সিদ্ধদের অনেকের নাম বৃত্তি বা পেশাগত - তন্তিপা, চমরিপা, তেলিপা, কুমোরিপা, ধোবিপা, কংপারিপা(কাঁসারি), মেদিনীপা(চাষী) ইত্যাদি।
বা তাদের চরিত্র থেকেও তাদের নাম হয়েছে লুইপা(মাছের পোঁটা খেতে ভালবাসতেন, হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর বেনের মেয়ে উপন্যাসে রূপা বাগদীর গুরু), থকণপা(ঠক ছিলেন বা মিথ্যা বলতেন), শালিপা(নেকড়ের ডাকে ভয় পেতেন), অজোকো(অযোগ্য), নগুণি(যার কোন গুণ নেই), কুক্কুরীপা(কুকুর প্রেমী), দিঙ্কপা(ঢেঁকিতে ধান কুটতেন), দারিকপা(বেশ্যার দ্বাররক্ষক) ইত্যাদি। এগুলো ব্যক্তিগত নাম কি না জানা যায় না।
এরা কেউ রাজ অনুগৃহীত বৌদ্ধ পন্থে যান নি। আগে বলেছি নিজেরা পেশাজীবি ছিলেন। কেউই প্রবজ্যা নেন নি - গোরক্ষপা - রাখাল, তন্তিপা - তাঁতি, শবরিপা - ব্যাধ, মীনপা - জেলে, চমরিপা আর পনহপা - চামার, খড়াপা - চোর, নারোপা - শূঁড়ি, ছত্রপা - ভিক্ষুক, ভন্ধোপা - চিত্রকর, অচিন্ত্যপা - কাঠুরে, মেকোপা - মুদি, কোটলিপা বা কোদালিপা - কোদাল দিয়ে মাটি কোপানো, যোগিপা - চণ্ডাল, গোরুরপা - ব্যাধ বা পাখমারা, পচরিপা - পিঠে বিক্রেতা, কিন্তলিপা - দর্জি, সরহপা - শর তৈরি করেন।
অধিকাংশই শূদ্র। বিরূপাই সাঙ্ঘারামে থাকতেন। মদ্য, মাংস খাওয়ার অভিযোগে তাকে তাড়ানো হয়। দিংকপা ছিলেন ব্রাহ্মণ পুত্র - কিন্তু সিদ্ধ হতে গিয়ে তাঁকে মদ বিক্রি করতে হয়েছে, ধান কুটতে হয়েছে। ব্রাহ্মণত্বের অহঙ্কার চূর্ণ করার জন্য এই 'হীন' কাজ করা জরুরি। রাজা ইন্দ্রপাল সিদ্ধ হওয়ার জন্য বেশ্যার দাস হয়েছেন - তার পরে তার নাম হল দারিকপা - বা দারোয়ান।
সিদ্ধদের গুরু
এরা দীক্ষা নিয়েছেন ডাকিনী বা যোগীদের থেকে। ওড্ডিয়ান রাজা ইন্দ্রভূতি আর তার বোন লক্ষ্মীঙ্করা। আচার্য পদ্মসম্ভব ইন্দ্রভূতির পুত্র। তিব্বতরাজ ঠি-স্রোং-দে-চান(৭৫৫-৭৯৭খ্রি)এর নেমন্তন্নে শান্তরক্ষিত এবং কমলশীলের সময়ে পদ্মসম্ভব তিব্বতে যান, সঙ্গে পত্নী মন্দরবাও।
এরা দীক্ষা নিয়েছেন ডাকিনী বা যোগীদের থেকে। ওড্ডিয়ান রাজা ইন্দ্রভূতি আর তার বোন লক্ষ্মীঙ্করা। আচার্য পদ্মসম্ভব ইন্দ্রভূতির পুত্র। তিব্বতরাজ ঠি-স্রোং-দে-চান(৭৫৫-৭৯৭খ্রি)এর নেমন্তন্নে শান্তরক্ষিত এবং কমলশীলের সময়ে পদ্মসম্ভব তিব্বতে যান, সঙ্গে পত্নী মন্দরবাও।
ইন্দ্রভূতি আর লক্ষ্মীঙ্করার গুরু ছিলেন কম্বলপা। সিদ্ধ অচিন্ত্যপার গুরুও ইনি। অচিন্ত্যপার তিন শিষ্য গোরক্ষপা, সমুদপা, চৌরঙ্গপা। কিন্তু এই কম্বলপাকে দীক্ষা দিয়েছিলেন কে? তিনি ডাকিনী - তাঁর নিজের মা - রাজরানী নামেই খ্যাত - কিন্তু সেটি তার আবরণ। প্রাসাদের বাইরে ডাকিনীচর্যাই ছিল সাধনা। পুত্রকে রাজকাজে বিমুখ করে নিয়ে যান সাধনার পথে।
তন্তিপা ও কাহ্নপার গুরু জলন্ধরিপা। তার দীক্ষাও ডাকিনীর কাছে। কুক্কুরীপা দীক্ষাও ডাকিনীর সঙ্গে। মণিভদ্রা ছিলেন কুক্কুরীপার শিষ্যা। দিংকপা ও দারিকপার গুরু লুইপা - তার দীক্ষাও ডাকিনীর কাছে। ভিক্ষপা, ধর্মপা কন্তলিপাএর শিক্ষা ডাকিনীর কাছে। চুরাশি জনের মধ্যে অন্তত কুড়ি জনের দীক্ষাদাত্রী ডাকিনী।
এই ডাকিনীদের দীক্ষা দেওয়ারে প্রধান শর্ত হল জাতপাতের ধারণা ভোলা, শ্মশানে-মশানে থাকা, ভাল মন্দ খাবারের অভ্যেস ছেড়ে পচা ও বাসি খাবার খাওয়া।
সিদ্ধাদের সময় পাল আমলে নালন্দা, ওদন্তপুরী, বিক্রমশীলা, সোমপুরী ইত্যাদি বিশাল বিশাল বৌদ্ধ ধর্ম কেন্দ্র ছিল। কিন্তু সেই সময়ে সিদ্ধরা শ্মশানে, শুঁড়ি খানায়, পথের ধারে বসে বা নিজেদের জীবিকার স্থানে বসে দর্শনচর্চা করতেন।
এরা বৌদ্ধ ছিলেন না কারণ বৌদ্ধ ধর্মে নারীর সমানাধিকার কখোনোই ছিল না। দীক্ষা দেওয়ার সময় ডাকিনীদের প্রথম কথা ছিল - যে কাজ করছ, তা ছেড়ো না, বরং আরও ভাল করে কর - তারি মধ্যে সত্যের সন্ধান কর।
সূত্রঃ চুরাশি সিদ্ধর কাহিনী, অলকা চট্টোপাধ্যায়
No comments:
Post a Comment