স্মৃতি কথা লেখার বয়স চলে এল। আমার যৌবন সুভাষময় বলা ঠিক হবে না, কিন্তু তাঁর অমেয় সান্নিধ্য পাচ্ছি। আলাপের আগে বইপাড়ার এক বইপোকা বন্ধুর কাছে দুটো গপ্প শোনা ছিল - সুভাষ মুখোপাধ্যায় বলেছিলেন প্রণাম নেওয়ার মানুষের সংখ্যা, তুই সম্বোধন করা মানুষের সংখ্যা দ্রুত কমছে, আর যতদূর সম্ভব দেজএর শ্রেষ্ঠ কবিতার বই হাতে নিয়ে স্বতঃসিদ্ধ ভঙ্গীমায় তিনি বলেছিলেন আমি কি তাহলে শ্রেষ্ঠ কবিতা সব লিখে ফেললাম? এবার কি অবসর?
---
১৯৮৮, ১৩৯৫।
আমার মা-বাবা বহুদিনের সিপিয়াইএর সদস্য। ততদিনে শ্রীপাদ অমৃত ডাঙ্গে সিপিআই থেকে অপসারিত। সিপিআইএর ভেঙ্গে এআইসিপি - পরে সিপিএম বিতাড়িত গৌরী আম্মা ইত্যাদিদের নিয়ে ইউসিপিআই হবে। বাংলায় সিপিআই তখন দৌর্দণ্ডপ্রতাপ বামমন্ত্রীসভায়। সেই প্রতাপ হাতে কলমে দেখেছি বছর ছিয়াশি সালে ঘাটালে, চন্দ্রকোণা টাউনে। যে এলাকার মসলিন এক সময় রপ্তানি হত কাঁহাকাঁহা মুলুক, সেখানে কংগ্রেস সমর্থনে দলীয় প্রার্থী সাহিত্যিক সত্য ঘোষালের নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিয়ে গ্রামে গ্রামে ঘুরছি ছোটছোট মিটিং করে। সেই প্রথম যৌবনে সিপিএমের অস্ত্র মিছিল দেখা, নির্বিচার রোজ পরোক্ষে খুনের হুমকি শোনা আর অল্পসল্প গায়ে হাত বুলোনোর মত করে মার খাওয়া। তখনও নারায়ণ চৌবের দুই মৃত পুত্রের একজন গৌতমদা আমাদের হিরো। পূর্ব ইওরোপে পড়তে যাওয়া গৌতমদার নানান গপ্প শুনছি।
১৯৮৮, ১৩৯৫।
আমার মা-বাবা বহুদিনের সিপিয়াইএর সদস্য। ততদিনে শ্রীপাদ অমৃত ডাঙ্গে সিপিআই থেকে অপসারিত। সিপিআইএর ভেঙ্গে এআইসিপি - পরে সিপিএম বিতাড়িত গৌরী আম্মা ইত্যাদিদের নিয়ে ইউসিপিআই হবে। বাংলায় সিপিআই তখন দৌর্দণ্ডপ্রতাপ বামমন্ত্রীসভায়। সেই প্রতাপ হাতে কলমে দেখেছি বছর ছিয়াশি সালে ঘাটালে, চন্দ্রকোণা টাউনে। যে এলাকার মসলিন এক সময় রপ্তানি হত কাঁহাকাঁহা মুলুক, সেখানে কংগ্রেস সমর্থনে দলীয় প্রার্থী সাহিত্যিক সত্য ঘোষালের নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিয়ে গ্রামে গ্রামে ঘুরছি ছোটছোট মিটিং করে। সেই প্রথম যৌবনে সিপিএমের অস্ত্র মিছিল দেখা, নির্বিচার রোজ পরোক্ষে খুনের হুমকি শোনা আর অল্পসল্প গায়ে হাত বুলোনোর মত করে মার খাওয়া। তখনও নারায়ণ চৌবের দুই মৃত পুত্রের একজন গৌতমদা আমাদের হিরো। পূর্ব ইওরোপে পড়তে যাওয়া গৌতমদার নানান গপ্প শুনছি।
নাহ, তখনও সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন হয় নি। আকাশেবাতাসে ভাসছে গর্বাচেভ গ্লাসনস্ত আর পেরেস্ত্রৈকা। ইয়েলসিন মস্কোর সর্বেসর্বা। ব্রেজনেভের সময় বেশ কিছু কাল শেষ। প্রবীন প্রখ্যাত বাম-পার্লামেন্টারিয়ান-বাগ্মী একগাছি মোটা পৈতে হাতে - আমি যদি ব্রাহ্মণ হই, পৈতে তুলে গর্বাচভকে তিন অভিসম্পাত দিচ্ছি তোর পতন হোক, পতন হোক, পতন হোক - ঐতিহাসিক বাণী সাংবাদিক সম্মেলনে উচ্চারণ করেন নি। বিশ্ব ইতিহাস ওলটপালট করে দেওয়া সেই অসম্ভব সম্ভব হতে তখনও তিন তিনটে বছর বাকি।
তখনও যতদূর সম্ভব সুভাষ মুখোপাধ্যায় রোজ পাড়ায় প্যারাম্বুলেটার নিয়ে বাজার যাওয়ার মত করে আসছেন যাচ্ছেন সোভিয়েত ইউনিয়নে। আমি, বন্ধু নিখিলেশ রায়চৌধুরী এবং আরও কয়েকজন তরুণ, সুভাষবাবু, তরুণ সান্যাল এবং আরও অনেক গুণীর যৌথ সম্পাদনায় সপ্তাহ পত্রিকায় হাত পাকাচ্ছি। আন্দাজ করতে পারছি সত্তর বছরের রাষ্ট্রীয় সাম্যবাদের যুগ শেষ। বাটা দোকানের ম্যানেজারদের নিয়ে ইউনিয়ন করা গৌর গোস্বামী সপ্তাহে নিয়মিত আসতেন। তিনি এবং আমরা গর্বাচেভ বিরোধী। লড়ুয়ে হাভানার ফিদেলের পক্ষে। কেন যেন মনে হচ্ছে গর্বাচভ পশ্চিমি জাতভাইদের হাতে হাত মিলিয়ে সাত দশক ধরে বোনা কোটি মানুষের স্বপ্ন খুন করতে উদ্যত। তরুণবাবুর কাছে সবে অর্থনীতির পাঠ শেষ হয়েছে। সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের মায়াময় গলায় মাঝেমধ্যে শুনি, সাম্যের দেশে দুটো শ্রেণীর মানুষের নির্বিচারে স্বার্থ দেখা হয়, শিশু আর বৃদ্ধ। আর শুনতাম রুশীদের বই পড়ার নেশা নিয়ে তাঁর প্রশ্রয়ী গলার হাজারো চুটকি।
জীবনের পথ বাঁকছে একটু একটু করে। ভাবনায় ফিসফসিয়ে আঁচড় পড়ছে, অন্য পথ, অন্য কোন খানে। পথ সত্যিই ভাঙবে সোভিয়েত উঠে যাওয়ার আরও তিন বছর পর। শহুরে সাম্য আন্দোলন থেকে বিচ্যুত হয়ে থেকে গ্রামের অবস্থার দিকে দৃষ্টি ঘোরাবার সময় হবে।
---
এত সব কথা লেখার সুযোগ হল, ফোর্ট উইলিয়ামের প্রথম দিককার সময় জানতে গিয়ে পাক্কা ৩০ বছর আগের ঘোর বাম জমানায় ২৭/১২/৮৮ তারিখে শিক্ষিকা মা'র কেনা অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাংলা সাহিত্যের ইতিবৃত্তর খণ্ডগুলি হাতে পেয়ে। যৌবনে বইএর দোকান বলতে মনীষাই বুঝতাম। কিন্তু মডার্নের রসিদটা পঞ্চম খণ্ডে থেকে গিয়েছিল।ঐতিহাসিক সে সময়ে পাঁচটি খণ্ডের মোট দাম ছিল ১৭৪ টাকা ২৫ পয়সা। পাঁচ নম্বরটা পড়তে পড়তে মা সব কটা খণ্ড এনে দিলেন। আজও বইগুলো সোভিয়েত দেশ আর সোভিয়েত নারীর সেই অমূল্য কাগজ দিয়ে মোড়া।
---
স্মৃতি কথা লেখার বয়েস হয়ে গেল।
---
এত সব কথা লেখার সুযোগ হল, ফোর্ট উইলিয়ামের প্রথম দিককার সময় জানতে গিয়ে পাক্কা ৩০ বছর আগের ঘোর বাম জমানায় ২৭/১২/৮৮ তারিখে শিক্ষিকা মা'র কেনা অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাংলা সাহিত্যের ইতিবৃত্তর খণ্ডগুলি হাতে পেয়ে। যৌবনে বইএর দোকান বলতে মনীষাই বুঝতাম। কিন্তু মডার্নের রসিদটা পঞ্চম খণ্ডে থেকে গিয়েছিল।ঐতিহাসিক সে সময়ে পাঁচটি খণ্ডের মোট দাম ছিল ১৭৪ টাকা ২৫ পয়সা। পাঁচ নম্বরটা পড়তে পড়তে মা সব কটা খণ্ড এনে দিলেন। আজও বইগুলো সোভিয়েত দেশ আর সোভিয়েত নারীর সেই অমূল্য কাগজ দিয়ে মোড়া।
---
স্মৃতি কথা লেখার বয়েস হয়ে গেল।
No comments:
Post a Comment