চক্ষুদান পট
যখনই কোনও সাঁওতাল পুরুষ, নারী অথবা শিশু মারা যান, তখনই মৃতের কল্পিত ছবি এঁকে জাদু-পটুয়া
চলে যান শোকের সেই বাড়িতে। সে ছবিতে ব্যক্তির ছাপ নেই। শুধু লিঙ্গ আর বয়স ভেদের ছাপ। রং-রেখায় ছবিটি পুরোপুরি তৈরি হলেও
চক্ষুদানটুকু কেবল বাকি থাকে। চোখ-না-ফোটা সেই ছবিটি দেখিয়ে পটুয়া মৃতের
স্বজনদের বলেন,চোখ-না-থাকা অবস্থায় পরলোকে মানুষটি ঘুরে ঘুরে কষ্ট পাচ্ছেন, স্বজনদের কাছ থেকে‘ভুজ্জি’ পেয়ে পটুয়া চিত্রে চক্ষুদান করলেই ম্যাজিকের মতো তাঁর পরিত্রাণ। সে জন্যই এ পটুয়ার নাম জাদু-পটুয়া আর পটের এই বিশেষ ধারার নাম চক্ষুদান পট। গুরুসদয় দত্তের বর্ণনায় এমনই ধারণা মেলে সাঁওতালি পটের এই বিশেষ ধারা সম্পর্কে। মৃত্যুর পাশাপাশি সাঁওতালি পটে থাকে জন্মও। ‘যমপট’ আবার সমতল বাংলার ঘরে ঘরে
প্রচলিত ছিল।সেখানে ধর্মরাজের বিচারে দণ্ডিত মানুষের নরকভোগ আর পুরস্কৃত মানুষের স্বর্গসুখের ছবি।
তবে আর কতো
দিন যে বাংলার এই ঐতিহ্য দেখা যাবে তা বলা বেশ মুশকিল। একটি এনজিও পটুয়াদের
ব্যবসামুখী করার উদ্যম নিয়েছে। তাঁদের পরম্পরার শেকড় থেকে উপড়ে ফেলে, তাঁদের
ঐতিহ্য থেকে ছিঁড়ে নিয়ে, তাদের শহুরে শিল্পীদের মত করে ঢেলে সাজ পরানোর চেষ্টা
চলেছে, যার সঙ্গে তাদের জ্ঞানের, ইতিহাসের কোনও সম্পর্ক নেই। এক্কেবারে শেকড়
ছেঁড়া সেই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের উদ্যমে, বহু অর্থ ঢেলে,
সংবাদমাধ্যমের প্রচার পেয়ে, পটুয়ারা মনে করছেন আজ তাঁরা বেঁচে গেলেন। বহু সহস্র
বছরের ঝড় ঝাপটা সয়ে যারা বেঁচে এসেছেন, তাঁরা বুঝতে পারছেন না, আগামী কয়েক বছরে এই
প্রকল্পর ঔজ্জ্বল্য, টাকা, পরিকল্পনা সব চলে যাবে। কিন্তু তাঁদের বেঁচে থাকতে হবে।
যখন তাঁরা নিজেদের জ্ঞানের কথা ভুলে যাবেন, নিজেদের ইতিহাস মুছে যাবে তাদের স্মৃতি
থেকে তখন যে তাঁদের অস্ত্বিত্ব বিপন্ন হবে তা দিনের আলোর মত পরিস্কার। পটুয়ারা এই
এনজিওদের ছাড়া বেঁচে ছিলেন, এঁরা যদি না থাকেন, নিজেদের পরিকল্পনা রূপায়ণের চেষ্টা
না করেন, তাহলে আরো বহু বছর বেঁচে থাকবেন।
নাড়াজোলের
পুতুল
পাঁশকুড়া-দাসপুর
হয়ে নাড়াজোল। এক সময় বিখ্যাত ছিল তাঁর রাজবাড়ির জন্য, আর মুগের ডালের জিলিপির
জন্য। কিন্তু পশ্চিম মেদিনীপুরের নাড়াজোলের বাহারী পুতুল আজও তার আকর্ষণ বজায়
রেখেছে, তার ঐতিহ্যমণ্ডিত গড়নশৈলী, তার রঙের ব্যবহার, তার নিজস্বতা দিয়ে (পুতুলগুলোর
ছবি দেখা যাবে http://lokfolk.blogspot.in/2012/01/blog-post_492.html ব্লগে)।
No comments:
Post a Comment