প্রথম ছবিটির ব্যবস্থা চড়া দাগের অনাধুনিক, পরম্পরাগত, ভীষণভাবে স্থানীয়তা নির্ভর, প্রতিক্রিয়াশীল, অঔপনিবেশিক, দেশিয় লব্জে চালিত, মূলত মাটি এবং অন্যান্য স্থানীয় উপাদানে, স্থানীয় কারিগরি, প্রযুক্তি, জ্ঞানে তৈরি রান্নাঘর, স্থানীয় গোষ্ঠী/সমাজ/পরিবার এবং বড় কথা রাঁধুনির নিজের নিয়ন্ত্রণে থাকা জ্বালানি, জ্ঞান, সামাজিক/পারিবারিক/গোষ্ঠীগতভাবে অর্জন করা অপুঁজিগত দক্ষতার সবটুকু শেষ বিন্দুপর্যন্ত নিজেরপরিবার/সমাজ/গোষ্ঠীর জন্যে ব্যবহার করা, পরম্পরাগত সামাজিক প্রাকৃতিক উপাদান খুব বেশি জমিয়ে না রাখার জৈব টাটকা পুষ্টির রান্না ব্যবস্থা, যাতে সম্ভাব্য অসম্ভাব্য প্রায় সব ধরণের রান্নার উপাচার সম্ভব।
দ্বিতীয়টির ব্যবস্থাটি আধুনিক, প্রগতিশীল, কর্পোরেট, ঝকঝকে, বড় পুঁজি প্রণোদিত, মানুষ/সমাজ/গোষ্ঠীকে বোঝানো নির্ভর, সরকারের লব্জে আগেরটি থেকে ভাল জ্বালানি, যে জ্বালানি ব্যবহার করতে বড়পুঁজির উদ্যমে তৈরি উনুন লাগে যার কোনটিই রাঁধুনি বা তার পরিবার বা তার গোষ্ঠী বা তার সমাজ তৈরি করতে জানেন না, অকেজো হলে সারাতেও জানেন না - রান্নাঘরের জ্বালানি আর উনুন এবং গোটা ব্যবস্থাটাই রাঁধুনি/সমাজ/গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণবিহীন। সরকার/কর্পোরেট যদি তার জ্বালানি সরবরাহ আটকে দেয় তাহলে পরিবার সমাজ গোষ্ঠীর খাদ্য ব্যবস্থাই অচল হয়ে পড়ে। এই ব্যবস্থার জ্বালানি উনুন খাদ্য এবং অন্যান্য সরঞ্জাম বিতরণ করতে বিপুল পরিমান বিনিয়োগ লাগে, হাজার হাজার ক্রোশ পাড়ি দিতে হয়, প্রত্যেক পদক্ষেপেঈ অবাঞ্ছিত কার্বন উৎপন্ন হয়, এবং যারা এই জ্বালানি ব্যবহার করেন না, এই ব্যবস্থার উপজাত প্রভাব তাদের জীবনও ভীষণভাবে প্রকট হিসেবে দেখা দেয়।
প্রতিক্রিয়াশীল দেশিয় রান্নাঘরে বড়পুঁজি প্রায় অবাঞ্ছিতই, কিন্তু দ্বাররুদ্ধ নয়। চাইলে বড় পুঁজি উৎপাদন ম্যাগি(নুডলস বললাম না) সহ সেঁকা, পোড়া, ভাজা, সাঁতলানো, সিদ্ধ ইত্যাদি প্রায় সব প্রক্রিয়ার রান্নাই প্রায় সম্ভব। এই প্রতিক্রিয়াশীলতম ব্যবস্থায় হাজারো কিসিমের জ্বালানি ব্যবহার করে হাজারো চাহিদামত স্বাদ তৈরি করা যায়।
দ্বিতীয়, প্রগতিশীল আধুনিক ঝকঝকেটিতে দেশিয় রান্না ব্যবস্থা প্রায় অবাঞ্ছিত - এমনভাবে তৈরি যাতে স্থানীয় পুষ্টি ব্যবস্থা এতে খুব বেশি নাক গলাতে না পারে। অর্থাৎ ম্যাগি হবে কিন্তু পাতুরি, পোড়া, স্যাঁকার স্বাদ গন্ধ পুষ্টি সবটাই প্রমিততম, কর্পোরেটদ্বারা বরাদ্দ, তার থেকে খুব বেশি কিছু পাওয়া যাবে না।
প্রগতিশীলতার, বড়পুঁজির জয়গান গীত হোক।
No comments:
Post a Comment