জলপাইগুড়ি
জলপাইগুড়ি বিপুল বিশাল ঐতিহ্যের শহুর। জলপাইগুড়ি এমন এক
শহর যার সঙ্গে জড়িয়ে আছে ইংরেজ আমলের সন্ন্যাসী স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম দুই
নায়ক ভবানী পাঠক আর দেবী চৌধুরানীর নাম।
রাভা মুখোশ
রাভা বস্তি মানে রাভা সম্প্রদায়ের বসবাসের স্থান হল
গয়েরকাঁটা জঙ্গলের ভেতরে, সেখানে রাভা সম্প্রদায়ের কয়েক জন বাংলার একমাত্র বাঁশের
চাটাই বুনে কালির মুখোশ বানান।
জলপাইগুড়ির ধুপগুড়ি একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মোড়। জলপাইগুড়ি-ধুপগুড়ি
হয়ে একটি রাস্তা কোচবিহারের দিকে চলে গিয়েছে, জলপাইগুড়ি-ধুপগুড়ি হয়ে অন্য একটি
রাস্তা ভূটানের দরজা জয়গাঁ পর্যন্ত গিয়েছে। এই ধুপগুড়ি থেকে স্থানীয় বাস বা
ট্রেকারে যেতে হয় খুট্টিমারি – একটাই বাস – কখন যায় তাঁর ঠিক ঠিকানা নেই। সেখান থেকে হাঁটা পথ,
প্রায় দুই থেকে তিন কিমি।
প্রথম যে দিন যাই বেশ রাত হয়ে গিয়েছিল। ধুপগুড়িতেই প্রায়
সন্ধ্যে সাতটা। পৌছতে পারব এমন আশা ছিল না। দূর দেশে যা হয় বিপত্তারণ হয়ে দাঁড়ালেন
সেই বাসটির কর্মীরা যে বাসটি যায় খুট্টিমারি। সেদিন তার যাওয়ার কথা ছিল না। আমাদের
কথা আর আমরা রাভাবস্তির মুখিয়া গনাত রাভার গ্রামে যাব শুনে তাঁরা ঠিক করলেন আমাদের
পৌছে দেবেন খুট্টিমারি। ধুপগুড়ি থেকে খুট্টিমারির দূরত্ব প্রায় দশ কিমি। কি করে
যেন তাদের বাসও ভর্তি হয়েও গেল। ধূপগুড়িতেই আমাদের পরিকল্পনা শুনে আনেকেই
বলেছিলেন, যাওয়ার দরকার নেই। গয়েরকাটা জঙ্গল থেকে খুট্টিমারির পথে হাতি বেরোয়।
কয়েক দিন আআগেই হাতি বেরিয়ে প্রচুর ফসন নষ্ট করে দিয়েছে তাদের বাঁধা হাঁটা পথের
বাইরে বেরিয়ে গিয়ে। আর সামনে কিছু মানুষ দেখলে তাঁরা কী করবে নিশ্চয়তা নেই।
তো রাত আট্টায় নামলাম খুট্টিমারি। নামিয়ে দিয়ে বাসটি
চলেগেল তাঁর রাতের গন্তব্য। আমরা দাঁড়িয়ে রয়েছি নিশুত নিঝুম অন্ধকারে। কয়েকটি
ঝুপড়ি দোকান। সেগুলি থেকেও একফোঁটাও আলোর আশা নেই। হালকা জ্যোৎস্না। কাছের ঝোপঝাড়
পেরিয়ে দৃষ্টি পেরিয়ে দূরে নজর সন্নিবিষ্ট করলে দেখা যায় বিপুল বিশাল গাছের সারি।
ওটাই খুট্টিমারি রেঞ্জ, জঙ্গল। সেখানেই থাকে উত্তরবঙ্গের হাতির দল।
সঙ্গী ছিলেন বিধান বিশ্বাস। একটাই সান্ত্বনা তিনি এঈ
গ্রামে এসেছেন একবার। বেশ কয়েক বছর আগে। খুট্টিমারিতে নেমে সেই নিশ্ছিদ্র অন্ধকারে
আমার দিকে তাকিয়ে বলছিলেন, সেই সময় খুট্টিমারীতে একটাও দোকান ছিল না। তাঁর সঙ্গে
হাঁটা শুরু করলাম। পথ দেখাচ্ছে খুবই আবছা আলো আর জোনাকির ঝিকিমিকি। মনে আশংকা এই
হাতির পাল বেরোল।
তো আমরা সেই রাতে পৌছলাম, রাভাবস্তি। রাভাদের খুবই প্রিয়
ছোট কচু দিয়ে রান্না খেয়ে রাত কাটালাম। প্রায় সব তরকারির অনুপান সেটি। গনাতদার পালিতা কন্যা সিতিন রাভা বেশ ভাল নাচেন। তাদের নাচের দলও রয়েছে।
সেই সময়ে শোনা গিয়েছিল, মুখোশ বানানো শেষ কয়েকজম মানুষও
খ্রিষ্টান হয়ে গিয়েছেন। তাঁরা ঠিক করেছেন আর বানাবেন না। তবে আমাদের সম্মানে
বানিয়ে দিলেন মুখোশ কয়েকটি। পরেরদিন সেখানে সারা দিন কাটানো আর আমাদের ফেরা, সে এক
অন্য গল্প।
বেতের আসবাবপত্র
শিলিগুড়ি হয়ে জলপাইগুড়ি আর জলপাইগুড়ি- ধুপগুড়ি কোচবিহার রাস্তার
দুপাশে বেতের আসবাব, ঘর সাজানো জিনিস নিয়ে আস্থায়ী দোকান দিয়ে বসে রয়েছেন বহু
কারিগর। তাদের আনেকে সেই এলাকায় থাকেন।
পোড়ামাটি
তিস্তার আববাহিকায় দারুণ মাটি পাওয়া যায়, যে মাটি পোড়ালে
বাঁকেও না চুরেও না। সেই মাটিতে নানান ধরণের পোড়া মাটির ঘর সাজানোর নানান জিনিস
পাওয়া যায়, যেগুলোর আধকাংশ কলকাতার নানান দোকানে দেখতে পাবেন। পোড়ামাটির চাইমস,
পোড়ামাটির নতুন নতুন আকারের টব, পোড়ামাটির আলোদানি আপনাদের ভাল লাগবেই। কিছু দেখতে
পাবেন শিলিগুড়ি বিমানবন্দর ছাড়িয়ে শিলিগুড়ির দিকে যেতে শিবমন্দির এলাকার আশেপাশে।
আর কিছু দেখতে পাবেন জলপাইগুড়ি শহর থেকে জাতীয় সড়কে এলে তার ওপরে বিশেষ করে দেবী চৌধুরানী শ্মশান পেরিয়ে।
No comments:
Post a Comment