মোষের শিংএর শিল্প
এটাও বাংলার আনুপম শিল্প। হাওড়া-খড়্গপুর রাস্তায় কোলাঘাট
রেলস্টেশন বা বাস স্টপেজে কোলাঘাট সেতুতে নেমে বলতে হবে শ্রীকৃষ্ণপুরে যাব। প্রথমে
স্থানীয় বাস, তাঁর পরে রিক্সা বা হাঁটা পথ।
যদিও মোষের শিংএর কাজ বেশি হয় ওডিশায়, বাংলায় যে কাজ হয়
তাঁর গুণমান অতুলনীয়। অধিকাংশ চলে যায় বিশ্বের বাজারে। বাজার ভাল, বিক্রি ভাল। গ্রামীণ শিল্পের এর
থেকে আর বেশি কি চাই?
বিভিন্ন তৈজসপত্র থেকে ঘর সাজানো জিনিস, কী তৈরি হয় না
এই মোষের শিংএ দিয়ে। বেশ দামি আর বেশ শখের বলে এগুলির দাম বেশ বেশি। তাই দেশের
বাজারের তুলনায় বিদেশের বাজারে বিকোয় দেদার।
তবুও মুখ বদলের জন্য অনুপম কারিগরির এই সৃষ্টির কিছু
দ্রব্য বাড়িতে সাজিয়ে রাখতে পারেন। নতুন ভাবনা নতুন চিন্তা নতুন ধরণের সজ্জা দ্রব্য দেকতে
অসম্ভব নয়নভিরাম লাগবে বৈকী!
গালার পুতুল
কলকাতা থেকে দীঘা যে বাস যায় ভায়া
বাজকুল এগরা হয়ে অথবা কাঁথি
থেকে এগরা অথবা খড়্গপুর থেকে এগরা হয়ে ভাগবানপুর-বাজকুলের পথে বাস বা ট্রেকারে খড়ুই
বাজার। বাজারের পথ বেয়ে খড়ুই গ্রামের প্রখ্যাততম বৃন্দাবন চন্দ পুতুল
তৈরির অদম্য এবং শেষ কারিগর পরিবার। বৃন্দাবন অগ্রজ, শ্রীবাস দৃষ্টি খুইয়েছে চিরকালের জন্য। বাঙলার পারম্পরিক শিল্প বিকাশে তাঁর শরীরের অমূল্যতম অঙ্গ,
চক্ষুরত্নটি চিরকালের জন্য হারিয়েছেন,
এ অসাধারণ অবদানময় তথ্যটুকুও বাঙলার
সমাজে স্বীকৃতি পায় নি। শ্রীবাসের পরিবার আজ কর্মহীন।
ঐতিহ্যেস্থিত থেকে বৃন্দাবন চন্দের কাজে সূক্ষ্মতম অন্তর্লীন নিজস্বতা শিল্প
সংগ্রাহক-রসিকদের
অন্যতম প্রধান পাওনা। আজও তার কর্মে কলকাতার পশ্চিমি শিক্ষায় শিক্ষিত শিল্প নির্দেশকদের ছোঁয়া
লাগেনি। এই শিল্প-নিজস্বতা বৃন্দাবন, অদম্য বাঙলার গ্রামীণ সমাজ থেকেই অর্জন
করেছেন অননুকরনীয় পারম্পরিক অনপনেয় অনেককালের প্রাচেষ্টিক দক্ষতায় –অশিক্ষিতের পটুত্ব বাঙলার মধ্যবিত্তের প্রযোজনায় তৈরি
অশ্লীলতম বাক্যবন্ধশুধু। কলকাতার প্রখ্যাত বিদ্যালয়ে বৃন্দাবন আজও বাঙলার ঐতিহ্য-মন্ডিত শিল্পকে নিয়মিত নতুন প্রজন্মের
সামনে তুলে ধরার কাজ করে চলেছেন, নানান বন্ধুর উদ্যমেও কর্মশাল আয়োজন করেছেন রবীন্দ্রভারতী
বিশ্বদ্যালয়েও। গালাঋদ্ধ প্রামাণ্য চেহারার মুর্তি তৈরিতে আজও নানান প্রান্ত থেকে তিনি ডাক
পান। কিন্তু এই শিল্প তাঁকে বাঁচার রসদ দেয়
না। তাঁকে চাকরি করতে হয় কলকাতার কলকাতার এক ইংরেজিমাধ্যম বিদ্যালয়ে।
ভারতীয় বর্ণময় পারম্পরিক পুতুলকলার সঙ্গে খড়ুইএর গালার পুতুল গড়ার ধারার এক
সরলরৈথিক পরম্পরা রেখা অঙ্কন করা যায় স্বচ্ছন্দে। খড়ুইএর শিল্পীরা বাঙলার এই চিরাচরিত সম্পদের ধারকবাহক। নানান পিছুটান, অভাব, বঞ্চনা, অযাচিত অপমান সত্বেও,
তারা চিরাচরিত শিল্পবিদ্যা প্রদর্শণে
একাভিমানমুখী। মধ্যবিত্ত বাঙালি সমাজে পশ্চিমমুখীনতার আদেখলেপনা সত্বেও
সাধারণ এই তথ্যটি আজও দেশজভাবনায় উদ্বুদ্ধ শিল্পী, রসিকদের দেশের মাটির গভীরে পা রেখে
দাঁড়িয়ে থাকতে প্রাণিত করে।
No comments:
Post a Comment