Friday, July 13, 2018

প্রাতিষ্ঠানিক ঔপনিবেশিক জ্ঞানচর্চার বাইরের গুরুরা - হকার, কারিগর, কলিম খান - ছকে বাঁধা উপনিবেশের শেকড় উপড়োবার হাতিয়ার

গুরুপ্রতীম কলিম খানএর স্মরণ সভায় উদ্যোক্তারা আমায়(আদতে কারিগরদের) বলতে ডেকেছিলেন, তার জন্যে Narayan Chandra Das, Samik Saha Debasish Das এবং আরও অনেকেকে প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। অনুষ্ঠানে দুর্গাপুর থেকে এসেছিলেন Subhrajyoti Basu, খড়গপুর থেকে Somnath Roy Subhas Das Dhritiman Bhattacharjee এবং আরও অনেকে। দুএকজন আলাপও করলেন। সমস্যা হল আমি নতুন চেনা মানুষদের নাম মনে রাখতে পারি না। তাদের থেকে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। আমরা একসঙ্গে বসব। আদান-প্রদান জরুরিতম কাজ।
---
আমরা কলিম খানকে দেখছি উপনিবেশ বিরোধী জ্ঞানচর্চার ক্ষেত্র থেকে। গোটা শিক্ষা জগত ছেয়ে আছে উপনিবেশিক জ্ঞানর্চায়। যারা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে উত্তরউপনিবশিক জ্ঞানচর্চা আলোচনা করেন, তারাও এক পক্ষে মোটামুটি ঔপনিবেশিক পশ্চিমের কথাই বলেন, তাদের লেখায় পশ্চিমের পথেই মুক্তির তত্ত্ব উঠে আসে, উপনিবেশের ধারণা থেকে মুক্তির পথ নয়। পশ্চিমের উতপাদন ব্যবস্থা, লুঠেরা বড় পুঁজির বিনিয়োগ, তার কেন্দ্রিভূত জ্ঞানচর্চা, উপনিবেশ সম্পর্কে প্রাচ্যবাদীদের তত্ত্ব আর অপচয়ী জীবনযত্রাকে মান্যতা দিয়ে উপনিবেশ বিরোধী আন্দোলন লড়া যায় না, দেশের মানুষ আর তার দর্শনকেও বোঝা যায় না।
এখানেই কলিম খনের তত্ত্বের সঙ্গে আমাদের হকার কারিগরদের উতপদন কৃষ্টি আর দর্শনে মিল। তত্ত্ব এবং প্রয়োগে হাতে কলমে কাজ করে আমরা বুঝেছি আড়াইশ বছর ধরে আমাদের মনে যে ধারনাগুলোর চাষ হয়েচলেছে সেগুলো শেকড় গেড়ে বসেছে বংশ গুরু এবং রাষ্ট্র পরম্পরায়, সেই থানা গেড়ে বসে থাকা উপনিবেশের উতপাটন না হলে ওনার তত্ত্বে ঢোকা মুশকিল, আর উপনিবেশের নিগড় থেকে মুক্তি মুশকিল।
এই উপনিবেশিক তত্ত্ব আমাদের মনে প্রবেশ করিয়েছে কোম্পানির প্রথম দিককার ভারতে আসা প্রাচ্যবিদেরা। নম নম করে দেশিয় ভাষা এবং প্রায় সংস্কৃত না জানা, ভারতীয় সমাজ না জানা, বোঝা জোনস, কোলব্রুক, প্রিন্সেপ ভারতে এসে সংস্কৃত শিখেছেন কয়েক বছর মাত্র, তাদের লুঠের কাজ সম্পন্ন করেই( প্রাচ্য বিদদের সংস্কৃত জ্ঞান বিষয়ে আমাদের দলের সাথীর লেখাটা কৌলাল পত্রিকায় পড়তে পারেন koulal.com/2018/07/10/প্রশ্নঃ-ইংরেজ-আমলের-ইয়োর/)। যতটূকু হাতে বাড়তি সময় ছিল, সে সময়ে সংস্কৃত শিখে এবং সেই ভাষা জ্ঞান নিয়ে তারা নানান প্রাচীন বই অনুবাদ এবং সেই সঙ্গে আমাদের কৃষ্টিকে বিশ্লেষণ করেছেন। তাঁদের সেই বিশ্লেষণ অবলম্বন করে আজও প্রাচীন ভারত বিশ্লেষণের জ্ঞানচর্চা চলছে।
এই তত্ত্ব উপড়িয়ে ফেলার কাজে কলিমখানের তত্ত্ব আমাদের নির্ভরযোগ্য হাতিয়ার হতে পারে। কিছু কিছু বিষয়ে মতভেদ আছে। থাকুক। সেটা স্বাস্থ্যকর। তবে মতভেদ এমন নয় যে আমরা কিছুটাও একসঙ্গে হাঁটতে পারব না। একসঙ্গে হাঁটতে আমাদের হবেই।
বাংলার কারিগর হকার সংগঠন মনে করে ধরমপাল, চন্দ্র কান্ত রাজু, ক্লদ আলভারেজ, আশিস নন্দী, অনুপম মিশ্র, জয়া মিত্রদের সঙ্গেই উপনিবেশিক জ্ঞানচর্চা থেকে মুক্তির পথের অন্যতম দিশারী কলিম খান।
জয় বাংলা!

No comments: