বাঙ্গালার ইতিহাস- প্রথম
... রামপাল ও তাঁহার সামন্তগণ নৌকামেলক দিয়ে ভাগীরথী পার হয়েছিলেন(তার প্রায় কয়েকশ বছর পরে এইভাবে আওরঙ্গজেবের সেনাপতি মীর জুমলা আর সুজা এইভাবেই গঙ্গা বা অন্যান্য নদী পার হয়েছেন)। রামচরিতের টীকা হইতে কোন স্থানে রামপালের সহিত কৈবর্ত্ত-রাজের যুদ্ধ হইয়াছিল, তাহা বুঝিতে পারা যায় না; তবে ইহা স্থির যে, বরেন্দ্রভূমির দক্ষিণ-পশ্চিমাংশে কোনও স্থানে যুদ্ধ হইয়াছিল। কৈবর্ত্ত রাজ ভীম যুদ্ধকালে জীবিতবস্থায় ধৃত হইয়াছিলেন। অন্য একস্থানে লিখিত আছে যে ভীম হস্তি পৃষ্ঠে ধৃত হইয়াছিলেন। কৈবর্ত্তরাজ ধৃত হইয়াছে শুনিয়া রামপালের সেনাগণ উৎসাহিত হইয়াছিল। ভীম ধৃত হইলে কৈবর্ত্ত-সেনা পরাজিত হইয়া পলায়ন করিয়াছিল। রামপাল যুদ্ধারম্ভে ভীমের রাজধানী ডমরনগর ধ্বংস করিয়াছিলেন। সন্ধ্যাকরনন্দী ডমরকে শত্রুপক্ষের রাজধানী বলিয়া উপপুর আখ্যায় অভিহত করিয়াছেন। যুদ্ধান্তে ভীম বিত্তপাল নামক জনৈক কর্ম্মচারীর তত্ত্বাবধানে অবরুদ্ধ হইয়াছিলেন। পরাজিত কৈবর্ত্ত-সেনা হরি নামধেয় জনৈক নায়ক কর্তৃক একত্র হইয়াছিল। হরির সহিত যুদ্ধে রামপালের পুত্র(সম্ভবত রাজ্যপাল) বীরত্ব প্রকাশ করিয়া তাঁহাকে পরাজিত করিয়াছিলেন। যুদ্ধান্তে হরি ধৃত হইয়া ভীমের সহিত নিহত হইয়াছিলেন। ইহার পরেই বোধহয় সমগ্র বরেন্দ্রভূমি রামপালের অধিকৃত হইয়াছিল। রামপাল ভীমের সেনাগণকে নিজের সেনাবাহিনীতে নিযুক্ত করিয়াছিলেন। বিদ্রোহদমনান্তে রামপাল গঙ্গা ও করতোয়ার মধ্যে রামাবতী নাম্নী একটি নূতন নগরী নির্ম্মাণ করিয়াছিলেন। শ্রীহেতুর চণ্ডেশ্বর ও ক্ষেমেশ্বর এই নূতন নগরীর উপযুক্ত স্থান নির্দ্দেশ করিয়াছিলেন। রামপালদেব এই নগরে জগদ্দলবিহার নামে একটি বিহার নির্ম্মান করাইয়াছিলেন। রামাবতী পাল-রাজবংশের শেষ রাজধানী এবং রামপালের কনিষ্ঠ পুত্র মদনপালের রাজ্যকালেও রামাবতী গৌড় রাজ্যের রাজধানী ছিল, খৃষ্টিয় ষোড়শ শতাব্দীতেও রামাবতী নগরী বিদ্যমান ছিল, কারণ আবুল ফজল প্রণীত আইনিআকবরীতে রামৌতি নগরের উল্লেখ আছে(আমাতি নামে দক্ষিণ দিনাজপুরে ঐ গ্রামটির নাম হয়েছে)।
স্থান নামের টীকাঃ পীঠী দক্ষিণ মগধের(গয়া) প্রাচীন নাম। দেশাবলীতে পীঠীঘট্টা নাম পাওয়া যায়, হয়ত এটা গঙ্গা বা অন্য কোন নদীর তীরে অবস্থিত বোঝা যায়। সামন্তচক্রের নামমালায় প্রথমে পীঠীর নাম উল্লেখ হয়েছে। মূল শ্লোকে পীঠীপতি বন্দ্যো উপাধিতে অভিহিত হয়েছেন। গৌড়েশ্বরের সামন্তচক্রের প্রধান ছিলেন ভীমযশঃ। নগেন্দ্রনাথ বসুর মতে কোটাটবী ওডিসার জঙ্গলময় স্থান, আইনিআকবরীতে কটকের অন্তর্গর কোটদেশ বলা হয়েছে। দণ্ডভূক্তি মেদিনীপুর জেলার দক্ষিণে অবস্থিত। বালবলভী মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদের বক্তব্য বালবলভী বগড়ী, কিন্তু এ বিষয়টি প্রমাণিত হয় নি। দেবগ্রাম যে নদীয়ায় অবস্থিত ছিল তা বলা মুশকিল এই নামে প্রচুর গ্রাম আছে। অপারমন্দারের নাম মন্দারণ বলছেন নগেন্দ্রনাথ বসু, কিন্তু লেখক নিঃসন্দেহ নন। কুজবটীর অবস্থানও পাওয়া যায় নি। তৈলকম্প অর্থাৎ পুরুলিয়ার তৈলকুপি। উচ্ছালের অবস্থান আজও পাওয়া যায় নি। ঢেক্করী হল উত্তররাঢের ঢেকুরী। কৌশাম্বী হল রাজসাহীর কুসুম্বা। হুসেন শাহের পুত্র নসরত শাহের একটা মসজিদ আছে।
No comments:
Post a Comment