বন্ধু Sri Mahadeb উষ্মা প্রকাশ করেছিলেন শিল্পীদের লোক নামে অভিহিত করেয়ার জন্যে। আমরা একমত। আমাদের ভাষ্য...
বাংলায় আশুবাবু থেকে হালের বরুণ চক্রবর্তীর লোক শব্দের উৎস নিয়ে গবেষণাগুলিতে, পুরো ব্যাপারটাই এসেছে পশ্চিমের ফোক শব্দ থেকে, ভারতীয় দর্শনের লোক শব্দ থেকে নয় - যদিও সেটিও তারা আলগোছে উচ্চারণ করে গিয়েছেন।
কয়েক হাজার বছর ধরে ইওরোপে সাম্রাজ্যবাদী খ্রিষ্ট ধর্ম(যার সঙ্গে খ্রিষ্টের নানান শীল শিক্ষার বিন্দুমাত্র যোগ নেই) ক্ষমতার পরিসর থেকে খ্রিষ্ট সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী পাগানদের চিন্তা ভাবনা, প্রযুক্তি, ধর্ম ইত্যাদি ধ্বংস করে দিতে থাকে বল প্রয়োগ করে। তথাকথিত রেনেঁসায় এই ধ্বংসক্রিয়া সম্পূর্ন হয় - রাষ্ট্র ব্যবস্থায় জ্ঞানচর্চায় পাগানদের কোন ভূমিকাই থাকল না। তাদের গান তাদের ভাব, তাদের ছন্দ ইত্যাদি সমাজচ্যুত হয়ে টিমটিম করে টিকে রইল বা রইল না। নগর হল সভ্যতার পীঠস্থান - যেখান থেকে সিভিল, নাগরিক, ইত্যাদি শব্দগুলো এল আর সেখানে ধ্রুপদী কৃষ্টির চর্চা হতে শুরু করল, আর বাকিটা চলে গেল গাঁয়ে - যাকে বলা হল পিছিয়ে পড়া, অশিক্ষার ডিপো ইত্যাদি , সেটা হল ফোক - যে ভাবনা থেকে মার্ক্সএর শহর বন্দনা এবং গ্রামীনদের খিস্তি। ধ্রুপদী কৃষ্টিওয়ালারা সেটিকে একটু ভুরু উঁচু করে দেখলেন - মুখে সম্মান দিলেন, বললেন এটি সব কৃষ্টির উৎস, আদতে কিন্তু ব্রাত্য রইল।
রেনেঁসার সময়ে প্রখ্যাতরা যা তৈরি করলেন তাকে বলা হল হাই আর্ট আর রাষ্ট্রের ক্ষমতার বাইরে যে কৃষ্টি তাকে বলা হল ফোক বা লিটল আর্ট - লিটল ম্যান শব্দটা ব্রেখটও ব্যবহার করেছেন - অজিতেশ অনুদিত ভাল মানুষের পালায় গানের মধ্যে ছোট্ট ছোট্ট মানুষ ইত্যাদিতে সেই সব শব্দ হয়ত খুঁজে পাবে।
আমাদের ডান বাম নির্বিশেষে নবজাগরিতবাবুরা বাংলায় ইওরোপিয় রেনেঁসা টুকলেন - ইওরোপিয় প্রগতির সঙ্গে নিজেকে জুড়তে পারলে উচ্চবংশটংশ লাগে। তারা কৃষ্টিকে শ্লীল আর অশ্লীলে ভাঙলেন প্রথমে এবং নিয়ম করে কলকাতার নানান গান(যেমন পক্ষীদের ইত্যাদি) নানান ছোটলোকি কৃষ্টিয় প্রকাশভঙ্গীকে নিষিদ্ধ করে দিলেন।
কিন্ত পিকাসো ইত্যাদি প্রখ্যাতদের হাত ধরে দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পরে যখন ইওরোপ আবার ফোকে ফিরল তখন বাংলার হনুকরণবিদেরা কাকে কেন কিভাবে ফোক বা লোক বলা যায় - এবং কোন কোন ইওরোপিয় জর্মন রুশ বা ইংলন্ডীয় পন্ডিত তা কিভাবে বলেছেন, সে সব নিয়ে চুল ছেঁড়াছিঁড়ি শুরু করলেন।
সেই বাই-টি প্রাবল্যের আকার পেল বাম জমানায় - এদের পিঠে ছাপ পড়ে গেল লোকশিল্পীত্বে। যাদের পিঠ চাপড়ানি দিয়ে বিনা পয়সায় বা ন্যুনতম মূল্যে কাজ করিয়ে নেওয়া যায়। অন্যদিকে ছোট মেজো বড় শহুরে ধ্রুপদী রবীন্দ্রসঙ্গীত, নজরুল আধুনিক উচ্চাঙ্গ ইত্যাদি শিল্পীরা কিন্তু বিভিন্ন গ্রেডে নিজেদের ছড়িয়ে নিলেন, মোটা বিদায়ী ট্যাঁকে গোঁজার ব্যবস্থা করে।
ফলে তুমি ঠিকই বলেছ, বাংলায় এতকাল লোক-ধ্রুপদীর যে বামিয়-বিভাগ ছিল দুর্ভাগ্যের সেই লোক/ফোক টিকা গাঁইয়াদের কপাল থেকে আজও ওঠে নি। এই সরকারের আমলেও - লোকপ্রসার প্রকল্প যার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। সেই দুর্গন্ধময় শাব্দিক মড়াটি খুব ভাল কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে, সেটা খুব দুঃখের।
No comments:
Post a Comment