(বাংলা যখন বিশ্ব সেরা - এ কথা বললেই ইওরোপমন্যদের গায়ে ছ্যাঁকা লেগে যাবে)
ভয়েজ টু দ্য ইস্ট ইন্ডিজএ গ্রোস লিখছেন, ‘রাধানগর সূতীবস্ত্র, রেশমী রুমাল ও উড়নির জন্য বিখ্যাত।’ বরানগরে ওলান্দাজ কুঠীতে মোটা নীলাম্বরী রুমাল তৈরি হত। নদিয়া, মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন আড়ং সূতি আর রেশমি বস্ত্রের জন্য বিখ্যাত ছিল। কৃষ্ণনগরের জমিদারির মধ্যে শান্তিপুর, বরণ প্রভৃতি স্থানে ইওরোপে রপ্তানির জন্য আড়ং গজিয়ে উঠেছিল। গ্রোস লিখছেন কাশীমবাজারের চারপাশের জমি উর্বর, লোকজন পরিশ্রিমী, নানা রকম শিল্প উৎপাদনে নিয়োজিত থাকে। মোটামুটি রেশম উৎপাদনের পরিমান ছিল বাইশ হাজার বেল(এক বেল = একশ পাউণ্ড রেশম)। কাশিমবাজারের তাঁতিরা তাসাতি বানাত, দেশের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর সূতির কাপড় এখানেই তৈরি হত। রেনেল বলছেন কাশিমবাজার বাংলা রেশমের সব থেকে বড় বাজার(কুমকুম চক্রবর্তী তার গবেষনায় বলছেন, এই অঞ্চল শুধু বাংলারই নয় অন্তত দেড়শ বছর ধরে কাশিমবাজার লিয়ঁ আর আমস্টার্দামের মাথায় চাঁটি মেরে এবং আরবি রেশমএর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পলাশীর আগে পর্যন্ত, ইওরোপের রেশম সরবরাহের প্রধান কেন্দ্র হয়ে দাঁড়ায়)। এখান থেকেই বাংলা রেশম রপ্তানি করে বিপুল অর্থ রোজগার করে। এখান থেকে ইওরোপে তিন থেকে চার লক্ষ পাউণ্ড রপ্তানি হত। গুজরাট বাংলার রেশমের ওপর অনেকটা নির্ভর করত(আর বাংলা নির্ভর করত গুজরাটি তুলোর ওপর)।
বস্ত্র বয়নে ঢাকা ছিল বিশ্ববিখ্যাত স্থান। মসলিনের ছিল বিপুল ব্যবসা। মসলিন মূলত এই সময় ইওরোপে যেত। ঢাকা সাদা মসলিন সব থেকে ভাল বুনত। ঢাকা শহত, তিতবাড়ি, জঙ্গলবাড়ি আর বাজেতপুরে সব থেকে ভাল মসলিন হত। ঢাকার কালোকোপা, জালালপুর, নারায়ণপুর, চাঁদপুর আর শ্রীরামপুরে মোটা কাপড় হত। চাষাদের মোটা কাপড় থেকে রাজকন্যাদের কাপড় তৈরি হত। স্ট্যাভেরিনাস সেই অমর উক্তি করে ছিলেন কুড়ি গজের বেশি কাপড়ও পকেটের তামাক কৌটোয় ভরে ফেলা যেত। ১৭৫৫/১১৬২তে লন্ডনের কর্পোরেটরা ঢাকা থেকে সরবতী, মলমল, অলবলি, তেরিন্দাম, নয়নসুখ, দুরিয়া, জামদানি ইত্যাদি মসলিন তৈরি করত। চট্টগ্রাম থেকেও কোম্পানি কাপড় কিনত মূলতঃ মোটা।
ঢাকার মসলিন মূলত সাদা হত। তাছারা কাপড়ের ওপর ছুঁচের আর এব্রয়ডারির কাজও হত। তার জন্যও ঢাকার খ্যাতি উত্তুঙ্গ ছিল। কোম্পানির হয়ে বহু নারী শ্রমক কাজ করত। এই কাজের জন্য ক্যাক্টরিগুলো থেকে ঢাকায় কাপড় পাঠাত কোম্পানি। সোনারূপো আর রেশমের ছুঁচের কাজ হত। কালীকিঙ্কর দত্ত বেঙ্গল সুবার প্রথমখণ্ডে বলছেন মহিলাদের এই সূচির কাজ ইওরোপে কাপড়গুলোকে আরও আকর্ষনীয় করেতুলেছিল। বাংলার মহিলাদের হাতের কাজ ইওরোপে বেশ সমাদর পেয়েছিল। বাংলার মহিলারা তাঁত টানা বাদ দিয়ে তাঁতের অন্যান্য নানান কাজে সরাসরি যুক্ত থাকতেন। চরকায় কাটা সুতো তারাই একমাত্র সরবরাহ করতেন। সে সময় বাংলার মহিলা শিশুরা প্রচুর রোজগার করতেন, যে অর্থ বাংলার গ্রামে ঢুকত – বাংলার মেয়েদের চাকরি বা পরাশোনার জন্য সমাজপতিদের ততটা মাথা ঘামাতে হত না।
বিজয়রামের তীর্থমঙ্গলে কালীন, শতরঞ্চি, চুলিচা, গালিচা, মাদুর, শীতলপাটির কথা আছে। সুজন রায় ভাণ্ডারীর খুলাসাতে শীতলপাটির কথা আছে। তাঁতে চট বোনা হত। চটে কার্চেট আর থলে হত্র। আইনি...তে বাংলার চটের উল্লেখ আছে। ঘোড়াঘাটে চটের কার্পেট হত। এগুলো বাংলার নিজস্ব বাজারেই বিক্রি হয়ে যেত।
(ক্রমশঃ)
(ক্রমশঃ)
No comments:
Post a Comment