আগেই বলেছি কোচবিহারে বাঁশের কাজও হয়ে থাকে। বেশ কয়েক
বছর ধরে কেন্দ্রিয় বা রাজ্য সরকারগুলোর গ্রাম শিল্প বাঁচাবার নাম করে, ‘প্রোডাক্ট
ডেভেলাপমেন্ট’, ‘ডিজাইন ডেভেলাপমেন্ট’ ‘ল্যাব টু ফিল্ড’ ইত্যাদি প্রকল্পে সূত্র
ধরে দেশ জুড়ে এক ধরণের শিল্প দ্রব্য তৈরি করার ধুম লেগেছে। যে দ্রব্যগুলো বেশি
বিক্রি হয়, তাদের এলাকা, উপাদান, বাজার না বুঝেই সেই কাটতি হওয়া শিল্পগুলি অন্য
এলাকায় চাপিয়ে দেওয়ার রীতি শুরু হয়েছে। এর একটা বড় কারণ যে শিল্পীরা এই
প্রকল্পগুলো রূপায়ণ করেন মাঠে নেমে, তাদের আধিকাংশের রয়েছে শুধুই কোনও শিল্প
বিদ্যালয় থেকে কৃতকার্য হওয়ার শংসাপত্র। ভারতে প্রায় সব কটি শিল্প শিক্ষা
প্রতিষ্ঠানে সাধারণতঃ পশ্চিমি শিল্পরীতি আনুসরণ করা হয়। অথচ এঁরা যে প্রশিক্ষণ
দিতে যাচ্ছে সেগুলির চরিত্র আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট আলাদা। তিনি না জানেন সেই
শিল্প, না জানেন যে নতুন ধরণের দ্রব্য উৎপাদন করতে শেখাতে যাচ্ছেন তাঁর আদৌ কোনও
বাজার রয়েছে কিনা, আর যদি থাকেও সেই বাজার আদৌ সেই শিল্পীদের নিয়ন্ত্রণে থাকবে কী
না। বা ল্যাব টু ফিল্ড প্রকল্পে যে নতুন ধরণের হাতিয়ার দেওয়া হল, সেই হাতিয়ার কাজে
লাগাতে পারবেন কী না, তা কাজে লাগাতে গেলে কত দিনের প্রশিক্ষণ প্রয়োজন বা আদৌ সেই
এলাকায় বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুয়োগ আছে কীনা, কেননা আধিকাংশ হাতিয়ারই বিদ্যুতে চলে,
বা একবার খারাপ হয়েগেলে সারাবে কোথায় তাঁরা জানেন না এরকম নানান ইস্যু।
ফলে দেখা যাবে গ্রাম শিল্পের সব থেকে বড় জোরের যায়গা,
সেটি হল বৈচিত্র্য সেটি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কোচবিহারের বাঁশের দ্রব্য তৈরির ক্ষেত্রে
দেখতে পাচ্ছি, মালদায় যে ধরণের বাঁশের জিনিস বিক্রি হচ্ছে, ঠিক সেই জিনিসই
কোচবিহারে তৈরি করানো হচ্ছে। আদতে কোচবিহারের বাঁশের কাজের যে চরিত্র সেটি খুব
তারাতাড়ি হারিয়ে যাচ্ছে। বিগত কয়েক দশকে যে পরিবর্তন এসেছে বাংলার বেশ কয়েকটি
শিল্পে তা খুব দুঃখজনক। এখন বলতে বাধ্য হচ্ছি, মালদার সাঁওতালদের বাঁশের উৎপাদনের
সঙ্গে আর কোচবিহারের বাঁশের কোনও পার্থক্য নেই বললেই চলে। প্রভাবিত হয়ে এক এলাকার জিনিস দেখে নিজের
এলাকার জিনিসের সঙ্গে মিলিয়ে মিশিয়ে তৃতীয় আর এক প্রকার দ্রব্য উৎপাদন করা আর অন্য
একটি নকল করা অন্য ব্যাপার।
কোচবিহার শহরে নীলকুঠি অঞ্চলের রাজেন তেপথিতে থাকেন
গৌরাঙ্গ বর্মণ। গৌরাঙ্গবাবু সঙ্ঘের রাজ্য সম্পাদক। নিজে প্রায় পঞ্চাশ বছর বাঁশের
কাজ করছেন। তাঁর কাজ কিছুটা অসমের কাজ প্রভাবিত। কিন্তু নকল নয়। তিনি কালজানি এলাকায় প্রায় পঞ্চাশটি পরিবারকে সেই কাজ শিখিয়ে
তাদের রোজগার করতে শিখিয়েছেন। তাঁর স্ত্রী গীতা বর্মণ লঙ্কাবর এলাকার প্রায় ১০০টি পরিবারের অন্তত ৩০০ মেয়েকে
পাটের নানান কাজ শিখিয়ে দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন। তাঁরা এখন নানান মেলায় পাটের নানান
জিনিস তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করেন।
বেতের আসবাবপত্র
কোচবিহার বেতের আসবাবপত্রের জন্য বিখ্যাত। মূলত অসমের
বেত এই জেলায় আসা খুব সহজ ও শস্তা বলে বেতের মোড়া, বেতের ঘর সাজানো নানান জিনিস,
বেতের চেয়ার, বেতের সোফাসেট ইত্যাদি কোচবিহারের তুলনামূলক কম দামে আর ভাল জিনিস
পাওয়া যায়। নিউ কোচবিহার স্টেশনের কাছেই রয়েছেন নগেন দাস। বেশ ভাল কাজ করে থাকেন তিনি।
No comments:
Post a Comment