আজও পুরুলিয়ার রেশমের গুটি সোমানুখীতে এসে থান
তৈরি হয়। সুতো তৈরির পরে তা তাঁতে আড়াআড়ি করে লাগানোর জন্য বিছিয়ে ফেলা হয়,
যাকে বলে ‘টানা’।আর লম্বা সুতোর নাম
পোড়েন। টানাতেও জট থাকে। সেই জটও ছাড়াতে হয়। টানা তাঁতে জোড়ার পরে তার উপরে লম্বালম্বি যে সুতো ফেলা হয়,
তাকে বলে ‘পোড়েন’। দিনভর এই টানা-পোড়েন নিয়েই তাঁত বুনে শাড়ি তৈরি করেন তাঁতি। পুরুষদের সঙ্গে নিরন্তর কাজ করে চলেন বাড়ির মেয়েরাও।সোনামুখী শহরের ভেতরে পচিশ চূড়াযুক্ত(পঁচিশরত্ন) টেরাকোটা অলংকৃত শ্রীধর মন্দির। স্থাপিত ১৮৪৫ খ্রিস্টাব্দে।
১৮৩৫-এ তৈরি গিরিগোবর্ধন মন্দিরটিও দর্শনীয়।জৈন তীর্থঙ্করের মূর্তি সমিন্বত স্বর্ণমুখী দেবীর মন্দির। যার নাম থেকেই সোনামুখী শহরের নামকরণ।কোম্পানি আমলের নীলকুঠির ধ্বংসচিহ্ন দেখা যায়।
রামনবমীতে এখানে মনোহর দাসের মেলা বসে।জমে ওঠে বাউল আখড়া। এ ছাড়া কালী ও কার্তিক পুজো এখানে এতই বিখ্যাত, সেখানে ঢল নামে মানুষের।আর
রাজগ্রামে গেলে ঘোড়ার সঙ্গে কিনবেন অবশ্যই গামছা। এত মোটা সুতোর গামছা বাংলায় আর
পাওয়া যায় না বললেই চলে।
আরও একটা আসম্ভব শিল্প দ্রব্য বাংলার পোড়ামাটির
শিল্পীরা আবিষ্কার করেছেন সেটি হল পোড়ামাটির শাঁখ। দেখে বলবেন, এটি শাঁখের নকল
একটি পোড়ামাটির শাঁখ। হ্যাঁ আবার না। নকল
তো বটেই। কিন্তু সেটি – আবাক হচ্ছেন কী? উঁহু বিন্দুমাত্র রূপকথা কলছি না, মুখ
দিয়ে শাঁখের মত বাজানোর চেষ্টা করলে ঠিক শাঁখের শব্দে বেজে ওঠে।
এখন এটি যদি কম্পিউটার যন্ত্রে তৈরি হত, তাহলে
ভীষণ গর্বে বলা হত আধুনিকতম প্রযুক্তির উপহার। যেহেতু ইংরেজি না জানা, গ্রাম্য
কুমোররা এই অসম্ভব আবিষ্কারটি তৈরি করেছেন, সেটিকে নিয়ে বাংলার শিল্পসংগ্রাহকদের
বিন্দুমাত্র হেলদোল নেই, প্রযুক্তি লেখকদেরও এ বিষয়ে ভাবনা চিন্তা নেই।
বিনীত আনুরোধ সেটি সংগ্রহ করবেন, আর চিন্তা করবেন
বাংলারই এক সময়ের রাজধানী জেলা, বাঁকুড়ার অদম্য কিছু কুমোর সেটি কীভাবে তৈরি
করেছেন পেটেন্টের পরোয়া না করেই, নিজেদের পরিচিতির ভাবনা না ভেবেই। সেই ভাবনা দিয়ে
পোড়ামাটির অসাধারণ সব শিল্পীদের নতুন করে মনে করি যারা আমাদের উপহার দিয়েছেন কয়েকশ
বছরের মাটির বাড়ি, যে বাড়ি রোদে জলে ঝড় ঝঞ্ঝায় বাজে পোড়েনা, ভাঙ্গে না,
রক্ষণাবেক্ষণ করতে হয় না এ বাড়ি বা শঙ্খ তৈরি করার উদ্দ্যেশ্যে গবেষণার জন্য এবং
তার পরে তৈরি করার জন্য বিদেশি ঋণ নিতে হয় নি, বিদেশি প্রযুক্তি কিনতে হয় নি। অথচ
সিমেন্ট আর লোহার কাঠিতে তৈরি বাড়ি কয়েক দশকের মধ্যেই ভেঙে পড়ে হুড়মুড়িয়ে। সম্পাদক
মশাই যে সুযোগ দিলেন, এই সুযোগে সেই মানুষগুলোকে আমাদের শ্রদ্ধা জানালাম মনের
প্রণতি মিশিয়ে।
সেঁদরা
মাটির কাজ হয়। লেখক,
গবেষক দীপঙ্কর ঘোষ জানালেন তিনি এখানে গিয়ে মেদিনীপুরের পোড়ামাটির তুলসিমঞ্চ
দেখেছেন। তাঁর বইতে ছবিও দেখালেন। কিন্তু পোড়ামাটির তুলসিমঞ্চ কিন্তু মেদিনীপুরের
ঐতিহ্য। সেঁদরায় মাটির কাজ বেশ ভাল।
No comments:
Post a Comment