পটুয়াদের পুতুল
মেদিনীপুরের পটুয়ারা আজও পট আঁকেন
পুতুলও তৈরি করেন। পটুয়াদের পুতুল গড়ার ধারা আজ আর খুব বেশি আলোচনা হয় না। কয়েক জন
অবশ্য রাজ্য হস্তশিল্প মেলায় নিয়ে বসেন। এগুলোর ঐতিহাসিকতা এদের চেহারায় ফুটে ওঠে
দেখলেই যেন মনে হয় সেই কোন কালের হরপ্পা-সরস্বতী সভ্যতার সংস্কৃতি বহন করে নিয়ে
চলেছেন এঁরা। এই পুতুল হয়ত কয়েক বছরের মধ্যেই বানানো বন্ধ করে দেবেন।
পটুয়া মহিলা চিত্রকরেদের হাতে টিপে
টেপা পুতুলে থাকে নানাবিধ রঙের প্রলেপ – আবার রং ছাড়া পুতুলও হয়। এই পুতুলগুলোর
নামও বেশ কৌতুহল জাগায় যেমন শিলেট পুতুল, হিংলি পুতুল, মুখোশ পুতুল,
বড়ো পুতুল, ঝুমঝুমি পুতুল ইত্যাদি। হিংলি
পুতুল তৈরি হয় হাতে টিপে। দেওয়ালের গায়ে ঝুলিয়ে রাখা পুতুলগুলোকে শিলেট পুতুল বলে,
মুখোশ পুতুল নানান আকারের ছোট বড় দুরকমই হয়। বড়গুলো ২৫ সেমি পর্যন্ত হয়ে থাকে। শেষ
দুটো পুতুল ঘর সাজানোর জন্য তৈরি হয়। হিংলি পুতুলের মধ্যে সবথেকে ভাল লাগে কোলে,
ছড়ানো পায়ের ওপরে রাখা সন্তান।
পুতুলগুলো বেশ হাল্কা করে তৈরি করা
হয়। এবং এর পদ্ধতি বেশ আকর্ষণীয়। হালকা করার দরকার কেননা এগুলোকে দূর-দূরান্তে
নিয়ে বিক্রি করতে হয়। হালকা করে গড়ার পদ্ধতি হচ্ছে, কাদার মণ্ডটি বেলে রুটির মত
করে তারপর হাতের আঙ্গুলের মোড়কে নানান রূপ দেওয়া হয়(কোনোদিন সুযোগ হলে এ নয়ে বিশদে
বলা যেতে পারে।)। বাংলার নানান ধরণের শিল্পী-উৎপাদক তাঁদের কাজে বিপুল পরিমাণে
উদ্ভাবনী শক্তির পরিচয় দিয়েছেন যদিও আজকের কেবলই বিদ্যুৎ চালিত হাতিয়ার/যন্ত্র
নির্ভর যুগে যন্ত্রের ওপরে নির্ভরতাকেই দক্ষতা রূপে গণ্য করা হয়ে থাকে। হাত, জ্ঞান,
সামুহিক পরপম্পরাগত দক্ষতা চলে গয়েছে পর্দার পেছনে। এ এক দীর্ঘ আলোচনার বিষয়।
রঙ তৈরি করা হয় ভূষোকালি, তুঁতে,
মেটে সিঁদুর, হরিতাল, এলামাটি, গোরিমাটি, কাঠকড়ি আলতা এবং এরকম নানান রঙ্গীন
দ্রব্য দিয়ে। রঙ ভালভাবে ধরানোর জন্য তেঁতুল বিচির কাই, বেলের। নিমের আঠার প্রলেপ
দেওয়া হয়।
No comments:
Post a Comment