৃতি অঞ্চলের আশেপাশে এই লোকনাট্যের ব্যাপক প্রচলন আছে। স্বাধীনতা পরবর্তী যুগে যেসব ‘খণগান’ অত্যধিক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল সেগুলোর মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হলো ভাসুর-ভাউসান, বুধাশরী, দইফেলা সেহারী, সাইকেল সেহারী, সতী-হেলা, হ্যাজাক সেহারী, ডিপ্টিকল, লালু-সোহাগী, হালুয়ান-হালুয়ানী, চোর-চূর্ণী প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
গণেশ রবিদাসের উতসাহে – দলটি আজ দিনাজপুরের অন্যতম
প্রধান দল।
গমীরা
নাট্যের কোন কোন অংশে একক নৃত্যের অবকাশ থাকে। নিজস্ব অঙ্গভঙ্গীতে সাধারতঃ নায়ক-নায়িকারা নাচের আসর জমায়। তাছাড়া উদ্দাম নৃত্য দেখানো হয় মুখোশের নাচে। গম্ভীরা ও জিতিয়া অষ্টমী উপলক্ষ্যে মুখোশ নাচের পৃথক আসর বসে। দলে দলে সুসজ্জিত হয়ে ঢোল ও বাজানার তালে তালে কখনও ধীরে আবার কখনও উত্তেজিতভাবে নৃত্য চলতে থাকে। স্থানীয়ভাবে একে মুখা নাচ বলে। ঢোল বাদক ও নৃত্যকারী শেষ পর্যন্ত বাহ্যিকজ্ঞান হারিয়ে ফেলে। মোখা আমাদের জেলার একটি ঐতিহ্যবাহী লোকশিল্প।
No comments:
Post a Comment