খুব সাম্প্রতিক কালে শহুরেরা একের পর এক গ্রাম লুঠের অর্থে কলকাতায় তৈরি প্রাসাদগুলোকে হেরিটেজ ঘোষণা করে নব্যউপনিবেশবাদের কোলে মাথা রাখছি। গ্রামের উৎপাদন ব্যবস্থা ভেঙ্গে, সম্পদ, জ্ঞান লুঠ করা অর্থে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অন্যতম প্রধান বন্ধু, দ্বারকানাথ ঠাকুরের হর্ম্য - বেলগাছিয়া ভিলার বিবরণ, Description of Opulance and Some Recent Photo of Belgachia Villa of Dwarakanath Thakurএ পাওয়া যায়।
কলকাতার বিভিন্ন এলাকার ঔপনিবেশিক হর্ম্যগুলো মনে করুন। যেন আকাশ ছুঁয়েছে। নিজের বাহুল্যের গরবে নিজেকে দেখ, নিজেকে দেখ ভাব।
দেশের সম্পদ দখল করে, মানুষ খুন করে(ভারত লুঠের অন্যতম ঐতিহাসিক ধরমপাল বলেছিলেন ইওরোপিয়রা স্বভাব-খুনি, বিশ্বের ইতিহাস প্রমান) ভারতের দখলদারির উন্নয়নের চাকা গড়িয়ে দিয়ে, যে চাকচিক্যের বহিরাবরণটি সযত্নে পরে নিয়েছিল ছিল ব্রিটিশ(বিশ্বে ইয়োরোপের অন্য দেশগুলো) সাম্রাজ্য, সেই চাকচিক্য স্বাধীনতার বহুদিন পরেও উচ্চমধ্যবিত্তের মনে কলকাতার গরিমা অটুট রাখে। সিটি অব জয়ের মালা পরার আগে কলকাতা ছিল, সিটি অফ প্যালেসেস।
কেউ সাম্রাজ্যের সঙ্গে ব্যাবসা করে(অবশই ছোট থেকে ছোট তরফের), কেউ চাকরি করে(দ্বারকানাথের উত্তরসূরি বলছেন ৩৫ টাকা মাইনের চাকর বসকে মাসে ৫০০টাকা ঘুষ দিচ্ছেন। নিজেও নিচ্ছেন, এ ধরণের বিলাস ব্যয়ে নিজেকে ঢেলে দিচ্ছেন) অথবা গ্রামের মানুষ পিটিয়ে স্বাধীনতার লড়াই দমন করে সাম্রাজ্য চালানোর কর তুলে ব্রিটিশদের নগ্ন দালালি (কর্নওয়ালিস পোষিত নব্য জমিদারি)করেই কলকাতাজোড়া এই হর্ম্যগুলো স্থাপনা করেছিলেন। আজ নব্য পরাধীনতার ৭০ বছর পরেও সাম্রাজ্য বন্ধুতার বাসি গর্বে বিন্দুমাত্রও আঘাত লাগছে না। তবুও গ্রামের মানুষেরা কথা বলছেন, তাদের দাবি আদায়ে তাঁরা অবিচল।
শহুরেরা একের পর এক গ্রাম লুঠের অর্থে কলকাতায় তৈরি প্রাসাদগুলোকে হেরিটেজ ঘোষণা করে নব্যউপনিবেশবাদের কোলে মাথা রাখছি। এই প্রবন্ধটিতে সেই একটি আইকনিক বাড়ির চাকচিক্যের বর্ণনা দেওয়া গেল। সিদ্ধান্ত পাঠকের নিজের।
নিজের অন্দরমহল থেকে স্ত্রী দিগম্বরী এবং অন্যান্য মহিলাদের হাতে বহিস্কারের বহু আগে দ্বারকানাথ, ফরাসডাঙা (চন্দননগর)র ব্যবসায়ী রামদুলাল ঘোষের বেলগাছিয়ায় বাড়ি ১৮২০তে ৫ লাখ টাকায় কিনেছিলেন(রায়বাহাদুর প্রমথনাথ মল্লিক, কলিকাতার কথা, দ্বিতীয় খন্ড, ১৯২পাতা)! বাঙলা সাহিত্যে এটির নাম বেলগাছিয়া ভিলা।
স্ত্রীর মৃত্যু(নাকি আত্মহত্যা)র পর প্রাসাদোপম বাড়িটিতে ইংরেজদের সঙ্গে খোলাখুলি সামাজিক মেলামেশা শুরু করলেন। দ্বারকানাথের সামাজিক-পারিবারিক যতটুকু সংস্কারের অবগুণ্ঠন ছিল তাও খুলে গেল। গুরু রামমোহনের পথ বেয়ে ঢালাও বিদেশি মদ্য, নির্মোক নৃত্যপরিবেশন করে দ্বারকানাথ হয়ে উঠবেন বাঙালিদের নবজাগরণের অন্যতম অগ্রদূত। বেলগাছিয়া ভিলায় বেলেল্লাপনায় আলালি বাবুদের উদ্যোগে সাধারণ কলকাতাবাসী সকৌতুকে সুচিন্তিত একটি প্রবাদ গজিয়ে তুলবে - চালাও পানসি বেলগাছিয়া।
দ্বারকানাথ বেলগাছিয়ার প্রাসাদটি কেমন সাজিয়েছেলেন সেই বর্ণনা তাঁর বিদেশী জীবনীকার ব্লেয়ার বি ক্লিংএর কলম থেকেই বোঝা যাক, ইন ইটস গ্রাজি ডেকর এন্ড ইলেকট্রিক ফার্নিশিংস, বেলগাছিয়া ওযাজ টিপিক্যাল অব দ্য গ্রেট নাইন্টিন্থ-সেঞ্চুরি ভদ্রলোক ম্যানসন। দ্য হাউস ওয়াজ এপ্রেচড অন এন এনট্রান্স বোড, ব্রলিয়ান্টলি ইলিউমিনেটেড এট নাইট, এন্ড এন্টার্ড থ্রু আ মার্বেল হল। অন দ্য রাইট অব দ্য ফোয়ের ওয়ার এন এলিগান্ট স্টেয়ার কেস এডর্ন্ড উইথ স্ট্যাচুজ অব কর্নেলিয়া এন্ড গ্রাচ্চি, দ্য ভেনাস বেইগনিউজ (Venus Baigneuse) এন্ড সাইকি। এট দ্য টপ অব দ্য স্টেয়ারস এয়াজ আ সেন্ট্রাল হল অব টার্পসিকোর (terpsichore), হুজ ওয়ালস ওয়ার হাং উইথ ফাইন পেইন্টিংস এন্ড হুজ ফ্লোর ওয়াজ এডর্ন্ড উইথ স্ট্যাচুজ অব রিডিং নিম্ফ, এন্ড আ রিকাম্বেন্ট ভেনাস এম্বাওয়ার্ড ইন রোজেজ। অন দ্য লেফট অব দ্য হল, ওয়াজ আ স্পেসিয়াস ভারান্দা, ডেকোরেটেড টু রেসেম্বল আ মোঙ্গল টেন্ট, উইথ লিফি ওয়ালস এন্ড গার্লেন্ডস অব ফ্লাওয়ার, ইন দ্য সেন্টার অব হুইচ ওয়াজ আ থ্রেন অব ক্রিমসন ভেলভেট এন্ড গেল্ড এম্ব্রয়ডারি, উইথ পিলার অব সলিড সিলভার চেস্টড এন্ড ইনলেইজ উইথ গোল্ড। অন দ্য রাইট ওয়াড আ মিউজিক রুম। ফিল্ড উইথ অয়েল পেইন্টিংস, মার্বেল ফার্নিচার, অরেঞ্জ দামাস্ক কার্টেনস, পোরসেলিন ভাসেল এন্ড এলাবাস্টার ক্লকস। আদার রুম এডজয়েনিং দিস ওয়ান ওল্ড পেইন্টিংস, এনগ্রেভিংস, এন্ড আইভরি মিনিয়েচার্স। দ্য সাবজেক্টস অব দ্য পেইন্টিংস ইনক্লুডেড ভেনাস এন্ড মার্স, পোট্রেট অব ইন্ডিয়ান্স, এন্ড সিনস ফ্রম আ নাচ। দ্য সাউথ ভারান্দা ওয়াজ কার্পেটেড এন্ড এডর্নর্ড উইথ হোয়াইট এন্ড ক্রিমসন মসলিন এন্ড ইটস পিলার ওয়ার ফেস্টুন্ড উইথ ফ্লাওয়ার্স।
আউটসাইড ওয়াড আ স্পেসিয়াস লন সারাউন্ডেড বাই আ মেন্ডারিম স্ট্রিম ওভার হুইচ পাসড ফোর রাস্টিক ব্রিজেজ। অন দ্য সেন্টর ওয়াজ আ ফাউন্টেন, এন্ড বিয়ন্ড ইট আ লাইফ-সাইজ স্ট্যাচু অব হানটসম্যান মেলিগার(Melesger) এন্ড হিজ হাউন্ড। ইন দ্য ডিসট্যান্স আ লাইফ সাইজ ভেনাস কুড বি সিন রাইজিং ফ্রম এন আর্টিফিসিয়াল লেক। অন ওয়ান সাইড ওয়াজ আ স্মল আইল্যান্ড অন হুইচ স্টুড আ জাপানিজ টেম্পল, ইন দ্য সেন্টার এন আয়োনিক টেম্পল কনটেইনিং কপিজ অব দ্য সেলিব্রেটেড গ্রুপ অব ক্যানোভা, এন এট দ্য ফার এন্ড এ চাইনিজ প্যগোডা কভার্ড উইথ লটস অব এভরি শেপ এন্ড কালার এন্ড ফারদার ইলিউমিনেটেড বাই ব্রিলিয়ান্ট স্টার্স রাইজিং ফ্রম দ্য ওয়াটার্স এজ। এরাউন্ড দ্য এজ, অব দ্য লেক ওয়ার রেজ অব পিলার্স টপড বাই ফ্লেমস, এন্ড ল্যাম্পস ওয়ার প্লেসড এভরিহয়ার এট রান্ডম।
২৬ ফেব্রুয়ারি ১৮৪১এ দ্বারকানাথের পার্টি সম্বন্ধে পত্রিকা ক্যালকাটা কুরিয়ার লিখছে, দ্য এসেম্ব্লি এ্যাট দ্বারকানাথ ট্যাগোর্স লাস্ট নাইট ওয়াজ সারপ্রাইজিংলি ব্রিলিয়ান্ট। ইট ওয়াজ এটেনডেড বাই অনারেবল মিস ইডেন, স্যর ই. রায়ান এন্ড আ মেজরিটি অব আদার লিডার্স অব ক্যালকাটা সোসাইটি। দ্য হাউস(হুইচ হ্যাড বিন টেস্টফুললি রিফারনিসড) এন্ড দ্য গ্রাউন্ডস অয়ার ব্রিলিয়ান্টলি ইলিউমিনেটেড দ্য ফায়ার ওয়ার্ক্স ওয়ার সুপিরিয়র টু এনি উই এভার বিফোর সি ইন ইন্ডিয়া। হি ওয়াজ এজ ইউজুয়াল কোর্টিয়াস এন্ড সিডুলাস ফর দ্য কমফোর্ট অব অল, এন্ড দ্যাট দ্য গেস্ট্স এনজয়েড দেমসেলভস ইজ টেস্টিফায়েড বাই দ্য লেটনেস অব দ্য আওয়ার টু হুইচ দে লিঙ্গার্ড। মনে করিয়ে দেওয়া যাক রায়ান হলেন ভারতের প্রধান বিচারপতি আর এমিলি ইডেন, Up The Country: Letters Written to Her Sister from the Upper Provinces of India (1867)র লেখিকা, পরবর্তীকালের ব্রিটিশ প্রধাণমন্ত্রী রবার্ট এন্থনি ইডেনএর পূর্বজা।
বেলগাছিয়া ভিলার প্রথম ছবিটি সৌমাদিত্য ব্যানার্জি (https://www.facebook.com/media/set/…) প্রকাশ করেছিলেন। এক বছর আগের তোলা সময়ের হস্তাবলেপনে মলিন হয়ে পড়া এই হর্ম্যটির বর্তমান কিছু ছবি ওপরের লিঙ্কে পাওয়া যাবে। উৎসাহীরা দেখতে পারেন।
বেলগাছিয়া ভিলার পরের ছবিটি কৌশিক পালের তোলা (http://www.flickr.com/…/koushikp…/3383225928/in/photostream/)।
শেষ ছবিটি রবীন্দ্রনাথের ঠাকুরদা দ্বারকানাথের।
রবীন্দ্রনাথ এবং দেবেন্দ্রনাথ, যৌথভাবে যে মানুষটিকে সচেতনভাবে বর্জন করেছেন, তিনি আজও বাঙালির মনের মানুষ - এই সৌভাগ্য বোধহয় একমাত্র দ্বারকানাথের জীবনেই হয়েছে।
রবীন্দ্রনাথ এবং দেবেন্দ্রনাথ, যৌথভাবে যে মানুষটিকে সচেতনভাবে বর্জন করেছেন, তিনি আজও বাঙালির মনের মানুষ - এই সৌভাগ্য বোধহয় একমাত্র দ্বারকানাথের জীবনেই হয়েছে।
জয় বাংলা!
জয় গুরু!
জয় গুরু!
No comments:
Post a Comment