সে সময়ের প্রখ্যাত কায়স্থ এবং এশিয়াটিক সোসাইটির প্রথম ভারতীয় সদস্য, এবং বাংলায় বৈদিকতার প্রধান প্রবক্তা রাজেন্দ্রলাল মিত্র টেম্পলের কারিগরি শিক্ষা প্রকল্প বিষয়ে প্রতিবাদ জানালেন। বাংলার পলাশীর পরে উদ্ভুত অভিজাতরা ঐতিহাসিক কারণেই কারিগরি শিক্ষা দর্শন বিরোধী, আদতে তারা মৌলিকভাবে শ্রম বিমুখ, জাতিবাদী, উতপাদনের ওনুষঙ্গ থেকে বিযুক্ত। ব্রিটিশ শাসন, শ্রম বিমুখ উচ্চবর্ণকে ক্ষমতাকেন্দ্রে নিয়ে আসার একমাত্র কারিগর। পলাশীর পরে ব্রাহ্মণ, কায়স্থদের একচ্ছত্র আধিপত্য দেখা দিল।
বাবু রাজেন্দ্রলাল মিত্র, এশিয়াটিক সোসাইটির প্রথম কালা প্রেসিডেন্ট বললেন(এটি মহেন্দ্রলাল সরকারের ভাষ্যে On the Desirability of a National Institution for the Cultivation of the Sciences by the Natives of Indiaয় উল্লিখিত), For three thousand years and upwards their [আর্থাত উচ্চবর্ণের প্রতিভূ মিত্তরবাবুদিগের] ancestors had cherished Sanskrit learning for its own sake, and need it be doubted that their descendents would not be equal to the sciences of the present day’. Temple’s practical science was not acceptable। মিত্তরজা বললেন হুঁশিয়ারি দিয়ে do not ... attempt to make it [the proposed institute] self- supporting by producing remunerative art work in your laboratories. If you do, you will disappoint your pupils, and court signal failure.
মিত্তিরজা এটা বলতেই পারেন কেননা তিনি ১৮৫৪ সালের ক্যালকাটা স্কুল অব ইন্ডাস্ট্রিয়ার আর্টের সাম্মানিক সম্পাদক এবং হিসাবরক্ষও ছিলেন(এবং শতাব্দ শেষে রবীঠাকুর এবং হ্যাভেলের চেষ্টায় এটি শিল্পকলা বিদ্যালয় হিসেবে আবির্ভূত হয়)। টেম্পলের পৌরোহিত্যে একটি জনসভায় ফাদার লাফঁ বললেন, ‘the other Association’ [pro-Temple] wanted ... to transform the Hindus into a nation of mechanics, requiring forever European supervision, whereas Sircar’s object was to emancipate, in the long run, his countrymen from this humiliating bondage।
কাল্টিভেশন অব সায়েন্সেসএর উদ্যোগে কলেজ পাঠ্যে প্রথম বিজ্ঞান অন্তর্ভূক্ত হয় । তবে মৌলিক বিজ্ঞান গবেষণা পাঠ্য হিসেবে মান্যতা পায় ব্রিটিশ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষিত জগদীশ চন্দ্র বসু আর প্রফুল্ল রায়ের সময়। উল্লেখ্য প্রেসিডেন্সি কলেজে ছয় বছর পড়ানোর সময় বিদ্যুৎ তরঙ্গ নিয়ে গবেষণা করেন জগদীশ বসু। অসাধারণ কিছু বিষয় আবিষ্কারও করেন। কিন্তু নিজের আবিষ্কারের পেটেন্ট নিতে অস্বীকার করেন তিনি(এটা নিয়ে বিশদে আমরা পরম পত্রিকায় আলোচনা করেছি, কিভাবে লন্ডনে তার কাজ চুরি করার চেষ্টা করা হয়, কিভাবে তাকে গবেষণা করতে বিশ্বশ্রুত বৈজ্ঞানিকেরা বাধা দেন, কিভাবে টেলিগ্রাফ কর্পোরেটরা তার গবেষণা কিনতে চেয়ে তাকে অর্থ দিয়ে ভরিয়ে দেওয়ার ব্যর্থ চেষ্টা করে)। এবং তাঁকে পাশে পাওয়ার জন্যে উদগ্রীব ব্রিটিশ পুঁজিপতিদের উপহাস করেন।
পরিহাসের হল এই পেটেন্ট আমেরিকায় নেন তাঁর ঘনিষ্ঠ দুই আধ্যাত্মিক বান্ধবী - ব্রিটিশ সন্ন্যাসী মার্গারেট নোবেল এবং আমেরিকিয় সারা বুল। জগদীশ সেই অর্থ নিতে স্রেফ অস্বীকার করেন(সূত্র Science and domination: India before and after independence Rajesh Kochhar)। কিন্তু পেটেন্টের অর্থ বহুকাল পেয়েছেন দুই মহিলা। এ নিয়ে তাকে অনেক কটুক্তিও শুনতে হয়েছে। এই অসাধারণ কাজের জন্যে জগদীশচন্দ্রের ঘনিষ্ঠ বন্ধু, জীবনীকার গেডেস তাকে ব্যঙ্গ করে ঋষি বলেছেন(Simply stated, it is the position of the old rishis of India, of whom he is increasingly recognized by his countrymen as a renewed type, and whose best teaching was ever open to all willing to accept if. Bose carried on his shoulders the full weight of his country’s defensiveness)। প্রফুল্ল রায়ও সরকারি খেতাব নিতে গিয়ে জগদীশ বসুকে প্রকাশ্যে কটুক্তি করেছেন। এবং এই প্রবন্ধে কোছার তাকে কুইকজোটিয় বলেও ব্যঙ্গ করেছেন।
জগদীশচন্দ্রের নানান চিঠি, প্রবন্ধ আর জীবনী পড়ে আমাদের যতদূর সম্ভব মনে হয়েছে তিনি হয়ত লন্ডনে বসে বৈজ্ঞানিকদের ধনের প্রতি অতিমাত্রায় লোভ, বিখ্যাত হওয়ার জন্যে অসাধুতা আর কর্পোরেট গৃধ্নুতা দেখে ১৯০০ সালেই বুঝেছিলেন বেতার তরঙ্গর মত নানান প্রযুক্তি কিভাবে কর্পোরেটদের লাভের সূত্র আর সামরিক প্রযুক্তি হিসেবে বিশ্বপ্রভুত্বের হাতিয়ার হতে পারে। তিনি পরবর্তী জীবনে এ বিষয়ে একটিও গবেষণায় উদ্যোগী হন নি।
আমরা আজ হয়ত আন্দাজ করতে পারি তিনি অন্তত কর্পোরেট লাভের নোংরা লুঠ খেলায় আর বিশ্ব ধ্বংসের ঔপনিবেশিক অত্যাচারের হাতিয়ার হসেবে নিজেকে জড়াতে চান নি। যে মানুষটার একটি স্বাক্ষর এবং তার একটি আবিষ্কারের কর্পোরেট অংশিদারি তাকে লক্ষ কোটিপতি করে দিতে পারত, সেই মানুষটা নির্বিবাদে নিজের দেশে ফিরে এসে বিজ্ঞান সাধনা করেছেন তার মত করে, জীবন চালাবার জন্যে ভিক্ষা করেছেন প্রায়। এবং সে সময় তাঁর পাশে একমাত্র দাঁড়িয়েছিলেন আমাদের খুব পছন্দর মানুষ নয়, রবী ঠাকুর। এমনকি রামবাগানের প্রখ্যাত রমেশ মিত্তির তাকে লন্ডন থেকে বাংলায় ফিরতে বাধাও দিয়েছিলেন লন্ডনে অধ্যাপনার কাজ জুটিয়ে দেওয়ারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। অসাধারণ, আজ পড়লে রূপকথা মনে হয়। উল্টো দিকে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে সরকারকে নানান রাসায়নিক সরবরাহ করেন প্রফুল্ল রায়, এবং সেই জন্য তার রানীর খেতাবও জোটে এবং জগদীশচন্দ্র সেটি নেন না, তিনি প্রকাশ্যে জগদীশচন্দ্রকে কিছুটা ব্যঙ্গও করেন। উপনিবেশ বিরোধী আন্দোলনে জগদীশচন্দ্র আজও আমাদের বড় হাতিয়ার।
দুঃখের কথা, আজ তার প্রতিষ্ঠিত বসু বিজ্ঞান মন্দির সরকারি বিনিয়োগে সামরিক কাজ করে।
রাজেশ কোছারের Science and domination: India before and after independence প্রবন্ধ অবলম্বনে
জগদীশচন্দ্রের হয়ে পেটেন্ট আবেদনের নিস্পত্তির চিঠি
No comments:
Post a Comment