আকবরের প্রশাসনিক ও রাজস্ব পরিকল্পনা
আকবর রাজত্ব পেয়ে তাঁর রাজত্বকে ১২টি সুবায় ভাগ করেন ১) কাবুল, ২) লাহোর, ৩) মুলতান, ৪) দিল্লি, ৫) আগ্রা, ৬) অযোধ্যা, ৭) এলাহাবাদ, ৮) বিহার, ৯) বাংলা, ১০) আজমীর, ১১) মালব, ১২) আহম্মদাবাদ। তাঁর শেষ জীবনে দাক্ষিণাত্য বিজয়ে আরও তিনটি সুবা তাঁর সাম্রাজ্যের অন্তর্ভূক্ত হয়েছিল, ১) আহমদনগর, ২) খান্দেশ, ৩) বেরার।
এবারে আকবরের দেওয়ানি বা প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা করা যাক।
তাঁর প্রথম দেওয়ান ছিলেন মুজাফর তুরমতি খান। তাঁর সহকারী হিসেবে প্রথম জীবনে কাজ করেছেন টোডরমল্ল। টোডরমল্ল প্রথমে গুজরাটের ভূমিজরিপ করে ভূমির উতপাদকতা অনুসারে রাজস্ব নির্ধারণ করেন। কিন্তু এই নীতি আকবর গ্রহণ নিলেন না।
আকবর গোটা সাম্রাজ্যকে ১৮২ পরগণায় ভাগ করেন(বাংলা-বিহার বাদ দিয়ে)। প্রত্যেক পরগনায় একজন করে রাজস্ব কর্মচারী থাকতেন। এদের পদ ছিল ক্রোরী। এদের দায় ছিল প্রত্যেক পরগনা থেকে এককোটি মুদ্রা রাজস্ব আদায় দিতে হবে। পরে বোঝা গেল এতে কৃষজকদের ওপর অত্যাচার বাড়বে। এই পরিকল্পনা বাদ দেওয়া হয়।
১৮৫২য় দেওয়ান হলেন টোডরমল্ল। টোডরমল্ল জরিপ করে উর্বরতা অনুসারে জমিকে চারটি শ্রেণীতে ভাগ করেন।
১) পোলজ – সারা বছর ধরে চাষের উপযোগী
২) পারৌতি – যে জমির উর্বরতা বৃদ্ধির জন্য কিছু সময় ফেলে রাখতে হয়।
৩) চাচর – যে জমিকে সারা বছর ৩।৪ বছর ফেলে রাখতে হয়।
৪) বানজর - খুব অনুর্বর, ৫।৬ বছর অনাবাদী ফেলে রেখে একবার চাষ করতে হত।
তিনি রাজস্ব আদায়ের তিনটে পদ্ধতি চালু করেছিলেন
১) গল্লাবক্স – সাবেক ভারতীয় রাজস্ব আদায়, জমির উৎপাদনের একতৃতীয়াংশ রাজস্ব। এই নিয়ম চালু ছিল কাবুল, কাশ্মীর, খাট্টায়। জমিতে ফসলের পরিমান মেপে দেখা হত না। অনুমানে শস্যের পরিমান স্থির করা হত। তারপরে নগদ অর্থে ঐ পরিমান মূল্য বিবেচিত হত। ঐ মূল্যের একতৃতীয়াংশ সরকার খাজনা হসেবে নিত।
২) জাবতি – বাংলা, বেরার, কুমায়ুন এবং খান্দেশ ছাড়া প্রায় কোন সুবাতেই জাবতি প্রথার চল ছিল না। জাবতি আসলে জরিপ ব্যবস্থা। এই নয়ম হল রায়তারি। যা চাষী বা রায়তের সঙ্গে সরকারের প্রত্যক্ষ খাজনা আদায়ের সম্পর্ক। জাবতি নিয়মে গ্রামের যে সকল জমিতে ফসল চাষ করা হয়েছে তার প্রত্যেকটিতে খাজনা ধার্য করা হত নগদ টাকায়। প্রত্যেক চাষের মরশুমে রাজস্ব কর্মচারীরা প্রতিটি জমির খসড়া তালিকা তৈরি করত। তাতে দখলকারের নাম, ফসলের নাম, জমির পরিমান ইত্যাদি লেখা থাকত। জমির পরিমানের সঙ্গে সরকারি দস্তুরে প্রকাশিত বিভিন্ন শস্যের নগদ অর্থে নিঘা প্রতি প্রদেয় রাজস্বের হার গুণ করে কৃষকের রাজস্বের পরিমান নির্ধারণ করে, তাকে ফসল কাটার আগেই তার প্রদেয় রাজস্বের পরিমান জানিয়ে দেওয়া হত।
ধরা যাক পাঞ্জাবের এক আখ চাষী তিন বিঘায় চাষ করেছে। দস্তুর মিলিয়ে দেখা গেল এক বিঘা আখ চাষের জন্য ঐ অঞ্চলের রাজস্ব হল ২২ দাম(দাম হল তামার মুদ্রা, ৪০ দামে ১ টাকা)। তাহলে চাষীটি তিন বিঘার জন্য সরকারকে খাজনা দেবে ৬৬ দাম মানে ১টাকা ২৬ দাম।
No comments:
Post a Comment