প্যাক্সটন ককরেল ট্রেল কোম্পানি আর লন্ডনে সম্পদ প্রবাহ
সপ্তবর্ষ যুদ্ধের পর ১৭৬৪ সালে উইলিয়ম প্যাক্সটন রয়্যাল নেভি থেকে অবসর নেন এবং হেস্টিংসের পারিবারিক বন্ধু জন স্টুয়ার্টের মাধ্যমে ক্লাইভের শংসাপত্র নিয়ে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির এক জাহাজে প্রাইভেটিয়ারিংএর কাজ শুরু করেন। উত্তমাশা অন্তরীপ থেকে শুরু করে বিভিন্ন এশিয় বন্দরে ব্যবসার মালপত্র লন্ডনে আনার কাজ করতে থাকেন। ১৭৭২ সালে প্যাক্সটন, কলকাতায় জর্জ কোলব্রুকের এজেন্ট হিসেবে এসেসির কাজ শুরু করেন। জর্জ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির চেয়্যারম্যান থাকার সময় ১৭৭৩এর রেগুলেটিং এক্ট আনার পূর্ব মুহুর্তগুলোতে কোলব্রুক কোম্পানির শেয়ার নিয়ে ফাটকা খেলতে(ইনসাইডার ট্রেডিং)গিয়ে, গাঁজা আর খনির ব্যবসাতেও সর্বস্বান্ত হন। কোলব্রুকের ব্যবসা পতন হওয়ায় প্যাক্সটনএর জীবনেও দুর্দশা নেমে আসে।
নতুন জীবন শুরু করতে জন স্টুয়ার্টের পরামর্শে লন্ডনে এসেসির পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। কোম্পানির প্রাক্তন ডিরেক্টর জেমস ককবার্ন, জেমস স্টুয়ার্টের আত্মীয় বেঙ্গল কাউন্সিলের সভ্য উইলিয়ম ব্রাইটওয়েল সামারএর সহায়তায় ১৭৭৪তে প্যাক্সটন হেস্টিংসের অধীনে বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির অ্যাসে মাস্টার হিসেবে জীবন শুরু করেন। ফিলিপ ফ্রান্সিসের মুদ্রা সংস্কারের পরিকল্পনা অনুসারে চার্লস লয়েডের পদে ১৭৭৬ থেকে ১১৭৮ পর্যন্ত বাংলার ট্যাঁকশাল প্রধান হন প্যাক্সটন।
এই নতুন কাজে কোম্পানি বাণিজ্যে বাংলা থেকে ইওরোপে সম্পদ প্রবাহে তাঁর ভুমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। ব্রিটিশ উপনিবেশে মোগল আমল থেকে চলে আসা সিক্কা রূপো টাকা প্রচলনের একমাত্র অধিকারী আমলা ছিলেন আমলা প্যাক্সটন। সময়টা অপেক্ষা করছিল প্যাক্সটনের পরিকল্পনার রূপায়নের জন্যই যেন। বাংলা তথা ভারতে কোম্পানির একচেটিয়া ব্যবসার পাশাপাশি ব্রিটিশ কোম্পানিতে চাকরি করা আমলারা অথবা প্রাক্তন আমলা ব্যবসায়ীরা যাদের কোম্পানির খাতায় ইন্টারলোপার্স বলা হয়েছে এবং ততকালীন ব্রিটিশ সাহিত্যে নবোব বলে গালি দেওয়া হয়েছে, ব্যক্তিগত ব্যবসার লাভ লন্ডনে নিয়ে যেতে চাইছিলেন, কোম্পানির কড়া নজরদারি আর একচেটিয়া সনদের বাইরে থেকে।
প্যাক্সটন আর ককরেল, আইনের ফাঁদে পড়া ব্যবসায়ী নবোবদের উদ্ধার করতে বিশদ পরিকল্পনা করেন কিভাবে লাভের কড়ি লন্ডনে পাঠানো যায়(সেসময় পৃথিবীর চারটে শহর ছিল হিরে ব্যবসার কেন্দ্র – গোয়া, আমস্টার্ডাম, লিসবন আর লন্ডন। হিরে ব্যবসা কোম্পানির একচেটিয়া সনদের বাইরে ছিল। আমলা আর ইন্টারলোপার্সদের লন্ডনে তাঁদের ব্যবসা উদ্বৃত্ত লাভ পাঠাবার একটা সাধারণ পদ্ধতি ছিল গোয়ার হিরের বাজার থেকে হিরে কিনে লন্ডনে পাঠানো – সেটি কোম্পানির ভারতে ব্যবসার প্রথম যুগ থেকেই ঘটত। কিন্তু পলাশীর পরে গোয়া থেকে এই ব্যবসা অচিরেই মাদ্রাজে সরে আসে।
কোম্পানির বড় আমলারা যেমন টমাস পিট(প্রধানমন্ত্রী উইলয়ম পিটের ঠাকুর্দা) ১৭০২ সালে মাদ্রাজ থেকে তাঁর ব্যবসা উদ্বৃত্ত অর্থ ২৪ হাজার পাউন্ড {তখনকার দিনের ২০ লক্ষা টাকা। সেই পরিমান কত ছিল একটা অনুমান করা যাক - তার ১০০ বছরেরও বেশি পর ১৮২০ সালে মূল্যবৃদ্ধির কলকাতায় মাসে ২ টাকা রোজগার করে নিজেকে স্বচ্ছল ভাববেন ঠাকুরদাস, বিদ্যাসাগরের বাবা} হিরে কিনে লন্ডনে পাঠান। তার পর থেকেই লন্ডনে তাঁর ডাক নাম হয়ে যায় ডায়মন্ড পিট। কিন্তু হিরে বা কোম্পানির ব্যবসার বাইরে থাকা অন্যান্য লাক্সারি দ্রব্য কিনে পাঠানো খুব ঝুঁকির কাজ হয়ে যেত কেননা এই বাজারটা নিয়ত্রণ করত রত্ন ব্যবসায়ী ইহুদিরা। এই লাক্সারি পণ্যগুলির দামও সবসময় ঠিক পাওয়া যেত না। তাই সরাসরি লন্ডনে নগদী অর্থ পাঠানোই কাম্য ছিল। সেই পথ খুঁজছিলেন ব্যক্তিগত ব্যবসায়ীরা)।
No comments:
Post a Comment