এই প্রত্যেক স্তরে প্যাক্সটনেরা ১ থেকে ৫% কমিশন নিতেন – এতে তাঁদের বিপুল লাভ হত। ডাচেরা বাংলা সুবা(পাটনা) থেকে সোরা কিনত প্যাক্সটনের মাধ্যমে। তাঁর কাজের দক্ষতায় ডাচেরা এতই প্রভাবিত হয়ে পড়ে যে তাঁরা তুলা কেনার বরাতও তাকে দেয়।
কিন্তু তাঁদের ব্যবসায় ঝামেলা দেখা দিল। ১৭৮০তে ইওরোপের ব্রিটিশ-ডাচ যুদ্ধের প্রভাবে ১৮৮১ সালে হেস্টিংস, ডাচ চুঁচুড়া দখল করায়। প্যাক্সটনদের মাথাব্যথা হল তাঁর ক্লায়েন্টরা ডাচেদের ট্রেজারিতে যে বিপুল ৬২৯৩৯১ সিক্কা রুপি বিনিয়োগ করেছে কি করে ফেরত নেওয়া যায়। যদিও বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে ব্যবসা ব্রিটিশ আইন অনুসারে বেআইনি, কিন্তু প্যাক্সটন ককরেলের পৌঁছ ছিল বোর্ডস্তর পর্যন্ত। হেস্টিংস তাঁদের হয়ে লন্ডনে বোর্ডকে অনুরোধ করেন চুঁচুড়ার ডাচ সম্পদ বিক্রি করে প্যাক্সটনের ক্লায়েন্টদের অর্থ ফেরত দিতে এবং বলেন এই কাজের জন্য একটি বছর সময় লাগতে পারে। স্বভাবতই হেস্টিংসএর প্রস্তাবে কর্তারা খুশি হন নি। তাঁরা হেস্টিংসকে কড়া চিঠি দিয়ে জানা্ন এধরণের কাজে কোনো ওজর আপত্তি না শুনে, ক্ষতিপূরণ না দিয়ে এই কাজের সঙ্গে যুক্ত কর্মচারীটিকে বরখাস্ত করা হবে।
বরখাস্তের কড়া বার্তা পেয়ে ১৭৮৫ সালে তিনি মাস্টার অব দ্য মিন্ট পদ ছেড়ে দেওয়ার অনুমতি চান। প্যাক্সটনের ভাই আর্চিবল্ড লন্ডনে কোম্পনির ব্যবসা দেখতেন। কিন্তু প্যাক্সটন বুঝতে পেরেছিলেন লন্ডনে তাঁর নিজের উপস্থিতি প্রয়োজন। ঠিক হল কলকাতার ব্যবসা দেখবেন তাঁর অংশিদার ককরেল। পদত্যাগ করে তিনি ডাচেদের ট্রেজারিতে বিনিয়োগকৃত ১৫৯১৫০ সিক্কা টাকা উদ্ধার করতে সরাসরি আমস্টার্ডামে পাড়ি দেন। ডাচ ব্যাঙ্ক হোপ এন্ড কোং চুঁচুড়ায় ১৭৮১ সালে কাটা ৪৭০২৪১ সিক্কা রূপির বিল মিটিয়ে দেয়। সব অর্থ তিনি তাঁর ক্লায়েন্টদের মিটিয়ে দেন। লন্ডনে প্যাক্সটন, ককরেল এন্ড ট্রেলএর শাখা খোলেন, যাতে পরে আরও এক ব্যবসায়ী জন পামার যোগ দেবেন।
চার্লস ককরেল
এ প্রসঙ্গে প্যাক্সটনের অংশিদার চার্লস ককরেল সম্বন্ধে জেনে নেওয়া জরুরি। এই দুজনের যুগল বন্ধুত্বে প্যাক্সটন ককরেল ট্রেল সে সময়ের অন্যতম প্রধান এজেন্সি হাউস হয়ে ওঠে। তবে লন্ডনে চার্লস ককরেল ব্যবসায়ী হিসেবে যতটা না পরিচিতি, তাঁর থেকে বেশি পরিচিতি স্থপতিরূপে, তিনি আর তাঁর ভাই স্যামুয়েল পেপিজ ককরেল তাঁর জন্য সেজিনকোটে মুঘল স্থাপত্যে বাড়ি বানিয়ে দেন।
চার্লস ককরেলের ভাই জন ১৪ বছর বয়সে ১৭৬৩ সালে কলকাতায় আসেন কোম্পানির বাংলা সুবার প্রধান সেনাপতি রবার্ট বার্কারের সুপারিশে। সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়া জন্য। তিনি হেস্টিংসের অন্তরঙ্গ বন্ধু ছিলেন। পরে ককরেলরা ইংলন্ডে হেস্টিংসের বাড়ির কাছে সেজিনকোটে বাড়ি করবেন। লন্ডনে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি আমলের ইংলন্ডের প্রথা ছিল যে, বড় কর্তাদের বাড়ির কাছে কোম্পানির ছোট মেজ কর্তারা বাড়ি করতেন, বিবাহ সম্বন্ধও প্রতিষ্ঠিত আমলা পরিবারের মধ্যে হত যাতে সরকারি নানান সুযোগ সুবিধে বেঁটে নেওয়া যায় নিজেদের মধ্যে। জর্জিনা গ্রিনের ভ্যালেন্টাইন ম্যানসন বিষয়ক গবেষণার সূত্রে জানতে পেরেছি, জনের বোন এলিজাবেথ হেস্টিংসের ব্যক্তিগত সচিব এবং ফোর্ট উইলিয়মে সেনাবাহিনীর খাদ্য সরবরাহের বরাত পাওয়া জন বেলিকে বিবাহ করেন। চার্লস ককরেলের প্রাক্তন ভাই-বউ শার্লট ব্লান্ট বিয়ে করেন চার্লস ভন ইমহোফ, হেস্টিংসের সৎ পুত্রকে। ফলে দেখা যাচ্ছে ককরেলের সরাসরি হেস্টিংস পর্যন্ত নাগাল ছিল।
চার্লস ককরেল ১৭৭৬ সালে কলকাতার সার্ভে দপ্তরে কাজ শুরু করেন। ১৭৮৪তে পোস্ট মাস্টার জেনারেল হন। এই পদে থাকেন ১৭৯২ পর্যন্ত। লন্ডনের বদলিয়ান গ্রন্থাগারে চার্লস এবং জন, এই দুই ভাইএর যে চিঠিপত্র আছে তাতে দেখা যায়, তাঁরা ফন্দি আঁটছেন কিভাবে ব্রিটিশ আইন এড়িয়ে ব্যবসায়ীদের ব্যক্তিগত ব্যবসার লাভ লন্ডনে পাঠানো যায়। যতদূর সম্ভব তাঁরা এই প্রস্তাব চার্লস প্যাক্সটনকে দেন। সেই বছরেই প্যাক্সটনের ব্যবসায় যোগ দেন ককরেল - দুজন প্রখ্যাত আমলা যুক্ত হয়ে এজেন্সি হাউস প্যাক্সটন, ককরেল এন্ড ট্রেল খোলেন।। নয়ের দশকের প্রথম দিকে তাকে হেস্টিংসের বিচারে টেস্টিমনি দিতে হয়। চার্লস ককরেল অবসর নেওয়ার পর কলকাতাতেই থেকে যান। নতুন চাকরি নেন নি; অবসরের পর প্যাক্সটন লন্ডনে ফিরে গেলে চার্লস কলকাতার ব্যবসা দেখার জন্য থেকে যান।
No comments:
Post a Comment