Showing posts with label ISI Ghilu Lab. Show all posts
Showing posts with label ISI Ghilu Lab. Show all posts

Tuesday, March 21, 2017

প্রাকৃত বাংলা স্বাস্থ্য ব্যবস্থা - বাংলার পরম্পরাগত চিকিৎসা ব্যবস্থা

সহায়তায় ইন্ডিয়ান স্ট্যাস্টিটিক্যাল ইনস্টিটিউটের ঘিলু ল্যাব
এটা আবার কি? আয়ুর্বেদ? নয় কেন? কেন প্রাকৃত বাংলা স্বাস্থ্য ব্যবস্থা?
সত্যি তো,আয়ুর্বেদ চিকিৎসা ব্যবস্থা ছেড়ে কেন গ্রাম্য প্রাকৃত চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে মাথা ঘামাল ওয়াটাগ, বঙ্গীয় পারম্পরিক কারু ও বস্ত্র শিল্পী সঙ্ঘ, কলাবতী মুদ্রা, কনকটি বোড়ো কৃষ্টি আফাত এবং আরও বেশ কিছু সংগঠন?
সঙ্গঠনগুলো থেকে তাত্ত্বিকভাবে আমরা মনে করি রোগ আঞ্চলিক - নির্ভর করে জীবনযাত্রা, দেহতন্ত্র, পরিবেশ, পেশা এবং ভূপ্রকৃতির ওপর। দূর দেশে কোন ওষুধ তৈরি হলে, সেটি যে বিশ্বজনীন প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে এই তথ্য আমরা বড় পুঁজির সঙ্গবাদমাধ্যমের প্রচারে মেনে নিতে বাধ্য হয়েছি। এলোপ্যাথির মতই আয়ুর্বেদ কেন্দ্রিয় শাস্ত্র নিদান নির্ভর। কিন্তু প্রাকৃত চিকিৎসা ব্যবস্থা প্রায়োগিকভাবে ভীষণভাবে আঞ্চলি জ্ঞান-প্রযুক্তি-সম্পদ-পরিবেশ নির্ভর, রোগী/অসুস্থতা কেন্দ্রিক এবং সংহত।
ঠিকই আয়ুর্বেদ নিয়ে কাজ করাটা খুব সোজা ছিল। তার একটা দেশজ-আন্তর্জাতিক ব্রান্ডিং আছে। বড় পুঁজির স্নেহধন্য। মানুষকে বোঝাতেই হত না কেন আয়ুর্বেদ? এবং আমাদের মত চাঁদা নির্ভর সংগঠনে এটা আশীর্বাদ হত, খাটনি কম হত, চরক শুশ্রুত বা বাঙালি ভগভট্টের সংস্কৃত নিদান তুলে দিলেই কেল্লা ফতে - দুবার প্রশ্ন করার সুযোগই থাকত না।
তাহলে? পরম্পরার প্রাকৃত চিকিৎসাটি বাংলার, ভীষণই রোগীকেন্দ্রিক। রোগ যদি আঞ্চলিক হয়, তা হলে সেই অঞ্চলেই তাঁর প্রতিষোধক প্রকৃতি দিয়ে রেখেছে। চিকিতসাকর্মীর দায় সেই অঞ্চলের নির্দিষ্ট ভেষজ, খণিজ বা প্রাণীজ উপাদানটি ব্যবহার করা। তাত্ত্বিকভাবে প্রাকৃত চিকিৎসা যদিও আয়ুর্বেদের ত্রিদোষ তত্ত্ব বা পঞ্চতত্ত্বের কাছাকাছি কিন্তু প্রায়োগিকভাবে অনেক স্বাধীনিতা পান প্রাকৃত চিকিৎসায়। চিকিৎসক/সেবকের দায় থাকে রোগীর বাড়ি বাড়ি গিয়ে সেবা দেওয়ার। আমরা জেনেছি, প্রাকৃত চিকিৎসক চেষ্টা করেন প্রাথমিকভাবে খাদ্য, তাঁর পরিবেশ/জীবনযাত্রা পরিবর্তন করে নিরাময়ের। সর্বশেষে ওষুধ প্রয়োগ। সব থেকে বড় জোরের যায়গা হল তাঁর জ্ঞানের বৈচিত্র্য - সমাজে সমাজে, সমাজের মধ্যে পরিবারে পরিবারে যা আদতে বড় পুঁজির আতঙ্ক - বেঁচে থাকাটাই হুমকির সম্মুখীন।
এই জ্ঞান আর প্রজ্ঞা সারা বাংলার বিভিন্ন সমাজে ছড়িয়ে রয়েছে। মেচ, রাভা, গারো, টোটো, রাজবংশী, সাঁওতাল, মুসলমান, কুর্মী সহ আরও বেশ কিছু সমাজের হাজার হাজার বছরের পরম্পরার প্রাকৃত চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে নথি করার কাজ করেছেন নারায়ণ মাহাত কয়েক বছর ধরে। পরম পত্রিকার গ্রাম্য চিকিৎসা ব্যবস্থা সংখ্যার আমন্ত্রিত সম্পাদক ছিলেন নারায়ণ। পারিবারিকভাবে এবং পেশাগতভাবে প্রাকৃতিক চিকিৎসা শিখেছেন তিনি। বহু প্রবন্ধ ছাড়াও তাঁর একটা বই দেশজ ভেষজতে তিনি গাছ-গাছড়া এবং রোগ-অসুখ নিয়ে বিশদে আলোচনা করেছেন তিনি।
এই বৈচিত্র্যময় জ্ঞানকে সঙ্গঠনগুলি এবারে তাদের বৈচিত্র্যকে সম্মান জানিয়ে প্রায়োগিকতার স্তরে নিয়ে যাচ্ছে। বলা দরকার এই জ্ঞান সমাজগুলিতে বহুকাল ধরে রয়েছে। শুধু শস্তা নয়, তাঁর এফিকেসির জোরে - যদি আপনারা গাঁইয়াদের অজ্ঞ, মুর্খ, অশিক্ষির না ভাবেন।
গত দুবছর ধরে, বাংলার পরম্পরার প্রাকৃত চিকিৎসা ব্যবস্থা নথি করণ করতে নারায়ণ মাহাতর নেতৃত্ব দিয়ে এসেছেন। সেই চেষ্টাটা রূপ পাচ্ছে আগামী ৮,৯,১০,১১ এই চারদিন কলকাতায় নারায়ণের নেতৃত্বে গ্রামীন স্বাস্থ্য বিধায়কদের(গ্রামীন পরম্পরার চিকিতসকেদের এই নাম দিয়েছেন তিনি) প্রথম বৈঠক। সামগ্রিকভাবে এই বিষয়টা নিয়ে আলোচনা হবে সেই চারদিনের বৈঠকে। কথা হয়েছে ইন্ডিয়ান স্ট্যাস্টিটিক্যাল ইনস্টিটিউটের গর্গ চট্টোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে চলা ঘিলু ল্যাব এই প্রক্রিয়ায় সামিল হবে।
ইতোমধ্যে শহরে এই চিকিতসাব্যবস্থা নারায়ণ আর বঙ্গীয় পারম্পরিকের সম্পাদক মধুমঙ্গল মালাকারের নেতৃত্বে পা রেখেছে - প্রাথমিকভাবে কয়েকজন বন্ধু আর তাদের বাড়িতে এই তত্ত্ব প্রয়োগ করে চিকিৎসার কাজ চলছে।
তো এর পরের কাজ বাড়ি বাড়ি গিয়ে সেবা দেওয়া। শুধু ওষুধ দেওয়া নয়, যদি প্রত্যোজন হয় তা হলে খাদ্যাভ্যাস, জীবনধারণের প্রক্রিয়া বদলে দিয়েও রোগারোগ্য হতে পারে। আদতে শুধু রোগ নিরাময় নয় সার্বিকভাবে স্বাস্থ্য ফেরানো প্রাথমিক কাজ - ঠিক যে জন্য গ্রাম বাংলা এলোপ্যাথি ছাড়াই বহাল তবিয়তে বেঁচে রয়েছে।
কলকাতায় এই চারদিনের শেষ দিন বন্ধুদের সঙ্গে আলোচনা আর কিছুটা চিকিৎসার পরামর্শ দান শুরু।
আরও অনেক কথা বলার রইল। আমরা কি করতে চলেছি, তাঁর বিশদ আগামী দিনে পরের কোন প্রকাশনায়।
সঙ্গের ছবিগুলি আজ, ৬ চৈত্র ১৪২৩ সালে দীপঙ্করদার বাড়িতে।
অরূপদা এই বিষয়টা নিয়ে ছবিও করছেন।