যদিও এটা এই প্রবন্ধের বিষয় এটা নয়, তবুও তাঁর প্রশাসনিক বিভাগের কথা বলা যাক,
সরকার/জেলা – ভারপ্রাপ্ত কর্মচারী বা শিকদারিশিকদারান(শাসনকর্তা)।
আমিন – জমি পরিমাপ বিশেষজ্ঞ এবং জমি-সংক্রান্ত বিচারক
ফোতেদার – রাজস্ব জমা আধিকারিক(ট্রেজারি অফিসার)
কানুনগো – জমিজমার আইনকানুন বিশেষজ্ঞ
কারকুন – জমিজমা ও ফসল ইত্যাদির বা রাজস্ব আদায়ের হিসেবরক্ষক। দুজন কারকুন
চৌকিদার – পাহারাদার
গ্রামপঞ্চায়েত – বিচারব্যবস্থা ইত্যাদি পরিচালনা করত
শের শাহের আগে গোটা গ্রামে রাজস্ব ধার্য হত। শের শাহ গ্রামের দেয় মোট খাজনা,
কেননা এই প্রশাসনিক বিভাগ, যার ওপর ভিত্তি করে রাজস্ব আদায়ের কাঠামোটা দাঁড়িয়ে
থাকে, সেটা জানা জরুরি। এবং এই কাঠামোটা আগামী দিনে মুঘল পাদসাহীর পাদসাহরা বিশেষ
করে আকবর অনুসরণ করবেন।
শের শাহ সাম্রাজ্যকে প্রশাসনিকভাবে তিনভাগে ভাগ করেছিলেন।
১। কিল্লা বা সামরিক সাসনকর্তা শাসিত অঞ্চল – যেমন লাহোর, পাঞ্জাব, আজমীর,
মালব, প্রভৃতি। এখানকার শাসনকর্তার নাম ছিল কিল্লাদার।
২। ইকতা বা প্রদেশ – এই অঞ্চলকে মুঘল যুগে সুবা বলা হত। আজকের প্রদেশের মত। শাসনকর্তাদের
বলা হত ইকতাদার।
৩। বাংলা প্রদেশের জন্য বিশেষ এক শাসনব্যবস্থা।
১৫৪৬ সালের খ্রিষ্টাব্দের পর শেরসাহ বাংলায় আর কোন ইকতদার নিয়োগ করে নি।
বাংলাকে ৪৭টি সরকারে ভাগ করে প্রত্যেকভাগে একজন করে শিকদার নিয়োগ করেছিলেন। সরকার
অনেকটা স্বাধীন রাজ্যের মত ছিল, কিন্তু কেন্দ্রের অধীন। সরকারে শাসক শিকদারের
উর্দ্ধতন রাজ কর্মচারীর নাম ছিল কাজী ফজিলত। তাঁর কাছেই শিকদারেরা খাজনা জমা দিতেন।
কাজী ফজিলত সমস্ত খাজনা জড়ো করে একত্রে দিল্লীতে পাঠাতেন।
ইকতার রাজস্ব আদায়ের কৌশল আলোচনা করতে সে সময়ের ইকতার কাঠামো এবং সরকারী
কর্মচারীদের পরিচয় বর্ণনা করা হল-
ইকতা/প্রদেশ – শাসনকর্তা বা ইকতাদার
সরকার/জেলা – ভারপ্রাপ্ত কর্মচারী বা শিকদারিশিকদারান(শাসনকর্তা)।
মুনসেফিমুনসিফান(বিচার কর্তা)
পরগণা – (থানা) ভারপ্রাপ্ত কর্মচারী - শাসনে শিকদার আর বিচারে মুনসেফআমিন – জমি পরিমাপ বিশেষজ্ঞ এবং জমি-সংক্রান্ত বিচারক
ফোতেদার – রাজস্ব জমা আধিকারিক(ট্রেজারি অফিসার)
কানুনগো – জমিজমার আইনকানুন বিশেষজ্ঞ
কারকুন – জমিজমা ও ফসল ইত্যাদির বা রাজস্ব আদায়ের হিসেবরক্ষক। দুজন কারকুন
থাকতেন, একজন স্থানীয় ভাষায় অন্যজন ফারসি ভাষায় লিখতেন।
মৌজা/দেহাত/গ্রাম – শাসনের বা রাজস্ব আদায়ের সব থেকে ছোট একক। ভারপ্রাপ্ত কর্মচারী
পাটোয়ারি, এরা গ্রামের জমিজমা, ফলন ইত্যাদির হিসেব রাখতেন।
মুকদ্দম – গ্রামের মোড়ল, এরাই খাজনা আদায় করতেন চাষীদের থেকে।চৌকিদার – পাহারাদার
গ্রামপঞ্চায়েত – বিচারব্যবস্থা ইত্যাদি পরিচালনা করত
শের শাহের আগে গোটা গ্রামে রাজস্ব ধার্য হত। শের শাহ গ্রামের দেয় মোট খাজনা,
চাষীদের মাথা পিছু করে ভাগ করে দিলেন। মুকদ্দমের কাজ ছিল সেই খাজনা সরকারের পক্ষ
থেকে আদায় করা। তিনি চেষ্টা করতেন সব থেকে বেশিই কি করে আদায় করা যায়। শের শা ঠিক
রলেন গ্রাম নয় খাজনা ধার্য হবে ব্যক্তি চাষীর মাথাপিছু।
অবশ্যই এটা আদায় করবেন মুকদ্দম। তাকে একটা মুচলেকা দিতে হত। কিছু নগদও অর্থ
জামিন হিসেবে রাখতে হত। রায়তদের অধিকার ছিল মুকদ্দমের কাছে বা রাজস্ব দপ্তরে গিয়ে
রাজস্ব জমা দেওয়ার।
গ্রামে পাটোয়ারির নেতৃত্বে কারকুন সেই হসেব রাখত। সেই রাজস্ব জমা হত পরগনায়। সমস্ত
পরগনার রাজস্ব জমা জড়ো হয়ে ইকতারে চলে যায়। ইকতাদারেরা সেই জমা রাজস্ব দিল্লীতে
পাঠাতেন।
রাজস্ব শস্যে বা নগদেও নেওয়া হত। রাজস্ব কর্মচারীরা যখন গ্রামে নানান কারণে –
জমিজমার বিবাদ, জমি পরিদর্শন ইত্যাদির জন্য আসতেন, তাদের আহার থাকার ব্যবস্থা করতে
হত প্রজাদেরকেই।
মোটামুটি শের শাহ পাঁচ বছর ক্ষমতায় ছিলেন, তার পরিকল্পনার মাথা ছিল খুব পরিষ্কার।
আমরা পরমে দেখিয়েছি, তার মুদ্রা ব্যবস্থা আকবর গ্রহণ করেছিলেন, এখানেও দেখব তার ভূমিরাজস্ব
ব্যবস্থা ভারতের ইতিহাসে অন্যতম প্রধান পরিকল্পক আকবর গ্রহণ আর বিস্তৃত করেন।
সেটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাস।
No comments:
Post a Comment