(বাংলা কেন সামন্ততান্ত্রিক নয়)
একদিন বিকেলবেলা রজ্জাক স্যারের কাছে গিয়ে বিষয়টি উত্থাপন করলাম। বললাম, স্যার বাংলাদেশেরে বর্তমান সামাজিক অবস্থান কোথায়? এটা আধা-সামন্ততান্ত্রিক সমাজ একথা সত্যি?
...বললেন, ইন দ্য স্ট্রিকটেস্ট সেন্স অভ দ্য টার্ম ইন্ডিয়াতে কোন ফিউডালিজম আছিল না। বেঙ্গলের কথা ত এক্কেবারে আলাদা। বেঙ্গলের কথায় পরে আইতাছি। তার আগে রেস্ট অভ দ্য ইন্ডিয়ার খবর লই।
ফিউডালিজম অইল একটা ক্লোজড সিস্টেম। বংশপরম্পরা একটা পরিবার স্থায়ী অইয়া একটা জায়গায় বাস করব। তার ধোপা, নাপিত, কামার, কুমার সব আলাদা। এক জায়গার মানুষ অন্য যায়গায় যাইবার পারব না। কাঁঠালের যেমন কোয়া, ফিউডাল সিস্টেমের সামন্তের জমির সঙ্গে সকলের তেমন সম্পর্ক। সামন্তরা অইল নিজের জমিদারিতে সমস্ত দণ্ডমুণ্ডের মালিক। রাজসভায় ঠিকমত হাজিরা দিতে পারলে আর যুদ্ধের সময় ঠিকমত সৈন্য পাঠাইবার পারলে এক্কেবারে সাত খুন মাফ। ইন্ডিয়াতে মোগল আমলের কথা ধরেন, জমিদারি এখানে বংশানুক্রমিক আছিল না। সম্রাট ইচ্ছা করলে জমিদারের পোলারে জমিদার নাও বানাইতে পারতেন।
আর যদি বেঙ্গলের কোথায় আইয়েন, তাহলে এক্কেবারে অন্য কথা বলতে অয়। পুরানা বাংলা পুঁথিতে দেখা যায় বাংলার বাণিজ্যবহর জাভা সুমাত্রা এইসকল অঞ্চলে যাওয়া-আসা করছে। যেখানে বাণিজ্য এইরকম সচল থাকে সেই সমাজটারে অন্য যা ইচ্ছা কইবার চান কন, কিন্তু ফিউডালিজম বলবার পারবেন না। ভইটফোগেলের হাইড্রলিক থিয়োরি বেঙ্গলের বেলায় এক্কেবারে খাটে না।
আমি বললাম, তা হলে বেঙ্গলের সমাজের নেচারটা কী?
স্যর বললেন, যা ইচ্ছা কন, কিন্তু ফিউডালিজম কইবার পারবেন না। ইন্ডিয়ার অন্যান্য প্রোভিন্সে যেটুকু ফিউডালিজমের চিহ্ন খুঁইজ্যা পাওন যায়, বেঙ্গলে তার ছিটাফোঁটা পাইবেন না। গ্রামগুলার ফরমেশন দেখলেই বুঝতে পারবেন। এইখান থেইক্যা বিহারে যান, দেখবেন সীন এক্কেবারে পাল্টাইয়া গেছে। ফিউডালের অবস্থানের চাইর পাশেগোটা গ্রামবাসীর বসবাস। বেঙ্গলে সেই সব আপনে পাইবেন না। আপনে কি মনসামঙ্গলের চাঁদ সওদাগরের কাহিনী পড়ছেন?
আমি বললাম, এক সময় বাংলা সাহিত্যের ছাত্র ছিলাম, সেই সুবাদে বাধ্যতামূলকভাবে পড়তে হয়েছে।
তা অইলে চাঁদ সওদাগরের কাহিনী আপনার জানা। বেবাক বাংলা সাহিত্যে এইরকম শিরদাঁড়ার মানুষ একটাও দেখছেন?
আমি বললাম, না, চাঁদ সওদাগরের মতো শক্তশালী চরিত্র বাংলা সাহিত্যে একেবারে বিরল। মাইকেলের মেঘনাদকেও চাঁদ সওদাগরের পাশে ম্লান দেখায়।
স্যর বললেন, চাঁদ সওদাগরের চরিত্রের এই যে ঋজুতা এইডা অইল সমুদ্র বাণিজ্যশক্তির প্রতীক।
আমি আমার মূল প্রশ্নে ফিরে গেলাম, উনারা(মকমরেড আবদুল হক) যে বলছেন, পূর্ববাংলা আধা-সামন্তবাদী আধা-উপনিবেশবাদী।
স্যর ঈষৎ বিরক্ত হয়ে বললেন, ওরা যদি গায়ের জোরে কইবার চায় আপনে কী করবেন, মারামারি করবেন নিহি?
No comments:
Post a Comment