একবার নবদ্বীপের একজন গোঁসাই শ্রীহট্টে গিয়াছিলেন। ইনি পদাবলী কীর্ত্তন করিতে পারিতেন। বোধহয় ভাগবতেওও কিছু দখল ছিল। বাহিরে বৈষ্ণবের আচরণীয় তিলক কণ্ঠি প্রভৃতি ধারণ করিতেন। ব্রাহ্মণ বলিয়া উপবীতও ছিল। কিন্তু জাতটাত মানিতেন না। বৈষ্ণব গোঁসাইরা নিরামিষাশী। এই গোঁসাই ঠাকুর দেখিতে যেমন সুপুরুষ ছিলেন ভিতরেও তেমন সৌখিন ছিলেন এবং রূপের অনুরূপ নাগরিক প্রবৃত্তি ও ভোগলিপ্সাও ছিল। ...গোঁসাই ঠাকুর কিন্তু সুযোগ পাইলে মাছ মাংস ছাড়িতেন না।
...অন্ত্যজ জাতিরা বন্য এবং গৃহপালিত উভয় জাতীয় শূকরের মাংসই স্বচ্ছন্দে ভোজন করে। কিন্তু বন্য বরাহ শিকার হইলে শক্তিমন্ত্রে দীক্ষিত ব্রাহ্মণ কায়স্থ বৈদ্য প্রভৃতিও সুযোগ পাইলে ইহার উপর ভাগ বসাইতে ছাড়িতেন না।
শ্রীহট্ট শহরে মাঝে মাঝে শাক্ত ভদ্রলোকদিগের বাড়ীতে বন্য বরাহ মাংস আমদানী হইত। বন্য বরাহের মাংস অতিশয় সুস্বাদু, কোমল ও স্নেহযুক্ত। এই গোঁসাই ঠাকুরের শ্রীহট্টে অবস্থান কালে একবার আমার জেঠতুত ভাই কতকটা বরাহ মাংস সংগ্রহ করিয়া আনেন। আমার পিতৃকূল বৈষ্ণব হইলেও মাতৃকূল ঘোর শাক্ত। আমার মাতামহীর পিত্রালয়ে এককালে রীতিমত মদ চোলাই হইত। ইংরেজের আবগারী বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হইবার পরেও একেবারে সেখানে এ কাজ বন্ধ হয় নাই। সুতরাং মা এ মাংস রাঁধিতে কুণ্ঠিত হইলেন না।
তবে বাবাকে লুকাইয়া এ কাজটা করিতে হইল। গোঁসাই ঠাকুর বন্য বরাহের সন্ধান পাইয়া তাহা আস্বাদন করিবার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। আমার জেঠতুতো ভাই মাকে আসিয়া সে কথা বলেন। মা প্রথমে ব্রাহ্মণ সন্তানকে নিজের রান্না খাইতে দিতে রাজি হন নাই, বোধহয় শেষে হইয়াছিলেন। ...অথচ আমার মা বর্ণজ্ঞান লাভ করেন নাই।
No comments:
Post a Comment