নদীয়া
প্রায়-বাংলাদেশে চলে যাওয়া এই জেলার সদর ছিল একদা
বাংলার রাজধানী কৃষ্ণনগর। পলাশী চক্রান্ত সংগঠনের অন্ততম চরিত্র রাজা কৃষ্ণচন্দ্রর
রাজত্ব শহুরে বাঙালির জীবনে বড় মোড়। শান্তিপুর ডুবুডুবু নদে ভেসে যায় – এমন এক
মানুষ জন্মেছিলেন এই সহস্রাব্দে বাংলায় এই জেলায় যিনি শুধু বাংলাই নয় বিশ্বের
ইতিহাসে অন্যতম প্রধান নায়ক – নিজে কোনও কথা না বলে এক কলমও না লিখে মহাবতার – যে
যুগে টিভিসংবাদপত্রবেতার নেই, সেই যুগেই মাত্র ২৯ বছর বয়সেই বাংলার সাধারণের
হৃদয়েশ্বর – বাংলার তাবড় তাবড় ধনী মানুষ তাঁর ডাকে অতুল ঐশ্বর্য ছেড়ে আসছেন শুধু
তার আনুগামী হওয়ার জন্য – যিনি ক্ষমতার বিরুদ্ধে প্রথম রাজনৈতিক মিছিল করেছিলেন
হরে কৃষ্ণ স্লোগানে কাজীর বিরুদ্ধে। কয়েক হাজার বছর ধরে যে নীল বিশ্ব জয়
করেছে, যে নীলের ব্যবসায়িক নাম হয়েগিয়েছিল যে দেশে সে জন্মায়
সেই দেশের নামে ইন্ডিগো, এই জেলায় আবদান। আজ কলকাতায় যে বালিগঞ্জীয় উচ্চারণে কথা
বলি সেটি নবদ্বীপীয়া বাংলা। এই শহরের একটু পুরোনো যে কোনও সাধারণ মানুষের বাংলা
উচ্চারণ শুনলে শুধু থ নয় ত থেকে দ-য়ের মধ্যে যে কোনও কিছু হয়ে যেতে পারেন।
কৃষ্ণনগরের ঘুর্ণির মাটির পুতুল একদা বিশ্বজয়
করেছিল। বাংলার গ্রাম শিল্পএর ইতিহাসে খুব পুরোনো নয়, কিন্তু বাস্তবতায় ভাস্বর।
বাংলার গ্রাম শিল্পের কোনও পুতুলই বাস্তবতার কাছাকাছি নয়, তাঁকে একটু বেঁকিয়ে
চুরিয়ে তার ভেতরের স্বভাবকে বার করে আনার চেষ্টা করেছেন শিল্পী গোষ্ঠী। কিন্তু
কৃষ্ণনগর সবার আলাদা। যে জিনিসটি তৈরি করবে, তা যেন স্বাভাকিকের থেকে স্বাভাবিক।
শোনা যায় মাটির তৈরি ফলকে আসল ভেবে ঠুক্রোতে গিয়েছিল এক পাখি। এমত কৃষ্ণনগরের
মাটির কারিগরেরা ১৮৮৫তে পঞ্চম জর্জের সম্মানে ব্রিটেনে আয়জিত সাম্রাজ্যের শিল্প
প্রদর্শনীতে যে সব জিনিস বিক্রির জন্য নিয়ে যান, তা হাজার হাজার টাকায় বিক্রি হয়। আজও
ঘুর্ণির দোকানে দোকানে ঘুরলে এরকম বহু মডের দেখা যাবে যা দেখে হাঁ হয়ে যেতে হয়।
বিভিন্ন পেশার মানুষের এক একটি মূর্তির দাম একশ থেকে শুরু হয়ে হাজার টাকার ওপরে
যায়। জাতীয় পুরস্কার জয়ী এক শিল্পীর পুত্র ২০১০ সালে এই প্রতিবেদককে বলেছিলেন,
প্রণববাবুর একটা অর্ডারই দিতে পারছি না মশাই। নতুন আর্ডার আমরা নিচ্ছি নে। মনে
রাখতে হবে প্রণব মুখোপাধ্যায় তখন ইউপিএ২এর দৌর্দণ্ড প্রতাপ অর্থমন্ত্রী। তাঁরা তার
কাজই দিতে পারছেন না, আমরা মরণশীলরা তো কোন তুশ্চু।
কিন্তু যাঁরা ঘুরতে
ঘুর্ণি যাবেন তাদের জানিয়ে রাখি বাংলার আর একটি ঐতিহ্য চালচিত্রও আঁকা হয় এখানেই।
দেবী দুর্গার পেছনের চালির ওপরে আর এক্কেবারে মাথায় যেখানে শিব থাকেন তার নিচে যে
অর্ধ গোলাকার দীর্ঘ ছবির মালা থাকে তাই চালচিত্র। সেটি আঁকেন এখানকার শিল্পী। এ
বিষয়ে যোগাযোগ করতে পারেন রবি বিশ্বাসের সঙ্গে।
No comments:
Post a Comment