ভারতীয় পাঠশালায় প্রযুক্তির পাঠদান
টোল অথবা পাঠশালা বন্ধের নিদানে সমালোচকদের যুক্তি ছিল এগুলো ইওরোপিয় বিদ্যালয়গুলোরমত প্রযুক্তি ভিত্তিক ছিল না। সে সময়ের বহু ভারতীয় প্রযুক্তির জন্য তাকিয়েছিলেন ইওরোপের দিকে। ওরিয়েল্টালিস্ট আর এংলিসিসিটদের আন্দোলনের সীমা কলকাতা ছাড়িয়ে বম্বে মাদ্রাজে পৌছেছে। কেউ এডাম অথবা লিটনারের সমীক্ষা খুলেও দেখেন নি। মাদ্রাজ আর পাঞ্জাবের দুটি সমীক্ষা Survey of Indigenous Education in the Madras Presidency in 1822-26 এবং G.W. Leitner-এর History of Education in the Punjab since Annexation and in 1882-এও সার্বজনীন সামাজিক শিক্ষার পরিবেশের বর্ণনা পাই।
মাদ্রাজ শিক্ষা সমীক্ষা থেকে পাঠদানের বিষয়গুলোর বর্ণনা তুলে দেওয়ার লোভ সামলানো গেল না। পুকুর খোঁড়া থেকে ধোবির কাজ শেখানোরমত হাজারো শিক্ষাদান করা হত পাঠশালাগুলোতে। মাদ্রাজের সমীক্ষায় পাওয়া ১২৪৯৮টি পাঠশালায় যে সব পাঠদানের উল্লেখ পাই, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে
Buildings, etc. বিষয়ে
stone-cutters, wood woopers (wood cutters), marble mine workers, bamboo cutters, chunam makers, wudders (tank diggers), sawyers brick-layers, metallurgy, iron ore collectors, copper-smiths, iron manufacturers, lead washers, iron forge operators, gold dust collectors, iron furnaces operators, iron-smiths, workers of smelted metal gold-smiths into bars horse-shoe makers, brass-smiths.
Textilesএ ছিল
cotton cleaners, fine cloth weavers, cotton beaters, coarse cloth weavers, cotton carders, chintz weavers, silk makers, carpet weavers, spinners sutrenze, carpet weavers, ladup or penyasees cot tape weavers, cotton spinners cumblee weavers, chay thread makers, thread purdah weavers, chay root diggers (a dye), gunny weavers, rungruaze, or dyers pariah weavers (a very large mudda wada, or dyers in red number), indigo maker, mussalman weavers, barber weavers, dyers in indigo, boyah weavers, loom makers, smooth and glaze cloth, men silk weavers.
Other craftsmenএর মধ্যে ছিল
preparers of earth for bangles, salt makers, bangle makers, earth salt manufacturers, paper makers, salt-petre makers, fire-works makers, arrack distillers, oilmen, collectors of drugs and roots, soap makers, utar makers, druggists.
Miscellaneousএ ছিল
boat-men, sandal makers, fishermen, umbrella makers, rice-beaters, shoe makers, toddy makers, pen painters, preparers of earth for washermen, mat makers, carpenters, washermen, dubbee makers, barbers, winding instrument makers, tailors, seal makers, basket makers, chucklers, mat makers(দ্য বিউটিফুল ট্রি, ধরমপাল).
এই সমস্ত প্রযুক্তিগত পাঠদানের বিষয়গুলো থেকে পরিস্কার ভারতের পাঠশালাগুলোতে তখন কী পড়ানো হত। ইওরোপপন্থী উচ্চমধ্যবিত্ত সাম্রাজ্যবন্ধু(বিশেষণ ব্রিটিশ জীবনীকার ব্লেয়ার ক্লিংএর) দ্বারকানাথ ঠাকুর, রামমোহন রায়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরেরমত প্রখ্যাতরা ব্রিটিশ প্রযুক্তিকেই সর্বরোগহর বটিকা ঠাউরেছেন।
ধরমপালের গবেষণায় দেখেছি ১৭৮৭ থেকেই ভারতীয় জ্ঞাণবিজ্ঞাণের নথিকরণের কাজ ব্রিটিশ বিশ্ববিদ্যলয়ের অধ্যাপকদের নজরদারিতে চলছে। সেগুলো পড়ছেন ইওরোপের বুদ্ধিজীবিরা(পাদপূরণ অংশ)। ধরমপাল সে সময়ের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচী বিশদে উল্লেখ করছেন(এই প্রবন্ধের শেষ অংশ)। মদ্যাসক্ত, বেশ্যাগমনে অকুণ্ঠ আর রিফর্মের নামে দেশজ পরিকাঠামো আর সিপাহি স্বাধীনতা সংগ্রামের আগ পর্যন্ত গ্রামীণ সংগ্রাম ধংসের কান্ডারী বাঙলার নবজাগরণের অগ্রদূতেরা ইওরোপের কোন জ্ঞাণ-প্রযুক্তি চেয়ে বাঙলার বিকাশ চেয়েছেন সেই প্রশ্ন এই প্রবন্ধসূত্রে তোলা গেল।
এডামের শিক্ষা সমীক্ষা
১৮৩৫এ শিক্ষা সমীক্ষা শুরু করেন পাদরি উইলিয়ম এডাম। বাঙলা তখন রিক্ত নিঃস্ব এক প্রদেশ। তখনও বেন্টিঙ্ক-মেকলে-বিদ্যাসাগর ত্রিভূজ বাঙলায় শহরভিত্তিক বিদ্যালয় পরিচালনার সরকারি দায়ের বিষয়টি সুপারিশ করে নি। এডাম সমীক্ষাটি করছেন এমন এক সময়ে যখন ছিয়াত্তরের মন্বন্তরেরমত অভিচারের ঘা ফুটে রয়েছে বাঙলার শরীরে। তার পরও বাঙলা-বিহারে গ্রামীণকৌম লাখো পাঠশালা সযত্নে লালন-পালন করতেন। বিস্তৃততম এই শিক্ষা ব্যবস্থার জেরে বাঙলার অর্থনীতি ছিল উদ্বৃত্ত। প্রযুক্তিতে স্বাবলম্বী। গ্রাম সমাজে বিদেশি পণ্যের, শিক্ষার চাহিদা ছিলনা। তখন(এবং আজও অনেকটা) গ্রামীণ জনগণ ছিলেন দেশিয় উত্পাদনের পাশে। ব্রিটিশ আমলপূর্বের গ্রাম বাঙলার বহুচর্চিত সাম্প্রদায়িকতা, জাতি বিভেদেরমত প্রায়স্বতঃসিদ্ধ বিষয়গুলোকে প্রমাণ অপ্রমাণের অন্যতম হাতিয়ার ১৮৩৫ থেকে ১৮৩৮এর পাদরি উইলিয়ম এডামের শিক্ষা সমীক্ষা।
কিন্তু মার্ক্সীয় গবেষকদের এডাম সমীক্ষাটি অস্বস্তিকর টাক – পরচুলোতেও ঢাকা পড়ে না। বিনয় ঘোষ একলাইনে সেরেছেন, পরমেশ আচার্য পাঠশালাগুলো নিয়ে রোমান্টিসিজমএর কঠোর সমালোচনা করেছেন। আচার্যমশাইকে দুহাততুলে সমর্থন করেছেন সুমিত, তনিকা সরকার। ইওরেপপন্থা থেকে দূরে সরে এসে ভারতপথিক ধরমপালজী অসম সাহসে দ্য বিউটিফুল ট্রি পুস্তকে এডামের সমীক্ষার তথ্য ব্যবহার করেছেন। বিহার সরকারের শিক্ষা নীতি ২০০৭এ এই রিপোর্ট আলোচনা করায় নতুন করে আবার সে এসেছে ফিরিয়া(সূত্রঃ Report of the Common School System commission, Govt. of Bihar, Patna)।
১৮১৮তে ভারতে ধর্মপ্রচারে আসেন ব্যাপটিস্ট মিশনারি উইলিয়ম এডাম। রামমোহন রায়ের ঘনিষ্ঠতম বন্ধুদের মধ্যে তিনি একজন। ইংরেজিবাদী মধ্যবিত্ত আর এই কাজের দাতা, কোম্পানির বিরাগভাজন হবেন জেনেও, এডাম সরকারকে নিদান দিলেন, বাংলার সার্বজনীন গ্রামীণ শিক্ষাদান পদ্ধতিকে অবিকৃত রেখে দেওয়ার জন্য।
উইলিয়ম এডামের শিক্ষা সমীক্ষার পেষাকি নাম Reports on the State of Education in Bengal 1836 and 1838। সরকারের অর্থ সাহায্যে ১ জুলাই ১৮৩৬ প্রথম(বাঙলার বিভিন্ন জেলায় প্রথাগত শিক্ষা পদ্ধতির হাল হকিকত আর তথ্যাবলী বর্ণনা), ২৩ ডিসেম্বর ১৮৩৬ দ্বিতীয় (রাজসাহী জেলার নাটোর থানার শিক্ষা পরিকাঠামোর লেখাজোখা), ২৮ এপ্রিল ১৮৩৮ তৃতীয় ও শেষ (মুর্শিদাবাদের একাংশ, গোটা বীরভূম, বর্ধমান, দক্ষিণ বিহার ও ত্রিহুতের শিক্ষা ব্যবস্থার সমীক্ষা এবং এডামের বিশ্লেষণ, সুপারিশ, আর সমীক্ষার ইতিটানন)- এই তিন দফায় সনাতন বাঙলা-বিহার সমাজের শিক্ষাদানব্যবস্থার তথ্য সংগ্রহের কাজ করেছেন।
No comments:
Post a Comment