Showing posts with label Clive. Show all posts
Showing posts with label Clive. Show all posts

Sunday, August 11, 2013

কুঞ্জঘাটা এবং নন্দকুমার৩, Kunjaghata & Maharaja Nandakumar3

কুঞ্জঘাটায় মহারাজ নন্দকুমারের স্মৃতি নিয়ে আনন্দবাজার পত্রিকায় একটি চিঠি প্রকাশ হয়। সেটি তুলেদেওয়া গেল।((www.anandabazar.com/archive/1120128/28mur-letter.html))
বহরমপুর শহরের উত্তর দিকের শেষ প্রান্ত সৈয়দাবাদ-কুঞ্জঘাটা অঞ্চলে মহারাজা নন্দকুমার রোড থেকে পূর্ব দিকে প্রসারিত হয়েছে দুর্গানাথ লেন ওই দুর্গানাথ লেনে অষ্টাদশ শতকের প্রথম দিকে (প্রাক-পলাশি যুগ) মহরাজা নন্দকুমারের বাসভবন নির্মীত হয় তার অবশ্য কোনও অস্তিত্ব বর্তমানে নেই যদিও বহু পর্যটক ইতিহাস চেতনার টানে আজও সেখানে আসেন কিন্তু তাঁরা খুঁজে পান কেবল পুরাতন ইটের তৈরি একটি একটি ভঙ্গপ্রায় তোরণ ওই তোরণের উপর দিকে রয়েছে ভারতীয় প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের একটি স্মৃতি ফলক ওই ফলকে লেখা রয়েছে ‘Here Resided Maharaja Nandakumar in 1775 A.D’ ফলে পর্যটকরা হতাশ হয়ে ফিরে যান উল্লেখ্য, ইংরেজদের বিরোধিতা করার জন্য সাজানো মিথ্যা মামলায় দোষী সাব্যস্ত করে পরিকল্পিত ভাবে কলকাতায় অবস্থিত তৎকালীন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি ইলিয়াজা ইম্পের নির্দেশে মহারাজা নন্দকুমারকে প্রাণদণ্ডে দণ্ডিত করা হয় একদা ভারতে ইংরেজ বিরোধী ভারতীয় জাতীয় চেতনার বিকাশে নন্দকুমারের ফাঁসি গভীর রেখাপাত করেছিলমুর্শিদাবাদ যুগে যুগেনামে বহরমপুর থেকে সাম্প্রতিক কালে প্রকাশিত একটি গ্রন্থে বলা হয়েছে, কুঞ্জঘাটায় মহারাজা নন্দকুমারের বাসভবন নামে খ্যাত প্রাসাদটি সম্ভবত অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথম দিকে কুঞ্জঘাটা রাজপরিবারের রাজা সত্রাজিৎ রায়ের পুত্র জগচ্চন্দ্র নির্মিত তিনি মহারাজা নন্দকুমারের জ্যেষ্ঠ জামাতা নন্দকুমার কিছু দিন সেখানে বসবাস করেছিলেন

পরবর্তীকালে ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি কুমার দুর্গানাথের আমলে (১৮৪৩-১৮৯৩) রাজবাড়ির সম্মুখের দর্শনীয় অংশটি নির্মীত হয়। তবে একদা মহারাজা নন্দকুমার কুঞ্জঘাটা রাজবাড়ির যে অংশে বসবাস করতেন, সেই অংশটি ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দের ভূমিকম্পে ধ্বংস হয়ে যায়। ফলে প্রশ্ন উঠতে পারে, মহারাজা নন্দকুমারের বাসভবন কোনটি? ১৯৫৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি সাংসদ প্রয়াত অরুণচন্দ্র গুহের প্রশ্নের উত্তরে তৎকালীন কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী মৌলানা আবুল কলাম আজাদ উপশিক্ষা মন্ত্রী কে ডি মালব্য লোকসভায় (Document No. 6. Loksabha) এক বিবৃতিতে জানান, ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে মুর্শিদাবাদ জেলার কুঞ্জঘাটায় অবস্থিত মহারাজা নন্দকুমারের বাসভবন সম্পর্কে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষিত হলে ভারতীয় পুরাতত্ত্ব বিভাগকে সরজমিনে তদন্ত করে রিপোর্ট দিতে বলা হয়। রিপোর্ট অনুসারে কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী সংসদে বলেন, “কুঞ্জঘাটায় মহারাজা নন্দকুমারের বাসগৃহ বলে কথিত প্রাসাদের যে অংশটি এখনও অক্ষত আছে তা আদৌ মহারাজার বাসগৃহ নয়। বাসগৃহ বলে যা ছিল তা ১৮৯৭ ক্রিস্টাব্দের ভূমিকম্পে ধবংস হয়ে গিয়েছে। বাসগৃহের এমন কোনও অংশ অবশিষ্ট নেই যা স্মৃতিসৌধ হিসাবে সংরক্ষিত হতে পারে, অথবা মেরামত করা যেতে পারে। তবে সেখানে একটি স্মৃতিফলক স্থাপন করা যেতে পারে, যেখানে মহারাজার নাম সংক্ষিপ্ত জীবনী লেখা থাকবে। তা করা হয়েছে এবং রাজ্য সরকার তাতে সন্তুষ্ট।বিষয়টির সঙ্গে জাতীয় আবেগ জড়িত। তাই মহারাজা নন্দকুমারের বহরমপুরের বাড়ি নিয়ে ইতিহাসপ্রেমী মানুষ পর্যটকদের বিভ্রান্তি দূর করতে বিষয়টি উত্থাপন করা হল। প্রস্তাব, ‘পলাশি মনুমেন্ট’-এর আদলে কুঞ্জঘাটার ওই স্থানেমহারাজা নন্দকুমার স্মারকস্তম্ভনির্মাণে কেন্দ্র, রাজ্য, পুরাতত্ত্ব পর্যটন বিভাগের উদ্যোগী হওয়া জরুরি। নতুবানন্দকুমার স্মৃতিফলকটি অচিরেই হারিয়ে যাবে।  

কুঞ্জঘাটা এবং নন্দকুমার২, Kunjaghata & Maharaja Nandakumar2

নন্দকুমার ১৭৭২ সালে হেস্টিংসকে রেজা খাঁর খাজনা আদায় এবং তার দপ্তরের খাজনা তছরুপের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। হেস্টিংস সে বছর জুলাইতে মুরশিদাবাদে এসে রেজা খাঁকে বাংলা এবং সিতাব রাইকে বিহারের দেওয়ান থেকে পদচ্যুত করেন। নন্দকুমারের ছেলে গুরুদাসকে নিযুক্ত করেন মির জাফরের বিধবা, হেস্টিংসের আশ্রিতা,  মুন্নি বেগমএর নানান বিষয় নজরদারির এবং ব্যবস্থাপনা করার জন্য। ১৭৭৫এর মার্চ মাসে নন্দকুমার হেস্টিংসের বিরুদ্ধে মুন্নি বেগমের থেকে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ আনেন কাউন্সিলে। হেস্টিংসের প্রবল বিরোধী ফিলিপ ফ্রান্সিস, জন ক্লেভারিং এবং জর্জ মন্সনের সাহায্য চান নন্দকুমার। মুন্নি বেগমের সতপুত্র নবাব নিজাম মুবারকঊদ্দউল্লাকে সিংহাসনে বসাবার জন্য হেস্টিংস সে সময়ের মুল্যে ৩ লাখ ৫৪ হাজার ১০৫ টাকা ঘুষ নিয়েছেন(এই টাকা আজকের মুল্যে কত? অন্ততঃ সাদা চোখে একটা হিসেব করা যায়। তখন ভাল চালের মন ছিল ১ টাকা, আজ ২০০০ টাকা(মধ্যবত্ততো, তাই ন্যুনতম ৫০টাকা কিলো ধরে। ১০০, ১৫০ টাকা চালের হিসেবেই যাচ্ছিনা), অর্থাৎ ২০০০ গুণ - সে হিসেবে ৭০ কোটিরও বেশি) ।
এই অভিযোগ এই তিনজনের সামনে তোলেন নন্দকুমার। নন্দকুমার গভর্নর জেনারেলের কাউন্সিলে এই অভিযোগ আনেন। কাউন্সিল কড়া হাতে এর বিচার করতে চাইছে, বুঝে হেস্টিংস তার বিরোধিতা করেন, কেননা, কাউন্সিলে তার সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই। নন্দকুমারকে হেস্টিংস নিচ পশু হিসেবে বর্ণনা করলেন। এক সময় হেস্টিংস স্বীকার করে নেন যে তিনি মুন্নি বেগমের থেকে ফুর্তি(এন্টেরটেনমেন্ট) করার জন্য ১৫০০০ টাকা নিয়েছেন। কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত হয়, এই টাকাটা হেস্টিংসকে কোম্পানির খাজাঞ্চিতে জমা দিতে হবে।
হেস্টিংস এপ্রিলে নন্দকুমারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনেন। ৬ মে, বিচারপতি ল্যামিস্ট্রে এবং জন হাইড তার বিচার শুরু করে। তার বিরুদ্ধে জাল ও তছরুপের অভিযোগ আনাহয়। খুব জটিল এবং বৃটিশ আইন আর বিচারের নানান ফাঁকফোকরের সাহায্য নিয়ে জুন ৮-১৬, এই নয় দিন, এই বিচার প্রহসনে, হেস্টিংসের বন্ধু, সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি, এলাইজা ইম্পে নন্দকুমারকে ফাঁসির সাজা দেন। বিশ্বে এই প্রথম কোনও ব্যক্তি তছরুপের আর জাল করার দায়ে ফাঁসি গেলেন। নন্দকুমারের মৃত্যুর পর ছেলে গুরুদাস গৌড়পতি উপাধি পান। ১৭৬৯এ রাজা বাহাদুর। ১৭৯২তে তিনি মারা যান। কুঞ্জঘাটার বিপরীতে গোয়ালজানে নন্দকুমারের নাতি মহেন্দ্র জমিদারি স্থাপন করেন।

কুঞ্জঘাটা এবং নন্দকুমার১, Kunjaghata & Maharaja Nandakumar1

মুর্শিদাবাদের কুঞ্জঘাটার সঙ্গে, মহারাজা নন্দকুমারের নাম জড়িয়ে রয়েছে। নন্দ রাম সায়েস্তা খাঁ বাংলার সুবাদার থাকার সময় এই জমিদারি প্রতিষ্ঠা করেন। তার পুত্র সত্রাজিত রাই। তার পুত্র জগচ্চন্দ্র রাই। মুন্নি বেগমের সতপুত্র নবাব নিজাম মুবারকঊদ্দৌল্লার  দারোগা ছিলেন। মির জাফরের এন্তেকালের পর, বিপুল সম্পত্তির অধিকারী, মির জাফরের বিধবা স্ত্রী, মুন্নি বেগম ক্লাইভের পথানুগামী হন। নন্দকুমারের মেয়ে সুমনিকে জগচ্চন্দ্রকে বিবাহ করেন। সেই সুত্রে নন্দকুমারের সঙ্গে কুঞ্জঘাটার যোগ। সেখানে পরে একটি প্রাসাদও তৈরি করেন। তবে তা ধংস হয়ে যায়। প্রচার নন্দকুমারের পূর্বপুরুষ পলাশি কাণ্ডে সিরাজের পক্ষ নিয়েছিলেন। এর মধ্যে কতটা সত্যি? অন্ততঃ নন্দকুমারের জীবনের শেষ কয়েকটা বছর নিয়ে কবি কামিনী রায়ের (আপনারে লয়ে বিব্রত রহিতে আসে নাই কেহ অবনী পারের কবি) পিতা চন্ডীচরনএর নন্দকুমার তথ্য-উপন্যাসে এ বিষয়ে কোনও সূত্র নেই। তবে নন্দকুমার যে খুব ইংরেজ বিরোধী ছিলেন, তা তার জীবনী, জীবনএর কর্মকাণ্ড বলে না- পরের স্বাধীনতা আন্দলনের সময়ে যাই ধারণা তৈরি করা হোক না কেন।
(মহা)রাজা নন্দকুমার, তার সময়এর নানান কাগজপত্রে নানকুমার(অশিষ্ট উচ্চারনে, অন্ততঃ বিশ্বে ব্রিটিশ, ইয়োরোপীয়দের তুলনীয় কেউ নেই)। তিনি ক্লাইভের খুবই ঘনিষ্ঠ ছিলেন। তার ডাক নাম ছিল ব্ল্যাক করনেল। নন্দকুমার রানী ভবানির চরম শত্রু ছিলেন। ১৭৫১য় রানীর ছেলে রঘুনাথের মৃত্যুর পর তার জমিদারি দখল করার চেষ্টা করেন। রানী পরে তার কর্মী দয়া রামের সাহাজ্যে তা দখল পান। নন্দকুমার দয়া রামকেও প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু বিফল হন। তিনি হিজলি আর মুর্শিদাবাদের আমিল নিযুক্ত হন। ১৭৫৬য় নন্দকুমার ক্লাইভের সঙ্গে উকিল(দালাল) হিসেবে পাটনা যান। মির কাশিম একদা নন্দকুমারকে কারারুদ্ধ করেন এই ভেবে যে তিনি দিল্লির শাহ্‌ আলমের দালাল। তবুও তিনি ১৭৬৩র যুদ্ধে মির কাশিমের পক্ষ নিয়ে মির জাফরের বিরোধিতা করেন। ১৭৬৪তে শাহ আলম তাকে মহারাজা উপাধি দেন এবং বর্ধমান, হুগলী, নদিয়ার দেওয়ান হিসেবে নিযুক্ত করেন। ১৭৬৫তে তার পদে, বাংলার দেওয়ানরূপে মহম্মদ রেজা খাঁ নিযুক্ত হন।