মানুষের জীবনটাই তো কষ্টের। যত ভাল জিনিস তৈরি হয়েছে বিশ্বে সব কষ্টের ফসল - বিদ্যুৎ আসার আগের সৃষ্টি। বিদ্যুৎ আসার পরে পৃথিবীটা একটেরে হয়ে গ্যাছে। আজও সব ভাল জিনিস বিদ্যুৎ ছাড়া প্রযুক্তি দিয়েই তৈরি হয়। পাকা বাড়ি, ফাঁকি দেওয়া স্থাপত্য এবং কৃতি - এই বাড়ি তৈরি আর ব্যবস্থাপনায় গৃহস্থের কোন কৃতিত্ব নাই। মনে হয় সব সিমেন্ট-ইঁটের বাড়িই এক ধাঁচের।
ইংরেজদের বাংলো, বাংলার মাটির বাড়ির স্থাপত্য আর নাম থেকে চুরি করা। ওরা স্বীকার করেন না। কিন্তু নামে পরিষ্কার। মাটির বাড়ির প্রযুক্তি আর স্থাপত্য বিশাল বিপুল ব্যাপার। Shahinur Rashid Tutul মাটির বাড়ির স্থাপত্য বিষয়ে বিশদে কাজ করেছেন। তাঁর লেখা আমরা পরমে ছেপেছি।
বাড়ি তৈরির মাটি তৈরি দীর্ঘকালের বিপুল জ্ঞানচর্চা আর দক্ষতা আর সৌন্দর্যচর্চা। অন্যান্য গ্রাম্য প্রযুক্তির মত বাটির বাড়ির তৈরির উপাদান প্রযুক্তিবিদেরা গ্রামের আশপাশ থেকেই সংগ্রহ করেন।
মাটির বাড়ি তৈরি জন্য সব মাটি ব্যবহার হয় না। মাঠের বা বিশেষ এলাকার মাটি ব্যবহার হয় - কোন মাটি ব্যবহার হবে সেটা প্রযুক্তিদ জানেন। সেই মাটি নিয়ন্ত্রিতভাবে জল দিয়ে দিয়ে পা দিয়ে চটকে মাখা হয় বেশ ভাল করে।মাটির সঙ্গে থাকা নানান অবাঞ্ছিত বর্জ্য পদার্থ একে একে বার করে দেওয়া হয়। কোথাও কোথাও মাটি গুঁড়ো করে প্রথমে চেলেও নেওয়া হয়।
এবারে আসতে আসতে এই মাটি মাখার সময় মাটিতে নানান আঠাল দ্রব্য যেমন ডিম, খয়ের, পাট, ডালগুঁড়ো, চালগুঁড়ো, তেঁতুল দানা গুঁড়ো, বেলের আঠা ইত্যাদি নানান মিশেল মেশায় যাতে মাটির আঁটটা দীর্ঘকাল ঠিক থাকে।
তারপরে যত উঁচু বাড়ি, এবং বাড়ির স্থাপত্য, সেই অঙ্ক করে চওড়া আর গভীর করে ভিত কাটা হয়। তারপর ঐ তৈরি করা মাটি বিশেষ আকারে কেটে ভিতের ওপর থাক থাক করে রাখা হয়। এর সঙ্গে চলতে থাকে নানান উপাচার, গান ইত্যাদি। তারপর প্রথম তলার মাটির দেওয়ার শোকানোর পালা।
প্রত্যেকতলা তৈরি হওয়ার পর ছাদের জন্যে মূলত বাঁশ লম্বাভাবে দিয়ে তার তলায় চওড়া করে তাল ইত্যাদি গাছের চার চেরা কাণ্ড দেওয়া হয় যার ওপর বাঁশগুলি থাকতে পারে। বাঁশের ওপর মাটি লেপে এক/দুতলার ছাদ করা হয়। পিটানোও হয়। তলায় ওঠার জন্যে মাটির সিঁড়িও তৈরি হয়।
কেউ কেউ গোটা মাটির বাড়িটা তৈরি হওয়ার পর পুড়িয়ে পোড়ামাটির চরিত্র দেন। গোটা শুকনো বাড়িটাকে কাঠকয়লা দিয়ে ঢেকে দ্যাওয়া হয়। তারপরে শুকনো গুল্মের লতাপাতা সেই কাঠকয়লার ওপরে রেখে আগুণ ধরিয়ে দেওয়া হয়। এটা শোনা কথা। একজন গ্রাম্য প্রযুক্তিবিদের কাছে শুনেছিলাম। তবে তা বেশ খরচসাধ্য। কিন্তু দীর্ঘদিন থাকে।
এর পরে মাঠের হলদে মাটি গোবর দিয়ে লেই করে বাড়ির ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয় বাড়ির দেওয়ালকে বাইরের ঝড়, জল, রোদ ইত্যাদি প্রাকৃতিক রোষ থেকে বাঁচাবার জন্যে। রাঢ বাংলায় এই দেওয়ালে নানান ধরণের কাজ করা হয়।
শুনেছি একশ বছরের মাটির তিনতলা বাড়ি রাঢ় বাংলায় দেখা যায়।
এই লেখাটা তৈরির জন্যে বন্ধু Anindyaর তোলা বাঁকড়োর মাটির বাড়ির ছবি দায়ি। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলাম।
No comments:
Post a Comment