শাসনের পোড়ামাটির কাজ
শাসনে নতুন ধরণের নতুন ধরণের ঘর সাজানোর পোড়ামাটির কাজ হচ্ছে। মাটির চেয়ার
থেকে বইএর তাক, টেব্ল, ড্রেসিং টেবল, নাম নেম প্লেটসুহ আরো কত কি। গ্রামের প্রায়
৬০ জন কুমোর এই কাজ করছেন। কোনও জিনিসই পড়ে থাকে না। নতুন ধরণের বাজার পাবার কাজে
তাঁরা যে দক্ষ হয়ে উঠেছেন।
দত্তপুকুরের মাটির কাজ
কলকাতা-বনগাঁ রাস্তায় দত্তপুকুর। পরম্পরার মাটির কাজ
বলতে এখন টিকে রয়েছে শুধুই সরার কাজ। এ ছাড়া বাড়ির মেঝেতে লাগানোর জন্য পোড়ামাটির
টালি থেকে পাইকারিহারে তৈরি ঘরে ঝোলানো মুখোশ সবই তৈরি হয় দত্তপুকুর অঞ্চলে।
এলাকার মানুষজন এই শিল্পকে পাইকারি ব্যবসায় রূপান্তরিত করে ফেলেছেন। গবেষকের মুখে
বাঁকা হাসি। কিন্তু যাঁরা এই কাজ করেন তাদের মুখেও হাসি, কিন্তু সে তৃপ্তির। দত্তপুকুর-বিড়া-হাবড়া
অঞ্চল জুড়ে এখন মাটির কাজের রমরমা। কলকাতার বিভিন্ন রেস্তোঁরায় যে বাহারি মাটির থালা বা জলের
পাত্র দেখা যার তাঁর নিরানব্বই শতাংশ আসে এই পোড়ামাটির অক্ষ থেকে।
দেশভাগের ফলে ছিন্নমূল কিছু মানুষ সীমান্তবর্তী এই
অঞ্চলে এসে বসবাস শুরু করেন। পারম্পরিকভাবে এই অঞ্চলে ছিল বেশ কিছু কুমোর পরিবার।
সব বিপর্যয়ে যা হয়, স্থানীয় মানুষ হাত বাড়িয়ে দেন সেই আতান্তরে পড়া মানুষদের দিকে।
ক্রমশ তাঁরা গুছিয়ে ওঠেন। আজ তাঁরা এমন ভারত জোড়া ব্যবসা ফেঁদেছেন যে ছোট শিল্পের
পাশে না দাঁড়ানো ব্যাঙ্কও তাদের ঋণ দিতে এগিয়ে এসেছে।
কলকাতা-বনগাঁ রাস্তায় বিড়া। বিড়ার চৌমাথার অদূরে
শ্বেতপুর গ্রাম – ট্রেকার যায়। স্থানীয় অঞ্চলের চাহিদা আনুযায়ী তাঁরা হাঁড়ি,
ঠেঁকি, ইত্যাদি তৈরি করতেন সম্বৎসর। তাদের নতুন প্রজন্ম সেই মানুষদের দেখাদেখি
নতুন করে নিজেদের আবিষ্কার করতে শুরু করে দিলেন। তাঁদের আনেকে এখনও পুরোনো কাজের
সঙ্গে সঙ্গে বেশ কিছু নতুন ধরণের কাজ করছেন।
টোকা
কলকাতা-টাকি রাস্তায় পড়ে মেটিয়াহাট, ধান্যকুড়িয়ার পরের থামা। এই অঞ্চলের বিভিন্ন হাটে ওঠে টোকা। চাষীরা মাথায় দিয়ে মাঠে চাষ করেন। হোচিমিনের মাথায় ইয়েন
২৪ পরগণার টোকা। সেটি শহুরে কেউ কেউ – প্রাক্তন আমলা দেবব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ের মত
কিছু মানুষ, নতুন করে পরিধান করে আবার নিজস্ব নতুন আঙ্গিক সৃষ্টি করে নিয়েছেন।
হোগলা পাটির মাদুর
উত্তর ২৪ পরগণার বারাসাত, বসিরহাট, দেগঙ্গা, বাদুড়িয়া, বনগ্রামে রামনগরের ধাঁচে একহারা বুনন পদ্ধতি অনুসৃত হয়। তবে এ অঞ্চলে পাতি বা হোগলা বেশি তৈরি হয়।
অসম্ভব নরম, অসম্ভব কম দামি এই মাদুর ওঠে মেটিয়াহাটে।
কাঠিটা যদিও হোগলা নয়, কিন্তু অনেকটা হোগলার মত দেখতে। স্থানীয় মানুষ বলেন পাটি।
আপনার পকেট খুশি, মাদুরের আরামে দেহ মহাশয়ও আরও খুশ।
দক্ষিণ ২৪ পরগণায় আলিদায় রূপোর ফিলিগ্রি
এখানে যাওয়া যায় ঠাকুরপুকুর হয়ে নেপালগঞ্জ হয়ে বা
বারুইপুর থেকে। এখানে রূপোর নানান দ্রব্য তৈরি হয় যেমন বালা, বাউটি, নেকলেস, গলার
মালা, পালকি, রথ, আগরবাতি স্ট্যান্ড, মুকুট, সিংহাসন ইত্যাদি। মোটামুটি দেড় হাজার শিল্পী রয়েছেন।
No comments:
Post a Comment